ঘটা করিয়া আজিজ মিঞার নিরাপত্তা বাড়ানো হইয়াছে। তাহার বাড়ির চতুপর্াশ্বে অসংখ্য পুলিশ মোতায়েন করা হইয়াছে। নির্বাচন কমিশনের চারপাশে পুলিশের বূ্যহ রচনা করা হইয়াছে। লক্ষীন্দরের বাসরঘরের মতোই নিশিছদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা লওয়া হইয়াছে। তাহার আগমন ও প্রস্থান ঘটে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে। দেশ রসাতলে ডুবিলেও তিনি আমোদ করেন, খোশ গল্পে ডুবিয়া থাকেন, মাঝে মাঝে সাংবাদিকদের ডাকিয়া নিয়া কৌতুক করেন।
এরই মাঝে একটা ঘটনা ঘটিল। একদিন তিনি অফিস শেষে প্রহরাবেষ্টিত হইয়া গাড়িতে উঠিতে যাইতেছিলেন। এমন সময় দূর হইতে একদল দুষ্ট বালকের উচ্চস্বরে তাহাকে উদ্দেশ্য করিয়া প্রণীত সঙ্গীত বাক্য তাহার কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল। দুষ্ট বালকদ্বয় গাহিতেছিল-
টাকলু আজিজ হাইট্টা যায়, আমাগো বুক ফাইট্টা যায়,
তবু আজিজ দেখো কেমনে চা দিয়া সিঙ্গারা খায়।
আজিজ্জা রে আজিজ্জা, তোর কপালে মারি জুতা,
কলা দিয়া চা খাবি তুই, দিলে পাবলিকে গুঁতা।
ইহাতে আজিজ মিঞা তীব্র অপমানিত বোধ করিলেন। সাথে সাথে তিনি পুলিশ কনস্টেবলদের দুষ্ট বালকদিগকে পাকড়াও করিবার আদেশ দিলেন । পুলিশ বালকদিগকে পাকড়াও করিয়া আচ্ছামত উত্তম-মধ্যম দিয়া ছাড়িয়া দিল। আজিজ আদেশ করিল এমন ব্যবস্থা লইতে যাহাতে তাহার অফিসের একশ গজের মধ্যে কোন মনুষ্য প্রজাতি ঢুকিতে না পারে। একদল নিবের্াধ বালকের এরূপ হাস্যরসে তিনি বড়ই কুপিত হইলেন। যে কোন মূল্যে তাহার সম্ভ্রম সমুন্নত রাখিবার জন্য বিভিন্ন নির্দেশ প্রদান করিয়া তিনি গাড়িতে উঠিয়া বসিলেন।
ইতিমধ্যে আরো কিছু লাশ পড়িল, বহু মানুষ আহত হইলো। আজিজ কহিলেন, কোন মানুষ মারা যায় নাই। যাহারা মরিয়াছে তাহার মানুষ নহে, চৌদ্দ দলের নেতা-কমর্ী। তিনি পূর্ববৎ আরাম করিয়া চা-তে সিঙ্গারা ডুবাইয়া খাইতে লাগিলেন।
অফিস শেষে গাড়িতে উঠিবার আগে তিনি একটু থামিলেন। না আজ কোথাও কোন দুষ্ট বালকের গীত কর্ণগোচর হইতেছে না। তাহার বুক ঈষৎ ফুলিয়া উঠিল, শির ঈষৎ উচুঁ হইয়া উঠিল। তিনি খুশিতে ডগমগ হইলেন। কিন্তু সেই অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী হইলো না। কোথা হইতে এক বেয়াদব কাক তাহার স্টেডিয়াম বরাবর ক্রো-মিশাইল নিক্ষেপ করিয়া উড়িয়া গেল। তাহা মুছিতে না মুছিতেই একের পর এক ক্রো-মিশাইল তাহার উপর আপতিত হইতে লাগিল। তিনি পুলিশকে অতিসত্ত্বর গুলি করিবার নির্দেশ দিলেন। পুলিশ গুলি করিতে করিতে একসময় গুলি ফুরাইয়া গেলো। বহু কাক মরিল কিন্তু কা-কা আর ক্রো-মিশাইল বন্ধ হইলো না। বরং আজিজের মনে হইতে লাগিল- দুনিয়ার সমস্ত কাকগুলি যেন কা-কা করিয়া সেই গীতই গাহিতেছিল ' টাকলু আজিজ হাইট্টা যায় . . . . . .'।
আজিজ খুবই অপমানিত বোধ করিলেন। তাহার বোধোদয় হইল। সামান্য কাকের কাছে তিনি তাহার সম্ভ্রম সমুন্নত রাখিতে পারিলেন না, কি করিয়া জাতির কাছে রাখিবেন। তিনি সেদিন-ই পদত্যাগ করিয়া সমগ্র জাতিকে কৃতার্থ করিলেন।
*** কাহারো সহিত এই কাহিনি মিলিয়া গেলে তার দায়ভার লেখকের নহে। ইহাকে কাল্পনিক রম্য হিসেবে গন্য করিলে অধম ধন্য হইবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০০৬ দুপুর ১২:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



