somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাস্সান ইবনে সাবিত (রা): রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সভা কবি

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সীরাতের গ্রন্থসমূহ হাস্সানের (রা) অনেকগুলি ডাকনাম বা কুনিয়াত পাওয়া যায়। আবুল ওয়ালীদ, আবুল মাদরাব, আবুল হুসাম ও আবূ আবদির রহমান। তবে আবুল ওয়ারীদ সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। তাঁর লকব বা উপাধি ‘শায়িরু রাসূলিল্লাহ’ বা রাসূলুল্লাহর (সা) কবি। তাঁর পিতার নাম সাবিত ইবন আল-মুনজির এবং মাতার নাম আল-ফুরাই’য়া বিনতু খালিদা। ইবন সা‘দ আল-ওয়াকিদীর সূত্রে তাঁর মায়ের নাম আল-ফুরাইয়া বিনত হুরাইস বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁরা উভয়ে মদীনার বিখ্যাত নাযরাজ গোত্রের বনু নাজ্জার শাখার সন্তান। রাসূলুল্লাহর (সা) মাতুল গোত্র বনু নাজ্জারে সন্তান হওয়ার কারণে রাসূলে পাকের (সা) সাথে আত্মীয়তা ও রক্তের সম্পর্ক ছিল। মা আল-ফুরাইয়া ইসলামের আবির্ভাব কাল পেয়েছিলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে সাহাবিয়্যাতের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন খাযরাজ গোত্রের বিখ্যাত নেতা সা‘দ ইবন উবাদার (রা) চাচাতো বোন। হযরত হাসসান (রা) তাঁর কবিতার একটি চরণে মা আল-ফুরাইয়া’র নামটি ধরে রেখেছেন।প্রখ্যাত সাহাবী শাদ্দাদ ইবন আউস (রা) হাস্সানের (রা) ভাতিজা। হাস্সান (রা) একজন সাহাবী, রাসূলুল্লাহর (সা) দরবারী কবি, দুনিয়ার সকল ঈমানদার কবিদের ইমাম এবং তাঁর কাব্য প্রতিভা রুহুল কুদুস জিবরীল দ্বারা সমর্থিত।

ইবন সাল্লাম আল-জামহী বলেনঃ হাস্সানের পিতা সাবিত ইবন আল-মুনজির ছিলেন তাঁর সম্প্রদায়ের একজন নেতা ও সম্মানীয় ব্যক্তি। তাঁর দাদা আল-মুনজির প্রাক-ইসলামী আমলে ‘সুমাইয়া’ যুদ্ধের সময় মীদনার আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের বিচারক হয়ে তাদের মধ্যে ফায়সালা করেছিলেন। কবি হাস্সানের কবিতায় তার একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। একবার মুযানিয়্যা গোত্রের কবির পিতাকে বন্দী করেছিল। কবির গোত্র তাঁকে ছাড়িয়ে আনার জন্য ফিদিয়ার প্রস্তাব দিলে তারা প্রত্যাখ্যান করে। দীর্ঘদিন বন্দী থাকার পর তাঁর পিতার প্রস্তাবেই বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে তিনি মুক্ত হন। হাস্সানের দাদা আল-মুনজির ছিলেন খুবই উদার ও শান্তিপ্রিয় মানুষ।

হাস্সান হিজরাতের প্রায় ষাট বচর পূর্বে ৫৬৩ খ্রীষ্টাব্দে ইয়াসরিবে (মদীনা) জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে নির্মিত মসজিদে নববীর পশ্চিম প্রান্তে বাবে রহমতের বিপরীত দিকে অবস্থিত ‘ফারে’ কিল্লাটি ছির তাঁদের পৈত্রিক আবাসস্থল। হাস্সানের কবিতায় এর একটি বর্ণনা পাওয়া যায়। কবি হিসেবে বেড়ে ওঠেন এবং কবিতাকে জীবকিার উৎস হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রাচীন আরবের জিল্লাক ও হীরার রাজপ্রাসাদে যাতায়াত ছিল। তবে গাস্সানীয় সম্রাটদের প্রতি একটু বেশী দুর্বল ছিরেন। হাস্সানের সাথে তাদের একটা গভীর হৃদ্যতার সম্পর্কে গড়ে ওঠে। তিনি তাঁদের প্রশংসায় বহু সুন্দর সুন্দর কবিতা রচনা করেছেন। তার কিছু অংশ সাহিত্য সমালোচকগণ হাস্সানের শ্রেষ্ঠ কবিতার মধ্যে গণ্য করেছেন। সম্রাটগণও প্রতিদানে তাঁর প্রতি যথেষ্ট বদান্যতা প্রদর্শন করেছেন। তাঁদের এ সম্পর্ক ইসলামের পরেও বিদ্যমান ছিল।

গাস্সানীয় সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট জাবালা ইবন আল-আয়হাম। তাঁর প্রশংসাংয় কবি হাস্সান অনেক কবিতা রচনা করেছেন। খলীফা উমারের (রা) খিলাফতকালে গোটা শামে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হলে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। পরাজয়ের পর জাবালা ইবন আল-আয়হাম ইসলাম গ্রহণ করে কিচুকাল হিজাযে বসবাস করেন। এ সময় একবার হজ্জ করতে যান। কা’বা তাওয়াফের সময় ঘটনাক্রমে ত৭ার কাপড়ের আঁচল এক আরব বেদুঈনকে একইভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার নির্দেশ দিরে। জাবালা আত্মাপক্ষ সমর্থন করে বলরেন: আমি একজন রাজা। একজন বেদুঈন কিভাবে আমাকে থাপ্পড় মাতে পারে? উমার (রা) বললেন: ইসলাম আপনাকে ও তাকে একই কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছে। জাবালা বিষয়টি একটু ভেবে দেখার কথা বলে সময় চেয়ে নিলেন। এরপর রাতের আঁধারে রোমান সাম্রাজ্যে পালিয়ে যান। পরবর্তীকালে ইসলাম ত্যাগ করেন এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।

এই রোমান সাম্রাজ্যে অবস্থানকালে পরবর্তীকালে একবার মু’য়াবিয়া (রা) প্রেরিত এক দূতের সাথে জাবারার সেখানে সাক্ষাৎ হয়। জাবালা তাঁর নিকট হাস্সানের কুশল জিজ্ঞেস করেন। দূত বলেন: তিনি এখন বার্দ্ধক্যে জর্জরিত। অন্ধ হয়ে গেছেন। হাস্সানকে দেওয়ার জন্য জাবালা তাঁর হাতে এক হাজার দীনার দানকরেন। দূত মদীনায় ফিরে আসলেন এবং কবিকে মসজিদে নববীতে পেরেন। তিনি কবিকে বলরেন: আপনার বন্ধু জাবালা আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। কবি বললেন: তহালে তুমি যা নিয়ে এসেছো তা দাও। দূত বরলেন: আবুল ওয়ালীদ, আমি কিচু নিয়ে এসেছি তা আপনি কি করে জানলেন? বললেন: তাঁর কাছ থেকে যখনই কোন চিঠি আসে, সাথে কিছুনা কিছু থাকেই।

আল-আসমা’ঈ বর্ণনা করেছেন। একবার এক গাস্সানীয় সম্রাট দূত মারফত কবি হাস্সানের নিকট পাঁচশ' দীনার ও কিছু কাগড় পাঠিয়েছিরেন। দূতকে বলে দিয়েছিলেন, তিনি যদি জীবিত না থাকেন তাহলে কাপড়গুলো কবরের ওপর বিছিয়ে দেবে এবং দীনারগুলি দ্বারা একটি উট খরীদ করে তার কবরে পাশে জবেহ করবে। দূত মদীনায় এসে কবির সাক্ষাৎ পেলেন এবং কথাগুলি বললেন। কবি বললেন: তুমি আমাকে মৃতই পেয়েছো।

গাস্সানীয় রাজ দরবারের মত হীরার রাজ দরবারেও কবি হাস্সানের প্রঅভাব প্রতিপত্তি ছিল। জুরজী যায়দান বলেন: প্রাক-ইসলামী আমলে যে সকল খ্যাতিমান আরব কবির হীরার রাজ দরবারের আসা-যাওয়া ছিল এবং আপনা কাব্য-প্রতিভা বলে সেখানে মর্যাদার আসনটি লাভ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে হাস্সান অন্যতম।

ইসলাম-পূর্বকারে কবি হাস্সান ইয়াসরিবের চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই গোত্র আউস ও খাযরাজের মধ্যে যে সকল যুদ্ধ হতো তাতে নিজ গোত্রের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করতেন। আর এখান থেকেই প্রতিপক্ষ আউস গোত্রের দুই শ্রেষ্ঠ কবি কায়স ইবন খুতাইম ও আবী কায়স ইবন আল-আসলাত-এর সাথে কাব্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।

হাস্সানের চার পুরুষ অতি দীর্ঘ জীবন লাভ করেন। প্রত্যেকে একশো বিশ বছর করে বেঁচে ছিলেন। আরবের আর কোন খান্দানের পরপর চার পুরুষ এত দীর্ঘ জীবন লাভ করেনি হাস্সানের প্রপিতামহ হারাম, পিতামহ আল-মুনজির, পিতা সাবিত এবং তিনি নিজে-প্রত্যেকে ১২০ বছর করে বেঁচে ছিলেন।

হাস্সান যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তাঁর জীবনে বার্দ্ধক্য এসে গেছে। মদীনায় ইসলাম প্রচারের সূচনা পর্বে তিনি মুসলমান হন। রাসূলুল্লাহর (সা) মদীনায় হিজরাতের সময় হাস্সানের বয়স হয়েছিল ষাট বছর। ইবন ইসহাক হাস্সানের পৌত্র আবদুর রহমানের সূত্রে বর্ণনা করেছেন। হিজরাতের সময় তাঁর বয়স ষাট, এবং রাসূলুল্লাহর (সা) বয়স তিপ্পান্ন বছর ছিল। ইবন সা’দ আরো বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ষাট বছর জাহিলিয়্যাতের এবং ষাট বছর ইসলামের জীবন লাভ করেন।

রাসূলুল্লাহর (সা) আবির্ভাব বিষয়ে ইবন ইসহাক হাস্সানের একটি বর্ণনা নকল করেছেন। হাস্সান বলেন: আমি তখন সাত/আট বছরের এক চালাক-চতুর বালক। যা কিছু শুনতাম, বুঝতাম। একদিন এক ইহুদীকে ইয়াসরিবের একটি কিল্লার ওপর উঠে চিৎকার করে মানুষকে কাডতে শুনলাম। মানুষ জড় হলে সে বলতে লাগলো: আজ রাতে আহমাদের লক্ষত্র উদিত হয়েছে। আহমাদকে আজ নবী করে দুনিয়ায় পাঠানো হবে।

ইবনুল কালবী বলেন: হাস্সান ছিলেন একজন বাগ্মী ও বীর। কোন এক রোগে তাঁর মধ্যে ভীরুতা এসে যায়। এরপর থেকে তিনি আর যুদ্ধের দিকে তাকাতে পারতেন না এবং কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণও করেননি। তবে ইবন ‘আব্বাসের (রা) একটি বর্ণনায় জানা যায়, তিনি বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আল্লামাহ ইবন হাজার ‘আসকালানী লিখেছেন: একবার ইবন আববাসকে বলা হলো হাস্সান-আল-লা’ঈন’ (অভিশপ্ত হাস্সান) এসেছে। তিনি বললেন: হাস্সান অভিশপ্ত নন। তিনি জীবন ও জিহবা দিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে জিহাদ করেছেন। আল্লামা জাহাবী বলেন, এ বণৃনা দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন।

হাস্সানের (রা) যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সম্পর্কে যে সবকথা প্রচলিত আছে তা এই বর্ণনায় বিপরীত। খন্দক মতান্তরে উহুদ যুদ্ধের সময় রাসূল (সা) মুসলিম মহিলাদেরকে হাস্সানের ফারে দূর্গে নিরাপত্তার জন্য রেখে যান। তাদের সাথে হাস্সানও ছিলেন। এই মহিলাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহর (সা) ফুফু সাফিয়্যা বিনত আবদিল মুত্তলিবও ছিলেন। একদিন এক উহুদীকে তিনি কিল্লার চতুর্দিকে গুর ঘুর করতে দেখলেন। তিনি প্রমাদ গুণলেন যদি সে মহিলাদের অবস্থান জেনে যায় তাহলে ভীষণ বিপদ আসতে পারে। কারণ রাসূল (সা) তাঁর বাহিনী নিয়ে তখন প্রত্যক্ষ জিহাদে লিপ্ত। তিনি হাস্সানকে বললেন, এই ইহুদীকে হত্যা কর। তা না হলে সে আমাদের অবস্থানের কথা ইহুদীদেরকে জানিয়ে দেবে। হাস্সান বললেন, আপনার জানা আছে আমার নিকট এর কোন প্রতিকার নেই। আমার মধ্যে যদি সেই সাহসই থাকতো তাহলে আমি রাসূলুল্লাহর (সা) সাথেই থাকতাম। সাফিয়্যা তখন জিনেই তাঁবুর একটি খুঁটি হাতে নিয়ে ইহুদীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করেন। তারপর হাস্সানকে বলেন, যাও, এবার তার সঙ্গের জিনিসগুলি নিয়ে এসো। যেহেতু আমি নারী, আর সে পুরুষ, তাই একাজটি আমার দ্বারা হবে না। এ কাজটি তোমাকে করতে হবে। হাস্সান বললেন, ঐ জিনিসের প্রয়োজন নেই।

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে। সাফিয়্যা লোকটিকে সহ্যার পর মাথাটি কেটে এসে হাস্সাকে বলেন, ধর, এটা দূর্গের নীচে ইহুদীদের মধ্যে ফেলে এসো। তিনি বললেন: এ আমার কাজ নয়। অতঃপর সাফিয়্যা নিজেই মাথাটি ইহুদীদের মধ্যে ছুড়ে মারেন। ভয়ে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

হাস্সান (রা) সশরীরে না হলেও জিহবা দিয়ে রাসূলে কারীমের সাথে জিহাদ করেছেন। বনু নাদীরের যুদ্ধে রাসূল (সা) যখন তাদেরকে অবরুদ্ধ করেন এবং তাদের গাছপালা জ্বালিয়ে দেন তখন তার সমর্থনে হাস্সান কবিতা রচনা করেন। বনু নদীর ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সাহায্য ও সহযোগিতা চুক্তি ছিল। তাই তিনি কবিতায় কুরাইশদের নিন্দা করে বলেন, মুসলমানরা বুন নাদীরের বাগ-বাগিচা জ্বালিয়ে ছিল, তোমরা তাদের কোন উপকারে আসনি। এ কবিতা মক্কায় পৌঁছালে কুরাইশ কবি আবু সুফইয়ান ইবনুল হারিস বলেন: আল্লাহ সর্বদা তোমাদের এমন কর্মশক্তি দান করুন, যাতে আশে-পাশের আগুনে খোদ মদীনা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আর আমরা দূরে বসে তামাশা দেখবো।

হিজরী পঞ্চম সনে ‘আল-মুরাইসী’ যুদ্ধ থেকে মদীনায় ফেরার সময় একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। সুযোগ সন্ধ্যানী মুনাফিকরা তিলকে তাল করে ফেলে। তারা আয়িশার (রা) পূতঃপবিত্র চরিত্রের ওপর অপবাদ দেয়। মুনফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবন উবাই ছিল এ ব্যাপারে সকলের অগ্রগামী। কতিপয় প্রকৃত মুসলমানও তাদের এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আটকে পড়েন। যেমন হাস্সান, মিসতাহ ইবন উসাসা, হামনা বিন্ত জাহাশ প্রমুখ। যখন আয়িশার (রা) পবিত্রতা ঘোষণা করে আল কুরআনের আয়াত নাযিল হয় তখন রাসূল (সা) অপবাদ দানকারীদের ওপর কুরআনের নির্ধারিত ‘হদ’ (শাস্তি) আশি দুররা জারি করেন। ইমাম যুহরী থেকে সাহীহাইনে একথা বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য অনেকে ‘হদ’ জারি বিষযটি অস্বীকার করেছেন।

অনেকে অবশ্য হাস্সানের জীবন, কর্মকাণ্ড এবং তাঁর কবিতা বিশ্লেষণ করে এ মত পোষণ করেছেন যে, কোনভাবেই তিনি ইফ্ক’ বা অপবাদের ঘটনায় জড়িত ছিলেন না। যেহেতু তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) পাশে দাঁড়িয়ে মক্কার পৌত্তলিক কুরাইশদের আভিজাত্যের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছিলেন এবং আরববাসীর নিকট তাদের হঠকারিতার স্বরূপ স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিরেন, একারণে পরবর্তীকালে ইসলাম গ্রহণকারী কুরাইশরা নানাভাবে তাঁকে নাজেহাল করেছেন। তাঁরা মনে করেন, ইফ্ক’-এর ঘটনায় হাস্সানের নামটি জড়ানোর ব্যাপারে যারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন, তাদের পুরোধা সাফওয়ান ইবন মু’য়াত্তাল। হাস্সান আয়িশার (রা) শানে অনেক অনুপম কবিতা রচনা করেছেন। একটি চরণে তিনি ইফক’-এর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এজন্য একটি চরণে যারা তাঁর নামটি জড়ানোর ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেছেন, সেই সব কুরাইশ মুহাজিরদের কঠোর সমালোচনা করেছেন।

‘ইফ্ক’-এর ঘটনায় তাঁর জড়িয়ে পড়ার যত বর্ণনা পাওয়া যায়, সীরাত বিশেষজ্ঞরা সেগুলিকে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মনে করেছেন। একারণে পরবর্তীকালে বহু সাহাবী ও তাবে’ঊ তাঁকে ভালো চোখে দেখেননি। অনেকে তাকে নিন্দা-মন্দ করেছেন। তবে খোদ আয়িশা (রা) ও রাসূল (সা) তাকে ক্ষমা করেছিলেন। একথা বহু বর্ণনায় জানা যায়। আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। হাস্সানকে মুমিনরাই ভালোবাসে এবং মুনফিকরাই ঘৃণা করে। তিনি আরো বলেছেন: হাস্সান হচ্ছে মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে প্রতিবন্ধক। কেউ আয়িশার (রা) সামনে হাস্সানকে (রা) খারাপ কিছু বললে তিনি নিষেধ করতেন।

হাস্সান (রা) শেষ জীবনে অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর একবার আয়িশার (রা) গৃহে আসেন। তিনি যদি বিছিয়ে হাস্সানকে (রা) বসতে দেন। এমন সময় আয়িশার (রা) ভাই আবদুর রহমান (রা) উপস্থিত হন। তিনি বোনকে লক্ষ্য করে বলেনঃ আপনি তাঁকে পদির ওপর বিসয়েছেন? তিনি কি আপনার চরিত্র নিয়ে এসব কথা বলেননি? আয়িশা (রা) বললেনঃ তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) পক্ষ থেকে কাফিরদের জবাব দিতেন শত্রুদের জবাব দিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) অন্তরে শান্তি দিতেন। এখন তিনি অন্ধ হয়েছেন। আমি আশা করি, আল্লাহ আখিরাতে তাঁকে শাস্তি দেবেন না।

প্রখ্যাত তাবে’ঈ মাসরূক বলেন: একবার আমরা আয়িশার (রা) কাছে গিয়ে দেখলাম হাস্সান সেখানে বসে বসে আয়িশার (রা) প্রশংসায় রচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনাচ্ছেন। তার মধ্যে এই পংক্তিটিও ছিল:

‘সাহ্সানুল রাযাবুন মা তুযান্ন বিরীবাতিন’-অর্থাৎ তিনি পূতঃপবিত্র, শক্ত আত্মাসম্মানবোধ সম্পন্ন ভদ্রমহিলা, তাঁর আচরণে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। পরনিন্দা থেকে মুক্ত অবস্থায় তাঁর দিনের সূচনা হয়।

পংক্তিটি শোনার পর আয়িশা (রা) মন্তব্য করলেন: কিন্তু আপনি তেমন নন।’ আশিয়াকে (রা) বললাম: আপনি তাকে এখানে আসার অনুমতি দেন কেন? আল্লাহ তা’য়ালা তো ঘোষণা করেছেন, ইফ্ক-এ যে অগ্রহণী ভুমিকা রেখেছে, তার জন্য রয়েছে বিরাট শাস্তি। (সূরা: আন-নূর-১১) ‘আয়িশা (রা) বললেন: তিনি অন্ধ হয়ে গেছেন। তাঁর কাজের শাস্তি তো তিনি লাভ করেছেন। অন্ধত্বের চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে? তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) পক্ষ থেকে কুরাইশদের প্রতিরোধ করেছেন এবং তাদের কঠোর নিন্দা করেছেন।

‘উরওয়া বলেন: একবার আমি ফুরাই’য়ার ছেলে হাস্সানকে আয়িশার (রা) সামনে গালি দিই। আয়িশা (রা) বললেনঃ ভাতিজা, তুমি কি এমন কাজ থেকে বিরত হবে না? তাঁকে গালি দিওনা। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) পক্ষ থেকে কুরাইশদের জবাব দিতেন।

একবার কতিপয় মহিলা আয়িশার (রা) উপসিথতিতে হাস্সানকে নিন্দমন্দ করে। আয়িশা (রা) তাদেরকে বললেন: তোমরা তাঁকে নিন্দামন্দ করোনা। আল্লাহ তা’য়ালা যে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দানের অঙ্গিকার করেছেন, তিনি তা পেয়ে গেছেন। তিনি অন্ধ হয়ে গেছেন। আমি আশা করি তিনি কুরাইশ কবি আবু সুফইয়ান ইবনুল হারিসের কবিতার জবাবে রাসূলুল্লাহর (সা) প্রশংসায় যে কবিতা রচনা করেছেন তার বিনিময়ে আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করবেন। একথা বলে তিনি হাস্সানের হাজাওতা মুহাম্মাদান ফা আজাবতু আনহু’ কবিতাটির কয়েকটি লাইন পাঠ করেন।

উল্লেখিত বর্ণনাসমূহ দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রা) কবি হাস্সানকে ক্ষমা করেছিলেন। এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আয়িশার (রা) সাথে তাঁর সুসম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।

রাসূলুল্লাহর (সা) ইনতিকালের পর হাস্সান (রা) দীর্ঘদিন জীবিত ছিলেন। ত৭ার মৃত্যু সময় নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য আছে। আবন ইসহাকের মতে িিতনি হিজরী ৫৪ সনে মারা যান। আল হায়সাম ইবন আদী বলেন: হিজরী ৪০ সনে মারা যান। ইমাম জাহাবী বলেন: তিনি জাবালা ইবন আল-আয়হাম ও আমীর মু’য়াবিয়ার দরবারে গিয়েছেন। তাই কইবন সা’দ বলেছেন: মু’য়াবিয়ার খিলাফতকালে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মতে, তিনি হিজরী ৫৪/খ্রীঃ ৬৭৪ সনে ১২০ বছর বয়সে মারা যান।

আবু’ উবায়েদ আল-কাসেম ইবন সাল্লাম বলেন: হিজরী ৫৪ সনে হাকীম ইবন হিযাম’ আবু ইয়াযীদ হুয়াইতিব ইবন আবদিল উয্যা, সা’ঈদ ইবন ইয়ারবু আল মাখযুমী ও হাস্সান ইবন সাবিত আল-আনসারী মৃত্যুবরণ করেন। এঁদের প্রত্যেকে ১২০ বছর জীবন লাভ করেছিলেন।

হাস্সানের (রা) স্ত্রীর নাম ছিল সীরীন। তিনি একজন মিসরীয় কিবতী মহিলা। আল-বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। রাসূলে কারীম (সা) সাহাবী হযরত হাতিব ইবন বালতা’য়াকে (রা) ইস্কান্দারিয়ার শাসক ‘মাকুকাস’-এর নিকট দূত হিসেবে পাঠান। মাকুকাস রাসূলুল্লাহর (সা) দূতকে যথেষ্ট সমাদর করেন। ফেরার সময় তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) জন্য কিছু উপহার পাঠান। এই উপহার সামগ্রীর মধ্যে তিনটি কিবতী দাসীও ছিল। রাসূলুল্লাহর (সা) ছেলে ইবরাহীমের মা মারিয়্যা আল কিবতিয়্যা (রা) এই দাসী ক্রয়ের একজন। অন্য দুইজন দাসীর মধ্যে রাসূল (সা) হাস্সান ইবন সাবিত ও মুহাম্মদ ইবন কায়স আল-আবদীকে একটি করে দান করেন। হাস্সানকে প্রদত্ত দাসীটি ছিলেন উম্মুল মুমিনীন মারিয়্যা আল-কিবতিয়্যার বোন। নাম ছিল সীরীন। তাঁরই গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন হাস্সানের (রা) ছেলে আবদুর রহমান। এই আবদুর রহমান এবং রাসূলুল্লাহর (সা) ছেলে ইবরাহীম ছিলেন পরস্পর খালাতো ভাই।

পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ফারে’ পর্বতের দূর্গ ছিল হাস্সানের (রা) পৈতৃক বাসস্থান। আবু তালহা (রা) যখন বীরহা’ উদ্যান ত৭ার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে সাদাকা হিসেবে বণ্টন করে দেন তখন সেখান থেকে একটি অংশ লাভ করেন। এরপর তিনি এখানে বাসস্থান নির্মাণ করেন। স্থানটি আল-বাকী’র নিকটবর্তী। পরে আমীর মু’য়াবিয়া (রা) তাঁর নিকট থেকে সিটি খরীদ করে সেখানে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন। যা পরে কাসরে বনী হুদায়লা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। কারো কারো ধারণা যে, রাসূল (সা) এ ভূমি তাঁকে দান করেন। কিন্তু তা সঠিক নয়। উপরে উল্লেখিত আমাদের বক্তব্য সাহীহ বুখারীর বর্ণনা দ্বারা সমর্থিত।

হাস্সানের (রা) মাথার সামনের দিকে এক গোছা লম্বা চুল ছিল। তিনি তা দুই চোখের মাঝখানে সব সময় ছেড়ে রাখতেন। ভীষণ বাক্পটু ছিলেন। এ কারণে বলা হতো, তিনি ত৭ার জিহবার আগা নাকের আগায় ছোঁয়াতে পারতেন। তিনি বলতেন, আরবের কোন মিষ্টভাষীই আমাকে তুষ্ট করতে পারে না। আমি যদি আমার জিহ্বার আগা কারো মাথার চুলের ওপর রাখি তাহলে সে মাথা ন্যাড়া হয়ে যাবে। আর যদি কোন পাথরের ওপর রাখি তাহলে তা বিদীর্ণ হয়ে যাবে।

হাস্সান (রা) রাসূলুল্লাহর (সা) কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর থেকে যাঁরা হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁদের মধ্যে বিশেষ উল্লেষযোগ্য হলেনঃ আল-বারা’ ইবন আযিব, সা’ঈদ ইবন মুসাদ্যিব, আবূ সালামা ইবন আবদির রহমান, উহওয়া ইবন খুরাইর আবুল সাহান মাওলা নবী নাওফাল, খারিজা ইবন যায়িদ ইবন সাবিত, ইয়াহইয়া ইবন আবদির রহমান ইবন হাতিব আয়িশা আবু হুরাইরা, সুলায়মান ইবন ইয়াসার আবদুর রহমান ইবন হাসসান প্রমুখ। ইবন সা’দ হাস্সানকে (রা) দ্বিতীয় তাবকায় (স্তর) উল্লেখ করেছেন।

রাসূলুল্লাহর (সা) ইনতিকালের পর প্রথম দুই খলীফা আবূ বকর ও উমারের (রা) খিলাফতকালে হাস্সানের (রা) কোন রাজনৈতিক তৎপরতা দেখা যায় না। উসমানের (রা) খিলাফতের সময় ত৭র মধ্যে রআবার আসাবিয়্যাতের (অন্ধ পক্ষপাতিত্ব) কিচু লক্ষণ দেখা যায়। তিনি খলীফা উসমানের (রা) পক্ষ নিয়ে বনু উমাইয়্যাকে আলীর (রা) বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চেষ্টা করেন। খলীফা উসমান (রা) বিদ্রোহীদের হাতে শাহাদাত বরণ করলে তিনি বনু হাশিম, বিশেষতঃ আলীকে (রা) ইঙ্গিত করে কিছু কবিতা রচনা করেছেন।

হাস্সানের (র) জীবনে কবিত্ব একটি স্বতন্ত্র শিরোনাম। কাব্য প্রতিভা সর্বকালে সকল জাতি-গোষ্ঠীর নিকট সমাদৃত। বিশেষ করে প্রাক-ইসলামী আরবে এ গুণটির আবার সবচেয়ে বেশী কদর ছিল। কবিতা চর্চা ছিল সেকালের আরববাসীর এক বিশেষ রুচি। তৎকালীন আরবে কিছু গোত্র ছিল কবির খনি বা উৎস খ্যাত। উদাহরণ স্বরূপ কায়স, রাবী’য়া, তামীম, মুদার, য়ামন প্রমুখ গোত্রের নাম করা যায়। এ সকল গোত্রে অসংখ্য আরবী কবির জন্ম হয়েছে। মদীনার আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয় ছির শেষোক্ত য়ামন গোত্রের অন্তর্ভূক্ত। হাস্সানের (রা) পৈত্রিক বংশধারা উপরের দিকে এদের সাথে মিলিত হয়েছে।

উপরে উল্লেখিত গোত্রসমূহের মধ্যে আবার কিচু খান্দানে কবিত্ব বংশানুক্রমে চলে আসছিল। হাস্সানের (রা) খান্দানটি ছির তেমনই। উপরের দিকে তাঁর পিতামহ ও পিতা, নীচের দিকে তাঁর পুত্র আবদুর রহমান, পৌত্র সা’ঈদ ইবন আবদির রহমান এবং তিনি নিজে সকলেই ছিরেন ত৭াদের সমকালে একেকজন শ্রেষ্ঠ কবি। হাস্সানের (রা) এক মেয়েও একজন বড় মাপের কবি ছিলেন। হাস্সান (রা) তাঁর বার্দ্ধক্যে এক রাতের কবিতা রচনা করতে বসেছেন। কয়েকটি শ্লোক রচনার পর আর ছন্দ মিলাতে পারছেন না। তাঁর অবস্থা বুঝতে পেরে মেয়ে বললেন: বাবা, মনে মনে হচ্ছে আপনি আর পাররছন না। বললেন: ঠিকই বলেছো। মেয়ে বললেন: আমি কি কিচু শ্লোক মিলিয়ে দেব? বললেন: পারবে? মেয়ে বললেন: হাঁ, তা পারবো। তখন বৃদ্ধ একটি শ্লোক বললেন, আর তার সাথে মিল রেখে একই ছন্দে মেয়েও একটি শ্লোক রচনা করলেন। তখন হাস্সান বললেন: তুমি যতদিন জীবিত আছ আমি আর একটি শ্লোক ও রচনা করবো না। মেয়ে বললেন: তা হয় না; বরং আমি আর আপনার জীবদ্দশায় কোন কবিতা রচনা করবো না।

প্রাক-ইসলামী ‘আমলের অগণিত আরব কবির অনেকে ছিলেন’ আসহাবে মুজাহ্হাবাত’ নামে খ্যাত। মুজাহ্হাবাত’ শব্দটি জাহাব’ থেকে নির্গত। ‘জাহাব’ অর্থ স্বর্ণ। যেহেুত এ সকল কবিদের কিছু অনুপম কবিতা স্বর্নের পানি দ্বারা লিখিত হয়েছিল, এজন্য সেই কবিতাগুলিকে ‘মুজাহ্হাবাত’ বলা হতো। আর ‘আসহাব’ শব্দটি ‘সাহেব’ শব্দের বহুবচন। যার অর্থ ‘অধিকারী, মালিক।’ সুতরাং’ আসহাবে মুজাহ্হাবাত’ অর্থ স্বর্ণ দ্বারা লিখিত কবিতা সমূহের অধিকারী বা রচয়িতাগণ। পরবর্তীকালে প্রত্যেক কবির সর্বোত্তম কবিতাটিকে মুজাহ্হাব’ বলা হতে থাকে।


আরবী কবিদের চারটি তাবকা বা স্তর।
১. জাহিলী বা প্রাক-ইসলামী কালের কবি,
২.মুখাদরাম-যে সকল কবি জাহিলী ও ইসলামী উভয় কাল পেয়েছেন,
৩. ইসলামী-যারা ইসলামের অভ্যূদয়ের পর জন্মগ্রহণ করেন এবং কবি হয়েছেন,
৪. মুহদাস-আব্বাসী বা পরবর্তীকালের কবি। এ দিক দিয়ে হযরত হাস্সান দ্বিতীয় স্তরের কবি। তিনি জাহিলী ও ইসলাম-উভয়কালেই পেয়েছেন।

কাব্য প্রতিভায় হাস্সান (রা) ছিলেন জাহিলী আমলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। ইমাম আল-আসমা’ঈ বলেন: হাস্সানের জাহিলী আমলের কবিতা শ্রেষ্ঠ কবিতাসমূহের অন্তর্গত।

হাস্সানের (রা) কাব্য জীবনের দুইট অধ্যায়। একটি জাহিলী ও অন্যটি ইসলামী! যদিও দুইটি ভিন্নধর্মী অধ্যায়, তথাপি একটি অপরটি থেকে কোন অংশে কম নয়। জাহিলী জীবনে তিনি গাস্সান ও হীরার রাজন্যবর্গের স্তুতি ও প্রশংসাগীতি রচনার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। ইসলামী জীবনে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন রাসূলুল্লাহর (সা) প্রশংসা, তাঁর পক্ষে প্রতিরোধ ও কুরাইশদের নিন্দার জন্য। তিনি সমকালীন শহরে কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি বলে স্বীকৃত। বিদ্রপাত্মাক কবিতা রচনায় অতি দক্ষ। আবু উবায়দাহ্ বলেন: অন্য কবিদের ওপর হাস্সানের মর্যাদা তিনটি কারণে। জাহিলী আমলে তিনি আনসারদের কবি, রাসূলুল্লাহর (সা) নুবুওয়াতের সময়কালে ‘শা’য়িরুর রাসূল’ এবং ইসলামী আমলে গোটা য়ামনের কবি।

জাহিলী আরবে উকাজ মেলায় প্রতি বছর সাহিত্য-সংস্কৃতির উৎসব ও প্রতিযোগিতা হতো। এ প্রতিযোগিতায় হাস্সানও অংশগ্রহণ করতেন। একবার তৎকালীন আরবের শ্রেষ্ঠ কবি আন-নাবিগা আয্-যুবইয়ানী (মৃতঃ ৬০৪ খ্রীঃ) ছিলেন এ মেলার কাব্য বিচারক। কবি হাস্সান ছিলেন একজন প্রতিযোগী। বিচারক আন-নাবিগা, আল-শা’শাকে হাস্সানের তুলনায় শ্রেষ্ঠ কবি বলে রায় দিলে হাস্সান তার প্রতিবাদ করেন এবং নিজেকে শ্রেষ্ঠ কবি বলে দাবী করেন।

আবুল ফারাজ আল-ইসফাহানী বলেন: আল-আ’শা আবু বাসীর প্রথমে কবিতা পাঠ করেন। তারপর পাঠ করেন হাস্সান ও অন্যন্যা কবিরা। সর্বশেষে তৎকালীন আরবের শ্রেষ্ঠ মহিলা কবি আল-খান্সা বিনত’ আমর তাঁর কবিতা পাঠ করেন। তাঁর পাঠ শেষ হলে বিচারক আন-নাবিগা বলেন: আল্লাহর কসম! একটু আগে পঠিত আবু বাসীর আল-আ’শার কবিতাটি যদি আমি না শুনতাম তাহলে অবশ্যই বলতাম, তুমি জিন ও মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর এ রায় শোনার সাথে সাথে হাস্সান উঠে দাঁড়ান এবং বলেন: আল্লাহর কসম! আমি আপনার পিতা ও আপনার চেয়ে বড় কবি। আন-নাবিগা তখন নিজের দুইটি চরণ আবৃত্তি করে বলেনঃ ভাতিজা! তুমি এ চরণ দুইটির চেয়ে সুন্দর কোন চরণ বলতে পারবে কি? তখন হাস্সান তাঁর কথার জন্য লজ্জিত হন।

হাস্সান (রা) জাহিলী জীবনেই কাব্য প্রতিভার স্বীকৃতি লাভ করেন। গোটা আরবে এবং পার্শ্ববর্তী রাজ দরবারসমূহে তিনি খ্যাতিমান কবিদের তালিকায় জিনের নামটি লেখাতে সক্ষম হন। এরই মধ্যে তার জীবনের ষাটটি বছর পেরিয়ে গেছে। এরপর তিনি ইসলারেম দা’ওয়াত রাভ করলেন। রাসূল (সা) মদীনায় হিজরাত করে আসলেন। হাস্সানের কাব্য-জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা হলো। তিনি স্বীয় কাব্য প্রতিভার যথাযথ হক আদায় করে ‘শা’য়িরুর রাসূল’ খিতাব অর্জন করলেন।

রাসূলুল্লাহ (সা) মদীনায় হিজরাত করে আসার পর মক্কার পর মক্কার কুরাইশরা এ আশ্রয়স্থর থেকে তাঁকে উৎখাতের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে। এক দিকে তারা সম্মুখ সময়ে অবতীর্ণ হয়, অন্যদিকে তারা তাদের কবিদের লেলিয়ে দেয়। তারা আল্লাহর রাসূল, ইসলাম ও মুসলমনাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রচনা ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুত করে কবিতা রচনা করতো এবং আরববাসীদেরকে তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতো। এ ব্যাপারে মক্কার কুরাইশ কবি আবু সুফইয়ান ইবনুল হারেস ইবন আবদিল মুত্তালিব, ‘আবদুল্লাহ ইবন যাব’য়ারী, ’আমর ইবনুল আস ও দাররার ইবনুল খাত্তাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তাদের ব্যঙ্গ বিদ্রুপ ও নিন্দাসূচক কবিতা রাসূল (সা) সহ মুসলমানদেরকে অস্থির করে তোলে।

এ সময় মদীনায় মুহাজিরদের মধ্যে আলী (রা) ছিলেন একজন নামকরা কবি। মদীনার মুসলমানরা তাঁকে অনুরোধ করলো মক্কার কবিদের জবাবে একই কায়দায় ব্যঙ্গ কবিতা রচনার জন্য। আলী (রা) বললেন, রাসূল (সা) আমাকে অনুমতি দিলে আমি তাদের জবাব দিতে পারি। একথা রাসূলুল্লাহর (সা) কানে গেলে তিনি বললেন, আলী একাজের উপযুক্ত নয়। যারা আমাকে তরবারি দিয়ে সাহায্য করেছে, আমি আলীকে তাদের সাহায্যকারী করবো। হাস্সান উপস্থিত দিছেন। তিনি নিজের জিহ্বা টেনে ধরে বললেন: আমি সানন্দে এ দায়িত্ব গ্রহণ করলাম। তাঁর জিহ্বাটি ছিল সাপের জিহ্বার মত, এক পাশে কালো দাগ। তিনি সেই জিহ্বা বের করে স্বীয় চিবুক স্পর্শ করলেন। তখন রাসূল (সা) বললেন, তুমি কুরাইশদের হিজা (নিন্দা) কিভাবে করবে? তাতে আমারও নিন্দা হয়ে যাবে না? আমিও তো তাদেরই একজন হাস্সান বরলেন: আমি আমার নিন্দা ও ব্যঙ্গ থেকে আপনাকে এমনভাবে বের করে আনবো যেমন আটা চেলে চুল ও অন্যান্র ময়লা বের করে আনা হয়। রাসূল (সা) বললেন: তুমি নসবনামার (কুষ্ঠি বিদ্যা) ব্যাপারে আবু বকরের সাহায্য নেবে। তিনি কুরাইশদের নসব বিদ্যায় বিষে পারদর্শী। তিনি আমার নসব তোমাকে বলে দেবেন।

জাবির (রা) বলেন। আহযাব যুদ্ধের সময় একদিন রাসূল (সা) বললেন: কে মুসলমানদের মান-সম্মা রক্ষা করতে পারে? কা’ব ইবন মালিক বললেন: আমি। আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা বললেন: আমি। হাস্সান বললেন: আমি রাসূল (সা) হাস্সানকে বললেন: হাঁ, তুমি। তুমি তাদের হিজা (নিন্দা) কর। তাদের বিরুদ্ধে রুহুল কুদুস জিবরীল তোমাকে সাহায্য করবেন।

হাস্সান (রা) আবু বকরের (রা) নিকট যেতেন এবং কুরাইশ বংশের বিভিন্ন শাখা, ব্যক্তির নসব ও সম্পর্ক বিষয়ে নানা প্রশ্ন করতেন। আবু বকর বলতেন, অমুক অমুক মহিলাকে মুক্ত রাখবেন। তাঁরা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহর (সা) দাদী। অন্য সকল মহিলাদের সম্পর্কে বলবেন। হাস্সান সে ময় কুরাইশদের নিন্দায় একটি কাসীদা রচনা করেন। তাতে তিনি কুরাইশ সন্তান আবদুল্লাহ, যুবাইর, হামযা, সাফিয়্যা, আব্বাস ও দারবার ইবন আবদিল মুত্তালিবকে বাদ দিয়ে একই গোত্রের তৎকালীন মুশরিক নেতা ও কবি আবু সুফইয়ান ইবনুল হারেস-এর মা সুমাইয়্যা ও তার পিতা আল-হারেসের তীব্র নিন্দা ও ব্যঙ্গ করেন।

উল্লেখ্য যে, এই আবু সুফইয়ান ইবনুল হারেস ছিলেন রাসূলুল্লাহর (সা) চাচাতো ও দুধ ভাই। ইসলামপূর্ব সময়ে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে তাঁর খুবই ভাব ছিল। নুবুওয়াত প্রাপ্তির পর তার সাথে দুশমনি শুরু হয়। তিনি ছিলেন একজন কবি। রাসূল (সা) ও মুসলমানদের নিন্দায় কবিতা রচনা করতেন। মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হুনাইন যুদ্ধে যোগদান কনের। এই আবু সুফইয়ানের নিন্দায় হাস্সান রচনা করেন এক অববদ্য কাসীদা। তার কয়েকটি শ্লোকের অনুবাদ নিম্নরূপ:

১.তুমি মুহাম্মদের নিন্দা করেছো, আমি তাঁর পক্ষ থেকে জবাব দিয়েছি। আর এর প্রতিদান রয়েছে আল্লাহর কাছে।

২.তুমি নিন্দা করেছো একজন পবিত্র, পুণ্যবান ও সত্যপন্থী ব্যক্তির। যিনি আল্লাহর পরম বিশ্বাসী এবং অঙ্গিকার পালন করা যাঁর স্বভাব।

৩.তুমি তাঁর নিন্দা কর? অথচ তুমিতো তাঁর সময়ক্ষ নও। অতএব, তোমাদের নিকৃষ্ট ব্যক্তিরা তোমাদের উৎকৃষ্টদের জন্য উৎসর্গ হোক।

৪.অতএব, আমার পিতা, তাঁর পুত্র এবং আমার মান-ইজ্জত মুহাম্মদরে মান-সম্মান রক্ষায় নিবেদিত হোক।

হাস্সানের (রা) এ কবিতাটি শুনে সুফইয়ান ইবনুল হারিস মন্তব্য করেন: নিশ্চয় এর পিছনে আবু বকরের হাত আছে। এভাবে রাসূলুল্লাহর (সা) প্রশংসায় ও কাফিরদের নিন্দায় ৭০টি বয়েত (শ্লোক) রচজনায় জিবরীল (আ) তাঁকে সাহায্য করেন।

প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কাব্যের প্রতিরোধ ব্যুহ রচনায় হাস্সানের (রা) এমন প্রয়াসে রাসূলে কারীম (সা) দারুণ খুশী হতেন। একবার তিনি বলেনঃ ‘হাস্সান! আল্লাহ রাসূলে পক্ষ থেকে তুমি জবাব দাও। হে আল্লাহ! তুমি তাকে রুহুল কুদুস জিবরীলের দ্বারা সাহায্য কর।’

আর একবার রাসূল (সা) হাস্সানকে (রা) বললেন: ‘তুমি কুরাইশদের নিন্দা ও বিদ্রুপ করতে থাক, জিবরীল তোমার সাথে আছেন।

একটি বর্ণনায় এসেছে। রাসূল (সা) বলেন: আমি আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহাকে কুরাইশ কবিদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের প্রত্যুত্তর করতে বললাম। সে সুন্দর প্রত্যুত্তর করলো। আমি কা’ব ইবন মালিককেও বললাম তাদের জবাব দিতে। সে উত্তম জবাব দিল। এরপর আমি হাস্সান ইবন সাবিতকে বললাম। সে যে জবাব দিল তাদে সে নিজে যেমন পরিতৃপ্ত হলো, আমাকেও পরিতৃপ্ত করলো।

হাস্সানের (রা) কবিতা মক্কার পৌত্তলিক কবিদের মধ্রে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতো সে সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেন: ‘হাস্সানের কবিতা তাদের মধ্যে তীরের আঘাতের চেয়েও তীব্র আঘাত করে।’

‘আয়িশা (রা) থেকে উরওয়া বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা) তাঁর মসজিদে হাস্সানের জন্য একটি মিন্বর তৈরী করারন। তার ওপর দাঁড়িয়ে তিনি কাফির কবিদের জবাব দিতেন। তিনি এ মিন্বরে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) প্রশংসা ও পরিচিতিমূলক কবিতা পাঠ করতেন এবং কুরাইশ কবিদের জবাব দিতেন, আর রাসূল (সা) তা শুনে দারুণ তুষ্ট হতেন। এ কারণে ‘আয়িশা (রা) একবার রাসূলুল্লাহর (সা) পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, তিনি তেমনই ছিলেন যেমন হাস্সান বলেছে।

হিজরী নবম সনে (খ্রীঃ ৬৩০) আরবের বিখ্যাত গোত্র বনু তামীমের ৭০ অথবা ৮০ জনের একটি প্রতিনিধি দল মদীনায় রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট এলা। এই দলে বনু তামীমের আয্-যিবিরকান ইবন বদরের মত বাঘা কবি ও উতারিদ ইবন হাজিরের মত তুখোড় বক্তাও ছিলেন। তখন গোটা আরবে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে। তার আগের বছর মক্কাও বিজিত হয়েছে। তখন গোটা আরবে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে। তার আগের বছর মক্কাও বিজিত হয়েছে। জনসংখ্রা, শক্তি ও মর্যাদার দিক দিয়ে গোটা বনু তামীমের তখন ভীষণ দাপট। তারা রাসূলুল্লাহর (সা) সামনে উপস্থিত হয়ে আরবের প্রথা অনুযায়ী বললো: ‘মুহাম্মাদ! আমরা এসেছি আপনার সাথে গর্ব ও গৌরব প্রকাশের প্রতিযোগিতা করতে। আপনি আমাদের খতীবদের অনুমতি দেওয়া হলো। তখন বনু তামীমের পক্ষে তাদের শ্রেষ্ঠ খতীব উতারিদ ইবন বদর দাঁড়ালেন এবং তাদের গৌরব ও কীর্তির বর্ণনা দিলেন। রাসূলুল্লাহর (সা) পক্ষে জবাব দিলে প্রখ্যাত খতীব সাবিত ইবন কায়স। তারপর বনু তামীমের কবি যিবিরকান ইবন বদর দাঁড়ালেন এবং তাদের গৌরব ও কীর্তি কথায় ভরা স্বারচিত কাসীদা পাঠ কররেন। তাঁর আবৃত্তি শেস হলে রাসূল (সা) বললেন: হাস্সান, ওঠো! লোকটির জবাব দাও।’ হাস্সান দাঁড়িয়ে প্রতিপকষ কবির একই ছন্দ ও অন্তমিলে তাৎক্ষণিকভাবে রচিত এক দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। তাঁর এ কবিতা পক্ষ-বিপক্ষের সকলকে দারুণ মুদ্ধ করে। বনু তামীমের শ্রোতার এক বাক্যে সেদিন বলে, মুহাম্মদের খতীব আমাদের খতীব অপেক্ষা এবং তার কক্ষি আমাদের কবি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

হাস্সানের (রা) জাহিলী কবিতার বিষয়বস্তু ছিল গোত্রীয় ও ব্যক্তিগত মাদাহ (প্রশংসা) ও হিজা (নিন্দা ও ব্যঙ্গ বিদ্রুপ)। তাছাড়া শোকগাঁথা, মত পানের আড্ডা ও মদের বর্ণনা, বীরত্ব, গর্ব ও প্রেম সংগীত রচনা করেছেন। ইসলামী জীবনের কবিতায় তিনি অন্তর দিয়ে রাসূলুল্লাহর (সা) প্রশংসা করেছেন, আর নিন্দা করেছেন পৌত্তলিকদের যারা আল্লাহ রাসূল ও ইসলামের সাথে দুশমনী করেছে।

ইসলাম তাঁর কবিতায় সততা ও মাধুর্য দান করেছে। কবিতায় তিনি ইসলামের বহু বিষয়ের বর্ণনা ও ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। কবিতায় পবিত্র কুরআনের প্রচুর উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। এ কারণে যারা আরবী কবিতায় গাতনুগতিকতার বন্ধন ছিন্ন করে অভিনবত্ব আনয়নের চেষ্টা করেছেন,হাস্সানকে তাদের পুরোধা বলা সঙ্গত। রাসূলুল্লাহর (সা) প্রশংসা গীতি বা না’ তে রাসূল রচনার সূচনাকারী তিনিই। আরবী কবিতায় জাহিলী ও ইসলামী আমলে মাদাহ (প্রশংসা গীতি) রচনায় যাঁরা কৃতিত্ব দেখিয়েছেন, হাস্সান তাদের অন্যতম।

ইবনুল আসীর বলেনঃ পৌত্তলিক কবিদের নিন্দা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও অপপ্রচারের জবাব দানের জন্য তৎকালীন আরবের তিনজন শ্রেষ্ঠ কবি মদীনায় রাসূলুল্লাহর (সা) পাশে এসে দাঁড়ান। তাঁরা হলেন হাস্সান ইবন সাবিত, কা’ব ইবন মালিক ও আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা। হাস্সান ও কা’ব প্রতিপক্ষ কবিদের জবাব দিতেন তাদেরই মত বিভিন্ন ঘটনা, যুদ্ধ-বিগ্রহের জয়-পরাজয়, কীর্তি ও গৌরব তুলে ধরে। আর আবদুল্লাহ তাদের কুফরী ও দের দেবীর পূজার কথা উল্লেখ করে ধিক্কার দিতেন। তাঁর কবিতা প্রতিপক্ষের ওপর তেমন বেশী প্রভাব ফেলতো না। তবে অন্য দুইজনের কবিতা তাদেরকে দারুণভাবে আহত করতো

হাস্সান (রা) আল্লাহ ও রাসূলের (সা) প্রতি কুরাইশদের অবাধ্যতা ও তাদের মূর্তিপূজার উল্লেখ করে নিন্দা করতেন না। কারণ, তাতে মেন ফল না হওয়ারই কথা। তারা তো রাসূলকে (সা) বিশ্বাসই করেনি। আর মূর্তি পূজাকেই তারা সত্য বলে বিশ্বাস করতো। তাই তিনি তাদের বংশগত দোষ-ক্রুটি, নৈতিকতার স্বলন, যুদ্ধে পরাজয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে তাদেরকে চরমভাবে আহত করতেন। আর একাজে আবু বকর (রা) তাঁকে জ্ঞান ও তথ্য দিয়ে সাহায্য করতেন।

প্রাচীন আরবী কবিতার যতগুলি বিষয় বৈচিত্র আছে তার সবগুলিতে হাস্সানের (রা) পদচারণা পাওয়া যায়। এখানে সংক্ষেপে তাঁর কবিতার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:

১.উপমার অভিনবত্ব: একথা সত্য যে প্রাচীন কবিতা কোন উন্নত সভ্যতার মধ্যে সৃষ্টি হয়নি। তবে একথাও অস্বীকার করা যাবে না যে, বড় সভ্যতা দ্বারা তা অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়েছে। আরব সভ্যতার সত্যিকার সূচনা হয়েছে পবিত্র কুরআনের অবতরণ ও রাসূলুল্লাহর (সা) আবির্ভাবের সময় থেকে। কুরআন আরবী বাচনভঙ্গি ও বাক্যালস্কারের সবচেয়ে বড় বাস্তব মুজিয়া। এই কুরআন ানেক বড় বড় বাগীকে হতবাক করে দিয়েছে। এ কারণে সে সময়ের যে কবি ইসলাম গ্রহণ করেছেন তাঁর মধ্যে বাকপটুতা ও বাক্যালঙ্কারের এক নতুন শক্তির সৃষ্টি হয়। এ শ্রেণীর কবিদের মধ্যে হাস্সান ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। এ শক্তি ত৭ার মধ্যে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশী দেখা যায়।

পবত্রি কুরআনে সাহাবায়ে কিরামের গুণ বৈশিষ্ট্যের বিবরণ দিতে গিয়ে বলা হয়েছে

সিজদার চিহ্ন তাদের মুখমণ্ডলে স্পষ্ট বিদ্যামন। হাস্সান উক্ত আয়াতকে উসমানের (রা) প্রশংসায় রূপক হিসেবে ব্যবহার করে হত্যাকারীদের ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
তারা এই কাঁচা-পাকা কেশধারী, ললাটে সিজদার চিহ্ন বিশিষ্ট লোকটিকে জবাই করে দিল, যিনি তাসবীহ পাঠ ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করতেন।’

এই শ্লোকে কবি উসমানের চেহারাকে সিজদার চিহ্নধারী বলেছেন। তৎকারীন আরবী কবিতায় এ জাতীয় রূপকের প্রয়োজ সম্পূর্ণ নতুন।

২. চমৎকার প্রতীকের ব্যবহার: আরবী অলঙ্কার শাস্ত্রে ‘তাতবী’ বা ‘তাজাওয়ায’ নামে এক প্রকার প্রতীকের নাম দেখা যায়। তার অর্থ হলো, কবি কোন বিষয়ের আরোচনা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু অকম্মাৎ অতি সচেতনভাবে তা ছেড়ে দিয়ে এমন এক বিসয়ের বর্ণনা কনে যাতেতাঁর পূর্বের বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে। হাস্সানের কবিতায় এ জাতীয় প্রতীক বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

আরবে অসংখ্য গোত্র দিগন্ত বিস্তৃত মরুভূমির মধ্যে বসবাস করতো। তারা ছিল যাযাবর। সেখানে পানি ও পশুর চারণভূমি পাওয়া যেত সেখানেই তাঁবু গেড়ে অবস্থায়ী বাসস্থান পড়ে তুরতো। পানি ও পশুর খাদ্য শেষ হলে নতুন কোন কোন স্থানের দিকে যাত্রা করতো। এভাবে তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াতো। আরব কবিরা তাদের কাব্যে এ জীবনকে নানভাবে ধরে রেখেছেন। তবে হাস্সান বিষয়টি যেভাবে বর্ণনা করেছে তাতে বেশ অভিনবত্ব আছে। তিনি বলছেন : ‘জাফ্নার সন্তানরা তাদের পিতা ইবন মারিয়্যার কবরের পাশেই থাকে, তিনি খুবই উদার ও দানশীল।’

প্রশংসিত ব্যক্তি যেহেতু আরব বংশোদ্ভুত। এ কারণে তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গি করে বলে দিলেন, এঁরা আরব হলেও যাযবর নন, বরং রাজন্যবর্গ। কোন রকম ভীতি ও শঙ্কা ছাড়াই তাঁরা তাঁদের পিতার কবরের আশে-পাশেই বসবাস করেন। তাঁদের বাস্থান সবুজ-শ্যামল। একারণে তাঁদের স্থান থেকে স্থানান্তরে ছুটে বেড়ানোর প্রয়োজন পড়েনা।

৩. রূপকের অভিনবত্ব: আরব কবিরা কিছু কথা রূপক অর্থে এবং পরোক্ষে বর্ণনা করতেন। যেমন: যদি উদ্দেশ্যে হয় একথা বলা যে, অমুক ব্যক্তি অতি মর্যাদাবান ও দানশীল, তাহলে তাঁরা বলতেন, এই গুণগুলি তার পরিচ্ছেদের মধ্যেই আছে। হাস্সানের (রা) কবিতায় রূপকের অভিনবত্ব দেখা যায়। যেমন একটি শ্লোকে তিনি চলতে চান, আমরা খুবই কুলিন ও সন্তুন্তু। কিন্তু কথাটি তিনি বলেছেন এভাবে: ‘সম্মান ও মর্যদা আমাদের আঙ্গিনায় ঘর বেঁধেছে এবং তার খুঁটি এত মজবুত করে গেঁড়েছে যে, মানুষ তা নাড়াতে চাইলেও নাড়াতে পারে না।’ এই শ্লোকে সম্মান ও মর্যদার ঘর বাঁঢ়া, সুদৃঢ় পিলার স্থাপন করা এবং তা টলাতে মানুষের অক্ষম হওয়া এ সবই আরবী কাব্যে নতুন বর্ণনারীতি।

৪. ছন্দ, অন্তমিল ও স্বর সাদৃশ্যের আশ্চর্য রকমের এই সৌন্দর্য তাঁর কবিতায় দেখা যায়। শব্দের গাঁথুনি ও বাক্যের গঠন খুবই শক্ত, গতিশীল ও সাবলীল। প্রথম শ্লোকের প্রথম অংশের শেষ পদের শেষ বর্ণটি তাঁর বহু কাসীদার প্রতিটি শ্লোকের শেষ পদের শেষ বর্ণ দেখা যায়। আরবী ছন্দ শাস্ত্রে যাকে কাফিয়া’ বলা হয়। আরবী বাক্যের এ ধরনের শিল্পকারিতা এর আগে কেবল ইমরুল কায়সের কবিতায় লক্ষ্য করা যায়। তবে তাঁর পরে বহু আরব কবি নানা রকম শিল্পকারিতার সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। আব্বাসী আমলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক কবি আবুল আলা আল-মা’য়াররীর একটি বিখ্যাত কাব্যের নাম নুযুমু মালা ইয়ালযাযু’। কবিতা রচনায় এমন কিছু বিষয় তিনি অপরিহার্যরূপে অনুসরণ করেছেন, যা আদৌ কবিতার জন্য প্রয়োজন নয়। তাঁর এ কাব্যগ্রন্থটি এ ধররেন কবিতার সমষ্টি। এটা তাঁর একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ।

৫. হাস্সানের কবিতার আর একটি বৈশিষ্ট হলো, তিনি প্রায়ই এমন সব শব্দ প্রয়োগ করেছেন যা ব্যাপক অর্থবোধক। তিনি হয়তো একটি ভাব স্পষ্ট করতে চেয়েছেন এবং সেজন্য এমন একটি শব্দ প্রয়োগ করেছেন যাতে উদ্দিষ্ট বিষয়সহ আরো অনেক বিষয় সুন্দরভাবে এসে গেছে।

৬. অতিরঞ্জন ও অতিকথন: হাস্সানের ইসলামী কবিতা যাবতীয় অতিরঞ্জন ও অতিকথন থেকে মুক্ত বলা চলে। একথা সত্য যে কল্পনা ও অতিরঞ্জন ছাড়া কবিতা হয় না। তিনি নিজেই বলতেন, মিথ্যা বলতে ইসলাম নিষেধ করেছে। এ কারণে অতিরঞ্জন ও অতিকথন, যা মূলতঃ মিথ্যারই নামান্তর আমি একেবারেই ছেড়ে দিয়েছি।

শুধু তাই নয়, তাঁর জাহিলী আমলে লেখা কবিতায়ও এ উপাদান খুব কম ছিল। আর এ কারণে তৎকারীন আরবের শ্রেষ্ঠ কবি আন-নাবিগা কবি হাস্সানের একটি শ্লোকের অবমূল্যায়ন করলে দুই জনের মধ্যে ঝগড়া হয়।

হাস্সানের ইসলামী কবিতার মূল বিষয় ছিল কাফিরদের প্রতিরোধ ও নিন্দা করা। কাফিরদের হিজা ও নিন্দা করে তিনি বহু কবিতা রচনা করেছেন। তবে তাঁর সেই কবিতাকে অশ্ললতা স্পর্শ করতে পারেনি। তৎকারীন আরব কবিরা ‘হিজা’ বলতে নিজ গোত্রের প্রশংসা এবং বিরোধী গোত্রের বিন্দা বুঝাতো। এই নিন্দা হতো খুবই তীর্যক ও আক্রমণাত্মক। এ কারণে কবিরা তাদের কবিতায় সঠিক ঘটনাবলী প্রাসঙ্গিক ও মনোরম ভঙ্গিক তুলে ধরতো।জাহিলী কবি যুহাইর ইবন আবী-সুলমার জিহা’ বা নিন্দার একটি স্টাইল আমরা তার দুইটি শ্লোকে লক্ষ্য করি। তিনি ‘হিস্ন’ গোত্রের নিন্দায় বলেছেন:

‘আমি জানিনে। তবে মনে হয় খুব শিগ্গী জেনে যাব। ‘হিস্ন’ গোত্রের লোকেরা পুরুষ না নারী? যদি পর্দানশীল নারী হয় তাহলে তাদের প্রত্যেকে কুমারীর প্রাপ্য হচ্ছে উপহার।’

যুহাইরের এ শ্লোকটি ছিল আরবী কবিতার সবচেয়ে কঠোর নিন্দাসূচক। এ কারণে শ্লোকটি উক্ত গোত্রের লোকদের দারুণ পীড়া দিয়েছিল। হাস্সানের নিন্দাবাদের মধ্যে শুধু গালিই থাকতো না, তাতে থাকতো প্রতিরোধ ও প্রতিউত্তর। তাঁর ষ্টাইলটি ছিল অতি চমৎকার। কুরাইশদের নিন্দায় রচিত তাঁর একটি কবিতার শেষের শ্লোকটি সেকালে এতখানি জনপ্রিয়তা পায় যে তা প্রবাদে পরিণত হয়। শ্লোকটি নিম্নরূপ:

‘আমি জানি যে তোমার আত্মীয়তা কুরাইশদের সংগে আছে। তবে তা এ রকম যেমন উট শাবকের সাথে উট পাখীর ছানার সাদৃশ্য হয়ে থাকে।’

পরবর্তীকালে কবি ইবনুল মুফারিরগ উল্লেখিত শ্লোকটির ১ম পংক্তিটি আমীর মুয়াবিয়ার (রা) নিন্দায় প্রয়োগ করেছেন।আল-হারেস ইবন’ আউফ আল-মুররীর গোত্রের বসতি এলাকায় রাসূলুল্লাহ (সা) প্রেরিত একজন মুবাল্লিগ নিহত হলে কবি হাস্সান তার নিন্দায় একটি কবিতা রচনা করেন। তিনি বলেন:

‘যদি তোমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে থাক তাহলে তা এমন কিছু নয়। কারণ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা তোমাদের স্বভাব। আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মূল থেকেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ অঙ্কুরিত হয়।’

হাস্সানের এই বিদ্রুপাত্মক কবিতা শুনে আল-হারেসের দুই চোখে অশ্রুর প্লাবন নেমে আসে। সে রাসূলুল্লাহ (সা) দরবারে ছুটে এসে আশ্রয় প্রার্শনা করে এবং হাস্সানকে বিরত রাখার আবেদন জানায়।

হাস্সান (রা) চমৎকার মাদাহ বা প্রশংসা গীতি রচনা করেছেন। আলে ইনানের প্রশংসায় তিনি যে সকল কবিতা রচনা করেছেন তার দুইটি শ্লোকে এ রকম:

‘যারা তাদের নিকট যায় তাদেরকে তারা ‘বারদী’ নদীর পানি স্বচ্ছ শরাবের সাথে মিথিয়ে পান করায়।’

এই শ্লোকটিরই কাছাকাছি একটি শ্লোকে রচনা করেছেন কবি ইবন কায়স মুস’য়াব ইবন যুবাইরের প্রশংসায়। কিন্তু যে বিষয়টি হাস্সানের শ্লোকে ব্যক্ত হয়েছে তা ইবন কায়সের শ্লোকে অনুপস্থিত।

অন্য একটি শ্লোকে তিনি গাসসানীয় রাজন্যবর্গের দানশীলতা ও অতিথিপরায়ণতার একটি সুন্দর চিত্র এঁকেছেন চমৎকার স্টাইলে। ‘তাঁদের গৃহে সব সময় অতিথিদের এত ভিড় থাকে যে তাঁদের কুকুরগুলিও তা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখন আর তারা নতুন আগন্তুককে দেখে ঘেউ ঘেউ করে না।’

আরবী কাব্য জগতের বিখ্যাত তিন কবির তিনটি শ্লোক প্রশংসা বা মাদাহ কবিতা হিসেবে সর্বোত্তম। এ ব্যাপারে প্রায় সকলে একমত। তবে এ তিনটির মধ্যে সবচেয়ে ভালো কোনটি সে ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। কবি হুতাইয়্যা হাস্সানের এ শ্লোকটিকে শ্রেষ্ঠ মনে করেছেন। কিন্তু অন্যারা আবুত ত্বিহান ও নাবিগার শ্লোক দুইটিকে সর্বোত্তম বলেছেন। ইমাইয়্যা খলীফা আবদুল মালিক ছিলেন একজন বড় জ্ঞানী ও সাহিত্য রসিক মানুষ। তাঁর সিদ্ধান্ত হলো, ‘আরবরা যত প্রশংসাগীতি রচনা করেছে তার মধ্যে সর্বোত্তম হলো হাস্সানের শ্লোকটি।’ তিনি রাসূলে কারীমের প্রশংসায় যে সকল কবিতা রচনা করেছেন তার ষ্টাইল ও শিল্পকারিতায় যথেষ্ট নতুনত্ব আছে। রাসূলুল্লাহ (সা) প্রশংসায় রচিত একটি শ্লোকে তিনি বলেছেন ‘অন্ধকার রাতে রাসূলুল্লাহ (সা) পবত্র ললাট অন্ধকারে জ্বলন্ত প্রদীপের আলোর মত উজ্জ্বল দেখায়।’

হাস্সান (রা) জাহিলী ও ইসলামী জীবনে অনেক মারসিয়া বা শোকগাঁথা রচনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইনতিকাল ছিল মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় শোক ও ব্যথা। হাস্সান রচতি কয়েকটি মারসিয়ায় সে শোক অতি চমৎকাররূপে বিধৃত হয়েছে। ইবন সা’দ তাঁর তাবাকাতে মারসিয়াগুলি সংকলন করেছেন।

হাস্সান ছিলেন একজন দীর্ঘজীবনের অধিকারী অভিজ্ঞ কবি। তাছাড়া একজন মহান সাহাবীও বটে। এ কারণে তাঁর কবিতায় পাওয়া প্রায় প্রচুর উপদেশ ও নীতিকথা। কবিতায় তিনি মানুষকে উন্নত নৈতিকতা অর্জন করতে বলেছেন। সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ বিষয়ে দুইটি শ্লোক:

‘অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে আমি আমার মান-সম্মান রক্ষা করি। যে অর্থ-সম্পদে সম্মান রক্ষা পয়না আল্লাহ তাতে সমৃদ্ধি দান না করুন!
সম্পদ চলে গেলে তা অর্জন করা যায়; কিন্তু সম্মান বার বার অর্জন করা যায় না।’

মানুষের সব সময় একই রকম থাকা উচিত। প্রাচযর্যের অধিকারী হলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা এবং প্রাচুর্য চলে গেলে ভেঙ্গে পড়া যে উচিত নয়, সে কথা বলেছেন একটি শ্লোকে:

‘অর্থ-সম্পদ আমার লজ্জা-শরম ও আত্মা-সম্মানবোধেকে ভুলিয়ে দিতে পারেনি। তেমনিভাবে বিপদ-মুসবিত আমার আরাম-আয়েশ বিঘ্নিত করতে পারেনি।’

অত্যাচারের পরিণতি যে শুভ হয় না সে সম্পর্কে তাঁর একটি শ্লোক:

‘আমি কোন বিষয় সম্পর্কে অহেতুক প্রশ্ন ও অনুসন্ধান পরিহার করি।
অধিকাংশ সময় গর্ত খননকারী সেই গর্তের মধ্যে পড়ে।’

তিনি একটি শ্লোকে মন্দ কথা শুনে উপেক্ষা করার উপদেশ দিয়েছেন:

‘মন্দ কথা শুনে উপেক্ষা কর এবং তার সাথে এমন আচরণ কর যেন তুমি শুনতেই পাওনি।’

লাঞ্ছিত ও অপমানিত অবস্থায় জীবন যাপন সম্পর্কে তিনি বলেন:

‘তারা মৃত্যুকে অপছন্দ করে তাদের চারণভূমি অন্যদের জন্য বৈধ করে দিয়েছি। তাই শক্ররা সেখানে অপকর্ম সম্পন্ন করেছে।
তোমরা কি মৃত্যু থেকে পালাচ্ছো? দুর্বলতার মৃত্যু তেমন সুন্দর নয়।’

‘আবদুল কাহির আল-জুরজানী বলেছেন, হাস্সানের রচিত কবিতার সকল পদের মধ্যে একটা সুদৃঢ় ঐক্য ও বন্ধন দেখা যায়। এমন কি সম্পূর্ণ বাক্যকে একটি শক্তিশালী রশি বলে মনে হয়।

একালের একজন শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সমালোচক বুটরুস আল-বুসতানী বলেন: ‘হাস্সানের কবিতার বিশেষত্ব কেবল তাঁর মাদাহ ও হিজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং তার রয়েছে এক বড় ধরনে বিশেষত্ব। আর তা হচ্ছে তাঁর সময়ের ঘটনাবলীর একজন বিশ্বস্ত ঐতিহাসিকের বিশেষত্ব। কারণ, তিনি বর্ণনা করেছেন রাসূলুল্লাহ (সা) জীবনের যুদ্ধ-বিগ্রহ ও বিভিন্ন ঘটনাবলী সকল যুদ্ধে মুসলিম ক্ষে যাঁরা শহীদ হয়েছে এবং বিরোধী পক্ষে যারা নিহত হয়েছে তাদের অনেকের নাম তিনিকবিতায় ধরে রেছেনে।। আমরা যখন তার কবিতা পাঠ করি তখন মনে হয়, ইসলামের প্রথম পর্বের ইতিহাস পাঠ করছি।”

প্রাচীন আরবের অধিবাসীরা দেহাতী ও শহুরে এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। মক্কা, মদীনা ও তায়েপের অভিাসীরা ছিল শহরবাসী। অবশিষ্ট সকল অঞ্চলের অধিবাসীরা ছির দেহাতী বা গ্রাম্য। বেশীর ভাগ খ্যাতিমান কবি ছিলেন গ্রাম অঞ্চলের। এর মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু কবি শহরেও জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে হাস্সানের স্থান সর্বোচ্চ।

ইবন সাল্লাম আল-জামহী বলেন: ‘মদীনা, মক্কা, তায়িক, ইয়ামামাহ, বাহরাইন এর প্রত্যেক গ্রামে অনেক কবি ছিরেন। তবে মদীনার গ্রাম ছির কবিতার জন্য শীর্ষে। এখানকার শ্রেষ্ঠ কবি পাঁচজন। তিনজন খাযরাজ ও দুইজন আউস গোত্রের। খাযরাজের তিনজন হলেন: কায়স ইবনুল খুতাইম ও আবু কায়স ইবন আসলাত। এঁদের মধ্যে হাস্সান শ্রেষ্ঠ। আবু ‘উবায়দাহ বলেন: ‘শহুরে কবিদের মধ্যে হাস্সান সর্বশ্রেষ্ঠ। একথা আবু আমর ইবনুল আলাও বলেছেন। কবি আল-হুতাইয়্যা বলেন: তোমরা আনসারদের জানিয়ে দাও, তাদের কবিই আরবের শ্রেষ্ঠ কবি।’ আবুল ফরাজ আল-ইসফাহানী বলেন: হাস্সান শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন। খোদ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: ইমারাইল কায়স হচ্ছে দোযখী কবিদের পতাকাবাহী এবং হাস্সান ইবন সাবিত তাদের সকলকে জান্নাতের দিকে চালিত করবে।

ইমাম আল-আসমা’ঈ বলেন: অকল্যাণ ও অপকর্মে কবিতা শক্তিশালী ও সাবলীল হয়। আর কল্যাণ ও সৎকর্মে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই যে হাস্সান, তিনি ছিলেন জাহিলী আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। ইসরাম গ্রহণের পর তাঁর কবিতার মান নেমে যায়। তাঁর জাহিলী কবিতাই শ্রেষ্ঠ কবিতা।’

হাস্সানের (রা) বার্দ্ধক্যে একবার তাঁকে বলা হলো, আপনার কবিতা শক্তিহীন হয়ে পড়েছে এবং তার পর বার্দ্ধক্যের ছাপ পড়েছে। বললেন: ভাতিজ্য! ইসলাম হচ্ছে মিথ্যার প্রতিবন্ধক। ইবনুল আসীর বলেন, হাস্সানের একথার অর্থ হলো কবিতার বিষয়বস্তুতে যদি অতিরঞ্জন থাকে তাহলে চমৎকার হয়। আর যে কোন অতিরঞ্জনই ইসলামের দৃষ্টিতে মিথ্যাচার, যা পরিহারযোগ্য। সুতরাং কবিতা ভালো হবে কেমন করে?

বুটরুস আল-বুসতানী হাস্সানের (রা) কবিতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন: ‘আমরা দেখতে পাই হাস্সান তাঁর জাহিলী কবিতায় ভালো করেছেন। তবে সে কালের শ্রেষ্ঠ কবিদের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেননি। আর তাঁই ইসলামী কবিতার কিছু অংশে ভালো করেছেন। বিশেষতঃ হিজা ও ফখর (ন্দিা ও গর্ব) বিষয়ক কবিতায়। তবে অধিকাংশ বিষয়ে দুর্বলতা দেখিয়েছেন। বিশেষতঃ রাসূলের (সা) প্রশংসায় রচিত কবিতায় ও তাঁর প্রতি নিবেদিত শোকগাঁথায়। তবে ঐতিহাসিক তথ্যের দিক দিয়ে এ সকল কবিতা অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ইসলামী কবিতায় এমন সব নতুন ষ্টাইল দেখঅ যায় যা জাহিলী কবিতায় ছিল না। ইসলামী আমলে হাস্সান একজন কবি ও ঐতিহাসিক এবং একই সাথে একজন সংস্কারবাদী কবিও বটে। রাসূলুল্লাহর (সা) পক্ষে প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন রাজনৈতিক কবিদের পুরোধা।’

একবার কবি কা’ব ইবন যুহাইর একটি শ্লোকে গর্ব করে বলেনঃ কা’বের মৃত্যুর পর কবিতার ছন্দ ও অন্তমিলের কি দশা হবে? শ্লোকটি শোনার সাথে সাথে তৎকালীন আরবের বিখ্যাত কিব সাম্মাখের ভাই তোমরূয বলে উঠলেন: আপনি অবশ্যই সাবিতের ছেলে তীক্ষ্ম হাস্সানের মত কবি নন। যাই হোক, তিনি যে একজন বড় মাপের কবি ছিলেন তা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য।

হাস্সানের (রা) সকল কবিতা বহুদিত যাবত মানুষের মুখে মুখে ও অন্তরে সংরক্সিত ছিল। পরে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ হয়। ত৭ার কবিতার একটি দিওয়ান আছে যা ইবন হাবীব বর্ণনা করেছেন। তবে এতে সংকলিত বহু কবিতা প্রক্ষিপ্ত হয়েছে। ইমাম আল-আসমা’ঈ একবার বললেন: হাস্সান একজন খুব বড় কবি। একথা শুনে আবু হাতেম বললেন: কিন্তু তাঁর অনেক কবিতা খুব দুর্বল। আল-আসামা’ঈ বললেন: তাঁর প্রতি আরোপিত অনেক কবিতাই তাঁর নয়। ইবন সাল্লাম আল-জামিহী বলেন: হাস্সানের মানবস্পন্ন কবিতা অনেক। যেহেতু তিনি কুরাইশদের বিরুদ্ধে প্রচুর কবিতা লিখেছেন, এ কারণে পরবর্তীকালে বহু নিম্নমানের কবিতা তাঁর প্রতি আরোপ করা হয়েছে। মূলতঃ তিনি সেসব কবিতার রচয়িতা নন।

হাস্সানের (রা) নামে যাঁরা বানোয়াট কবিতা বর্ণনা করেছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন প্রখ্রাত সীরাত বিশেষঞ্জ মুহাম্মদ ইবন ইসহাক। তিনি তাঁর মাগাযীতে হাস্সানের (রা) প্রতি আরোপিত বহু বানোয়াট কবিতা সংকরন করেছেন। পরবর্তীকালে ইবন হিশাম যখন ইবন ইসহাকের মাগাযীর আলোকে তাঁর আস-সীরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ’ সংকলন করেন তখন বিষয়টি তাঁর দৃষ্টিগোচর হয়। তখন তিনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রাচীন আরবী কবিতার তৎকালীন পণ্ডিত-বিশেষজ্ঞদের, বিশেষতঃ বসরার বিখ্যাত রাবী ও ভাষাবিদ আবু যায়িদ আল-আনসারীর শরণাপন্ন হয়। তিনি ইবন ইসহাক বর্ণিত হাস্সানের কবিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন, আর তার কিছু সঠিক বলে মত দিতেন, আর কিছু তাঁর নয় বলে মত দিতেন। এই পন্ডিতরা যে সকল কবিতা হাস্সানের নয় বলে মত দিয়েছেন তাঁরও কিচু কবিতা ইবন হাবীব বর্ণনা করেছেন। আর তা দিওয়ানেও সংকলিত হয়েছে।।

প্রকৃতপক্ষে হাস্সানের (রা) ইসলামী কবিতায় যথেষ্ট প্রক্ষেপণ হয়েছে। এ কারণে দেখা যায় তাঁর প্রতি আরোপিত কিচু কবিতা খুবই দুর্বল। মূলতঃ এ সব কবিতা তাঁর নয়। আর এই দুর্বলতা দেখেই আল-আসমা’ঈর মত পণ্ডিতও মন্তব্য করেছে যে, হাস্সানের ইসলামী কবিতা দারুণ দুর্বল।

হাস্সানের (রা) কবিতার একটি দিওয়ান ভারত ও তিউনিসিয়া থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। পরে সেটি ১৯১০ সনে প্রফেসর গীব মেমোরিয়াল সিরিজ হিসেবে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশ পায়। লন্ড, বার্লিন, প্যারিস ও সেন্টপিটার্সবুর্গে দিওয়ানটির প্রাচীন হন্তলিখিত কপি সংরক্ষিত আছে।

শেষ জীবনে একবার হাস্সান (রা) গভীর রাতে একটি অনুপম কবিতা রচনা করে। সাথে সাথে তিনি ফারে’ দুর্গের ওপর উটে চিৎকার দিয়ে নিজ গোত্র বনু ক্বায়লার লোকদের তাঁর কাছে সমবেত হওয়ার আহবান জানান। লোকেরা সমবেত হলে তিনি তাদের সামনে কবিতাটি পাঠ করে বলেন: আমি এই যে কাসীদাটি রচনা করেছি, এমন কবিতা আরবের কোন কবি কখনও রচনা করেননি। লোকেরা প্রশ্ন করলো: আপনি কি একথা বলার জন্যই আমাদেরকে ডেকেছেন? তিনি বললেন: আমার ভয় হলো, আমি হয়তো এ রাতেই মারা যেতে পারি। আর সে ক্ষেত্রে তোমরা আমার এ কবিতাটি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।

আল-আসামা’ঈ বর্ণনা করেছেন: সেকালে ছোট মঞ্চের ওপর গানের আসর বসতো। সেখানে বর্তমান সময়ের মত অশ্লীর কোন কিছু হতো না। বনী নাবীতে এরকম একটি বিনোদনের আসর বসতো। বার্দ্ধক্যে হাস্সান (রা) যখন অন্ধ হয়ে যান তখন তিনি এবং তাঁর ছেলে এ আসরে উপস্থিত হতেন। একদিন দুইজন গায়িকা তাঁর জাহিলী আমলে রচিত একটি গানে কষ্ঠ দিয়ে গাইতে থাকলে তিনি কছাদতে শুরু করেন। তখন তাঁর ছেলে গায়িকাদ্বয়কে বরতে থাকেন: আরো গাও, আরো গাও।১০০ তাঁর মানসপটে তখন অতীত জীবনের স্মৃতি ভেসে উঠেছিল।

হাস্সানের (রা) মধ্যে স্বভাবগত ভীরুতা থাকলেও নৈতিক হাসহ ছিল অপরিসীম। একবার খলীফা উমার (লা) মসজিদে নব্বীর পাশ দিয়ে যাচ্ছেন। দেখলেন, হাস্সান মসিজিদে কবিতা আবৃত্তি করছেন। ‘উমার বললেন: রাসূলুল্লাহর (সা) মসজিদে কবিতা পাঠ? হাস্সান গর্জে উঠলেন: উমার! আমি আপনাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তির উপস্থিতিতে এখানে কবিতা আবৃত্তি করেছি। ইমাম বুখারী ও মুসলিম উভয়ে সা’ঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের সূত্রে হাসীদসটি বর্ণনা করেছেন। উমার (রা) বললেন: সত্য বলেছো।

হাস্সান (রা) ইসলাম-পূর্ব জীবনে মদ পান করতেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহনের পর মদ চিরদিনের জন্য পরিহার করেন। একবার তিনি তাঁর গোত্রের কতিপয় তরুণকে মদপান করতে দেখে ভীষণ ক্ষেপে যান। তখন তরুণরা তাঁর একটি চরণ আবৃত্তি কলে বলে, আমরা তো আপনাকেই অনুসরণ করছি। তিনি বললেন, এটা আমার ইসলাম-পূর্ব জীবনের কবিতা। আল্লাহর কসম! ইসলাম গ্রহনের পর আমি মদ স্পর্শ করিনি।

হাস্সানের মধ্যে আমরা খোদাভীতির চরম রূপ প্রত্যক্ষ করি। কুরাইশ কবিদের সংগে যখন তাঁর প্রচন্ড বাক্যুদ্ধ চলছে, তখন কবিদের নিন্দায় নাযিল হলো সূরা আশ-শু’য়ারার ২২৪ নং আয়াত। রাসূলুল্লাহর (সা) তিন কবি হাস্সান, কা’ব ও আবদুল্লাহ কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহর (সা) দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ আয়াতের আওতায় তো আমরাও পড়েছি। আমারও তো কাব্য চর্চা করি। আমাদের কি দশা হবে? তখন রাসূল (সা) তাঁদেরকে আয়াতটির শেষাংশ অর্থাৎ ব্যতিক্রমী অংশটুকু পাঠ করে বলেন, এ হচ্ছো তোমরা।

হাস্সান (রা) সবচেয়ে বড় পরিচয়, তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) দরবারের কবি ছিলেন। তিনি মসজিদে নববীতে রাসূলকে (সা) স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতেন। এ ছিল এক বড় গৌরবের বিষয়। তাঁকে যথার্থই ‘শায়িরুল ইসলাম’ ও শায়িরুল রাসূল’ উপাধি দান করা হয়েছিল। ইসলাম গ্রহনের পর থেকে রাসূলুল্লাহর (সা) জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর পাশে থেকে কুরাইশ, ইহুদী ও আরব পৌত্তলিকদের প্রতি বিষাক্ত তীরের ফলার ন্যায় কথামালা ছুড়ে মেরে আল্লাহর রাসূলের (সা) মর্যাদা ক্ষা ও সমুন্নত করেছেন।

রাসূলে কারীম (সা) যখন যুদ্ধে যেতেন তখন তাঁর সহধর্মীগণকে হাস্সান (রা) তাঁর সুরক্ষিত ‘ফারে’ দুর্গের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে রাসূল (সা) তাঁকে গণীমতের অংম দিতেন। এমন কি উম্মুল মুমিনীন মারিয়্যা আল-কিবতিয়্যার বোন সীরীনকেও (রা) তুলে দেন হাস্সানের হাতে। খুলাফায়ে রাশেদীনের দরবারেও ছিল তাঁর বিশেষ মর্যাদা। খলীফাগণ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সাথে কথা বলতেন এবং তাঁর জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেন। এভাবে একটি একটি করে হাস্সানের (রা) সম্মান ও মর্যাদার বিষয়গুলি গণনা করলে দীর্ঘ তালিকা তৈরী হবে।

মূল: আসহাবে রাসূলের জীবনকথা
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৪২
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×