somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেল হত্যা দিবসঃ কিছু আক্ষেপ

০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাঙালি জাতির জীবনে গৌরবময় ইতিহাসের পাশাপাশি, কিছু লজ্জার কাহিনীও বিধৃত। ১৫ আগষ্টের কলঙ্কজনক ও দুঃখময় ঘটনার পর যে ঘটনাটি আমাদের চরমভাবে পীড়া দেয়, তাহলো ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড। ঘটনা দুটো একই সূত্রে গাঁথা। ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্বজনদের নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ড ছিল সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। এরই ধারবাহিকতায় ৩ নভেম্বরের বেদনাদায়ক ঘটনা। গুরুত্বের বিবেচনায় ১৫ আগষ্টের পর পরই আসে ৩ নভেম্বরের জেল হত্যা দিবস। তবে বাস্তব প্রেক্ষাপটে ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার (সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান) হত্যাকাণ্ডের দিবসটি যথাযথ গুরুত্ব ও মর্যাদায় পালিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয় না।
১৫ আগষ্ট ৭৫এর পর চক্রান্তকারীরা এদেশের ইতিহাস পাল্টে দেবার যথেষ্ট চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। চক্রান্তকারীর দলে কতিপয় ছদ্দবেশী মুক্তিযোদ্ধা ও বর্ণচোরা আওয়ামী লীগ নেতা জড়িত ছিলেন, যাদের স্বপ্ন ছিল পাকিস্তান, পিতা ছিল জিন্নাহ। তারা এহেন চক্রান্ত করেনি দেশটির ভাবগত মূল চেতনা বিনষ্ট ও বিকৃত করে আবার ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন করার জন্য। বাংলাদেশের আপামর মানুষের সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষায় অর্জিত স্বাধীনতা সুফল পাওয়ার আগেই বিনষ্ট করেছিল তারা। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেনি। দীর্ঘ একুশ বছর সরকারীভাবে জাতির পিতার নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে শিশুতোষ কিসসা কাহিনীতে পরিণত করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই অবস্থার অনেক পরিবর্তন আসলেও সার্বিকভাবে অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ রয়েছে। দুঃখজনক ও রূঢ় শোনালেও সত্য যে, এখনো বর্ণচোরা কিছু লোক সরকার ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছেন, যারা প্রকৃত ইতিহাসকে অতিরঞ্জিত ও বিকৃত করে নতুনভাবে কিছু করার প্রয়াস নিচ্ছে। এসব কখনোই আওয়ামী লীগ ও এদেশের স্বাধীনচেতা জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়।
মর্যাদার বিবেচনায় বঙ্গন্ধুর পরই জাতীয় এই চার নেতার স্থান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানী অপশাসকদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে যেমন ত্বরান্বিত করেছিলেন, তেমনি ওই শাসকরা তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে বন্দি রাখাকালীন তাঁর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে এই চার নেতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। বিশেষ করে তাজউদ্দিন আহমদের ভুমিকা ছিল অবিসংবাদিত। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের মধ্য দিয়ে এঁরাই বঙ্গবন্ধুকে সকল প্রেরণার উৎসে ধারন করে মাঠে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রিয় দেশ মাতৃকাকে উদ্ধার করে সকল শোষণের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে। সকলেই যে যার যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদার আসন প্রাপ্য। বঙ্গবন্ধু পরিপূর্ণ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবেন তখনই, যখন তাঁর সহচরগণেরও সঠিক মূল্যায়ন হবে। এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু ছিলেন কাণ্ডারী, আর এই চার নেতৃবৃন্দ ছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত সহযোগী। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু বিসর্জন দিয়েছেন তাঁদের প্রিয় নেতার প্রতি অপার আনুগত্য ও ভালবাসায়। ১৫ আগষ্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর পর অনেকেই রূপ বদলিয়েছিলেন, পালিয়ে বেঁচেছিলেন, হঠকারিতা করেছিলেন। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও জাতীয় এই চার নেতা আপোষ করেননি। তাঁরা কারগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বসে আপোষের সকল প্রস্তাব দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাক্ষান করেছিলেন। কোনরকম লোভনীয় প্রস্তাবই তাঁদেরকে প্রিয় নেতার রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার পথে নিয়ে যেতে পারেনি। যারা সত্যিকারভাবে বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, একমাত্র তাঁরাই পারবেন জাতীয় এই চার নেতার ত্যাগ ও মহত্বকে অনুধাবন করতে। বর্তমানের সুবিধাবাদী নেতারা কখনোই তাঁদের এই ত্যাগের মূল্যায়ন করতে পারবে না। তাঁদের মর্যাদা দেবার যোগ্যতাও এদের নেই।
আমাদের জাতীয় পাঠক্রমে জাতীয় চার নেতার ব্যাপারে পর্যাপ্ত আলোচনা নেই। নেই ৩রা নভেম্বরের মর্মন্তদ ঘটনার বিশদ বর্ণনা, যা দেখে আমাদের আগামী প্রজন্ম জানবে আদর্শ, দেশপ্রেম ও প্রিয় নেতার প্রতি তাঁদের আনুগত্যের অমিয় কাহিনী। এই দিনটিতে রাষ্ট্রীয় শোক পালন, জাতীয়ভাবে উদযাপন, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে কালো পতাকা উত্তোলন, রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করা উচিত, যা আংশিক বা আওয়ামী লীগের দলীয়ভাবে পালন করা হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে পূর্ণ মযাদায় পালিত হচ্ছে না।
যে জাতি তাঁর জাতীয় বীরদের সম্মান দিতে জানে না, তাঁর মতো হতভাগা আর কেউ নয়। আমরা কি পারবো, নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে আমাদের জাতীয় এই বীরদের যথাযোগ্য সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করতে? নাকি অতীতের মতোই চক্রান্তের শিকার হয়ে চিরটা কাল হীনমন্যতায় নমিত হয়েই কাটাবো?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:১০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×