somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন 13

১২ ই অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধীরে ধীরে সকাল হলো, সকালের কুয়াশায় যেটাকে জনবিবর্জিত বিরান বিচ্ছিন্ন জনপদ মনে হচ্ছিলো, আলো ফোটার পর দেখা গেলো আসলে ওটা বেশ ঘনবসতিপুর্ন এলাকা, ঢাকা শহরের মতো গিজগিজে ভীড় নেই সত্য তবে অনেক কিছুই আছে, আলোয় দেখা গেলো গতরাতের যে পাহাড়ে সবাই সার দিয়ে এসেছে সেখানের ঠিক উপরে কিছু বাসা আছে, সিঁড়িটা প্রথমেই চোখে পড়েছিলো তবে সেই যেখানে সিঁড়ি শেষ হয়েছে অনেকগুলো বাসা সেখানে, একটা বাঁধানো রাস্তাও আছে। আমাদের দোকানের হতশ্র ী সকালের আলোয় আরও ভীষনভাবে প্রকাশিত।

সেখান থেকে কয়েক কদম আগালেই একটা টয়লেট, ছেলে এবং মেয়ে দু জনের জন্যই ব্যাবস্থা আছে। ওটার সামনে চাপকল। অবশ্য চাপকলের রকমসকম আলাদা, আমাদের মতো গোলাকার মাথার চাপকল না, ড়ং সস্তা টিনের পাত ওয়েলসিং করে বানানো চাপ কল, হাতলটাও তেমন বলিষ্ঠ নয়। তবে পানি বের হয় চমৎকার, উঁচু পাহাড়, শুধু উঁচু না, ধাপে ধাপে কেটে বানানো রাস্তা, পাহারের গা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠেছে রাস্তা। সকালের আলোয় দেখা যাচ্ছে আসন শীতে ঘাসগুলো হলুদ হয়ে গেছে, পাতা ঝড়া গাছ যেমন আছে তেমন সবুজ ঝাকড়া গাছও অনেক।
বাস থেমেছে, সবাই ফ্রেশ হচ্ছে, সকাল বেলার টুথপেষ্ট, ব্রাশের কাজটাও সেই চাপকলের ওখানে সারা হচ্ছে। মেয়েদের ঘরে মেয়েরা ঢুকছে, ছেলেরা ছেলেদের টয়লেটে। শালার অন্ধকারে কত কি চোখ এড়িয়ে যায়। এমন রাজকীয় ব্যাবস্থা থাকতেও কি না পাহাড়ের চিপায় লুকিয়ে লুকিয়ে, অবশেষে একটা বদনা হাতে টয়লেটে যাওয়ার পর মনটা শান্ত হলো। এর পর পরিচ্ছন্ন হয়ে সকালের নাস্তার অপেক্ষা। সেই দোকানের সামনে টেবিল পাতা হলো, চা আসছে , সাথে জনপ্রতি 2টা বিস্কুটের প্যাকেট। ডিম সিদ্ধ কলাও আসলো। পিকনিক পিকনিক একটা ভাব এসেছে সবার ভেতরে।
রাস্তা খুব বেশী হলে 12 ফুট চওড়া হবে, এক পাশে পাহাড়ের ঢাল অন্য পাশে উঁচু পাহাড়, মাঝে সমতল রাস্তা, ঠিক সমতল বলাও চলে না আসলে, রাস্তার পাশে ব্যারিকেড দেওয়া আছে অল্প অল্প ব্যারিকেড, সেসবের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় নীচে পাহাড়ের ঢাল চলে গেছে, অনেক নীচে আবার ফিতার মতো রাস্তা। আসলে গত রাতে আমরা এই পাহাড়টাকে বেষ্ঠন করেই উপরে উঠেছি। সাবাশ আমাদের ব্রিটিশ প্রভুরা, তাদের আদরের শরীর এই উপমহাদেশিয় তাপে যদি বিপন্ন না হতো আমরা হিল স্টেশন গুলো পেতাম না, দার্জিলিং, শিমলা, মানালি সবই আমাদের ব্রিটিশ প্রভুদের গ্র ীষ্মনিবাস, শালারা শোষন করে নাই শুধু, যতটুকু আয়েশ করার করে নিয়েছে। জীবনে শখ ছিলো তুষারপাত দেখবো, মানালিতে না কি এ সময়টাতে স্নোফল হয়। কপালে থাকলে দেখেও ফেলতে পারি। তারাই ডাইনামাইট ফাটিয়ে রাস্তা বানিয়েছে নিশ্চিত, পাহাড়তো ভদ্্রলোকের মতো এমন একটা বিষয় নিজের মধ্যে রেখে দেবে না। পাহাড় কেটে তৈরি রাস্তা চমৎকার জিনিষ।
নিচের রাস্তায় নেমে যাওয়া যায়, তবে আমার ইচ্ছা উপরে উঠবো, এর পরের রাস্তায় যাবো, ধাপে ধাপে রাস্তা বানিয়েছে ইংরেজ বাবারা তাদের কাজটা একটু এপ্রিশিয়েট না করলে চলছে না। এবং পাহাড়ের উঠার নেশাটা আসলে প্রবল নেশা, অনেকেই উঠছে, তবে সামান্য উঠেই আবার নীচে নেমে আসছে তারা। আমি, লুকু শমিক মর্তুজা উর্ধে উঠা শুরু করলাম। খাড়া পাহাড়ের ঢাল, প্রথম 50 ফিট উঠে যেতে কোনো সমস্যা হয় না, এর পরের 50 ফিট উঠাও তেমন শক্ত না, তবে এর পরে আসলে সমস্যা শুরু হয়, পাহাড়ের ঢালে বাঁকা হয়ে উপরে উঠতে হয়, মহাকর্ষ ভীষন রকম শক্তিশালী, আমার স্থিতিশক্তি, গতি শক্তি বিষয়ক জ্ঞান বাড়াচ্ছি আর অল্প অল্প করে উঠছি, আলগা পাথর বাঁচিয়ে পা রাখতে হচ্ছে, এই যা শালার পাথরে স্লিপ করছে পা, ঝাড়া 10 ফুট পিছলে গেলাম, অনেক গুলা পাথর গিয়ে পড়লো নীচের রাস্তায়।

নীচ থেকে সবার হাতছানি দেখা যাচ্ছে, সবাই ডাকছে নীচে নেমে আসতে, আর একটু, মাত্র 50 ফিট উপরে উঠবো, সামনে বেশ কয়েকটা পাইন গাছ, সেখানে উঠেই নীচে নেমে আসবো। রাস্তায় দাঁড়ানো সবাইকে পুতুলের মতো লাগছে, অবশেষে রাস্তার কাছাকাছি পৌঁছালাম, শালার এটাই শীর্ষ না, এখানে দেখা যায় আরও একটু উপরে রাস্তা আছে, এবং তার পরও আরও আরও উঁচু হয়ে গেছে,বাদামি রংয়ের দেওয়াল, ঝুঁকে পড়া পাইন গাছে শেকড়ের নীচে পৌঁছে গেছি, শমিকের উৎসাহ শেষ ও নেমে গেছে, লুকুও নেমে গেছে, এখন আমি একা একটু কোনা করে উঠছি, সরাসরি উপরে উঠার চেয়ে বাঁকা পথে উঠা শরীরের উপর চাপ কমায়, একই কারনে রাস্তা সরাসরি উপরে না তুলে এভাবে অল্প অল্প করে পাহাড় পেঁচিয়ে উপরে তুলেছে, লাইকেন দেখা গেলো। অবশ্য আমি নিশ্চিত ভাবে বলটে পারবো না এটাই লাইকেন, যেমন ছবি দেখেছিলাম তেমনটাই দেখতে, নটরডেমে পড়া শমিকের এসব বিষয়ে আগ্রহ আছে, ও বার্ড ওয়াচার গ্রুপ, নেচার স্ট্যিিড গ্রুপ এসব করেছে, ও সাথে থাকলে 100% নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারতাম এসব কথা।

উপরে উঠাটা কষ্টকর হলেও শীর্ষে পৌঁছানোর অনুভিতি অন্য রকম, নীচে নামতে হবে সাবধানে, পেছন দিকে হেঁটে নামার উপর নেই, শরীরের ভারকেন্দ্র সামলে রাখা কঠিন, যদি মাটির কাছাকাছি মাথা ঝুঁকিয়ে উপরে উঠা হয় তাহলে পায়ের উপর চাপ পড়লেও সেটা ব্যালেন্স করার জন্য মহাকর্ষ আছে, তবে নীচের দিকে নামার সময় উলটা দিকে ঝুঁকে যাওয়ার ব্যাবস্থা নেই, মাথা নিচে দিলে ভারকেন্দ্রবদলে যায়, মাথা শরীরের সবচেয়ে ভারি অঙ্গ, বিবর্তনের প্রভাবে আমরা আমাদের মস্তিস্কের সাইজ বাড়িয়েছে প্রায় 3 গুন, ওতটা বুদ্ধি জমেছে যে তার ভারে নিজেকে সামলে রাখা মুশকিল। বাঁকা হয়ে নামার চেষ্টা করছি, তবে পা পিছলে যাওয়ার সমুহ সম্ভবনা। আর একটু একটু করে নীচে নামবো। কোনো চিন্তার কিছু নেই।

এভাবে বেশ কিছু দুর নামার পর আবার পা পিছলালো, এবার মহাকর্ষ আমার ফেভারে, হু হু করে গতি বাড়ছে, আমি পা ছোটো ছোটো করে ফেলার চেষ্টা করছি, তবে যতই নীচে নামছি ততই বেগ বাড়ছে আমার, ব্যালেন্স রাখা কঠিন। আমার সাথে পায়ের চাপে আরও 10-20 টা নুড়ি পাথর নীচে নামছে। অদ্ভুত এক পতন ঘটতে যাচ্ছে আমার। রাস্তা 12 ফুট ওটা কি পাড় হয়ে যাবো নাকি নিজেকে সামলে রাস্তায় পা ফেলতে পারবো এসব হিসাব কষছি মাথায়।
একেবারে নীচে নেমে এসেছি, প্রায় দৌড়ানোর ভঙ্গিতে নামছি এখন, প্রতিমুহূর্তে আরও একটু জোড়ে, সামনে ব্যারিকেডের মাঝের ফাঁকা অংশ দুই পাশে দুইটা পিলার মাঝে গ্যাপ। শালার খিচকাল, যদি টার্গেট মিস করে ঐ গ্যাপ দিয়ে বেরিয়ে যাই তাহলে সোজা আরও 300 ফিট নীচের রাস্তায়, ওটা মিস করলে আরও নীচে, কোথায় গিয়ে থামবো তার ঠিক নেই, তবে ততটা সময় নিজেকে সমলে রাখা সম্ভব হবে না, একবার গড়াতে শুরু করলে এর পর আমাকে চামচি দিয়ে তুলতে হবে কফিনে। কিমা কিমা হয়ে যাবো।
শেষ মাথায় এসে হালকা লাফ দিলাম, দিয়ে কষে ব্রেক মারার চেষ্টা। শরীরের সবকটা মাংশপেশী দিয়ে একটা বিপরীতমুখী চাপ তৈরির চেষ্টা যাকে বলে। ব্যারিকেডের একটা পিলার ধরে ইয়াহু চিৎকার দিলাম, একটু ছিলে গেছে পা, সমস্যা নেই কোনো, একেবারে নিজের বোকামিতে মরে না গিয়ে এডভেঞ্চার হলো খানিকটা,ঢপ ঢপ আওয়াজ হচ্ছে বুকের ভেতর, শীতের সকালে চিকন ঘাম নামছে জুলফি বেয়ে, শার্টের পিঠ ভিজে গেছে, পা থর থর করে কাঁপছে, আসলে আনন্দের মাত্রাটা বলে বোঝানো যাবে না। তবে এমন আনন্দ জীবনে একবার দুই বার নেওয়া ভালো, অতিরিক্ত মিষ্টিতে ডায়াবেটিস হয়, মৃতু্যর ঝুঁকি বাড়ে।
একটা সিগারেট ধরিয়ে বিজয়ীট বেশে ফিরে আসছি, সবাই নাস্তা শেষ করে বাসে উঠবে, লিটু ভাই একচোট গালি দিলো, তুমি মিয়া পাগল আছো, তোমার জন্যই সবাই অপেক্ষা করতেছে, এর পর সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলবা। আমিও মেনে নিলাম। এক বোতল পানি নিয়ে বেশ তড়িয়ে তড়িয়ে পান করলাম।


( আজকে ভাসিয়ে দিলাম মনে হয়, আসলে শেষ করে ফেলা ভালো, অনেক কিছু জমে আছে, ওগুলো নামাতে পারছি না এর যন্ত্রনায়)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×