দ্বিতীয় পর্ব
০৪ অক্টোবর ২০১৬
সকাল সাতটা থেকে প্রায় সাড়ে দশটা পর্যন্ত একটানা ঘুমালাম। আমি-ই সকলের শেষে ঘুম থেকে উঠেছি। সত্যি বলতে আমায় ডেকে ঘুম থেকে তুলা হয়েছিল; কারণ ব্রেকফাস্ট এর সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠার পরে ফ্রেশ হয়ে আমরা সবাই (আঙ্কেল, আন্টি, কাজিন আর আমি) রুম লক করে খাবার হোটেল থেকে ডিম পরোটা খেয়ে "ঝিনুক মুক্তা" বীচে গেলাম। তখন আবহাওয়া ভাল ছিল। কোনো বৃষ্টি ছিলনা। রোদের আলো বেশ ছিল। আমাদের পিকনিক বাসের অন্য কিছু যাত্রীদেরও দেখলাম বীচে এসেছে। তারা সেলফি স্টিক দিয়ে সেলফি নিচ্ছে। আর আমরা সমুদ্র সংলগ্ন বসার জন্য ছাতার নিচে যে সিট পাওয়া যায় সেই সিট এক ঘন্টার জন্য নিলাম। প্রতি ঘন্টা ২০ টাকা করে ভাড়া। সিটে বসে আছি আমরা চারজন। অফসিজনে কক্সবাজারে এত পর্যটক দেখে অবাক হলাম। শতশত মানুষ সমুদ্রের পানিতে ভিজতেছে, গোসল করতেছে এবং মজা করতেছে। এগুলা দেখে আঙ্কেল বাদে আমরা বাকি তিনজন লোভ সামলাতে পারলাম না। আমাদের জুতা আর মোবাইল সেট আঙ্কেলের কাছে রেখে আমরা তিনজন সমুদ্রের পানিতে নেমে পরলাম। প্রথমে মনে দারুণ ভয় কাজ করছিল। তারপর সাহস করে কোমরজল এ নামলাম। অনেক দূর থেকে প্রচন্ড বেগে ঢেউ আসছিল আর আমাদের সবাইকে পিছনে নিয়ে যাচ্ছিল!! কি এক দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা কাজ করছিল। সবার চোখেমুখে অনেক আনন্দ। আঙ্কেল এর আগে একাধিকার কক্সবাজারে আসলেও এই প্রথম আমরা তিনজন সাগরের পানিতে নেমেছি। তাই সবাই অনেক খুশী। কারণ আমাদের জীবনে এটিই প্রথম অভিজ্ঞতা! এভাবে সমুদ্রের পানিতে ভিজেছি প্রায় এক ঘন্টার মত! সাগরের পানিতে কিভাবে এক ঘন্টা কেটে গেল তা টের-ই পেলাম না। এরপর আঙ্কেল ডাকতেছে চলে যাওয়ার জন্যে। কিন্তু আমরা তিনজন কিছুতেই সায় দিচ্ছিনা! আরেকটু থাকি না!! ভাল-ই ত লাগতেছে! এভাবে সাগরের পানিতে খেলা করতে করতে প্রায় দুপুর একটা বেজে গেছে। এভাবে দেড় ঘন্টার মত সাগরের উত্তাল ঢেউ আর সমুদ্রজলে সবাই মজা করার পর হোটেলে ফিরে আসলাম। ওয়াশরুমে গিয়ে বুঝতে পারলাম মাথায় প্রচন্ড বালি আর সেই সাথে পোষাকেও প্রচন্ড বালিতে ভরে গেছে!!
সবাই ফ্রেশ হয়ে টিমের সাথে আসা বাবুর্চির রান্না করা খাবার খেয়ে আরেক দফা ঘুমালাম। সারা বিকেল ঘুমালাম সবাই। সন্ধ্যার দিকে সবাই ঘুম থেকে উঠলাম। আঙ্কেল বললো রাতের বীচ দেখতে নাকি দারুণ চমৎকার লাগে!! তাই সন্ধ্যার পর ৭ টার দিকে আমরা চারজন রুম লক করে চলে আসলাম বীচে। ছাতা টাইপের ওই সিটগুলা ভাড়া নিলাম। রাতের অন্ধকারে সাগরের বুকে চলতে থাকা দূরবর্তী মাছ ধরার নৌকো আর ট্রলারগুলো অসাধারণ লাগছিল! তখন সাগরের দূরবর্তী স্থানে নৌকো আর ট্রলারগুলোতে মিঠিমিঠি আলো জ্বলছিল। কি অদ্ভুত রকমের সৌন্দর্য তা না দেখলে শুধুমাত্র লিখে বুঝানো যাবেনা!! সেই সাথে সাগরের ঢেউয়ের মনোমুগ্ধকর শব্দ। আমার মতে, যারা হতাশায় ভুগছে তাদের রাতের বীচের এই সৌন্দর্য টা উপভোগ করতে পারলে ৮০% মানসিকভাবে প্রফুল্ল হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো আপনি ইউটিউবে সমুদ্র গর্জনের শব্দ শুনে তৃপ্তি পেতে পারেন কিন্তু আপনি সাগরের উত্তাল ঢেঊ, শব্দ, দূরবর্তী ট্রলারগুলোর মিঠিমিঠি আলো এবং সেই সাথে প্রশান্ত ঠান্ডা হাওয়ায় অদ্ভুত এক ভাললাগায় মিলিয়ে যেতে যান তাহলে অবশ্যই কক্সবাজার রাতের বীচের মনোমুগ্ধকর পরিবেশটা মিস করলে চলবে না। মিস করলে জীবনটা-ই বৃথা!! অন্তত আমার তাই অভিজ্ঞতা হয়েছে। দিনে সাগরের পানিতে ভেজা, গোসল করা, খেলা করা এবং রাতে বীচে এসে সমুদ্রের গর্জন, দূরবর্তী ট্রলারগুলোর জ্বলতে থাকা জোনাকির মত আলো এসব উপভোগ করতে না পারলে এই জীবনের কোনো মানে নেই তো!
এভাবে আমরা রাতের সমুদ্র ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ উপভোগ করে রাত এগারোটার দিকে হোটেলে ফিরে গেলাম। আমার এমনিতে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম আসেনা। কিন্তু দেহ মন ক্লান্ত থাকার কারণে রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পরলাম। একটানা ঘুমালাম সবাই। তারপর ঘুম থেকে উঠার পর দেখি সকাল ৯ টার মত বেজে গেছে।
০৫ অক্টোবর ২০১৬
দুপুর ১২ টার দিকে আমরা আবার বীচে গেলাম। আমার আঙ্কেল এক ফটোগ্রাফার ছেলেকে হায়ার করলেন আমাদের ছবি তুলে দেয়ার জন্যে। আঙ্কেল ছেলেটিকে প্রথমেই বলে দিল এক এঙ্গেলের ছবি যেন একাধিকার ক্লিক করা না হয়। আমাদের ছবি তোলার পর ছেলেটা তার স্টুডিওতে নিয়ে গেল ছবিগুলো কম্পিউটার থেকে বাছাই করে ওয়াশ করার জন্যে। কম্পিউটারে দেখলাম আমাদের চারজনের ছবি টোটাল ৩৫০+ তুলছে!! আমার আঙ্কেল রেগে গেল। কেননা উনাকে পূর্বেই বলা হয়েছিল একই ধরনের ছবি যেন একাধিকার শট না নেয়া হয়। এখন ওই ছেলেটা বলতেছিল কমপক্ষে ১০০ টি ছবি ওয়াশ করাতে হবে! এরপর আসছে ৫০ টায়। কিন্তু আমরা যাচাই বাছাই করে ২০ টা ছবি সিলেক্ট করলাম। আর তাতেই আপত্তি বাঁধে ফটোগ্রাফার ছেলেসহ স্টুডিও এর লোকদের। এ নিয়ে আঙ্কেলের সাথে ছেলেদের প্রচন্ড তর্কাতর্কি হয়। এরপর আমরা ছবি ওয়াশ না করেই চলে আসি। সুতরাং ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তোলার ক্ষেত্রে আপনি কতটা ছবি নিবেন বা ওয়াশ করাবেন, তা পূর্বেই ফটোগ্রাফারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উত্তম।
সন্ধ্যার দিকে আমরা আবার বীচ সংলগ্ন মার্কেটে যাই। এই মার্কেটে মোটামুটি ভাবে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। আমি এই মার্কেট থেকে শুধুমাত্র একটা ব্যাগ আর সানগ্লাস কিনছিলাম। আর হ্যাঁ এই মার্কেটে যাবার আগে বীচ সংলগ্ন একটা দোকানের ফুচকার অর্ডার করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা কেউ ফুচকা খেতে পারলাম না। কারণ ফুচকার স্বাদ বালি বালি লাগছিল!! ফুচকায় বালির কারনে ফুচকা কেউ খাই নাই। মার্কেট ঘুরা শেষে রাত ৮ টার দিকে হোটেলে ফিরে গেলাম। এরপর আমার আঙ্কেল কে বললাম আমি সামুদ্রিক কাঁকড়া খেতে চাই!! তাই আঙ্কেল বাইরে থেকে সামুদ্রিক কাঁকড়া ভাজা নিয়ে আসলো। কাঁকড়া টি মোটামুটিভাবে বড় ছিল। আমরা চারজন মিলে কাঁকড়া টেস্ট করলাম। আমি ত খেতেই পারি নি। টেস্ট করেই শেষ! মানে আমার কাছে স্বাদ ভাল লাগেনি। তাই দুই কামড় দিয়েই আমার কাঁকড়া খাওয়ার অধ্যায় শেষ! কাঁকড়ার দাম ছিল সম্ভবত পাঁচশত টাকার মত!!
যাই হোক, সেদিন রাতে আমাদের তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হয়েছে। কারণ ভোর ছয়টার ভিতরে বাস ছেড়ে যাবে টেকনাফের উদ্দেশ্যে। সেন্টমার্টিন যেতে হলে টেকনাফ থেকে যেতে হবে। তাই সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
(বাকি অংশ আগামী পর্বে)
চলবে........
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১২:১৩