হাসান (ছদ্মনাম) পরিবারের বড় ছেলে। তার ছোট দুই বোন। কোন ভাই নেই। এইচএসসি ২য় বর্ষে পড়ছে হাসান, ছোট দুই বোন পড়ছে ৭ম শ্রেণীতে। হাসানের কলেজে যাতায়াতের পথেই একদিন দেখা হয় সাথি (ছদ্মনাম) এর সাথে। প্রথম দেখাতেই সাথিকে ভালো লাগে। হাসান তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমনের মাধ্যমে সাথিকে হাসানের পছন্দের কথা জানায়ও। সাথি সরাসরি হাসানের প্রস্তাব গ্রহণ না করলেও বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী হয়। এভাবেই শুরু হয় হাসান ও সাথির সম্পর্ক। এরই মধ্যে এইচএসসি পাশ করে হাসান। হাসানের বাবা রফিক আহমেদ হাসান ও তার মাকে একত্রে ডেকে জানিয়ে দেয়, হাসান যেন পরিবারের হাল ধরে। তিনি একা আর সংসারের ঘানি টানতে পারছেন না। তাছাড়া হাসানের দুই বোন বড় হচ্ছে, তাদের পড়ালেখার খরচ বাড়ছে এবং বিবাহও দিতে হবে। হাসান বাবার দুটি হাত ধরে তাকে আশ্বস্ত করে, পরিবার ও বোনদের সব দায়িত্বই যে সঠিক ভাবে পালন করবে, যেভাবেই হউক, পরিবারের প্রতি এতটুকু অবহেলা করবে না সে।
হাসানের সব বন্ধুরা ভার্সিটি ভর্তি কোচিংয়ে ব্যস্ত তখনই চাকুরীর খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে হাসান। গ্রামে মেয়েদের সামান্য পড়ালেখা করিয়েই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, সাথির বাবাও সাথীকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। হাসানকে বিষয় অবহিত করে সাথি। দিশেহারা হয়ে যায় হাসান। মা-বাবা, বোনদের মুখ তার সামনে ভেসে উঠে।
সাথির বড়লোক বাবা হাসানকে কখনোই মেনে নেবে না, আর মেনে নিলেই বা কি, হাসানের দ্বারা এই অবস্থায় বিয়ে করা সম্ভব নয়, সংসারের সমস্ত দায়িত্বই হাসানের কাঁধে, কোন ভুল করার সময় এটা নয়, এসব ভেবে ভেবেই সাথির সাথে দেখা করে পরিবার, বাস্তবতা ভবিষ্যত বিষয়ে খুলে বলে হাসান। সাথিও হাসানের কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে যায়, শুধুমাত্র ভালোবাসার নামে পরিবারের প্রতি গুরু দায়িত্ব কর্তব্য ভুলে গিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ছুটে যাওয়ার কোন মানে হয় না। দুটি মন ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেলেও দুজনকেই মেনে নিতে হচ্ছে নিষ্ঠুর বাস্তবতা।
যথারীতি সাথির বিয়ে হয়ে যায, হাসান ভালো কোন চাকুরী খুজে না পাওয়ায় বাবার পৈত্রিক কয়েক শতক কৃষি জমি বিক্রি করে ছোট একটা ব্যবসা করে। গ্রামের বাজারে দীর্ঘ ৫ বছর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় হাসান। ইতিমধ্যে দু বোনকেই ভালো পাত্রস্থ করে হাসান। মা বাবারও গর্বের শেষ নেই হাসানকে নিয়ে।
এমনও হাজারো হাসান আছে আমাদের সমাজে, যারা নিরবে নিবৃতে নিজের ইচ্ছা আকাঙ্খা, ভালো লাগা ভালোবাসা বাদ দিয়ে পরিবারের হাল ধরেন, সুন্দর ভাবে বাঁচার জন্য সংগ্রাম করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৩