somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভেবে দেখলাম কোনো ধর্মের প্রতিই আমার কোনো বিদ্বেষ নেই, ধর্ম মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং সকল ধর্মমতের মানুষের ধর্ম পালন এবং ধর্ম পালন না করার সমান অধিকার আমি চাই। যে মানুষটা ধর্ম পালন করতে চায় সে মানুষটার নিজস্ব ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করার সাথে সাথে আমি চাই যে মানুষটা ধর্ম পালন করতে চাইছে না তারও যেনো এই অধিকারটুকু নিশ্চিত হয়। কেউ যদি ধর্মের সপক্ষে কোনো বক্তব্য দেয় সেটা যেমন প্রচারিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে একই সাথে কেউ যদি সে ধর্মের যৌক্তিক সমালোচনা করে সেটাও একই মঞ্চে আলোচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এভাবে আলোচনার পথটা খোলা থাকলে স্বমত কিংবা বিরুদ্ধমতের সহাবস্থানে এক ধরণের মননশীল সমাজ নির্মাণ করা সম্ভব।

আমি চাই সকল ধর্মের সকল অনুসারী যেনো নিজের মতো ধর্ম পালনের স্বাধীনতা পায়। রাষ্ট্র যেনো কোনো একটি নির্দিষ্ট ধর্মমতের অনুসারী মানুষদের দিকে ঝুঁকে না পরে সেটুকু নিশ্চয়তা আমি চাই রাষ্ট্রের কাছে, কিন্তু সেটা নিশ্চিত করতে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নির্মাণ প্রয়োজন।

সকল ধর্মের সমান অধিকার বিশ্বাস করি তাই যখন কোনো ধর্মমত অপর কোনো ধর্মমতকে আক্রমন করে সেটার বিরোধিতা করাটাকেও আমি নৈতিক দায়িত্ব মনে করি, ধর্মীয় সহিংসতা, ধর্মীয় উগ্রবাদিতার সংঘবদ্ধ চর্চা আমার কাছে অপরাধ মনে হয়।

আমি বিশ্বাস করি একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যেকোনো ধর্মানুসারীদের যেকোনো ধর্মীয় সংগঠন পরিচালনার অধিকার আছে কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট একটি ধর্মকে কিংবা কোনো নির্দিষ্ট একটি ধর্মের অনুশাসনকে রাষ্ট্রপরিচালনা নীতির অন্তর্ভুক্ত করার ঘোর বিরোধী আমি। সে কারণে আমি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে গ্রহনযোগ্য রাজনৈতিক মতবাদ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছি না।

ভারতের বিজেপিকে আমি যখন উগ্রপন্থী দল হিসেবে অগ্রহনযোগ্য বলি তখন অনেকে আনন্দিত হন, অনেকে বাহবা দেন কিন্তু একই ভাবে যখন আমি বলি বাংলাদেশে শরীয়া আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ধর্ম নিয়ে যে রাজনীতি করছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো সেগুলোও মূলত সাম্ভাব্য উগ্রপন্থী এবং যেকোনো মুহূর্তেই তারা সহিংসতায় লিপ্ত হবে তখন এই বাহবা দেওয়া মানুষগুলোই কিছুটা মনক্ষুন্ন হয়ে বলেন ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম একটা পরিপূর্ণ জীবন বিধান ইসলাম ধর্মটাই রাজনৈতিক।

পৃথিবীতে ধর্মের নামে সহিংসতার বিস্তার সহজ, মানুষ ঐশ্বরিক ক্ষমতায় আস্থা রাখে, নিজস্ব ধর্মের প্রধান পুরুষ যেমনই হোক না কেনো তার বিরুদ্ধে যেকোনো প্রশ্ন উত্থাপন করাকে অপরাধ হিসেবে দেখে। তারা এটা কখনও ভেবে দেখে না যখন সেই ব্যক্তি প্রথম ধর্ম প্রচার শুরু করেছিলো তখন সে তার সময়ের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের বাইরে গিয়ে নতুন একটি ধর্মমতের সূচনা করেছিলো, কখনও ভেবে দেখে না সেই নতুন ধর্মের প্রধান পুরুষ আসলে বিদ্যমান সমাজের অপরাপর মানুষের ধর্মবোধকে আক্রান্ত করেছিলো এবং সে কারণে তার ধর্মমতের বিরোধিতা করেছিলো সে সময়ের মানুষ।

ধর্মমত সময়ের সাথে নিজেকে পরিবর্তন করে এক ধরণের গ্রহনযোগ্যতা পেয়ে যায় এবং একই সাথে যখন প্রশ্নবিহীন মানুষেরা এক ধরণের অন্ধ আনুগত্যে ধর্মকে আবেগের বর্মে ঢেকে ফেলে তখন সেসব মানুষের ধর্মীয় আবেগকে পূঁজি করে যেকোনো মাত্রার সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়া সহজ। ওয়াজ মেহফিল করে কয়েকজন ধর্ম অবিশ্বাসীকে হত্যা করার প্ররোচনা দেওয়া ব্যক্তিগুলো এক ধরণের অপরাধ করছে, তারা যে ধর্মের নামে এই অপরাধগুলোর উস্কানি দিচ্ছে সে ধর্ম প্রাথমিক পর্যায়ে কখনও ধর্মের নামে অকারণ মানুষ হত্যার উস্কানি দেয় নি।
আজ সারাদেশে বিভিন্ন মসজিদ থেকে যেসব বিশ্বাসী মানুষ এই ধরণের প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাস করলো তারা কেউই আসলে এই প্ররোচনা কিংবা প্রচারণার বাস্তবভিত্তিকে প্রশ্ন করে নি। তারা জেনেছে, শুনেছে কোথাও না কোথাও ইসলামবিরোধী প্রচারণা হয়েছে সুতরাং এদের সর্বশক্তিতে প্রতিহত করতে হবে, এদের কতল করতে হবে। কেনো তারা কতল করবে কিংবা তারা যে ধর্মকে রক্ষা করতে ঢাল তলোয়ার ইট পাটকেল, লাঠি নিয়ে যুদ্ধংদেহী সে ধর্ম কিংবা অন্য যেকোনো ধর্মই কি আসলে এমন নির্বিচার সন্ত্রাস কিংবা হত্যাকে বৈধ্যতা দেয়?

ধর্ম যখন ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন সেইসব দলের পোষা ধর্মবেক্তাদের বিশ্লেষণে ধর্ম কলুষিত হয়। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নিজস্ব প্রয়োজনে মানুষের এইসব কোমল অনুভুতিকে ব্যবহার করে একধরণের সন্ত্রস্ত পরিস্থিতি তৈরি করে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেন এবং আপাত নিরীহ এইসব মানুষ ধর্মাক্রান্ত বোধে পাশবিক জোশে ধর্মরক্ষার মিশনে নেমে যান। যখন এমন ধর্মীয় রাজনীতি চলতে থাকে তখন একই ধর্মের বিভিন্ন মতবাদের অনুসারীদের ভেতরে গোলোযোগ বাধে, তারা সবাই নিজ নিজ পাতের দইকে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘোষণা দিতে থাকেন এবং এক ধরণের হৈচৈ হট্টগোলা শুরু করেন।

তারা যদি সমাজের অপরাপর মানুষের উপকার চান কিংবা তারা যদি নিজ ধর্মের অনুসারীদের কোনো না কোনো ভাবে সাহায্য করতে চান সেটার জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের প্রয়োজন নেই। তারা নিজেদের ধর্মীয় সংগঠন থেকেই সে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। মানুষের উপকার করার জন্য ধর্মরাজ্য নির্মাণের প্রয়োজন নেই, মানুষের উপকারের জন্য ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র নির্মাণের কোনো প্রয়োজন নেই। শরীয়া আইনের বাইরে থেকেও মানুষের জন্যে কল্যানকর একটা রাষ্ট্র নির্মাণ সম্ভব। পরিচিত কোনো কল্যান রাষ্ট্রেই শরীয়া আইন প্রচলিত নেই কিন্তু সেসব রাষ্ট্র যে ঘোরতর অমানবিক হয়ে উঠেছে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই কিন্তু শরীয়া আইনে পরিচালিত আফগানিস্তানের অমানবিক নিষ্ঠুরতার দৃষ্টান্ত বিদ্যমান, সেখানে যখন তখন মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, ধর্ম মত প্রকাশ এবং ক্ষমতার চর্চা হিসেবে নিয়মিত মানুষ হত্যা করার সংস্কৃতিকে আমি অস্বীকার করি।
আজ যেভাবে সাধারণ মুসুল্লিদের বিপদাপন্ন করে ইসলামানুসারী রাজনৈতিক দলগুলো এক ধরণের রাজনৈতিক গোলোযোগ তৈরি করলো সেটা কতটুকু ন্যায়বোধ উৎসরিত আচরণ সেটা অপরাপর ধর্মপ্রাণ ভাইদের বিবেচনার উপরে ছেড়ে দিলাম।

আমার ধর্ম নেই কিন্তু আমি বিশ্বাস করি কোনো মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে যদি একজন নিরপরাধ মানুষ আক্রান্ত হয় কিংবা বিপদাপন্ন হয় তাহলে সে মতবাদের গায়ে রক্তের ছাপ লেগে থাকে, সেই রক্তমাখা পায়ের জুতো দিয়ে ক্ষমতার সিঁড়ি মারিয়ে উঠে গেলেও পেছনে রক্তের দাগ লেগে থাকে। আজকের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর জুতোয় অনেক রক্তের দাগ লেগে আছে। এভাবে ধর্মমত প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক লড়াইয়ের বিরোধী আমি। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের কোনো কর্মীর প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত দ্বেষ নেই কিন্তু তাদের রাজনৈতিক পথটাকে আমি ভ্রান্ত মনে করি।

আমি বিশ্বাস করি তারা যখন নিজেরাই নিজেদের মতবাদকে যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণের ক্ষমতা অর্জন করবে তখন তাদের ভেতরে ধর্মীয় সহনশীলতা ও অপরাপর ধর্মীয় ও ধর্মহীন মতবাদের প্রতি এক ধরণের শ্রদ্ধা তৈরি হবে। যে শ্রদ্ধার জায়গা থেকে তারা ধার্মিক- অধার্মিক সকল মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত হবে এবং মানসিক পরিপক্কতা জন্মালে অহেতুক তাদের ধর্মানুভুতি ঘনঘন আক্রান্ত হবে না। তারা এভাবে অকারণ তান্ডবে জড়িয়ে যাবে না। সবার ভেতরে এই বিবেচনাবোধ জন্ম নিক।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×