সংস্কৃতি বলতে আমরা সাধারণত কৃষ্টি, কালচার ও চিৎপ্রকর্ষ ইত্যাদি বুঝে থাকি।
আমরা বাংলাদেশী। আমাদের বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আছে কৃষ্টি ও কালচার।
আমাদের সংস্কৃতিতে বাবা, মা, ভাই, বোন সহ পরিবারের সকলের একত্রে বসবাস করার রীতি ছিল। এখনও কিছুটা আছে।
আমাদের সংস্কৃতিতে বাবা-মা বৃদ্ধ হলে সন্তানরা তাদের কাছে রেখে যত্ন করবে, সম্মান করবে তাদের সব বিষয় খেয়াল রাখবে এটাই ছিল।
আমাদের সংস্কৃতিতে মহিলারা শাড়ি পরবে এবং মেয়েরা ওড়না সহ সেলোয়ার-কামিছ পরবে এ রীতিই ছিল।
সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করবে। সবাই সবাইকে ভালোবাসবে। দেশে শান্তি ও শৃংখলা বজায় রাখবে এটাই আমাদের সংস্কৃতি।
জারি সারি গান দিয়ে গায়ক গায়িকারা মানুষের মন মাতিয়ে রাখবেন, এটাই তো ছিল আমাদের সংস্কৃতি।
কিন্তু আফসোস! আজ আমাদের তরুণ সমাজ এমনকি কিছু কিছু বৃদ্ধও আমাদের সংস্কৃতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করছে।
ডিস, ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন প্রযুক্তিকে মিস ইউস করে আমাদের তরুণ সমাজ আজ ইউরোপিয়ান কালচারে অভ্যস্ত হয়ে পরেছে। ইউরোপিয়ানদের অনুসরণ করে মেয়েরা গেঞ্জি প্যান্ট পরা শুরু করেছে। কে কত শর্ট ও আঁটসাঁট পোশাক পরতে পারে, সে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। ছেলেরা ছেড়া প্যান্ট ও তালি লাগানো প্যান্ট ও গেঞ্জি পরতে শুরু করেছে।
চুলের কাটিং দেখলে মনে হয় তার চুলের প্রবলেম রয়েছে অথবা কোন অপরাধের শাস্তির কারণে তার চুল ওভাবে কেটে দেওয়া হয়েছে।
মাঝে মাঝে তো ছেলে মেয়ে চেনাও মুশকিল হয়ে যায়। কাকে যে আপু বলব, কাকে যে ভাইয়া বলব, তা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাই।
লেকে, পার্কে, রিকশায় সহ সব পাবলিক প্লেসে বয়স্কদের সামনেই তরুণ তরুণীরা নির্লজ্জভাবে একে অপরকে চুমু খাচ্ছে, জড়িয়ে ধরছে ও নানান অনৈতিক কাজ করছে। তাদের বাঁধা দেওয়ার সাহস কারও নেই। এটাতো আমাদের সংস্কৃতি নয়। এটা নির্লজ্জ ইউরোপিয়ানদের অসভ্য সংস্কৃতি।
হিন্দি সিরিয়াল দেখে দেখে সন্তানরা উগ্র হয়ে যাচ্ছে। সামান্য ঘটনায় বাবা- মায়ের সাথে তুলকালাম ঘটিয়ে দিচ্ছে। তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যার মত ঘটনাও ঘটছে। কি অবাক!
স্টার জলসা সহ বিভিন্ন হিন্দি সিরিয়ালের কারণে বাড়ছে পরকীয়া। ভাঙছে সুখের সংসার। সন্তান কখনো হারাচ্ছে তার মাকে, কখনো হারাচ্ছে তার বাবাকে। কখনো নিজেই খুন হয়ে পরকীয়ার বলি হচ্ছে।
দেশে এখন বৃদ্ধাশ্রম হয়েছে। বাবা-মাকে বৃদ্ধ বয়সে কাছে রাখা সন্তানরা যন্ত্রণা মনে করছে। তাই তাঁদের ঠাই হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। আহ কি নির্মম!
বাংলার জন্য এ দেশের মানুষ জীবন দিয়েছেন। অথচ আজ এফ এম রেডিও সহ আধুনিক তরুণ তরুণীদের বাংলিশে মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠি। ভাবি- তাঁরা কি বুঝাচ্ছে, কি বলতে চাচ্ছে, কিছুই তো বোধগম্য হচ্ছে না।
দেশকে নিয়ে তরুণ সমাজের কোন পড়াশুনা নেই। পড়াশুনা নেই এ দেশকে যারা জন্ম দিয়েছে তাঁদেরকে নিয়ে। তাঁরা ব্যস্ত কখন কোন মুভি দেখবে সেসব নিয়ে।
কিছু তরুণ তরুণী বেশী ধার্মিক সাজতে গিয়ে মাথায় দেয় হিজাব। আবার অন্যদিকে যখন চেয়ারে বসে তখন তার নিতম্ব সহ সব কিছুই জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে যায়। এরকম ভিনদেশী মুসলিম কালচার তাঁদের কে গ্রহণ করতে শিখিয়েছে? বড়ই আশ্চর্য!
এ দেশের সব মানুষ ধর্ম বর্ণ উপেক্ষা করে সবাই সবাইকে ভালোবাসতে শিখেছে। অথচ একদল বিপথগামী তরুণ ভিনদেশীয়দের অনুসরণ করে দেশে মুসলিম-অমুসলিমদের অন্যায়ভাবে হত্যা করছে। জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়েছে। মুক্তমনাদের মুক্তমনকে কেড়ে নিচ্ছে।
জারি সারি গান এখন তাঁদের কাছে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। পরিবারে ভাঙন ধরিয়ে পরস্পরকে দূরে ঠেলে দেওয়া তাঁদের কাছে স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
হায় সেলুকাস!
আজ আমরা কোন সমাজে বসবাস করছি। যেখানে নিজের সংস্কৃতি নিয়ে চলা আজ আমাদের জন্য বড় কঠিন হয়ে গেছে!
এখনই সময় বুঝমান তরুণদের জেগে ওঠার। অবুঝদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার।
সবার জন্য থাকল শুভ কামনা।