somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জলিংগেন, জার্মানী থেকে ফিরে (৪)

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৫ই নভেম্বর ২০১৪ বুধবার সকাল, নাস্তার টেবিলে বসলাম। সাকী আর এনেটে দুজনে মিলেই নাস্তার আয়োজন করেছেন। এটাকে বলা হয় কন্টিনেন্টাল ব্রেকফাস্ট (জার্মান), সুন্দর সাজানো টেবিলে কয়েকধরনের রুটি, পনির, মাখন, জ্যাম, সালামী, সিরিয়াল, অলিভ আর চা। কয়েক ধরনের বললাম এই কারনে যে, জার্মান কুজিনে রুটি আর পনির একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। জার্মানীতে প্রায় ৬০০ বিভিন্ন ধরনের রুটি পাওয়া যায়। জার্মানির কিছু কিছু অঞ্চল আছে যেখানে অতিথিকে রুটি আর লবণ দিয়ে বরন করা হয়। আমাদের সামনে যে রুটি ছিল তার মধ্যে আমি রগেনব্রট (রাই এর রুটি), জনেনব্লুমেন কার্নব্রট (সূর্য্যমূখীবীজ আর রাই), কুবিজকানব্রট (লাউবীজ আর রাই) আর জুইবেলব্রটের (পিয়াজভাজা আর রাই) এর নাম আপনাদের জানিয়ে রাখলাম। পনিরের মধ্যে আলগাউর, কেম্বজলা, হেন্ডকেসে আর হার্জার অন্যতম। ইউরোপে নাস্তার বিভিন্নতা আছে কিন্তু সাধারণতঃ এই ধরনের নাস্তাই প্রচলিত। আয়ারল্যান্ডে ফুল আইরিশ ব্রেকফাস্ট নামে যে নাস্তা খাওয়া হয় সেটা অনেকের জন্য ভুরিভূজের সমান, ডিম (ওমলেট, ক্রামবল্ড, পোচ) সাথে বেকন আর সসেজেস (হালাল নয় কিন্তু), মাশরুম, টমেটো, বেকড বিন, রুটি ভাজি কিংবা টোস্ট, মাখন, জ্যাম, জেলি, পুডিং এবং কফি। বাংলাদেশের নাস্তার কথা বললে শেষ করা যাবেনা তবে আমাদের শৈশবে সিলেটের নাস্তার সংস্কতি আর আজকের সংস্কতির ব্যাবধান আছে। আমাদের নাস্তা সাধারণতঃ খিচুড়ি (হলুদ রঙের) কিংবা জাউ (সাদা নরম খিচুড়ি) থাকত তার সাথে খাটি গাওয়া ঘি, ডিম ভাজি কিংবা পোচ। মাঝে মাঝে ভাত ভাজি আর ডিম কিংবা পরোটা ভাজি আর ডিম। শৈশবে সিলেটে আরেকটা প্রচলন ছিল সেটার কথা না বললেই নয়, ভোর বেলা টোস্ট বিস্কট, বেলা বিস্কুট কিংবা মুড়ি দিয়ে ধূমায়িত চা ছিল বড়দের আচার। এই যে নাস্তার সংস্কৃতির কথা বললাম সেটা আমার ভাষায় সিলেটী মধ্যবিত্তের তৎকালীন সংস্কতি ছিল।

সাকীর পরিকল্পনা অনুসারে আমরা রওয়ানা দিতে পারলাম না, একটু দেরী হয়ে গেল বলে সাকীকে বেশ উত্তেজিত মনে হল। পথ থেকে আবার সাকী উনার ঔষধ নিলেন আমার চার্জারের কনভার্টার কিনতে হল। প্রথমেই সাকী বার্লিনে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন আর তার উদ্যোক্তা সংগঠন বাংলাদেশ ফোরাম, জার্মানী নিয়ে তথ্যমূলক বিস্তারিত আলোচনা সেরে জার্মানীর অটোবান (ফেডারেল মোটর ওয়ে) সম্পর্কে আমাকে নাতিদীর্ঘ অবগত করালেন। জার্মানির অটোবান হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম মোটরওয়ে যেখানে গাড়ী (কার) ও মোটর সাইকেলের গতির জন্য কোন ধরনের সীমা নির্ধারিত নেই শুধুমাত্র ১৩০ কিঃ মিঃ উপদেশমূলক গতি প্রদান করা হয়েছে; এই উপদেশমূলক গতি বাধ্যতামূলক নয় এবং যত দ্রুত গতিতেই গাড়ি চালান হোক না কেন নিরাপদে পরিচালনা করলে কোন শাস্তি প্রযোজ্য হবেনা। যে সকল স্থানে রাস্তা মেরামত হচ্ছে কিংবা আবহাওয়া ভাল নয় এধরনের সময়ে বিশেষ স্থানে গতিসীমা অস্থায়ী নির্ধারনের ব্যাবস্থা আছে। সাকী এও জানালেন যে এই কলন-বন অটোবান হচ্ছে জার্মানীর প্রথম অটোবান যা ১৯৩২ সালে নির্মান করা হয়। এর পর থেকে সম্প্রসারিত হয়ে আজ এর সর্বমোট দৈর্ঘ ১২,৯১৭ কি: মিঃ যা কিনা ২০১৪ সালে পৃথিবীর ৪র্থ তম দীর্ঘ মোটরওয়ে। জার্মানীর গাড়িচালকরা নিরাপদ পরিচালনা করে থাকেন বলেই দুর্ঘটনার মাত্রাও বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম। অটোবানে নির্ধারিত দূরত্বের পর বিশ্রামের ব্যাবস্থা আছে। কিছু কিছু স্থানে শুধুমাত্র বিশ্রামের ব্যাবস্থা আর অন্যান্য স্থানে রেস্টুরেন্ট, পার্ক, পেট্রোল পাম্প ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা আছে।

আমাদের আলোচনা এই পর্য্যায়ে বাংলাদেশের দিকে প্রক্ষিপ্ত হল। সেই অর্থে আজ অবধি বাংলাদেশে কোন আধুনিক মোটরওয়ে, অটোবান কিংবা প্রবেশ-নিয়ন্ত্রিত হাইওয়ে (Controlled access Highway) নির্মিত হয়নি যাই আছে তার সবগুলো হাইওয়ে নামকরণ করা হলেও অপ্রশস্ত, অনিয়ন্ত্রিত আর দূর্ঘটনাপ্রবন রাস্তা হওয়ার কারনে গতিহীনতা আর দুর্ঘটনা জাতির কপাল জুড়ে আছে। আমাদের নিকট সঠিক তথ্য কিংবা পরিসংখ্যান ছিলনা তবু ও আমরা উভয়েই ভেবে দুঃখিত হলাম, যেখানে জার্মানী ১৯৩২ সালে প্রথম অটোবান তৈরী করেছে সেখানে আজ ৮২ বছর পর ২০১৪ সাল পর্য্যন্ত আমরা একটিও আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক মোটরওয়ে তৈরী করতে সক্ষম হইনি। আমরা এর কারন নির্ধারনের চেষ্টা করলাম। অর্থনৈতিক দুরবস্থা আর দৈব দূর্বিপাকের কথা আমাদের মনে আসলেও অদূরদর্শী ও নীতিহীন রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই আমরা সর্বাগ্রে স্থান দিলাম। এরপর দুর্নীতি, নিয়ন্ত্রনহীনতা, অব্যাবস্থাপনা আমাদের ললাটে লিপিবদ্ধ আছে তাও আমাদের আলোচনায় স্থান পেল। তবে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা যায় তাহলে খুব দ্রুত আরও অগ্রগতি করা সম্ভব বলেই আমাদের মনে হল। আমাদের বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদেরকে সর্বদাই ব্যস্ত সমস্ত হয়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যাচ্ছে কিন্তু এটা কি একজন মন্ত্রীর প্রধান কাজ নাকি আনুপূর্বিক পরিকল্পনা আর তার সঠিক বাস্তবায়নের দিকে লক্ষ্য নির্ধারন করা মূল্যবান সেটা ভেবে দেখার কথা আলোচনা হল। প্রাক্তন যোগাযোগ মন্ত্রী যিনি পদ্মাসেতু প্রকল্পে দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজন দূর্নীতিগ্রস্থ মন্ত্রী হিসাবে পরিগণিত হয়ে বিদায় গ্রহণ করেছেন সেটা যে সমগ্র জাতির ললাটে কালিমা লেপন করেছে সেটাও আলোচিত হল।

গাড়ি চলছে এই ফাঁকে সাকী দূরবর্তী এক পাহাড়ের চূড়ার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন ওটা একটি ঐতিহাসিক দূর্গ যার নাম বূর্গ দূর্গ। পর্য্যটকদের জন্য এই দূর্গ আজো অত্যন্ত আকর্ষনীয়। উঁচু পাহাড়ের চুড়ায় উপার নদীর তীরে ১২ শতকে এই দূর্গ নির্মান করেন বার্গের কাউন্ট এডলফ ৩; এই দূর্গকে ঘিরে এই এলাকার অনেক ইতিহাস ও যুদ্ধ বিগ্রহ জড়িত আছে। এডলফ ৮ সম্ভবত ডূসেলডর্ফকে শহরের মর্য্যাদায় উন্নীত করেন যা পরবর্তীতে ১৩৮০ সালের দিকে যখন কাউন্ট উইলিয়াম ডিউকের মর্য্যাদা পান তখন তিনি ডুসেলডর্ফকে ডেচি অফ বার্গের রাজধানী করেন। এরপরেও ১৬৩২ সালে সুইডিশরা এই দূর্গ দখল করে নিলে প্রায় ৩০ বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এই দূর্গ পুনরুদ্ধার করা হয়। এর পর ১৮30 সালের দিকে আগুনে পুড়ে যায় এই দূর্গ। ১৭১৫ সালের দিকে পুনরায় নির্মীত হয় এই দূর্গ যা এখনও সংরক্ষিত আছে আর পর্য্যটকদের জন্য উন্মুক্ত আছে। সিলেটে মনোরার টিলায় এখনো ১৩০১ সালে শাহজালাল (রঃ আঃ) কর্তৃক ধংসকৃত গৌড়ের রাজা গোবিন্দের দুর্গের ধংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। জার্মানরা তাদের ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করেছে সযতনে আর আমরা আমাদের ঐতিহাসিক পূরাকীর্তিকে তিলে তিলে নিঃশ্বেস করছি অযতনে আর চরম অবহেলায়।

সিলেট যেমন নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ঠিক একইভাবে সৃষ্টিকর্তা এই অঞ্চলকে দিয়েছেন প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্য। আমাদের শৈশবে বাংলাদেশে কোন খনিজ গ্যাস ছিলনা। রান্না বান্নার কাজে সবাইকে এক ধরনের শুকনো গাছের ডালপালা কিংবা কয়লা কিংবা কেরোসিন তেল ব্যাবহার করতে হত। এসবকে সিলেটে লাকড়ি বলা হত, এসব নিকটবর্তী চা বাগান কিংবা জংগলের গাছ কেটে শুকিয়ে বিক্রি করা হত। পরবর্তীতে সিলেটে ও বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি আবিষ্কৃত হলে প্রায় সারা দেশেই বর্তমানে এই গ্যাস গৃহস্থালির কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে। ১৯৫৫ সালে সিলেট শহরের নিকটবর্তী হরিপুরে একে একে ৬টি কূপ খনন করে পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড কোম্পানি। সেই বছরই সম্ভবতঃ বাংলাদেশের (তৎকালীন পাকিস্তানের) ইতিহাসে প্রথম গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায় হরিপুরে। দুঃখজনক যে সেখানে ঐ সময় মারাত্নক বিস্ফোরণ ঘটে, যার কারনে কয়েকটি কূপ আর ব্যাবহার করা সম্ভব হয়নি। একটি কূপ থেকে ১৯৬0 সালে প্রথম গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যার পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ৪০লক্ষ কিউবিক ফিট এরপর ১৯৬১ সালে ৩নং কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয় ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় প্রতিদিন ২০ লক্ষ কিউবিক ফিট হিসাবে। বিস্ফোরিত সেই কূপের গ্যাস হরিপুরের মাটিতে আর পানিতে আজো অনবরত নির্গত হচ্ছে আর লক্ষ লক্ষ কিউবিক ফিট গ্যাস প্রজ্বলিত হচ্ছে প্রতিদিন আর প্রতিক্ষণে। এই প্রজ্বলিত গ্যাসের আধার দেখা ছিল সিলেটে আমাদের পর্য্যটন। কোন অতিথি এলে আজো আমরা আমাদের বেদনার প্রদর্শনী করি ঐ আগুনের লেলিহান শিখা দেখিয়ে। এই হরিপুরেই ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম আর একমাত্র তেলক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। বর্তমানে পেট্রোবাংলার তত্ত্বাবধানে হরিপুর, কৈলাসটিলা, রশিদপুর, বিয়ানীবাজার ও ছাতকে ১৪টি কূপ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৫১'৯৩ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস, ৯৭৪.৩৯ ব্যারেল কনডেনসেট, ৫০৯.৪৩ ব্যারেল লিকুইড গ্যাস, 1808.১২ ব্যারেল মোটর স্পিরিট, ৭৭৯.৬৫ ব্যারেল ডিজেল এবং ৬৫৬.৩৬ ব্যারেল কেরোসিন উত্তোলিত হচ্ছে। এদিকে ১৯৯৭ সালে মৌলভীবাজার জেলার মাগুরাছড়া গ্যাস ফিল্ডে বিস্ফোরণ হয়ে প্রায় ৯০০০ কোটি টাকার প্রাকৃতিক গ্যাস সহ অন্যান্য সম্পদ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এই ধরনের দুর্ঘটনার নজির কতগুলো আছে আমার জানা নেই তবে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল একটি দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার প্রাকৃতিক সম্পদ যাদের অবহেলায় আর দায়িত্বহীনতায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তারা কতজন জবাবদিহি করেছে কিংবা তাদের শাস্তি কি হয়েছে সেটাও তলিয়ে দেখার বিষয়।

এক পর্য্যায়ে সাকীর নিকট আমি “খালাম্মা” সম্পর্কে জানতে চাইলাম। এই খালাম্মা হচ্ছেন সাকীর আম্মা। সাকীর আম্মা আমার দৃষ্টিতে একজন বিরল প্রতিভা সম্পন্ন মহীয়সী নারী। সাকীর আব্বার অকাল মৃত্যুর পর একটি বিরাট পরিবারের কঠিন দায়িত্ব গ্রহণ করেন অনায়াসে। সদাহাস্যময়ী তবুও কঠিন ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন এই মহিলা স্বাধীনতা পরবর্তী ক্ষয়িষ্ণু সমাজে বসবাস করেও কিভাবে সম্মানের সাথে এই পরিবারটিকে লালন করেছেন, শিক্ষিত করেছেন আর তারপর ধীরে ধীরে একে একে সুসন্তান হিসাবে তৈরি করে বিয়ে দিয়ে সুখ আর সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন এই কথা ভাবলেও আমি বিস্মিত হই। সাকীরা ২ ভাই আর ৭ বোন, সাকীই বড়। স্বাধীনতা পরবর্তী সেই ক্ষয়িষ্ণু সমাজে ৭টি কন্যা সন্তানকে নাবালিকা থেকে সাবালিকা আর সাবালিকা থেকে দায়ীত্বশিলা হিসাবে তৈরি করে মায়ের আসনে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছেন, এর থেকে আর বড় সাফল্য আর কিইবা হতে পারে। শুধু মাঝখানে ছন্দপতন হয়েছে আমরা সদাহাস্যময়ী একটি বোন শেলীকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। সাকী জার্মানীতে চলে আসার পর জসীম আর আমি দুজনকে সন্তানসম যে স্নেহমমতায় এই খালাম্মা দিনের পর দিন ধারণ করেছেন সেটাও এক অপার বিস্ময়ের ব্যাপার। জীবনের অনেক কষ্টকর পরিস্থিতিকে তিনি সাহসের সাথে মোকাবেলা করেছেন পরাজয়কে মেনে নেন নি কোনভাবেই।

বহুদিন থেকে আমরা পাশাপাশি বাসায় অবস্থান করেছি। আমার আম্মার সাথে বিশেষ সখ্যতা ছিল এই খালাম্মার। আমাদের সুখে দুখে তিনি যেমন পাশে ছিলেন ঠিক তেমনি তাঁর সুখে দুখেও আমরা পাশে থেকেছি সদা সর্বদা। আমাদের আম্মা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন ১৯৯৪ সালে কিন্তু খালাম্মা এই বার্ধক্যেও আমাদের মাথার উপর ছায়া হয়ে অবস্থান করছেন। সাকীদের পরিবার এখন বর্ধীষ্ণূ হয়েছে। তাঁর বোনরা অনেকেই আজ প্রবাসী কেউ আমেরিকা আর কেউ ব্রিটেনে, এক বোন আর এক ভাই সিলেটে থাকেন। কয়েক ডজন নাতি আর নাতিন নিয়ে সুখেই জীবন যাপন করছেন খালাম্মা। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘায়ূ করুন আর সুস্বাস্থ্য দান করুন।
কাহলিল জিব্রানের ভাষায় “মনুষ্য জগতের সবচেয়ে সুন্দর শব্দটি হচ্ছে “মা” আর সবচেয়ে সুন্দর ডাকও হচ্ছে “মা”। এই ছোট্ট শব্দটি আশা ও ভালবাসার অফুরন্ত ভাণ্ডার। হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে বেরিয়ে আসা সবচেয়ে মিষ্টি ও দয়ালু শব্দ। মা হচ্ছেন সকল প্রাণের আধার- তিনি দুখের সময়ের সান্ত্বনা, হতাশার আশা আর দুর্বলতায় আমাদের প্রাণশক্তি। তিনি হচ্ছেন ভালবাসা, ক্ষমা, দয়া, সহানুভূতি এবং সহনশীলতার একমাত্র আধার।
প্রকৃতির সকল কিছুই মাতৃত্বের কথা বলে। সূর্য্য হচ্ছে পৃথিবীর মা আর সেই মা তার হৃদয় নিংড়ে সকল পুষ্ঠি দিয়ে রক্ষা করে এই পৃথিবীকে। রাতের বেলা সাগর, নদী আর পাখীর গান শুনিয়ে যতক্ষণ পর্য্যন্ত পৃথিবী গভীর ঘুমে না হেলে পড়ছে ততক্ষণ তাকে কখনই ত্যাগ করেনা। আর এই পৃথিবী আবার বৃক্ষরাজি আর ফুলের মা। এদের জন্ম দিয়ে পুষ্ঠি দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করে আজীবন। আর সেই বৃক্ষ আর ফুলও মায়ের মত জন্ম দেয় ফল আর বীজ। এই মা’ই সকল অস্তিত্বের মূল পাত্র, চিরন্তন প্রাণ, সৌন্দর্য্য আর ভালোবাসার সীমাহীন আধার!” (অনূদিত)

কথা বলতে বলতে কিভাবে যে আমরা বার্লিনের কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা বুঝতেই পারিনি। মাঝপথে কয়েকবার থেমে চা-কফি পান করা হয়েছে আর গণ-সৌচাগার ব্যাবহার করা হয়েছে। সাকীকে অবশ্য কিছুটা পরিশ্রান্ত মনে হচ্ছিল। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যানবাহন আর মানুষ এই অটোবান দিয়ে চলাচল করে কিন্তু শৌচাগার সমূহের রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত সুচারু আর পরিচ্ছন্ন। আমাদের দেশে এই পরিচ্ছন্নতা আর রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষতা আর আন্তরিকতার অভাবের কথা মনে করে আমরা ব্যাথিত হলাম।

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×