somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অবোধ-অসহায়ত্ব

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে যে কতটা অসহায় তা সে নিজেও জানে না । কেননা কোন কিছু জানার জন্য যেটুকু মানসিক ভারসাম্য দরকার তা তার নেই । সে সে বলছি কেন, তার তো কোন না কোন নাম আছে ? না আসলে তার কোন নামও নেই । তার
সম্পর্কে জানার কিছুই নেই, আবার যদি বলি কিছু যদি জানতে ইচ্ছা হয় ? তবে বলব সে উপায়ও নেই । আপনাদের মনে হতে পারে আমি এসব আবোল-তাবোল কি বলছি ? তাই না ? আসলে আমি যা বলছি সব ঠিকই বলছি ।


কেননা ডাস্টবিনে পড়ে থাকা শিশুর কোন নাম থাকে না, না নাম থাকতেই পারে যদি কেউ দেয় । তবে আমি যার কথা বলছি তারএকটা অতি পরিচিত নাম আছে, অচেনামানুষও কিছুক্ষণ তাকে দেখলে তার নামটাবলতে পারবে । আর সে নামটা হল পাগলী ।আমদের সমাজে মানসিক ভারসাম্যহীন পথে
পথে বেড়ানো মানুষগুলোকে এই ধরনের নামব্যবহার করে ডাকা হয় ।আমার এ নামটা বলতে ভাল লাগছে না, তাই মাঝের ‘গ’টাকে বাদ দিয়ে তার নাম পালী দেওয়া যাক ।

পালী জন্ম নিয়ে তো প্রথমেই বললাম কোনএক নিষ্ঠুর মা তাকে ডাস্টবিনে ফেলে রেখে যায় । আর এখান থেকেই তার জীবনের অসহায়ত্বের শুরু । সকালবেলা এক বৃদ্ধা
ভিখারিনী ডাস্টবিন থেকে তাকে তুলে
নিয়ে যায়, না মমতার বশবর্তী হয়ে নয়;
ভিক্ষার সুবিধার্তে । সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু আবার কি ভিক্ষা করবে তাই না ? তবে বলব
ভিক্ষা করবে না, ভিক্ষার সুবিধা করবে ।
কিভাবে ? সেই ভিখারিনী তখন সদ্য জন্ম
নেওয়া পালীকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর
বলে- “বাচ্চা হওনের সময় আমার মাইয়া মইরা গেছে , অহন আমি এই বাচ্চারে খাওয়ামু কি ?”- এভাবেই সে কিছুদিন তার ভিক্ষাবৃত্তি ভালভাবে চালায়।


পালীর চার বছর পর্যন্ত ওই
ভিখারিনীর কাছে পালিত হয় । কিন্তু
পালীর চার বছরের মাথায় সেই ভিখারিনীর মৃত্যু হয় । যার মাধ্যমে তার জীবনের আরেক অসহায়ত্বের শুরু হয় ।মাত্র চার বছর কি
করবে ? কি আর করবে ওই বস্তির মধ্যেই
থাকে, ছোট মানুষ বলে কেউ কেউ কোনদিন খেতে দিত বা থাকতে দিত । কিন্তু যখন বয়স
আট বছর তখন বস্তির টোকাইদের সাথে
রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় । কিন্তু
এখানেই তার মানসিক ত্রুটি ধরা পড়ে । তার সাথের সঙ্গীরা যেখানে টোকাইগিরি করে
কিছু না কিছু উপার্জন করে, কিন্তু পালীর
সেদিকে কোন খেয়াল থাকে না । সে
নিজের মনে মনে কি যে ভাবে চুপ চুপ বসেথেকে তা বিধাতা ছাড়া কেউ জানে না !
তো এভাবেই একদিন হঠাৎ তার বস্তির
সঙ্গীরা তাকে ভুল করে ছেড়ে চলে আসে ।
মানসিক ভারসাম্যহীন পালী তার আগের
বস্তির কথা মনেই করতে পারে না । রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায় ।
এভাবে কোন শহর থেকে যে কোন শহরে যে
চলে গেছে তার ইতিহাস আর কে খুঁজতে
যাবে! ডাস্টবিনের পচা-বাসি খাবার
খেয়েছে তা আর কেইবা খেয়াল করতে
গেছে! এভাবেই সময়ের সাথে সাথে পালী
বড় হতে থাকে, প্রকৃতির নিয়মেই পালীর
নোংরা-অপরিচ্ছন্ন দেহে যৌবনের ছোঁয়া
লাগে । তার মত মানুষের কাছে কেই বা আর নিজের কাম-চরিতার্থ করতে যাবে ?

কিন্তু
না, পালী পাগল হলেও সমাজের বিকৃত রুচির
পশুদের মধ্যে একজনের নজর গিয়ে তার উপর
পড়ে ।আর সে কারনেই কোন এক রাতের
আঁধারে কোন কিছু বোঝার আগেই সেই
মানুষরূপী পশু পালীর মত মানসিক
ভারসাম্যহীন এক অসহায় মেয়ের অসহায়ত্বের
বোঝাটা আরও বাড়িয়ে দেয় ।
এর পড়ে দশমাস দুর্বিষহ যন্ত্রণার পড়ে পালী
এক পুত্র শিশুর জন্ম দেয় । আর তার সন্তানেরও
জন্ম হয় কোন এক ডাস্টবিনের পাশে । সকাল
বেলা মানুষ এ অবস্থায় পালীকে দেখতে
পায় । প্রাতভ্রমনে বের হওয়া এক ডাক্তার এ
অবস্থা দেখে প্রথমে নাড়ি ছিন্ন করে।
কিন্তু বাচ্চাটিকে যখন পালীর কোলে
দেওয়া হয় তখন সে বাচ্চাটিকে নিয়ে তার
গায়ে মাটি-আবর্জনা ইত্যাদি লাগাতে শুরু
করে । নিস্পাপ শিশুটির জীবনের আশঙ্কা
হওয়ায় পালীর কাছ থেকে বাচ্চাটিকে
উদ্ধার করে এক এতিমখানায় দেওয়া হয় । আর
পালীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে
দেওয়া হয় ।আর জীবনের এই প্রথম পালীর
জীবনে একটু মায়া-মমতার ছোঁয়া লাগে ।


কিন্তু তা মাত্র কিছুটা সময়ের জন্য ।
কেননা পালীর উপর মমত্ববোধ জেগে উঠা
সেই বৃদ্ধ-ডাক্তার এক নির্মম সিদ্ধান্তে
উপনীত হয় । কেননা পালীর মত মেয়ে সুস্থ
হয়ে ফিরে গেলে আবার সমাজের সেই
নিষ্ঠুর আচরণের স্বীকার হবে ! আর সে
জন্যেই ডাক্তার পালীকে ইনজেকশন দিয়ে
মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন । আর সেই
একটা ধাতব সুচের মাধ্যমে পালীর জীবনের
অবসান ঘটে ।

পালী তো এখন তাহলে অতীত, কিন্তু পালীর
ছেলের কি অবস্থা ? হ্যাঁ পালীর ছেলে
এতিমখানায় ছিল, কিন্তু একদিন নিঃসন্তান
ব্যবসায়ী আলতাফ চৌধুরী এতিমখানা থেকে
বাচ্চা দত্তক নিতে এসে পালীর ছেলের
নিস্পাপ মুখের মায়ার বশবর্তী হয়ে তাকে
নিয়ে যায় । আলতাফ চৌধুরীর স্ত্রী
বাচ্চাটাকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে
যায় । তারা বাচ্চাটির নাম দেয় অমূল্য, এক
পালীর কাছ থেকে জন্ম নেয়া অমূল্য তাদের
জীবনের সবকিছু হয়ে দাঁড়ায় ।

তারপরে বিশটি বছর অতিবাহিত হয়ে
যায়......................................................
অমূল্য এখন লসএঞ্জেলসে সফটওয়্যার
ইঞ্জিনিয়ার । । মা-বাবাকেও সে তার কাছে
নিয়ে এসেছে । অমূল্যর একটি মেয়ে আছে ।
মেয়েটি জন্ম নেওয়ার সময় অমূল্যর স্ত্রীর
মৃত্যু হয় । আর অমূল্যর মেয়ে অনন্যা
বাবা,দাদা,দাদির কাছে থেকে বড় হতে
থাকে । কিন্তু অনন্যার মধ্যে ফোবিয়া দেখা
যায়; সুচ দেখলে তার আচরণ পাল্টে যেত ।

অনন্যা আঠারোতে পা দিলে অমূল্য তার
মেয়েকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে অনন্যা
বলে-“Dad I don’t know that, it is phobia or not,
because I can hear a horrible sound of a lady
inside me, when I see a needle in a syringe.’’

অমূল্য তার আসল মায়ের সম্পর্কে কিছুই
জানে না, হয়ত তাই সে তার মেয়ের এ কথার
কিছুই বুঝতে পারল না । কিন্তু এও কি সম্ভব ?
বিধাতা কি অনন্যার মাঝে পালীকে
বাঁচিয়ে রেখেছেন ? তাহলে এ বাঁচিয়ে
রাখার অর্থই বা কি ?
না বিধাতার লীলাখেলা বোঝা বড়ই কঠিন ।
তবে অসহায়ত্বের মধ্যে যে কোন ধনি-দরিদ্র,
সুস্থ-পাগল বিষয় নেই ;
তা তাদের এই অবোধ-অসহায়ত্বের কাহিনীই
বলে দেয় ।।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×