রাজনীতি তার নিজের ক্ষমতাবলে আজ খারাপ একটি শব্দে পরিনত হয়েছে, রাজনীতি খারাপ, খারাপ জারা এর সাথে জরিত থাকে তারাও। যেকোনো একটি ভাল কাজের মদ্ধে রাজনীতির আগমন ঘটলে সেই কাজটি যে তার স্বকীয়তা হারায় তা কাউকে নতুন করে বুঝাতে যাওয়ার চেস্তা করা বৃথা। অন্তত রাজনীতির কারনে ভাল কাজ ও যে একসময় ভালোর উদ্দেশ্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় তা কে না জানে????
তবে ঠিক এই মূহুরতে এই বিষয় নিয়ে কথা বলার একটাই কারন, আর তা হল, বহুল আলোচিত শাহবাগ স্কয়ার কিংবা প্রজন্ম চত্বর নিয়ে কিছু শঙ্কা, কিছু ভয় কাজ করছে মনে এইজন্যে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি যখন এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন মাত্র কয়েকজন ব্লগার দের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ কিছু ব্যাক্তিকে নিয়ে শুরু হয়েছিল। একদিন দু-দিন করে আজ পার হয়ে গেছে ১৫টি দিন। এই সময়ের মদ্ধে কি কি পরিবরতন হয়েছে এই আন্দোলনের কিংবা আদৌ কোন পরিবর্তন হয়েছে কি না ????
প্রারম্ভিকা (শানে নুযূল)ঃ
আন্দোলনের সুত্রপাত রাজাকার, জুদ্ধপরাধি কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি না হয়ে যাবজ্জীবন শাস্তির রায় থেকে। আমরা বাঙালি জাতি এই রাজাকার তথা জুদ্ধপরাধিদের বিচার এর জন্যে অপেক্ষা করে আছি গত ৪২ বছর ধরে। আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পর যখন সাধারন অপামর জনসাধারন আশায় বুক বেধেছে, যে এইবার হয়তো এই জাতী, এই বাঙালি, এই দেশ কলঙ্কমুক্ত হবে, এক অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাবার সুযোগ পেয়ে সবাই উল্লাসিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু যে শাস্তি জার প্রাপ্য, সে শাস্তি তাকে না দেয়ায় সেই সব অপামর জনসাধারনের মনে ভীতি ঢুকে গিয়েছিল, সবাই ধরেই নিয়েছিল, হয়তো এবারও সরকারের আমলাতান্ত্রিক চালাকির ফাক দিয়ে সব রাজাকার তথা জুদ্ধপরাধিরা আগের মতই পার পেয়ে যাবে। ঠিক এমন সময় দায়িত্ত কাধে তুলে নিয়ে জাতীর কাণ্ডারি হিসেবে সামনে দারিয়ে জায় কয়েকজন অনলাইন এক্তিভিস্ত ব্লগার ভাই-বেরাদর। তাদেরই ফলশ্রুতিতে আজ সারা বিশ্ব দেখল নতুন এক যুদ্ধ, নতুন এক আন্দোলন, নতুন প্রজন্মের প্রতিবাদ। যেই আন্দোলনের এক ও অভিন্ন দাবি ছিল, "জুদ্ধপরাধিদের ফাঁসি চাই"।
দিন নেই রাত নেই, ক্লান্তিহীন ভাবে কিছু তরুণ-তরুণী স্লোগানে স্লোগানে শাহবাগকে করে তুলল ৭১এর রেসকোর্স ময়দান। কারো চখে ঘুম নেই, কারো ক্ষুধা নেই, সবার একটাই চাওয়া জুদ্ধপরাধিদের বিচার, দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার নেশায় সবাই উন্মত্ত।
মুল-আলোচনাঃ
আমরা বাঙালি জাতি বরই হুজুগে জাতি, অর্থাৎ আমরা খুবই আবেগপ্রবন জাতি। আবেগপ্রবন হবার ভাল দিক যেমন আছে, ঠিক তেমনি খারাপ কিছু দিক ও রয়েছে। হ্যা, আবেগপ্রবন বলেই আমরা ৫২তে পেয়েছিলাম আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা, ৭১এ পেয়েছিলাম স্বাধীনতা, ৯০এ পেয়েছিলাম গনতন্ত্র। তবে এর খারাপ দিকটা হল, আবেগপ্রবন হবার কারনে যখন যে চাচ্ছে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবার সুযোগ পাচ্ছে, কারন আমরা হুজুগ কিংবা আবেগপ্রবন, আর তাই কোন কিছু খুব গভির ভাবে চিন্তা করতে আমরা প্রায় অক্ষম। ব্যাখ্যা করছি..।
শাহবাগ এর আন্দোলন শুরু হয়েছিল এক দফা এক দাবি নিয়ে আর তা হল জুদ্ধপরাধিদের ফাঁসি। সেই এক দফা এক দাবি আজ ছয় দফায় গিয়ে থেমেছে। দাবিগুলো যে অযৌক্তিক, কিংবা প্রাসাঙ্গিক নয় তা আমি বলছি না, তবে দাবিগুলোর মদ্ধে কয়েকটা দাবি নিয়ে আমার দ্বিমত রয়েছে। আমি খুব চেষ্টা করবো গুছিয়ে বলার, কততুকু পারব জানিনা।
জুদ্ধপরাধিদের ফাসির দাবি নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই, একজন বাঙালি হিসেবে এটা আমারও প্রানের দাবী।
আমার দ্বিমত ১.
দাবী উঠেছে জামাত-শিবির কিংবা ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক।
আমার প্রশ্ন হল কেন???
উত্তর হিসেবে অনেকেই বলবেন তারা জুদ্ধাপরাধি, আমি বলব না, তারা সবাই নয়, জারা জুদ্ধাপরাধি তাদের ফাঁসি দিলে এরপর তো আর তাদের রাজনীতি নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে না।
অনেকে বলবে, তারা জঙ্গি।
আমি বলব তারা জঙ্গি এই তথ্যের ভিত্তি কি??? এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো জঙ্গি তৎপরতা দেখা গিয়েছে কিংবা যতগুলো জঙ্গি সংগঠন ধরা পরেছে তাদের মদ্ধে হিজবুত তাহরি প্রথম, কিন্তু এর মদ্ধে জামাত-কিংবা শিবিরের কেউ এখন পর্যন্ত জঙ্গির সুরা সদস্য কিংবা অন্য কোন সদস্য হিসেবে কখনো চিহ্নিত হয়েছে বলে আমার মনে পরে না। শায়খ আব্দুর রাহমান, কিংবা বাংলা ভাই এর মত জঙ্গিরাও জামাত শিবিরের ছিল না।
অনেকে বলবে, জামাত জুদ্ধাপরাধিদের সমরথন করে, তারা জুদ্ধাপরাধিদের ফাঁসি চায় না।
আমি একমত, হ্যা তারা চায় না, তাতে কি আসে জায়?? আপনি আমি, দেশের ১৬কোটি মানুশ তো চায়, তাহলে তাদের চাওয়া না চাওয়ায় কি আসে জায়, এখন ট্রাইব্যুনাল যদি রায় তাদের পক্ষে দেয় সেক্ষেত্রে আমরা ট্রাইব্যুনালের কিংবা সরকারের ব্যারথতার প্রশ্ন তুলতে পারি, ট্রাইব্যুনাল পলাতক আসামিকে ফাঁসি দিতে পারে অথচ গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে দেয় জাবজ্জিবন, এর কারন তো একটাই হতে পারে যে সরকার কিংবা ট্রাইব্যুনাল আসলে জুদ্ধাপরাধিদের ফাঁসি দিতে চায় না। আর তারা যদি মনে প্রানে চায়, তাহলে নিসচয় ফাঁসি দেয়া সম্ভব, আর ফাঁসি হলে গুটিকয়েক লোক আর কি বা করতে পারবে, তাহলে আমরা সাধারন মানুশ কিংবা এ জুগের তরুণ সমাজ আছে কি করতে??? তাই জামাত জুদ্ধাপরাধিদের বিচার চাক কিংবা না চাক সরকার কি চায় সেতাই জরুরি, আর আপনি কি ভাবছেন, জামাতকে নিষিদ্ধ করে দিলে কি তারা জদ্ধাপরাধির ফাঁসি চাইবে??? নাকি ফাসির রায় হলে তারা হাসিমুখে তা মেনে নিবে??? বরংচ তাতে করে ঝামেলা আরও বারবে, এখন যে দল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত, তা হয়ত সত্যি সত্যি জঙ্গি দল হিসেবে প্রকাশ পাবে, পাকিস্তানের মত তখন তারা মসজিদে, রাস্তায়, শপিং মলে আত্মঘাতী বমা হামলা করে বেরাবে আর টেলিভিশনে বোমা হামলার দায় সিকার করে হাসিমুখে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করবে। সেতা কি ভাল হবে???? শুধু শুধু আমরা কেন দায়ী হব???
আপনি বলবেন জামাত নিষিদ্ধ না করলে তারা হরতাল করবে, গাড়ি ভাংচুর করবে, মানুষ মারা জাচ্ছে,
আমি বলব, তাদের নিষিদ্ধ করলে যে এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে তা আপনাকে কে বলল???? আর হরতাল যে শুধু জামাত দেয়, হরতালে গাড়ি ভাংচুর শুধু জামাত করে, আওউয়ামি লিগ কিংবা বি এন পি কখনো হরতালে এই সব করে নাই এইটাই বা আপনাকে কে বলল????
জামাত-শিবির ব্লগার হত্যা করেছে,
আমি ধরে নিচ্ছি জামাত শিবির ব্লগার রাজিব ভাইকে হত্যা করেছে, আমিও চাই যে বা যারা এই হত্যার সাথে জরিত তাদের সবার ফাঁসি হোক, কিন্তু প্রশ্ন হল রাজিব ভাই ব্লগার ছিলেন বলে তিনি মানুষ, আর বিশ্বজিত দর্জি বলে সে মানুষ না এটা কেমন কথা??? যদি বিশ্বজিত মানুষ হয় তাহলে কই তখন তো কেউ প্রশ্ন তোলেননি যে ছাত্রলিগ মানুষ খুন করে, তাই আওউয়ামি লিগ এর রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক?????
আমার দ্বিমত ২ ঃ
ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইসলামী ইন্সিউরেঞ্চ, ইবনে সিনা, নয়া দিগন্ত, দিগন্ত টিভি সহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে বয়কট করার আহবান করা হয়েছে।
আমার প্রশ্ন হল কেন????
আপনি বলবেন এরা সব জামাতের প্রতিষ্ঠান, আমি বলি তাতে সমস্যাটা কোথায়???
আপনি বলবেন, নয়া দিগন্ত কিংবা দিগন্ত টিভি শুধু জামাতের সমর্থনে খবর প্রকাশ করে, তারা পক্ষপাতিত্ত করে, আমি বলি কি মশায়, বাংলাদেশে এই রকম একটি পত্রিকা কিংবা টিভি চ্যানেল দেখান যারা কোন না কোন দল সমরথন করে না, আর এটা তো আর বলতে হবে না যে, যারা যে দল সমরথন করে তারা তাদের ভালটা দেখায় খারাপটা কম দেখায়। প্রতিদিন আপনি যদি শুধুমাত্র একটি পত্রিকা কিংবা একটি চ্যানেলে খবর দেখেন তাহলে আপনি কোনদিনও সথিক খবরটি জানতে পারবেন না, আপনাকে কম করে হলে ২টি পত্রিকা ও ৩/৪টী চ্যানেলে খবর দেখতে হবে সঠিক তথ্য পেতে হলে, তাতে ফল কি দারাচ্ছে, যে সব চ্যানেল ই কারো না কারো লেজুর বৃত্তি করে, তাহলে নয়া দিগন্ত কিংবা দিগন্ত টিভি একাকে কেন দোষ দেয়া হচ্ছে????? কেউ যখন ব্লগার রাজিব কিংবা আসিফ মহিউদ্দিন ভাইকে নাস্তিক বলে তখন এই আপনিই বলেন যে সবার মত প্রকাশের অধিকার আছে, তাহলে নয়া দিগন্ত কিংবা দিগন্ত টিভি কি দোষ করলো??? তাদের কেন মত প্রকাশের অধিকার থাকবে না???? ইসলামী ব্যাংক কেন ভাংচুর করা হয় তা আমি বুঝি না, আমার মনে হয় হুজুগে, কারন এছারা আর কোন কারন থাকতে পারে না, কেউ কি আছেন যে আমাকে ইসলামী ব্যাংক এর একটি মাত্র একটি খারাপ কাজের তত্থ্য দিতে পারবেন???? হ্যা, সবাই হুজুগে আছে তাই হয়তো বলবেন এই ব্যাংক জামাতকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে, আমি বলি কি মশায়, আপনার আমার টাকা তো তারা জালিয়াতি করে জামাতকে অর্থ দিচ্ছে না, আর তাছারা একটি রাজনৈতিক দল চালাতে হলে অর্থ লাগবেই, তা জামাতই হক, আর
লিগ কিংবা বি এন পি হক, আর সব দল এইরকম কোন না কোন ব্যাংক থেকে অর্থসাহায্য পেয়ে আসছে, তাহলে সব দোষ এই ইসলামী ব্যাংক এর উপর কেন মশায়????? ইবনে সিনা হাসপাতালে অন্য যেকোন হাস্পাতালের চেয়ে কম খরচে চিকিৎসা করান জায়, এটা কি তাদের অপরাধ???? আমার মায়ের যখন এম আর আই করান প্রয়োজন হল তখন সব হাসপাতালে গিয়েছি, সবাই বলেছে ৮০০০ টাকা লাগবে সেখানে ইবনে সিনায় অরা ২৫% ছার দিয়ে ৫৭০০ টাকায় করে দিয়েছে, আমি বলি কি মশায় হুজুগে ভাংচুর না করে একটু চিন্তা ভাবনা করতে ক্ষতি কি????
যে আন্দোলন জুদ্ধাপরাধিদের বিচার চাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছিল; তা আজ শুধুমাত্র একটি দলের লকদের বিচার কিংবা সেই দলের নিষিদ্ধ করা না করায় জেয়ে পৌঁছেছে, আমার প্রশ্ন হল মশায় জুদ্ধয়াপরাধি কি শুধু জামাতেই রয়েছে??? আর কোন দলে কি নেই???? আমরা তো জুদ্ধাপরাধির বিচার চাই, তা সে যেই দলেরই হোক না কেন, তাহলে আজ শুধু এক দলের লোকদের নিয়ে কেন???? তাতে করে কি আমাদের পক্ষপাত্তিত্ত প্রকাশ পাচ্ছে না???? আমরা তো আন্দোলনের সময় বলেছিলাম আজ দেশে শুধু দুটি দল, মুক্তিজুদ্ধের পক্ষের দল, আর বিপক্ষের, তার প্রমান আমরা রাখলাম কই????? সেই তো লেজুর বৃত্তিতেই গিয়ে সেশ হল!!!!! সেই নিরপেক্ষ আন্দোলনের মদ্ধেও তো রাজনীতি ঢুকে গেল, কিভাবে তা জানি না, কিন্তু ঢুকেছে তা নিশ্চিত!!!!
পরিশিষ্টঃ আমি খুব আশাবাদী মানুষ, আমি আশা করে আছি এই সরকার হয়তো জুদ্ধাপরাধিদের বিচার দিয়ে জেতে পারবে, কিন্তু আমার মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে আদৌ পারবে তো???? যদি না পারে তাহলে আর যেই যা বলুক না কেন, আমি কোনদিনও এই সরকারকে ক্ষমা করতে পারবো না, কারন আমি মনে করি মানুশের বিশ্বাস ভঙ্গ করা খমার অযোগ্য অপরাধ, যে সপ্ন তুমি কোনদিন বাস্তবায়ন করতে পারবে না, সে সপ্ন তুমি কেন দেখাবে??????
পুনশ্চঃ লেখা আরও বড় করা যেত, থাক কোন লাভ নেই, কারন আমার এই লেখা কারো পরতে বয়েই গেছে, এখন জনগণ তাদের লেখা বেসি জাদের লেখায় দেশপ্রেমের পরিবরতে গভির নাস্তিকতা রয়েছে, মানুশের দেশ কিংবা সচেতনাতামুলক কিছু পরার চেয়ে ঈশ্বর ডিম্ব প্রসব করলেন কি না তা পরতেই বেসি আগ্রহ।