somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লক্ষভেদী কাহিনী ঃ এক ঘর মে দো পীর

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুগে যুগে লক্ষভেদীরা নির্মম মাৎসয্যর্ের শিকার হয়েছেন। লক্ষ শিকার করতে গিয়ে ঝামেলা স্বীকার কম করতে হয়নি তাদের। কারণ হতে পারে একটাই, প্রতিপক্ষের ঈষর্া।

ভাবুন একলব্যের কথাই। মানসগুরু দ্রোণাচার্যের ধ্যান করতে করতে জঙ্গলের মধ্যে আপনমনে ধনুর্বিদ্যা চর্চা করছিলেন বেচারা। চর্চায় চান্দু চৌকস, অর্থাৎ কি না, প্র্যাকটিস মেইকস আ ম্যান পার্ফেক্ট, একলব্য একাকী জঙ্গলে আর সব কিছু ভুলে কেবল শরনিক্ষেপ করতেন। একদিন একদল সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে দ্রোণ নিজেই এসে হাজির সে জঙ্গলে। সাঙ্গোপাঙ্গোরাও হেঁজিপেঁজি কেউ নয়, খোদ কৌরব-পান্ডবের আঁটি। সাথে ছিলো একটা বেয়াড়া কুকুর। অচেনা একলব্যকে দেখে বড্ড কাউকাউ করছিলো সে। চর্চানিষ্ঠ একলব্য বিরক্ত হয়ে ঘাড়টিও ফেরালেন না, কুকুরের ঘাউঘাউ শুনে সেই শব্দ লক্ষ করে শর নিক্ষেপ করলেন। কুকুর ব্যাটা ঘায়েল। দ্রোণ স্তম্ভিত। অর্জুন, দ্রোণের ছোকরা সাগরেদ, ঈর্ষায় জরজর। করেছে কী, য়্যাঁ? এই জংলি নিষাদপুত্র যে শব্দভেদ বিদ্যা আয়ত্ব করে বসে আছে, যা দ্রোণ পর্যন্ত তাঁর শিষ্যদের শেখান না! যাই হোক, একলব্য দ্রোণকে চিনতে পেরে প্রণাম করে জানালেন, দ্রোণই তাঁর মানসগুরু, দ্রোণের আশীর্বাদেই তাঁর এই ফাঁট। অর্জুন হারামী কম নয়, সে দ্রোণের কানে গিয়ে ফুসুরফাসুর করলো কী যেন। দ্রোণ বেতনভূক জায়গীরমাস্টার, কী আর করবেন, মনে সায় না দিলেও তিনি বেশ গলা খাঁকরে বললেন, ওহে, গুরু তো তোমার হলাম, গুরুদক্ষিণা কই আমার? বাকির নাম ফাঁকি, দ্রোণ জানতেন। একলব্য জিভ কেটে বললেন, দ্রোণ গুরুদক্ষিণার খালি নামটা বললেই হলো, সে এনে দেবে। দ্রোণ অর্জুনের দিকে তাকালেন, অর্জুন ভিলেনি মুহুহুহু হাসি দিলো। দ্রোণ বললেন, দাও তবে তোমার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলটি কেটে। একলব্যের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো, কিন্তু সে-ও বাপের ব্যাটা, মরদকা বাত হাতি কা দাঁত ... খ্যাঁচ করে কেটে দিলেন নিজের আঙুলটা। একলব্য, বেচারা লক্ষভেদী, কথা রাখতে গিয়ে লক্ষভেদী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারটাই বরবাদ করলেন।

একলব্যের পর অর্জুনই ছিলো সেরা লক্ষভেদী। আর, অবশ্যই, দ্রোণাচার্য। অর্জুন দু্রপদ রাজার শ্যামলা মেয়ের স্বয়ম্বরা সভায় গিয়ে পানির নিচে মাছের চোখ বিদ্ধ করে দ্রৌপদীকে বাগিয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু একটু ঠকেই গিয়েছিলো বেচারা, দ্যাখা গেলো মেয়ে খুবই স্পোর্ট, সে পাঁচ ভাইকেই ভোগ করতে চায়। জুয়াড়ি যুধিষ্ঠির থেকে শুরু করে বিটলে সহদেব, কোনটিতেই তার অরুচি নেই। আর এই দ্রৌপদী ঘরে আসার পরই পান্ডবদের যতো ঝামেলা, তার ফাইফরমাশ খাটতে গিয়ে ওষ্ঠাগত প্রাণ, তার ইজ্জৎ বাঁচাতে গিয়ে মুল্লুকজোড়া যুদ্ধ লেগে গেলো। আর অর্জুন তো যুদ্ধে গিয়ে শুরুতে মাথা বিগড়ে বসেছিলো, উল্টোপাল্টা কী সব বকছিলো, শেষে চতুর লেডিকিলার কানু ব্যাটা তাকে পটিয়ে পাটিয়ে আবার যুদ্ধে নিয়ে আসে। কত মেয়েকে পটিয়ে বিছানায় নিয়েছে সে, আর এ তো একটা ভোদাইকে পটিয়ে যুদ্ধে নেয়া। তবে কানু বেশ বলিয়ে লোক, তার বক্তৃতাটা বিখ্যাত হয়েছে বেশ, পুস্তকাকারে পাওয়া যায়। ওদিকে যুদ্ধে নেমেও অর্জুন সুবিধা করতে পারেনি, আদরের ছেলে অভিমন্যুকে খোয়ায় সে কৌরবদের হাতে। পুঁচকে মাস্তান অভিমন্যু মহড়া নিতে গিয়েছিলো বাঘা বাঘা ক্যাডারদের সাথে, সবাই মিলে ধরে তাকে একেবারে নিকেশ করে ছাড়ে।

লক্ষভেদী দ্রোণাচার্যও করুণ পরিণতি ভোগ করেন। ভন্ড জুয়াড়ি যুধিষ্ঠির গোবদা মাস্তান ভীমের বুদ্ধিতে এসে দ্রোণকে হেঁকে জানান, অশ্বত্থামা হত, তারপর বিড়বিড়িয়ে বলেন, ইতি গজ। অশ্বত্থামা দ্রোণের একটি মাত্র ছেলে, ছেলেবেলা থেকেই বখা, তবে মারকুটে, তার মৃতু্য সংবাদ পেয়ে দ্রোণ বিহবল হয়ে অস্ত্র ফেলে বসে পড়েন। আসল ঘটনা হচ্ছে, অশ্বত্থামাকে পান্ডবরা কাবু করতে পারেনি, সে দূরে এক কোণায় দেদারসে প্যাঁদাচ্ছিলো পান্ডবসেনাদের। দ্রোণকে কাবু করার জন্য একটা হাতি ডেকে এনে সেটার নাম দেয়া হয় অশ্বত্থামা, ভীম গিয়ে গদার এক বাড়িতে সেই হাতিকে ঘায়েল করেন, তারপর যুদ্ধিষ্ঠিরকে বলেন, যাও, মাস্টারসাবকে গিয়ে বলো অশ্বত্থামা পটল তুলেছে। যুধিষ্ঠির আবার মিথ্যা বলতে পারে না, তাই সে বিড়বিড়িয়ে বলেছিলো, ইতি গজ, কিন্তু ওতেই তার ভাসমান রথ ঠাস করে ধূলায় পড়ে যায়, মিথু্যকদের রথ সে আমলে ভাসতো না। যাই হোক, দ্রোণাচার্য ধনুক ফেলে আসন পেতে ধ্যান করতে থাকেন পুত্রশোকে, কাপুরুষ ধৃষ্টদ্যুম্ন এসে তখন চপার বার করে দ্রোণাচার্যের মুন্ডচ্ছেদ করে।

সব বলতে গেলে তো মহাভারত। কিন্তু এর পরবর্তীতেও যারা লক্ষভেদে ভালো ফল করেছেন, ভুগতে হয়েছে তাঁদেরও। ডোডি ফায়েদের কণ্ঠলগ্না হয়ে বেঘোরে মরতে হলো প্রিন্সেস ডি-কে। মনিকা লিউয়িনস্কির সাথে মৌখিক সঙ্গম করতে গিয়ে সিংহাসন খোয়াতে হলো লুচ্চা ক্লিনটনকে। এমনি আরো কতো কাহিনী। সব হিংসুটে লোকজনদের পাল্লায় পড়ে।

যা বলছিলাম, পুলিশও কিন্তু কম লক্ষভেদী নয়। বছরে লক্ষ লক্ষ লোককে ভেদ করেন তাঁরা। একেবারে ফুঁড়ে দেন। পেশাটাই তাঁদের এমন।

তাই লক্ষভেদী আসিফ আলম খান কমনওয়েলথ থেকে স্বর্ণপদক জয় করে আনায় স্বভাবতই পুলিশ কিছুটা গোস্বা করেছেন। এক ঘর মে দো পীর? এতদিন খেটেখুটেও তাঁরা ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের খাতায় উঠতে পারলেন না, কোথাকার যোগাযোগ আর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্বর্ণপদক নিয়ে যায় ... আর একটা ওঁছা বেয়াদব শুটার দেখায় স্বর্ণপদকের ফাঁট? পিডা!

এক ঘর মে দো পীর? যাও বাচ্চা, সো রাহো।

আসিফ এখন বিছানায় শুয়ে, হাতে ব্যান্ডেজ। পরবর্তী এশিয়ান গেমসে বোধহয় অংশ নিতে পারবেন না বেচারা। আমরা তাঁর, এবং আমাদের পুলিশব্যবস্থার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ১:৫০
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বস্তিবাসী সেই অগ্নিকন্যাকে নিয়ে লেখা একটি কাব্যগাথা

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৫


ঢাকার আকাশ তখন ধুলোমাখা সন্ধ্যার রঙে ছিল ডেকে
বস্তির সরু গলিতে শিশুদের কান্না
নর্দমার স্রোতের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে
সেই অন্ধকার জন্মঘরে প্রথম আলো দেখেছিল
এক বস্তিবাসী কন্যা শিরিন
এখনো এক অচেনা নাম
যার ভেতর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাবুল আলীই আমাদের বাংলাদেশের প্রতীক

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭



আপনাদের কি এই ছবিটার কথা মনে আছে? এই বছরের শুরুতে চলতি বছরের জানুয়ারীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে বেআইনিভাবে বাংলাদেশের জমিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×