somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকের বিড়ম্বনা

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০০৮ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকেই রূপক বযবহার করতে শিখেছিলাম।স্কুলে এর বদৌলতে বাংলা খাতায় অনেক ভালো নম্বরও পেয়েছি। উৎসাহটা সেখান থেকেই এসেছিল।তারপর শুরু হল বাস্তব জীবনে রূপকের বযবহার। একটু হেঁয়ালী করে কথা বলতে ভালই লাগত।একদিন কিন্তু এ নিয়ে বেশ ভাল একটা ঝামেলায় পড়েছিলাম। সেই গল্পটাই বলি।

দশবছর আগের কথা।দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সপরিবারে বিলেত থেকে দেশে ফিরেছি। ইচ্ছা বাচ্চাদেরকে দেশের হাওয়া বাতাস খাওয়াব। সিলেটে একটা দোকান কিনে, বাসা ভাড়া করে বেশ থিতু হয়ে বসে গেলাম। ছেলেকেও দিব্বি একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করা গেল। দু'বছর বয়সের মেয়েটার যদিও নানান রকম অসুখ বিসুখ হতে থাকল, আমাদের প্রবল দেশপ্রেমের জোয়ারে ভেসে গেল সব কষ্ট।

যা'ই হোক, শুভাকাঙ্খিরা কিন্তু আমাদের এই আপাতঃ অবিজ্ঞ পদক্ষেপকে মোটেই ভালচোখে দেখলেননা। বিলেতে স্বামী স্ত্রী দু'জনের দু'দুটো খাসা সরকারী চাকুরী ছেড়ে দেশে এসে মুদীর দোকান খোলার কথা কে কবে শুনেছে। তাদের অকাটয যুক্তির মুখে আবেগ ছাড়া আর কিছু দেখাতে না পেরে প্রায়ই আমদেরকে রণে ভঙ্গ দিতে হয়। কিনতু তারপরও দেশেমায়ের কোলে ফিরে আসার আনন্দে আমাদের মন ভরে থাকে।

এরকম সময়ে আমাদেরই মতই প্রচণ্ড বিষয়বুদ্ধিহীন আরো একটি পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেল। আমার বড়বোনের ননদ তার পুরো পরিবার নিয়ে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছেন চিরতরে। শুনে বড় ভাল লাগল। তাদের এই স্বদেশ প্রতযাবর্তন উপলক্ষে আমার বোনের বাসায় সেদিন ছিল এক বিরাট ভোজ। আমি তেমন ভোজন রসিক নই কিন্তু স্বজাতীয় পাগলদের সাথে আলাপ সালাপের লোভ সামলাতে না পেরে যথাসময়ে ভোজসভায় গিয়ে হাজির হলাম।

কথাবার্তা বেশী করে জমে উঠল আমেরিকা ফেরত পরিবারটির একটি ষোড়ষী মেয়ের সাথে। তবে এর হেতুটাকে মতৈকয বলে যেন ভুল করবেননা। বরং ঠিক তার উল্টো। কথাবার্তার একপর্যায়ে সে চোখ ঘুরিয়ে বলল, 'I think my parents are making a big mistake. This isn't us.'
'What do you mean?' আমি আগ্রহভরে জানতে চাইলাম।
'Just look at this place- so dirty and filthy. Even the lights are so dark. And I hate these mosquitoes. In America life was so much better.'

বযস। হয়ে গেল কাজ।সঠিক বোতামটিতে চাপ পড়তেই শুরু হয়ে গেল আমার আবেগপ্রবণ বক্তৃতা। বলাই বাহুলয কথাবার্তা চলছিল পুরোপুরি ইংরেজিতে। তাছাড়া আর উপায়ইবাকি? সুবুদ্ধিসম্পন্ন এই বালিকা বাংলাদেশকে যতটুকু বসবাসের অযোগয ভাবেন, ঠিক ততটুকুই শেখার অযোগয ভেবেছেন বাংলা ভাষাকে। যাক, স্বদেশের সমস্ত দুঃখ কষ্টের মধেয যে নিজস্বতার একটা সুখ আছে তা নানান ভাবে বালিকাকে বুঝানোর চেষটা করতে গিয়ে আমি হাঁপিয়ে উঠলাম। বালিকা অতিশয় বাকপটু।

তর্কে সুবিধা করতে না পেরে অবশেষে আমি রূপকের আশ্রয় নিলাম,
'দেখ, তোমার মামার বাসার আসবাবপএ তোমার যতই ভাল লাগুকনা কেন, ওগুলো কোনদিনই তোমার নিজের হবেনা। আর যদি ওগুলোকে নিজের বলে দাবী কর, তবে লোকে তোমাকে চোর বলবে।'

আমি ভেবেছিলাম বাগ্মী বালিকা এর উত্তরে আরো চমৎকার কোন রূপকের অবতারনা করবে। কিন্তু তার বদলে তার অতযাধুনিক মেকআপে আলোকিত চেহারা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠল। শত্রু বধ হয়েছে ভেবে আমি মনের আনন্দে খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম।

সেদিন রাতে, তখন কম করে হলেও একটা বাজে, ঝনঝন করে টেলিফোনটা বেজে উঠল। ওপাশে আমার বড়বোন। অনেক চেঁচামেচি আর হৈচৈর মধেয তার কণ্ঠস্বর চিনতে আমার বেশ কষ্টই হল।বযাকগ্রাউন্ডে মনে হল কেউ কাঁদছে।
'কি বযাপার বুবু? এত রাতে?'
'তুই সিমিনকে কি বলেছিস? অমন করে কাঁদছে কেন?'
আমি এই অভিযোগের মর্ম উদ্ধারে সচেষ্ট হতে না হতেই ফোনে শোনা গেল সিমিনের মা'র গর্জন,
'তোমাকে আমি একটা ভাল মেয়ে বলে জানতাম। ছোটবেলা অনেক কোলে কাঁখে নিয়েছি। তুমি আমার মেয়েকে চোর ডাকার আগে একটাবার আমাকে জিজ্ঞেস করলে পারতে।'
তিনি হাঁপ নেবার জনয থামতেই আমি সুযোগ নিলাম,
'ভাবি, আপনি কি বলছেন আমি ঠিক...'
'শোন জেসমিন, জীবনে কারো এক টাকা চুরি করিনি, আসবাবপত্রত দূরের কথা।'
এই পর্যায়ে এসে যখন বিষয়টা আমার কিছুটা বোধগময হতে শুরু করেছে, তখন তিনি কনক্লুসিভ টোনে বললেন,
'ফার্নিচারগুলো তোমার দুলাভাই অর্ডার করেছেন শুধু। দামটা আমরাই দিয়েছি।না জেনে আর কখনো এভাবে কারো নামে বদনাম তুলবেনা।'

হে প্রভু! রক্ষা কর! আমাকে সহজ সরল পথ প্রদর্শন কর। আমি যেন আর কখনো রূপকের আঁকাবাঁকা পথে না চলি। আমিন!


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১০ রাত ৮:৪৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×