somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘৃনা

২৬ শে অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি অবাক তাকিয়ে থাকি ছেলেটার দিকে, কত বয়েস হবে ছেলেটার,বড়জোর 19, বিরবির কর বলছে, মাদারচোদ, শালা আজকেও আমার সামনে। সারা দিন মাটি করে দিবে। আমার সামনে বিলের লাইন, জনতা ব্যাংক,গেন্ডারিয়ার এই একটা ব্যাংকেই সব বিল জমা নেয়, আশর্য নিয়ম বিল দিতে হলে ব্যাংকে ধর্ণা দিতে হবে, অন্য কোনো উপায়ে বিল দেওয়ার কোনো সুবিধা নেই। সামনে বিশাল লাইন, বেশীর ভাগই বৃদ্ধ,আমাদের অবসরপ্রাপ্ত বাবাদের অবসর জীবনের ক্ষনিক কর্মময়তা, বিলের লাইনে অপেক্ষা করতে তাদের ক্লান্তি নেই।
মেয়েদের আলাদা লাইন, সেখানে দাড়িয়ে শিফন শাড়ী ঘনঘন হাতঘড়ি দেখছে, অবশ্য ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লাভ নেই কোনো, ব্যাংকের সময় ব্যাংকের মতোই চলে, একেক জনের হাতে টোকেন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা সেই টোকেন নিয়ে অন্য এক কাউন্টারে গিয়ে টাকা জমা দিবে, এখানে শুধু কাগজে একটা সিল পড়ছে।
আমার আপাতত তেমন কোনো তাড়া নেই, অলস ভাবে মানুষ দেখছি, চারপাশের সবার ভেতরেই একটা ব্যাস্ততা, কিংবা এমনও হতে পারে তাদেরও তেমন ব্যাস্ততা নেই, অথচ এই শামুক গতির লাইনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে তাদের অঢেল সময়ের অপচয় হচ্ছে, জীবনানন্দ কখনও কোনো এক বিলের লাইনে দাঁড়িয়েই হয়তো লিখেছেন, অনেক মুহূর্ত আমি ক্ষয় করে বুঝিয়াছি.....

যেই মানুষটাকে উদ্যেশ্য করে এই বানীবর্ষণ, সে ক্র্যাচে ভর দিয়ে ভঙ্গুর দাঁড়িয়ে আছে, এখানে হুইল চেয়ারের ব্যাবহার বিজ্ঞাপনে আর হাসপাতালেই হয় সম্ভবত, ব্যাংকগুলোর সরু সিঁড়ি দিয়ে হুইল চেয়ার নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যাবস্থা নেই, এই মানুষটার তাও এক পায়ে সমস্যা, যাদের 2টা পা অচল তারা কি করবে, 30এর কাছাকাছি এই যুবককে দেখে একটু আলাদা ধরনের স্বস্তি অনুভব করি, শেখ সাদির কবিতার মতোই, ভালো আছি, খুব বেশী ভালো আছি, অন্তত কেউ পেছনে দাঁড়িয়ে গালি দিচ্ছে না, আমার অসহায়ত্বের প্রতি কোন ঘৃনা বর্ষিত হচ্ছে না।
আমার হিন্দি ফিল্ম দেখা যাবতীয় কল্পনাপ্রবনতা ডালপালা মেলে দেয় ভীষন ভাবে, এই বিদ্্বেষের একটা কার্যকরন খুঁজে পাওয়ার জন্য ব্যাস্ত সময় কাটাই, মেয়ে ঘটিত সমস্যা? পারিবারিক শত্রুতা? অর্থনৈতিকসংঘাত? এমন সব ভাবনা যা মানুষের ভেতরে চিরস্থায়ি ঘৃনা গেঁথে দিতে পারে সব কল্পনার বিন্যাস-সমাবেশ চলতে থাকে পরবর্তি সময়গুলোতে। অবশেষে কচ্ছপগতিও শেষ মাইলফলকটা অতিক্রম করে, বিলের দিকে তাকিয়ে দেখি আরও 3 দিন আছে সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার। আমার সামনের মহিলা চশমার কাঁচ পরিস্কার করছে আঁচল দিয়ে, চোখের নীচে সামান্য কালি পড়েছে, নাকের পাশটা ঘামছে, এমন ঘামলে না কি স্বামীসোহাগী হয়, মেয়েটার কি স্বামী আছে? নাকের উপরের দিকে চশমা পড়ার দাগ। কেউ অনেক দিন চশমা পড়লে তার চেহারায় কোনো এক আশ্চর্য কারনে চশমিল ছাপ পড়ে যায়, দেখেই বুঝা যায় এ মানুষটা চশমা পড়ে, চেহারায় অদৃশ্য চশমা খোদাই হয়ে যায় মনে হয়। কত দিন চশমা পড়ছে এই মহিলা, 10 বছর, 15 বছর, আমার কি? আমার ভেতরে অসুস্থ কৌতুহল কিলবিল করছে, আমি দুঃখিত বলে লাইন থেকে সরে দাঁড়াই, গেটের দিকে আগাই। ঐ ছেলেটাকে আর ঐ যুবককে ধরতে হবে। ওেেদর গল্পটা না জানলে আমার ভাত হজমই হবে না এখন।
ছেলেটা কোথায় যাবে? প্রেমিকার কাছে? এত তাড়া কিসের? মানুষের স্বভাবে আমিও সামাজিক অবস্থান মাপি পোশাক-বেশবাস দেখে, মানুষের প্রোফাইল দেখে বুঝার চেষ্টা করি মানুষ শ্রেনীর কোন জগতে এর বাস, উদ্ধত যুবক? প্রেমিক যুবক,যে যুবক রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের দেখে শীষ দিয়ে উঠে এমন লাফাঙ্গা যুবক না কি শান্তশিষ্ট ভালোমানুষ ধরনের ছেলে যার শরীর থেকে এখনও শৈশবের ছাপ মুছে যায় নি। এর পর সবকিছুমিলিয়ে একটা ধারনা জন্মে যায়, আমরা সেইসব মানুষকে বিভিন্ন ছকে ফেলে দেই অনায়াসে। ঐ যে লোকটা ঘনঘন ইতিউতি তাকাচ্ছে, আশাপাশ দেখছে, শালার বেটা লিশ্চয় কোনো একটা ফন্দি এঁটেছে মনে মনে, একটা কিছু অঘটন ঘটাবে বলেই এমন সন্তর্পনে চারপাশ দেখে আগাচ্ছে। শালার বেটা সামনে দিয়ে আসা মেয়েটার দিকে সরু চোখে তাকাচ্ছে, হুমম, এইবার বুঝা গেলো আসলে শালা রাস্তায় মেয়েদের বুকে পাছায় হাত দেয়, দেখেই বুঝা গিয়েছিলো, এমন সরু সরু চোখ, এইরকম হাঁটার ভঙ্গি, যদিও মানুষের অনেক রকম কারন থাকতে পারে তবে আমাদের মানুষ সম্পর্কিত ধারনাগুলো সবসময়ই ঋণাত্বক হয়ে থাকে। আমরা অন্য মানুষের সম্পর্কে বাজে কল্পনা করে নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমানের চেষ্টা করি হয়তো।

বাইরে আসার পর মনে হচ্ছে এই দুই মানুষের আসলেই কোনো সম্পর্ক নেই, ছেলেটা মৌচাকের দিকে হেঁটে যাচ্ছে, লোকটা যাচ্ছে শান্তিনগরের দিকে, এইটুকু নিশ্চিত তারা একই এলাকায় থাকে, নইলে এই ব্যাংকে বিল দিতে আসতো না। কাছাকাছি বাসা হলেও হতে পারে তবে পরিচিত হওয়ার সম্ভবনা কতটুকু আর। একই বাসার ভিন্ন তলায় ভাড়া থাকে এমন মানুষ পরস্পরকে চেনে না এই শহরে, শৈশবের ছাপ মুছে না যাওয়া ছেলেটা, যার মুখে অনায়াসে মাদারচোদ বুলি ভেসে উঠে সামান্য অস্থিরতায়, হয়তো সম্মান করতে শিখে নি, দুর্বল পারিবারিক শিক্ষায়, বাংলাদেশের বাসের গায়ে লেখা ব্যাবহারে বংহশের পরিচয় শব্দগুলো এদের জন্যই লেখা হয়। আবার সামনে কোনো এক দিন দেখা হবে বিলের লাইনে, এখন মানুষ খুঁজে পাওয়ার সহজ উপায় বিলের লাইন দেখা, সবাইকেই বিল দিতে আসতে হয়, সরকার বাহাদুর নিয়ম করেছেন, অন্যথা হওয়ার উপায় নেই। গ্যাস কিংবা টেলিফোন কিংবা বিদু্যত সচল রাখতে হবে সবাইকেই কান ধরে দাঁড়াতে হবে বিলের লাইনে, আমরা কেউই সাংসদ বা বড় অফিসার না, আমাদের মতো সাধারন মানুষের লাইন কাটতে 2য় বার ভাববে না তারা।

যুবকটা রিকশা ডেকে উঠে গেলো, আমার চোখের সামনে পত্রিকাস্ট্যান্ড, সেখানে অপরাধচিত্রের কভারে অর্ধনগ্ন এক নায়িকার ছবি, অভিসারিকার খোলা বুক হাতছানি দিচ্ছে অথচ আমার ভেতরের কৌতুহল এখন সামনের অপসৃয়মান যুবকে নিবদ্ধ, আমিও রিকশার পেছনে পেছনে যাই। অবশেষে তাকে ধরতে পারলাম দৈনিক বাংলার সামনে গিয়ে। আমিও তার পিছু নিয়ে সেখানেই ঢুকলাম, যুবকের নাম শওকত আহমেদ, এখানেই ডেস্ক রিপোর্টার, সাতক্ষিরার ওদিক থেকে এসেছেন, কথায় সেই ছাপ স্পষ্ট। আমাকে দেখে বললেন, কিছু বলবেন?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×