বেশকিছু পুরনো আইনের কারণে সাংবাদিকতা বাধাগ্রস হচ্ছে
কিছু আইন সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে প্রত্যভাবে না হলেও পরোভাবে প্রভাবিত করে। কোনো কোনো আইনের সুবাদে মালিক প সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকারের ব্যাপারে হস পে করার সুযোগ নিয়ে থাকেন। সাংবাদিকতা সমঙ্র্কিত (প্রায় 20 থেকে 24টি) আইনগুলো 200 বছরের পুরনো আইন যা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস করছে। এর মধ্যে 1876 সাল ও 1923 সালের মতো পুরনো আইন ছাড়াও কিছু উদ্ভট আইন আছে।
সাংবাদিকতা সমঙ্র্কিত আইনগুলো হলো, ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধীকরণ) আইন- 1973, প্রেস কাউন্সিল আইন- 1974, কপিরাইট অধ্যাদেশ- 1962, শিশু আইন- 1974, দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইন- 1923, বৈদেশিক সমঙ্র্ক আইন- 1932, টেলিগ্রাফ আইন- 1885, ডাকঘর আইন- 1998, বেতার টেলিগ্রাফ আইন- 1933, চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন- 1963, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা অধ্যাদেশ- 1974, সংবাদপত্র কর্মচারি (চাকরির শর্তাবলী) আইন- 1974, শিশু সমঙ্র্ক অধ্যাদেশ- 1969, বিশেষ মতা আইন- 1974, জননিরাপত্তা (বিশেষ বিধান) আইন- 2000, অশালীন বিজ্ঞাপন (নিষিদ্ধকরণ) আইন- 1963, সা্য আইন- 1872, আদালত অবমাননা আইন- 1926, ফৌজদারি কার্যবিধি- 1898।
সংবিধানের 32 অনুচ্ছেদের মাধ্যমে জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার সংরণ করা হয়েছে। অথচ এসব আইনের কারণে অনেক বিষয়েই নাগরিক বা সাংবাদিকরা তথ্য জানতে পারেন না। সংবিধানের 7 অনুচ্ছেদ অনুসারে- দেশের সকল মতার মালিক জনগণ। সরকারের গৃহীত প্রতিটি পদপে জনগণ জানার অধিকার রাখে অধিকাংশ েেত্র সরকারি কর্মকর্তারা অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অজুহাতে তথ্য সরবরাহে অস্বীকৃতি জানান। অপিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট 1923, সা্য আইন-1872, সরকারি কর্মচারিদের চাকরি ও আচরণগত কিছু বিধির অধিকাংশই ইংরেজ শাসন আমল থেকে প্রচলিত। এ আইনগুলো একদিকে যেমন গণতন ের চর্চায় বিরোধী ভূমিকা রাখতে পারে অন্যদিকে সাংবাদিকদের তথ্য জানার অধিকার থেকেও বঞ্চিত করে।
দ্য অপিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে বলা হয়েছে : নিষিদ্ধ স্থানে কেউ যদি যায় বা যেতে অগ্রসর হয় কিংবা ওই স্থানের কোনো নকশা বা স্কেচ তৈরি বা কোনো গোপন তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করে তবে সে অপরাধী হবে। 3 (ক) ধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ স্থানের কোনো ফটো, স্কেচ বা নকশা কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। 4 ধারায় বলা হয়েছে, কোনো বিদেশি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর সংগ্রহ করতে পারবে না। 5 ধারায় আছে, কোনো ব্যক্তি গোপনে কোনো সংবাদ পেয়ে থাকলে সে সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না। কোনো সংবাদপত্র যদি কোনো গোপন সংবাদ প্রকাশ করে তবে প্রতিবেদক, সমঙ্াদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক অপরাধী হবে এবং এসব কাজে সহায়তা করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অথচ এ আইনে নিষিদ্ধ স্থান বা গোপন তথ্যের কোনো নির্দিষ্ট বিবরণ নেই।
সাংবাদিকের স্বাধীনতার হস পে করে এমন আরো একটি আইন হলো অশ্লীলতা আইন। দণ্ডবিধির 282 ও 293 ধারায় অশ্লীল প্রকাশনাকে নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে এবং এর জন্য শাস ির প্রকৃতি ও মেয়াদ উল্লেখ আছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে অনেক অপরাধেরই সংজ্ঞা আছে কিন্তু অশ্লীলতার কোনো সংজ্ঞা, বিবরণ বা পরিচয় নেই। ফলে কী প্রকাশে অশ্লীলতার অপরাধ হয়, তা নিরূপণ করা কঠিন।
স্বাধীন সাংবাদিকতার আরেক বাধা অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট সমঙ্র্কে দৈনিক সংবাদের নির্বাহী সমঙ্াদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট 1923 সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় করা আইন। যুদ্ধের সময় জাতীয় স্বার্থবিরোধী তথ্য পাচার রোধ করার জন্য ব্রিটিশরা এ আইন করেছিল। ব্রিটেন, চীন, শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস ানে এ আইনটি বিলুপ্ত করা হলেও আমাদের দেশে এখনো বিলুপ্ত করা হয়নি।
ফৌজদারি কার্যবিধির 501 ও 502 ধারায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা যায়। এ সমঙ্র্কে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সংবাদমাধ্যম 501 বা 502 ধারা বাতিল করার বিরুদ্ধে না। কিন্তু এটা সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হলে প্রথমে প্রতিবাদপত্র পাঠাতে হবে এবং প্রেস কাউন্সিলে যেতে হবে। প্রেস কাউন্সিলে না গিয়ে 501 বা 502 ধারায় যেতে চাইলে সরাসরি ওয়ার্ডারেন্ট জারি করা যাবে না। কোন খবরের প্রেেিত মানহানির মামলা করা হয়েছে তা পত্রিকার সমঙ্াদককে জানাতে হবে। মানহানির মামলায় সাংবাদিকদের প্রতি ন ্যনতম সম্মান দেখিয়ে কোমরে দড়ি বাঁধা উচিত না।
এদিকে টেলিগ্রাফ অ্যাক্ট 1885 আইনে বিদেশে টেলিগ্রাফ করতে গেলে টেলিগ্রাফ অপারেটর বা দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা টেক্সটা দেখে। তার যদি মনে হয় এটা পাঠানো যাবে তাহলে পাঠাবে নাহলে পাঠাবে না। অনেকেরই প্রশ্ন, বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে এ আইনের কী ম ল্য আছে?
বিশেষ মতা আইন 54 ধারায় পুলিশ যে কোনো সময় যে কোনো সাংবাদিককে গ্রেফতার করতে পারে। বিভিন্ন মিছিল সমাবেশে পুলিশ সাংবাদিকদের এই ধারায়ই পিটায় এবং গ্রেফতার করে। অন্য রাজনৈতিক দলের সমাবেশে পুলিশ যে রকম আচরণ করে সাংবাদিকদের সঙ্গেও একই রকম। পুলিশ যদি মনে করে এই সমাবেশ থেকে আইন শৃ খলার অবনতি ঘটতে পারে, ধ্বঃষাত্দক কিছু ঘটতে পারে তাহলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আইনে পুলিশ ঐখানে লাটি চার্জ করতে পারে। এসময় তারা সাংবাদিকসহ গণহারে সবাইকেই পেটায়। কিন্তু তখন যদি একজন সাংবাদিক তার প্রেসকার্ড দেখায় তাহলেও তাকে রেহাই দেয়া হয় না।
পোষ্টঅফিস এ্যক্ট 1869 আইন অনুসারে পোস্টঅফিসে একটা পার্সেল বা চিঠি নিয়ে গেলে পোস্টঅফিসের আইনগত অধিকার আছে চিঠিটা খুলে দেখার। আমরা যে বিদেশে চিঠি পাঠাই সেই চিঠি এসবিরা এয়ারপোর্ট বা সী-পোর্টে স্ক্যান করে দেখে রাষ্ট্র বিরোধী বা ধ্বঃষাত্দক কোনো তথ্য বিদেশে পাচার হচ্ছে কিনা। বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে যে কেউ মেইলের মাধ্যমে অনেক কিছু পাঠাতে পারে। তাই এ আইনটিরও সংশোধন করা উচিত।
জনগণকে বিনোদন দেয়া সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু শিশুপার্ক-এ যেতে হলে টেক্স দিতে হয়। আবার কনসার্ট বা এ ধরণের কোনো বিনোদনের জন্যও সরকারকে টেক্স দিতে হয়।
পত্রিকাগুলোকে শৃ খলিত করার জন্যও সরকার যত্রতত্র টেক্স বসাচ্ছে। যেমন সংবাদপত্রে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্টের ওপর টেক্স। সরকারের উচিত সংবাদপত্রের জন্য উন্নতমানের নিউজপ্রিন্ট সরবরাহ করা। কিন্তু সরকার যখন পারছে না তখন তা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। কাগজে কলমে বিদেশ থেকে নিউজপ্রিন্ট আনতে গেলে 25 শতাংশ টেক্স দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বাস বে 56 শতাংশ টেক্স দিতে হয়। এ বিষয়েও সরকারের উদ্ভট নিয়ম!
মিডিয়ার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রেসকান্সিল এ্যক্ট রয়েছে। কিন্তু প্রেসকাউন্সিলের আইন কাগজে-কলমে। বাস বে এর নিজস্ব কোনো মতা নেই। অথ্যর্াৎ প্রেসকাউন্সিল মিডিয়া বান্ধব নয়। গণমাধ্যমের জন্য এই প্রতিষ্ঠান কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। সব সরকারই প্রেসকাউন্সিলে তার পছন্দমতো দলীয় লোককে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেন। জোট সরকারের আমলে এক এমপি ছিলেন এর চেয়ারম্যান!!
এছাড়া প্রেসকাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান মিডিয়া সমঙ্র্কে কতোটুকু জানেন এ বিষয়েও সন্দেহ আছে। কেননা, পত্রিকায় প্রকাশিত সংববাদ থেকে জানা যায় যে, প্রেসকাউন্সিলের কাউন্সিল সদস্যদের জন্য যাদের নাম প্রস াব করা হয়েছে তারা কোন পত্রিকায় কাজ করেন চেয়ারম্যান এটাও ভালোমতো জানেন না। আর সাংবাদিক, সমঙ্াদক ও মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন সমঙ্র্কেও তিনি ওয়াকিবহাল নন। অথচ তিনি প্রেসকাউন্সিল চেয়ারম্যান!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




