আমাদের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের প্রথম বিজয়ের গায়ে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে। আমরা সংগঠিত হয়েছিলাম ন্যায়বিচারের দাবীতে , আদালতের রায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে আদালতের বিরোধিতা করি নি আমরা, আমরা চেয়েছিলাম অপরাধ নিঃসংশয়ে প্রমাণিত হলে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি, আদালত জনগণের প্রত্যাশিত রায় দিয়েছে, আমাদের বিজয়ের উল্লাসের শব্দ ঢাকা পরেছে আর্তনাদে। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ৭১ এর নৃশংসতা থেকে আমরা এখনও মুক্ত নই। আমরা ১৯৭১ এ যে চেতনায় বলীয়ান হয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম আমাদের অসম্পূর্ণ লড়াইয়ে শত্রু নিঃশ্চিহ্ন হয় নি বরং মাঝের রাজনৈতিক গোলোযোগ অস্থিরতায়, শাসনতান্ত্রিক ব্যর্থতায় তারা পুনর্গঠিত হয়ে নতুন শক্তিতে তান্ডব চালিয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে।
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের হত্যার হুমকি দিয়ে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসের আগুণে পুড়েছে উপাসনালয়, তারা বসতভিটায় আগুণ দিয়েছে, পুড়িয়ে হত্যা করেছে ১৯৭১ এর মতোই, আমাদের পিছু হটে আসবার কোনো সুযোগ নেই, আমরা জানি কারা এই হত্যাকান্ড, অগ্নিতান্ডব চালিয়েছে, আমরা জানি আমাদের চিহ্নিত শত্রু কারা, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব তান্ডবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।
আমরা সহিংস নই, আমরা অকারণ হত্যা অপছন্দ করি কিন্তু আমাদের অস্তিত্বে আমাদের সংস্কৃতিতে আঘাত আসলে আমরা দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে জানি, আমরা যেকোনো অনাকাঙ্খিত আগ্রাসন রুখে দিতে পারি।
আমাদের লড়াইয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনাটা কিছুটা বিঘ্নিত হলো, শাহবাগে গণজাগরণ সাংস্কৃতিক মঞ্চ গড়ে উঠেছে, সেটার অনুপ্রেরণায় এবং প্রয়োজনের ভিত্তিতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও গণজাগরণ সাংস্কৃতিক মঞ্চ গড়ে উঠবে। আমরা এসব মঞ্চ থেকে সাংস্কৃতিক গণজাগরণ তৈরি করবো, আমরা দেশের মানুষকে জানাবো কেনো আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় সহিংসতা প্রতিরোধ করা উচিত, আমাদের চিহ্নিত শত্রুরা কিভাবে আমাদের উপরে নিপীড়োন চালিয়েছিলো, কিভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেসবের প্রতিরোধ করেছিলাম সে ইতিহাস তাদের জানাতে হবে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরে আমাদের সে ইতিহাস জ্ঞানে মরচে পরেছে।
আমরা গণজাগরণ মঞ্চ থেকে যেভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে জনসভা করছি তেমন ভাবেই আমরা গণজাগরণ সাংস্কৃতিক মঞ্চ নিয়ে জনতার কাছে পৌঁছাবো, আমরা যাবো দেশের সবকয়টা প্রান্তে, আমাদের অস্ত্র হবে গান, আমাদের অস্ত্র হবে পথ নাটক, আমাদের অস্ত্র হবে চলচিত্র।
আমরা দেশের বিভিন্ন উপজেলায়, ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ফটোগ্রাফী এক্সিবিশন করবো, আমরা পোর্টেবল প্রোজেক্টোর আর সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে যাবো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে, সেখানে আমরা মুক্তির গান, মুক্তির কথা আর স্টপ জেনোসাইড ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করবো, আমরা হাইস্কুলের দেয়ালে মুক্তিযুদ্ধের ফটোগ্রাফী এক্সিবিশন করবো, আমরা হাটে, মাঠে পথনাটক করবো স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের উদ্যোগে। আমাদের ভেতরে অসাম্প্রদায়িক সকল মানুষের রাষ্ট্র চাওয়া তরুণদের কমতি নেই। এই তরুণেরা ধর্মীয় ভেদাভেদ জানে না।
আমরা সরকারী অর্থ সাহায্য চাই না, আমরা চাই সরকারের পৃষ্টপোষকতা, প্রতিটি উপজেলায় অব্যবহৃত প্রোজেক্টোর আছে, আছে সাউন্ড সিস্টেম, তারা নিজেদের বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন সেখানে উপস্থাপন করে, আমরা চাই সরকার এই দাবীর প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে আমাদের এসব প্রাযুক্তিক সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করবেন, আমরা সরকারী গাড়ী চাই না, এই তরুণেরা প্রয়োজনে নিজের ঘাড়ে বহন করে নিয়ে যাবে সব উপকরণ।
আমরা সদবিবেচনা চাই, আর যদি এ কাজে নিজের পকেট থেকে ১০ টাকা ২০ টাকা অর্থ সহযোগিতা দিতে আহ্বান জানানো হয় আমি জানি এই তরুণেরা নিজের সিগারেটের পয়সা বাচিয়ে সেটা দিয়ে দিবে। আমরা গণজাগরণ সাংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে প্রয়োজনের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুক্তির গান, মুক্তির কথা, স্টপ জেনোসাইডের ডিভিডি পাঠাতে পারি, আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে আলোচনা করে পথ নাটকের বিষয়বস্তু চরিত্র কাঠামো নির্ধারণ করতে পারি। আমাদের মূল লড়াইয়ের জায়গাটা এখানে, এখানে সকলের অংশগ্রহন কাম্য।
স্থানীয় পর্যায়ে যেসব সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উদ্যোগে অংশগ্রহন করতে আগ্রহী, যারা নতুন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মানে আগ্রহী আমরা তাদের সকলের সহযোগিতা চাই। আমরা যদি সামষ্টিক ভাবে উদ্যোগ নেই, তবে আগামি ১ মাসের ভেতরেই আমরা দেশের সকল থানায় এমন কি সকল ইউনিয়নে একাধিক স্থানে স্বাধীনতা মেলা উদযাপন করতে পারি। আমাদের সামষ্টিক ক্ষমতার প্রমাণ আমরা রেখেছি ১৯৭১, আমরা সেই সংঘবদ্ধ ক্ষমতার প্রমাণ রাখবো আবার
আমি-তুমি-আমরা মিলে নতুন করে লিখবো মুক্তির গান ২০১৩।
সবাইকে ধন্যবাদ।