মিডিয়া মালিকরা সাংবাদিকদের দাসযুগের মতো ব্যবহার করছে
একজন পেশাদার সাংবাদিক কতোটুকু স্বাধীন? প্রায়ই বিভিন্ন সেমিনারে বক্তারা গলাবাজি করে বলেন, সাংবাদিকরা প্রচণ্ড স্বাধীনতা ভোগ করছে (!)। কিন্তু একজন সাংবাদিক যে মিডিয়া হাউজে কাজ করেন সেই হাউজ থেকে তাকে কতোটুকু স্বাধীনতা দেয়া হয়? হাউজের বাইরে যে জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন সেখানে সাংবাদিকরা কতোটুকু স্বাধীন? রাষ্ট্র বা সরকারের কাছ থেকে একজন সাংবাদিক কতোটুকু স্বাধীনতা পান? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর একটু স ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সাংবাদিকরা আসলে স্বাধীন নন! মিডিয়া হাউজ, মিডিয়া মালিক-সমঙ্াদক, সরকারসহ সকলেই সাংবাদিকদের লোহার বেড়িতে শৃ খলিত করে রেখেছে। প্রাচীন যুগের দাসদের মতো মিডিয়া মালিকরা সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে।
একটা সময়ে জনগণের কাছে সাংবাদিকদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল দেবতার মতো। জনগণ সব জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে আসলে সাংবাদিকদের তাবুতে বিস্বস তার সঙ্গে আশ্রয় নিতো। কিন্তু এখনকার বর্তমান সামাজিকতার প্রোপটে সাংবাদিকদের কি সেই ইমেজ আছে? আমরা সাংবাদিকরা আমাদের সেই ইমেজ ধরে রাখতে পারিনি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুবিধাভোগি মহলের কাছে বিক্রি হয়ে আমরা অনেক আগেই আমাদের ইমেজকে নিজেদের হাতে জ্যান কবর দিয়েছে। সাংবাদিকদের শৃ খলিত করে রাখার পেছনে মিডিয়া মালিক, সমঙ্াদক, রাজনীতিক, সুবিধাভোগি মহলের দায় যেমন এড়ানো যাবেনা ঠিক সেভাবে এর জন্য সাংবাদিকরাও নিজেদের দায় এড়াতে পারবে না। নিজেদের শৃ খলিত করার পেছনে সাংবাদিকরাও সমানভাবে দায়ি ও নৈতিক আদালতের কাঠগড়ায় আসামী।
স্বাধীন সাংবাদিক ছাড়া স্বাধীন সংবাদপত্র সম্ভব নয়। আর স্বাধীন সংবাদপত্র ছাড়া স্বাধীন জনসমাজ কল্পনা করা যায়না। স্বাধীন সাংবাদিকতা না থাকলে একটি স্বাধীন ও আত্দমর্যাদাসমঙ্ন্ন জাতির অস িত্বও কল্পনা করা যায়না। একটি স্বার্থান্বেসি মহল দেশের আত্দমর্যাদাকে ধুলোয় মেশানোর জন্য তৎপর। তারা জানে সংবাদপত্রের টুটি চেপে ধরতে পারলেই যে কোনো রাষ্ট্রকে বাগে রাখা যায়। তাইতো সুযোগ সন্ধানীরা রাষ্ট্রকরণ, বিজ্ঞাপন নিয়ন ণ, নিয়ন ণ আদেশ, নির্বাহী আদেশ আরোপ ইত্যাদির মাধ্যমে মিডিয়াকে পকেটে রাখার পায়তারায় লিপ্ত।
স্বাধীন সাংবাদিকতা মানেই স্বাধীন সংবাদপত্র তথা স্বাধীন জনমত। লর্ড ফ্রান্সিস উইলিয়ামের মতে, ঞযব ঢ়ৎবংং রং ধ বিধঢ়ড়হ ড়ভ ভৎববফড়স, ধ ংড়িৎফ রহ ঃযব যধহফং ড়ভ ঃযড়ংব ভরমযঃরহম ড়ষফ ্ হব িঃুৎধহহরবং- ঃযব ড়হব রফরংঢ়বহংধনষব বিধঢ়ড়হ রহ ঃযব ধৎসড়ঁৎু ড়ভ ভৎববফড়স. আমাদের দেশের প্রেপটে আমরা কী দেখতে পাচ্ছি? প্রতিটি মিডিয়া হাউজের কাছে সাংবাদিকরা শৃ খলিত। মিডিয়া হাউজগুলোর সবারই নিজ নিজ পলিসি আছে। আর যে সাংবাদিক যে হাউজে কাজ করে তাকে সেই হাউজের পলিসি মেনে চলতে হয়। আর এভাবেই হাউজগুলো তাদের পলিসি নামক শব্দের আড়ালে ও অদৃশ্য নিষেধ্বাঃজ্ঞার মাধ্যমে সাংবাদিকদের শৃ খলিত করে রেখেছে।
যে কোনো মিডিয়া হাউজেরই নিজস্ব পলিসি থাকতে পারে এবং থাকাটা অযৌক্তিক কিছু না। এ ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেই পলিসি প্রকাশ্যে ঘোষিত না হলে আপত্তি আছে। আমাদের মিডিয়া হাউজগুলোর দিকে দৃষ্টি রাখলে দেখা যাবে দুএকটি হাউজ ছাড়া বাকিদের পলিসি কিন্তু ষঙ্ষ্ট না। এমনকি ওই হাউজগুলোতে যারা কাজ করে তারাও সঠিকভাবে পলিসি সমঙ্র্কে জানে না। (এখানে আমি পলিসি বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, মিডিয়া হাউজগুলোর কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে কিনা বা তারা কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাষি কিনা বা তাদের এথিকস কী) নিজেদের পলিসি প্রকাশ না করে মিডিয়া হাউজগুলো পাঠক-দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে এক অর্থে প্রতারণা করছে। কেননা পাঠক একেকটি মিডিয়া হাউজকে একেকভাবে ধরে নিয়ে ম ল্যায়ণ করছে। ফলে এখানে বিভ্রান হওয়ার সুযোগ আছে।
পাঠকরা আশা করে, সংবাদপত্র যে কোনো ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ প্রকাশ করবে। যে কোনো বিষয় নিরপে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপস্থাপন করবে। কিন্তু আমরা কী দেখতে পাচ্ছি, পলিসি নামক শব্দের নামে বিভিন্ন ঘটনাকে একেক মিডিয়া একেকভাবে উপস্থাপন করছে। যেমন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন কেউ নিহত হলে কিছু মিডিয়া তাকে নেতা, কিছু মিডিয়া তাকে সন াসী হিসেবে উপস্থাপন করছে। আবার কিছু মিডিয়া বিষয়টি সুকৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। এরকম একটি বিষয়ে একেক মিডিয়ায় একেক ভাবে উপস্থাপনের উদাহরণ অসংখ্য আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, একজন পাঠক কোন মিডিয়ার তথ্য বিশ্বাষ করবে?
এদিকে কর্পোরেট হাউজগুলো বর্তমানে মিডিয়া মালিক হয়ে গেছে। যে কেউরই মিডিয়া ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করার অধিকার আছে। সেদিক থেকে কর্পোরেট হাউজগুলোও মিডিয়ায় পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কর্পোরেট হাউজগুলো তাদের স্বার্থে মিডিয়াকে ব্যবহার করছে। আর আমরা সাংবাদিকরা নির্লজ্জের মতো কর্পোরেট হাউজগুলোর কাছে নিজেদের নৈতিকতা বিকিয়ে দিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধারে সহায়তা করছি। বিগত কয়েক মাসের মিডিয়া পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশের দুই কর্পোরেট মালিক নিজেদের মধ্যে আন ঃকলহে লিপ্ত। তাদের দুজনেরই আবার একটি করে মিডিয়া নামক অস আছে। তারা রণেেত্র একে অপরের বিরুদ্ধে এ মিডিয়া অস কে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর স্বাধীনতার মতো ব্যবহার করছে। এদের এ যুদ্ধের রেশ ধরে গোটা মিডিয়া আবার স ভাবে দুভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। ফলে উদ্ভ দ এ পরিস্থিতি সমঙ্র্কে কেউই সঠিক তথ্য পরিবেশন করছে না। ফলে এদের অনৈতিকতায় পিষ্ট হয়ে সাধারণ পাঠক বলির শিকার হচ্ছে।
হাউজের পলিসি ঠিক রাখার জন্য সাংবাদিকদের সেলফ সেন্সর হয়ে কাজ করতে হয়। ফলে নাকের ডগা দিয়ে হাতি-ঘোড়া গেলেও আমরা সাংবাদিকরা লিখি 'কাক কোকিল কণ্ঠে গাইতে গাইতে চলে গেল'। এই যে মোবাইল কোমঙ্ানীগুলো তথাকথিত সেবা দেবার নাম করে ভোক্তাদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে_ এগুলো কি সাংবাদিকদের চোখে পড়ে না? পড়ে, কিন্তু সাংবাদিকদের এ বিষয়ে লিখতে অলিখিতভাবে নিষেধ আছে। কেননা মোবাইল কোমঙ্ানীগুলো প্রতিদিন প্রতিটি মিডিয়াকে মোটা অঙ্কের বিজ্ঞাপন দেয়। তাদের বিরুদ্ধে লিখলে বিজ্ঞাপন পাওয়া যাবেনা। তাই সাংবাদিকরা এদের সমঙ্র্কে লেখার সময়ে সেলফ সেন্সরড হয়ে লেখে। কেননা একজন সাংবাদিক মোবাইল কোমঙ্ানী সমঙ্র্কে ভালো, বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখলে তাতো ছাপা হওয়া দ রে থাত ওই সাংবাদিকের চাকরিও চলে যেতে পারে। আর এভাবেই বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পলিসির নামে হাউজগুলো সাংবাদিকদের শৃ খলিত করে রেখেছে।
[ইংলিশ]রঃংথসবথল2@ুধযড়ড়.পড়স
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




