somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কক্সবাজার, টেকনাফ ও বান্দরবান ভ্রমণের গল্প (পর্ব ০১)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। নানান জায়গায় ভ্রমণ করতে ভালবাসি। কিন্তু সময়, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সবকিছু মিলিয়ে যখন খুশি তখন চাইলেই ভ্রমণ করা যায় না। তবে মাঝেমধ্যে সুযোগ আসলে সেই সুযোগটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। ঠিক তেমনি কক্সবাজার, টেকনাফ ও বান্দরবান ভ্রমণের দারুণ সুযোগ এসেছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। আমিও সেই সুযোগটি যথাযথভাবে কাজে লাগিয়েছি। সুতরাং কক্সবাজার, বান্দরবান ভ্রমণ নিয়েই আমার আজকের এই লিখা। আমার এই লিখাটি অবশ্যই গল্প আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। তাহলে শুরু করা যাক....

কোনো একদিন আমার আঙ্কেল আমায় বললো অক্টোবর মাসে ৭ দিনের একটা ট্যুর দিবে। যাওয়া আসা অর্থাৎ দুই রাত বাসে আর পাঁচদিন স্পটে। সাত দিনের ট্যুরে আমাদের কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও বান্দরবান নিয়ে যাবে। যেহেতু এর আগে আমি কখনোই কক্সবাজার যাইনি, তাই আমি সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলাম। মা বাবাকে বুঝিয়ে আমি আমার আঙ্কেল-আন্টিকে কনফার্ম করলাম যে আমিও এই ট্যুরে অবশ্যই যাব। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম।

০৩ অক্টোবর ২০১৬
অবশেষে আসলো কাঙ্খিত সেই দিনটি যেদিন আমরা কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হব। আমার আঙ্কেল আন্টি সহ আমরা মোট চারজন ২০১৬ সালের অক্টোবরের তিন তারিখ রাত দশটার দিকে আমরা বাসস্ট্যান্ডে চলে আসলাম। বরাবরই বাস জার্নি আমার অপছন্দ। কিন্তু কিছুই করার নেই। যাই হোক, বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখলাম বিশাল সুসজ্জিত পিকনিক বাস। বাসের ভিতরের লুক, ডেকোরেশন চমৎকার লেগেছে। বাসের ভিতরে ছিল এলইডি টিভি, লাল নীল রঙের লাইটিং, সাউন্ড বক্স সেট আপ এবং সুসজ্জিত কিছু বিন্যাস। বাসে ছিল ৭০ টির মত সিট। কিন্তু কে কোন সিটে বসবে সেটি নির্ধারিত হয়েছে লটারীর মাধ্যমে। ভাগ্যক্রমে লটারীর মাধ্যমে আমাদের চারজনের সিট নম্বর অনুযায়ী আমরা সিট পেয়েছি বাসের ডান পাশের যথাক্রমে দ্বিতীয় ও পঞ্চম নম্বর সিট (জোড়ায়)। আঙ্কেল আন্টি আমাকে ও আমার কাজিনকে (বোন) ২য় সিটে বসতে দিল এবং তারা চলে গেল পঞ্চম সিটে। তারপর রাত ১১ টার দিকে বাস ছাড়লো।

মূলত এটি ছিল পিকনিক বাস। বাবুর্চি সহ টোটাল ৭৪ জনের মত লোক ছিল বাসে। সবাই পরিবার নিয়ে এসেছে। বলতে গেলে এটি ছিল পারিবারিক ট্যুর। আর এদিকে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল কিভাবে সাতদিন বাড়ির বাইরে থাকব..খুব মিস করব বাড়ির সবাইকে। যাই হোক, এরই মধ্যে বাসের টিভি ছাড়লো। বাসের ড্রাইভার এর সহকারী মেমরি কার্ড থেকে একের পর এক গান প্লে করছে। কয়েকটা গান প্লে করার পর মহেশ বাবুর সিনেমা প্লে করলো। আমি তামিল, তেলেগু সিনেমা দেখিনা। উচ্চ সাউন্ড দিয়ে সিনেমা চলছে আর বাস চলতেছে দুরন্ত গতিতে। আমি বসেছিলাম জানালার পাশের সিটেই। যেহেতু রাত ছিল তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার কোনো সুযোগ ছিলনা। ২য় সিটে বসার কারণে টিভির সাউন্ড কানে জোরেশোরে আসছিল আর প্রচন্ড বিরক্তি লাগছিল। এসব তেলেগু সিনেমা না দেখিয়ে সফট গান প্লে করলেও পারতো। কিন্তু ওই ড্রাইভারের সহকারী বোধহয় তামিল তেলেগু সিনেমার দারুণ ফ্যান। আর আমি বাধ্য হয়ে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে মোবাইল থেকে গান শুনতেছি। কিন্তু কিছুতেই যেন সময় কাটছে না। সামনে তাকালেই বিরক্তিকর তেলেগু সিনেমার সীন। কিন্তু কিছুই করা নাই। সহ্য করে যেতে হবে। আমার চোখে এক ফোটা ঘুমও নেই। অথচ পাশের সিটের অন্য যাত্রীরা সুন্দরভাবে ঘুমাচ্ছে। আমার সাথের কাজিনও দেখি ঘুমাচ্ছে। অথচ আমার কি হল? একটানা গান শুনতেও ভাল লাগছে না। তাই বাধ্য হয়ে ওই মহেশ বাবুর সিনেমা হজম করতে হল। X((

রাত দুইটার পরে কোনো এক ফিলিং স্টেশনে বাস থামাল। পনেরো মিনিটের বিরতি দিল। যার ওয়াশরুমে যাওয়া দরকার সে যাবে। দেখলাম অনেকেই গেল। কিন্তু আমি বাস থেকে নামি নাই। কারণ প্রয়োজন বোধ করিনি। তারপর বাস আবার ছুটে চললো। এভাবে সারারাত বাস চলতে থাকলো। আর ওইদিকে সহকারী সাহেব মেমরি কার্ড থেকে টিভিতে মহেশ বাবুর আরেকটা সিনেমা প্লে করলো। আহা রে! কি যে বিরক্তি আর অসহ্য লাগছিল তা লিখে বুঝানো যাবে না! মহেশ বাবুর একশন ও সিনেমাতে চিল্লাচিল্লির কারণে চোখের ঘুম একেবারেই উধাও! যা বুঝার বুঝে গেছি। আজ রাতে বাসে আর ঘুম আসবে না। কি সুন্দরভাবে বাসের অধিকাংশ লোক ঘুমাচ্ছে আর আমার চোখে এক ফোঁটা ঘুম নাই ওই মহেশ বাবুর সিনেমার কারণে!! তখন মনে মনে ভাবলাম আমি বাসের লাস্টের সিটে বসলেও ভাল হত। অন্তত সিনেমার এই উচ্চশব্দের চিল্লাচিল্লি হতে মুক্তি পেতাম। যাই হোক, বাস দুরন্ত গতিতে চলছে আর আমি ওই মহেশ বাবুর আরেকটা সিনেমা বাধ্য হয়ে হজম করতেছি। এভাবেই চলতে থাকলো বাস জার্নি।

আস্তে আস্তে ভোরের আলো ফুটতে লাগলো। এরই মধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আরম্ভ হল। খুব সম্ভবত চিটাগাঙ পেরিয়ে কক্সবাজার শহরে পৌঁছানোর পথে বৃষ্টি আরম্ভ হল। তারপর সম্ভবত ভোর সাতটার দিকে গন্তবে পৌঁছলাম। তখন বৃষ্টি অলরেডি থেমে গেছে। "ঝিনুক মুক্তা" বীচের সংলগ্ন হোটেল ঠিক করা হয়েছিল। হোটেল থেকে "ঝিনুক মুক্তা" বীচের দূরত্ব ৬ মিনিটের মত (পাঁয়ে হেটে গেলে)..। ভোর সাতটার দিকে সবাই হোটেলের রুম ঠিক করে ফেলল এবং যে যার মত রুমে চলে গেল। আমরা চারজন ডাবল বেডের এক রুমে গিয়ে উঠলাম। খুব ক্লান্ত দেহমনে সবাই ঘুমিয়ে পরলো। বিশেষ করে আমার চোখে প্রচন্ড ঘুমঘুম ভাব ছিল যেহেতু সারারাত বাসে ঘুম হয়নি।
(বাকি অংশ আগামী পর্বে)
চলবে..................

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২০
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×