somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্কিংবোধ, পুলিশ, প্যাঁদানি, পাবলিক, পূজা

০২ রা অক্টোবর, ২০০৬ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্দিতে অবস্থা একেবারে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীরভাবমূর্তির মতো কাহিল, তার ওপর সন্ধ্যার ছোপ আকাশে পড়লেই সাবস্টেশনের দায়িত্বনিষ্ঠ কর্মীরা এলাকা আন্ধার করে ছাড়েন। দিলাম ঘুম।

বিদ্যুৎ আবার বাড়ি ফেরার পর টলতে টলতে উঠলাম। উঠেই শুনি দারুণ খবর। আইনশৃঙ্খলার মাবাপ ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের কতিপয় অতন্দ্র লাঠিয়াল ও বন্দুকের বাঁটিয়াল মেরে একশা করে ছেড়েছে বাংলার শু্যটারদের।

পুলিশ যেহেতু সকল আইনের ঊধের্্ব, তাদের কৃতকর্মকে প্রশ্ন করার স্পর্ধা আমাদের কারোরই থাকা উচিৎ না। আর প্রশ্ন তুললেও পুলিশের ওপরতালার কর্তারা পুলিশের হয়েই সঙ্গৎ করেন। কাজেই ভাবুকমনে খবর শুনতে বসলাম।

ঘটনা নাকি এরকম [নাকিটা খেয়াল করবেন], এশীয় ঈদ উৎসব চলছিলো গুলশানের কোন একটি ভবনে। আজ পূজার ছুটি, পুলিশের জনৈক উঁচু কর্তা গাড়িতে চড়ে বেরিয়েছেন সস্ত্রীক, ঈদ উৎসবে একটু উঁকিঝুঁকি মারতে ... [নাদানের প্রশ্ন 1: ছুটির দিনে কি তাঁরা সরকারী গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন? ফূর্তি মারার জন্য কি জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় তাঁদের গাড়ির খরচ যোগানো হয়? আর যদি নিজের পয়সায় কেনা গাড়ি হয়, প্রশ্ন থেকে যায়, পুলিশের কর্তাদের বেতনের পয়সা দিয়ে কি গাড়ি পোষা যায়?] তো, সেই উৎসবস্থলের সামনে পার্কিঙের জন্য বরাদ্দ জায়গাটা আগেই একেবারে ভরভরাট করে রেখেছিলেন উৎসবামোদী অন্যান্য কাপ্তানরা, বেচারা পুলিশকর্তা তাই বাধ্য হয়ে তাঁর গাড়িখানা পার্ক করেন গুলশান শু্যটিং ক্লাবের সিংহদরজার একেবারে সামনে [নাদানের প্রশ্ন 02: ঢাকা শহরে যাঁরা গাড়ি চালান, তাঁরা কি পার্কিং সম্পর্কে নূ্যনতম বোধ রাখেন না? কোথায় পার্কিং করা উচিৎ, কোথায় অনুচিৎ তা কি তাঁরা জানেন না?] । হয়তো, কর্তা ভেবেছিলেন, শু্যটিং ক্লাবে সিনেমার শু্যটিং হয়, যতোসব এলেবেলে লোকের আড্ডা, কালেভদ্রে দরজা খুলে লোকে বেরোয় বা ঢোকে, বাকিটা সময় নষ্টামো করে, এখানে গাড়ি রেখে ঘন্টা দুয়েক ঈদ উৎসবে সময় কাটিয়ে আসায় কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বাদ সাধে শু্যটিং ক্লাবের বেয়াড়া নিরাপত্তারক্ষী, কানুনের তাল সম্পর্কে যে একেবারেই তালকানা। সম্ভবত সে সেই সিংহদরজার জাঁকালো কাঠামো থেকে হটিয়ে দিতে চাই পুলিশকর্তাকে। স্বভাবতই ক্ষেপে ওঠেন কর্তা। অ্যাত্তো বড় সাহস, কানুনের পোঁদে কাঠি দেয়া? তিনি ফোর্স তলব করে আনেন এই বেয়াদবদের আদবলেহাজ 101 শেখানোর জন্য। ওদিকে কমনওয়েলথ গেমস না কী যেন বলে, ওখানে গিয়ে একটা পদকফদক জিতেছে, আসিফ না কী যেন নাম, এরকম এক শু্যটার তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ক্লাবে ফূর্তি করছিলো। সম্ভবত নিষিদ্ধ কোন কাজকারবার। বন্দুকপিস্তল চালিয়ে ছোকরার একটা ফাঁট হয়েছে, অ্যাতোবড় তার স্পর্ধা, সে এবং তার ওঁৎ পেতে থাকা সহযোগীরা তখন এগিয়ে এসে কর্তব্যরত [অর্থাৎ, নিরাপত্তারক্ষীদের প্রহাররত] পুলিশদের ওপর চড়াও হয়। এহেন বেয়াদবি পুলিশ কি কখনো সহ্য করতে পারে? করেছে কখনো? তারা তখন আসিফকে প্যাঁদায়। প্যাঁদায় তার ইয়ারদোস্তদের। শু্যটিং কমপ্লেক্সের ভেতরে পুরুষ ও মহিলা হোস্টেলে ঢুকে সেখানে ঘরে ঢুকে পেটোয়া তান্ডব চালায় [সবই কর্তব্যের অংশ], বিছানা বালিশ সব তছনছ করে যাতে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা কোন দুষ্কৃতীও ধোলাই এড়িয়ে যেতে না পারে, পিটিয়ে শিক্ষা দেয় সাফ গেমসে স্বর্ণজয়ী শারমিন সুলতানা ও তার সহযোগিনী কিছু বদ ছুকরিকে, পরিশেষে তারা আসিফসহ মোট ছয়জনকে ঢাকা মেট্রোপলিটান আদালতে নিয়ে গিয়ে মামলা ঠুকে দেয়। মামলা খেয়ে বেরিয়ে এসে পামর আসিফ ফোঁপাতে ফোঁপাতে দুষ্টু সাংবাদিকদের কাছে বলে, পুলিশ তাকে হুদাহুদি নাকি পিটিয়েছে। মুখে, হাতে, পায়ে, কাঁধে, সম্ভবত হোগাতেও পুলিশ লাঠি আর বন্দুকের বাঁট দিয়ে পিট্টি দিয়েছে। আগামী এশিয়ান গেমসে আর তার অংশ নেয়া হলো না, এই ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে বেআদব আসিফের।

বেশ হয়েছে। বোঝ ব্যাটা মজা। কানুনের গায়ে হাত দিস, ফোস্কা তো পড়বেই।

তবে আমার মতো নাদানের কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। যেমন, শু্যটিং কমপ্লেক্সে ঢুকে সবাইকে পেটানোর অর্থ কী? তারা কি ওখানে কোন মিছিল বা অবরোধ করছিলো? উঁহু। তাহলে কোন বেআইনী কারবার? সেক্ষেত্রে ওয়ারেন্ট নেয়ার কথা নয় কি? যেখানে সত্যিকারের অপরাধ ঘটে, সেখানে পাবলিক পুলিশকে ডেকেও কূল পায় না, কোন প্রতিকার পায় না, সুন্দর বাবুর পরিবর্তে পুলিশ খুনের মামলায় চালান করে দেয় শাহ আলম বাবুকে, আর ছুটির দিনে একটি ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পুলিশের রাঘববোয়ালেরা খেলোয়াড় পেটান, একটু কেমন কেমন না ব্যাপারটা?

তারপর ধরুন, মেট্রোপলিটান আদালতে নিয়ে গিয়ে যদি মামলাই করা হলো, সেরকম কোন অপরাধ যদি দুষ্টু আসিফ গং করে থাকে, তাহলে তাদের না পেঁদিয়ে গোড়াতেই কেন গ্রেফতার করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলো না? কেন লাঠ্যৌষধির অহেতুক শাসন? কেন বন্দুকের বাঁটের অন্যায্য বাঁটোয়ারা?

পুলিশের মার, দুনিয়ার বার। আমাদের পুলিশবাহিনী আর কিছু না শিখুক, লাঠিপ্রয়োগ ভালোই শিখে আসে। তবে কোন কর্মটি দন্ডনীয়, কোনটি নয়, সবসময় বুঝে উঠতে পারে না। তখন পাবলিকের একটু সমস্যা হয়। পাবলিকের হোগা আক্রান্ত হয়, ফেটে যায়। পাবলিক ব্যথা পায়। পাবলিক অভিমান করে, কারণ পাবলিকের ধারণা পুলিশের কাজ তার সেবা করা। বিপন্ন হোগাকে উদ্ধার করা, সুস্থ হোগাকে বিপন্ন করা নয়। কারণ পাবলিক আবার কর দেয়। সেই করের পয়সা ঘুরে ফিরে পুলিশের উন্নয়নে ব্যয় হয়।

তবে পুলিশকর্তারা পাবলিককে এসব কষ্টকল্পনা থেকে কিছু বিবৃতির মাধ্যমে নিষ্কৃতি দিতে পারে। তাঁরা যে পাবলিকের কষ্টের আয় থেকে কেটে নেয়া করের পয়সায় চলেন না, চলেন বিভিন্ন অপরাধের চক্রের কাছ থেকে পাওয়া বখরা আর পাবলিককে ধরে ঠেঙিয়ে আদায় করা পয়সা দিয়ে, এটা পাবলিক বুঝলেই আর সমস্যা ছিলো না।

পুলিশ ঠ্যাঙাবে। তারা চাইলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনামের কারণ হয়েছে এমন যে কোন লোককে হুদাহুদিই ঠ্যাঙাতে পারে। ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসকেও তারা চুল ধরে রাস্তায় ফেলে বুট দিয়ে মাড়িয়ে লাঠি দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। এটা পুলিশের অধিকার। পাবলিকের প্রতিনিধিরা আইন তৈরি করে এই অধিকার পুলিশকে দিয়েছে। আমি পাবলিক, আজকে একটা দসু্য আমাকে আক্রমণ করলে আমি যা কিছু আছে হাতে নিয়ে রুখে দাঁড়াতে পারি, পাগলা কুত্তা কামড়াতে আসলে লাঠি হাতে তেড়ে যেতে পারি, কিন্তু একটা পুলিশ আমাকে মারতে আসলে প্রতিরোধ করতে পারবো না। রাষ্ট্র, আইন, পাবলিক আমাকে সে অধিকার দেয়নি।

অনেকে হয়তো ভাবছেন, শিরোনামে পূজা কেন। আজ বিসর্জন ছিলো, দশভূজা দুর্গার মূর্তি বয়ে নিয়ে জলে ফেলে দিয়েছেন সনাতন ধর্মের বাঙালিরা। আর সেই ডিআইজি ভদ্রলোক, আর তাঁর পেটোয়া বাহিনী, ন্যায়ের চোখ বাঁধা, দাঁড়িপাল্লা হাতে অসহায় মাত্র দু'টি হাতওয়ালা মূর্তিটিকে, বাংলাদেশে ন্যায়ের ভাবমূর্তিকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, বুট দিয়ে মাড়িয়ে, সপ্তনাওতে চড়িয়ে নিয়ে একেবারে অগাধ জলে চুবিয়ে মেরেছেন।

পাওয়ার পোলিসিং এর পৃষ্ঠপোষক হে সরকার বাহাদুর, আপনাদের কাছে আর কোন সুবিধা ভিক্ষা চাই না। আপনাদের কুত্তাগুলিকে শুধু সামলান।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের টাকা দিয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলো কি জুয়া খেলে?

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৫



ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক দেশের পাঁচ পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের আজ বেহাল দশা, তারা গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে পারছে না। সবগুলো ব্যাংকই এখন দেউলিয়ার পথে, বাধ্য হয়ে সরকার এই পাঁচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বি ডি আর বিদ্রোহ ও পিলখান হত্যাকান্ডের কিছু অপ্রাকাশিত সত্যঃ (পর্ব ০২)

লিখেছেন মেহেদী আনোয়ার, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

বিডিআর এর ডিজি নিহত হয় সকাল সাড়ে দশটায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেল 'চব্বিশ ঘন্টা' বিস্ময়করভাবে অতি অল্পসময়ের মধ্যে বিডিআর ডিজি ও তার স্ত্রী নিহত হবার সংবাদপ্রচার করে সকাল এগারটায়। ভারতের আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×