somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক পশলা বৃষ্টি

২৪ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বন্ধুবর ডাক্তার মেহেদীর ফোন। বিকালে হাসপাতালে গিয়ে যেন ওর সাথে দেখা করি। মনটা ভালো নেই। বাড়ির বাইরে বের হবো এমন ইচ্ছা ছিল না। বাল্য কালের বন্ধু। খুব জরুরী প্রয়োজন। অবশ্যই যাতে দেখা করি, ফোনে বলেছিল। ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও না বেরিয়ে পারলাম না। বিকাল সাড়ে ৫টা হাসপাতালের গেট পর্যন্ত পৌঁছলাম। জরুরী বিভাগে অনেক লোকের ভীড়। সবার ভিতরে কেমন যেন উৎকন্ঠা দেখা যাচ্ছে। পাশ দিয়ে এক মহিলা হেঁটে গেল। মহিলার কয়েকটি কথা কানে বেশ ধাক্কা দিল। “ পড়ার জন্য এভাবে কাউকে মারে? লোকটা পাষাণ নাকি! এতো সুন্দর মেয়েটাকে মেরেই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল।” জরুরী বিভাগ থেকে বেশ কয়েক গজ দূরে আমি। পা দু’টো কেমন যেন ভারী হয়ে এলো। লোকজনের মাঝে উৎকন্ঠার ছাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জরুরী বিভাগে জড়ো হওয়া লোকজনের কথোপকথন শোনার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার দূর্বল কান তাদের কথোপকথন শোনাতে ব্যর্থ হল। হারাবার আশঙ্কা ও ভয়ে পুরো শরীর যেন হিম-শীতল হয়ে আসছে । পা দু’টো যেন খুঁটির ন্যায় মাটিতে বিঁধে গেল। সর্বশক্তি প্রয়োগ করে পা দু’টোকে এক ইঞ্চিও সরাতে পারলাম না।
আঘাতটা একটু বেশিই হয়েছিল। তাই বলে হাসপাতাল পর্যন্ত! ভাবতে পারছি না। এদিকে ওর একটি কথা কানে বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ‘ এই তোরা কেউ যাসনে স্যার আমাকে মেরে ফেলবে।” অন্যরা চলে যাওয়ার সময় একথা বলেছিল ও। আমার বিশ্বাস আঘাতের চাইতে ও ভয়ই বেশি পেয়েছিল। অনেক সময় ভয় থেকেও শরীরের নার্ভগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। এতেও বড় রকমের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তেমনটিই হয়তো ঘটেছে ওর ক্ষেত্রে।
ঝিম আমার প্রিয় ছাত্রী। আমার প্রতি ওর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কোন লৌকিকতা ছিলনা। ওর প্রতি আমারও ভালোবাসার কমতি নেই। এটা ও বুঝতো কিনা জানিনা। কিছুদিন আগে এক অদ্ভুত বায়না ধরে বসলো-আমাকে বলতে হবে ও আমার কাছে অন্য সবার থেকে প্রিয়। আমি ওর বায়না রাখতে পারিনি। আমার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে পড়ায় ফাঁকি দিতে পারে তাই প্রসঙ্গটা সব সময় এড়িয়ে যেতাম । এখান থেকেই ভুল বোঝা-বুঝি শুরু। আমার শাসন ওর কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে। আজ পড়ার সময় দুষ্টমি করায় ছোট এক টুকরো কাঠ দিয়ে আঘাত করেছিলাম । একটু জোরেই লেগেছিল। হাড়ে লাগায় বেশ ফুলে উঠেছিল। দাঁড়াতে পারছিল না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলো। আমার প্রতি ওর রাগ-ক্ষোভ ও ঘৃণা এতটাই বেশি হয়েছিল ওই অবস্থায় বান্ধবীদের ঘাড়ে ভর করে বাড়ি ফিরেছিল।
জরুরী বিভাগে ভীড় বেড়েই চলেছে। সবার মাঝে বেশ উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাজ করছে। আমার কারণে মেয়েটা মরতে বসেছে ভাবতেই প্রচন্ড কষ্টে দম বন্ধ হয়ে আসছে। দূর থেকে ওকে দেখার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার দূর্বল চোখের দৃষ্টি মানুষের ভীড় ঠেলে ঝিম পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। পেছন থেকে একটা গাড়ির হর্ণ অনেকক্ষণ ধরে বাজঁছে-শুনতে পারছি। কিন্তু পা দু’টো সরাতে পারছিনা। ক্রমেই হর্ণের শব্দ বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে মোবাইলের রিং টোন বেঁজে ওঠলো। হাত দু’টো কাজ করছে। পকেট থেকে মোবাইল বের করলাম। ঝিমের মায়ের ফোন। একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার জরুরী বিভাগের দিকে। জরুরী বিভাগের লোকজনের অনেককে চোখের পানি মুছতে দেখে এটুকু বুঝলাম, মেয়েটি আর নেই। তাহলে কি ঝিম মারা গেছে? মেয়ের মৃত্যু সংবাদ দিতেই কি ওর মায়ের ফোন? ফোনটা রিসিভ করার সাহস পেলাম না। এরই মধ্যে কে যেন জোরে ধাক্কা দিল। আমি পড়ে গেলাম। কোমরে বেশ লেগেছে উঠতে পারছিনা। একটা মেয়ে দ্রুত বেগে ছুটে এলো। “এভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিলেন? গাড়িটা যদি চাপা দিত? এতোক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি ধরছেন না কেন? কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলতে বলতে আমার হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করছে ও। আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। সেকি! এতো ঝিম। ঝিম বেঁচে আছে! স্বপ্ন দেখছি না তো। বাম হাত দিয়ে পায়ে চিমটি কেটে দেখলাম। ব্যথা অনুভব করছি। শরীরেও উঞ্চতা অনুভব করতে লাগলাম। পা দু’টো হালকা হয়ে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে ওকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে কাছে টেনে নিলাম। আমার শুকিয়ে যাওয়া গলার অস্ফুট স্বর - ঝিম তুমি বেঁচে আছো? কেন স্যার,আমি মরে গেলে আপনি খুশি হতেন?-বলেই চলে গেল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকাতেই হাসপাতালের দোতলায় নজর আটকে গেল। এক রুগীর বেডের পাশে ঝিমের মা বসে আছে। ঝিম গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি নামল। বৃষ্টির ফোঁটা মাথা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। বৃষ্টির পানিতে শরীর ও মনে এক অনাবিল প্রশান্তি অনুভব করছি। চোখের পাতায় জমা বৃষ্টির পানিতে ঝাপসা হয়ে আসা চোখ মুছে ঝিমকে দেখছি, যেন কত দিন ওকে দেখিনা।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×