চা আমাদের পানীয়ের তালিকায় আদ্যিকালে ছিলো না। বিশেষজ্ঞ নই, পাতলা মোটা বইটই পড়ে যা ধারণা হয়েছে, প্রাচীন বাংলায় পানীয় হিসেবে জনপ্রিয় ছিলো দুধ, ফলজ ও ফুলজ মদ, কবিরাজি আরক, পানের রস, প্রিয়ার অধররস প্রভৃতি। রাজারাজড়ার দল পছন্দ করতেন পারস্য থেকে আমদানি করা কড়া ওয়াইন। কফি আরব সাগর ডিঙিয়ে আর সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি আমাদের নরম বদ্্বীপে। যদিও চা চৈনিক মাল, কিন্তু চীনাদের সে এলেম ছিলো না, আমাদের এর নেশা ধরায়। বাঙালিকে চায়ের বদভ্যাস করিয়েছে ব্রিটিশ বেনিয়ার দল।
এখন চা ছাড়া আমাদের দিন চলে না। সকাল থেকে রাত আমরা চা খাই। অনেকে কফির মধ্যে কী যেন একটা খুঁজে পান যা চায়ে নেই, তারা কফি পান করেন। মশলা ছাড়া বাঙালির জীবন পানসে, তাই সে চায়ে এলাচি দেয়, দারচিনি দেয়, লেবু দেয়, আদা দেয়, দুই চামচ ভদকা দিয়েও চা খায় কেউ কেউ। রেগুলেশন চা ডিঙিয়ে কেউ কেউ চায়ের অন্যান্য সংস্করণ পান করেন। চা এখন নির্যাসপানীয়ের সমার্থক, কেউ জুঁই ফুলের চা খান, কেউ থাই পাতার চা খান, নেত্রকোণায় গিয়ে পান করেছি এক অসাধারণ জিনিস, কুঁড়ি বেলের চা।
শিব্রাম চকরবরতি বায়না ধরেছিলেন বন্ধুর কাছে, চা খাও আর না খাও, আমাকে তো চাখাও। আমার চা-ই চাই। বিজ্ঞাপনে দেখি, গোমড়ামুখো পুরুষের হাতে চা তুলে দেয় বিশালবক্ষা নারী, চুমুক দিয়ে পুরুষটির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। রাস্তাঘাটে কেটলিতে চায়ের পানি ফোটে, অফিসে চা-চা করে গলা শুকায় লোকজন। চায়ের প্ল্যান্টেশন দিয়ে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা বোঝাই।
কিন্তু এমনি জনপ্রিয় লোকনন্দিত চায়ের দাওয়াত দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিউটেনিস কী একটা যেন কেরফা লাগিয়ে দিলেন। বেশ একটা হারিয়ে যাওয়া যমজ ভাইকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো রাজনৈতিক অঙ্গনে, মনে হচ্ছিলো আব্দুল জলিল আর মান্নান ভূঁইয়া হয়তো হাতে হাত ধরে মঞ্চে গেয়ে উঠবেন, ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে ... মাঝখান থেকে ঐ চা, ঐ বিউটেনিসের সাধা ব্রিটিশপটানোচীনামাল, কেমন যেন একটা গড়বড় করে দিলো। সেক্সি কাজের বুয়া হয়ে যেন ভায়ে ভায়ের মজবুত সম্পর্কে ফাটল ধরালো।
হায় চা। ইয়ে তুনে কেয়া কিয়া?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



