বিএনপি ঘরানার এক পত্রিকার সম্পাদকের পীড়াপীড়ি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে বানচাল করতে জামায়াতপন্থী নেতাদের মন রক্ষার্থে বিএনপির কোন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে আলোচনা না করে একটি জনদাবি নিয়ে ঘোষণা করা এবারের হরতালটি সফল হবে এমনটিই মনে করে খালেদা জিয়া এককভাবে গত বৃহস্পতিবার হরতাল ডেকেছিলেন। বিএনপির সিনিয়র নেতারা এ হরতাল আহ্বান করতে চাননি। তাই এই হরতালের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোন সম্পর্ক ছিলোনা বলেই তারা হরতালে নিঃস্কৃয় ছিলেন।
হরতালে বিএনপির অফিসে মহাসচিবের রুমে বসে গল্প করা, চা খাওয়া ও আড্ডায় ব্যস্ত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম-মহাসচিব, আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ কতিপয় নেতা। মির্জা ফখরুল সকালের দিকে একবার নিচে নেমে কিছুক্ষণের জন্য প্রধান ফটকে নেতাদের সঙ্গে বসে থেকে ওপরে উঠে যান। সারাদিনে একবারও আর নিচে নামেননি তিনি। সে কারনে
এ সরকারের আমলে পালন করা আগের ছয়টি হরতালের চেয়ে বৃহস্পতিবারের হরতালটি বেশি ফ্লপ হয়েছে। আর হরতালের দিনে নেতাকর্মীদের মাঠে নামার চেষ্টাও ছিল আগের চেয়ে কম। হরতাল চলাকালে বৃহস্পতিবার বিএনপির যেসব সিনিয়র নেতা ঘর থেকে বের হননি তাঁরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আরএ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ (বিদেশে ছিলেন), লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, এম সামসুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম, সারোয়ারী রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আসম হান্নান শাহ, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান টিএইচ খান, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, এম মোর্শেদ খান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, রাবেয়া চৌধুরী, শমসের মবিন চৌধুরী, হারম্নন আল রশিদ, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন। তবে হরতাল শেষ হওয়ার কিছুৰণ আগে বিকেল সাড়ে ৪টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসে হাজির হন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী।
তাঁরা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কাছে প্রতিক্রিয়া দেয়ার সময় বলেছেন পুলিশ তাঁদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে হরতালের দিন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দায়িত্ব পালনরত এক পুলিশ কর্মকর্তা হাসতে হাসতে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, আমরা কি তাঁদের টেনে এনে রাস্তায় নামিয়ে দেব। তাঁরা হরতাল ডেকেছে তাই তাঁদেরই মাঠে নামার চেষ্টা করতে হবে। আমরা বাধা দেব আর তাঁরা বাধা উপেক্ষা করে মাঠে নামার চেষ্টা করবে দেশে হরতালের চিত্র তো এমনই হয়ে থাকে। কিন্তু আরামপ্রিয় বিএনপি নেতাদের সে চেষ্টা কি আছে?
হরতালে বিএনপির সমমনা দল ইসলামী ঐক্যজোট, বিজেপি, খেলাফত মজলিস, জাগপা, লেবারপার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, এনপিপি, এনপিপি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও ইসলামিক পার্টির কোন নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। এছাড়া সম্প্রতি এলডিপি ও কল্যাণ পার্টি বিএনপির কর্মসূচীতে মাঠে থাকার ঘোষণা দিলেও বৃহস্পতিবার তাদের কাউকে দেখা যায়নি।
একারণেই খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের প্রতি বেশি নাখোশ হয়েছেন বলে জানা গেছে। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে ফোন করে তাঁর মা খালেদা জিয়ার কাছে এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার সারাদিন নিজ বাসায় টেলিভিশনের খবর থেকে ও ঘনিষ্ঠ কিছু নেতার সঙ্গে ফোনালাপ করে হরতালের খোঁজখবর নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। রাতে গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে সেখানে উপস্থিত কয়েক নেতার সঙ্গে আলাপকালে ৰোভ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, কি কারণে সিনিয়র নেতারা হরতালে মাঠে নামার চেষ্টা করল না? অন্তত নিজ নিজ এলাকায় রাস্তায় নামার চেষ্টা করলেও তো কর্মীরা সাহস পেত।হরতাল ব্যার্থ হওয়ায় তিনি তার হতাশা ব্যাক্ত করে বলেন, "বড় বড় পদ দখল করে এত আরামের রাজনীতি করলে আমরা কিভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করব?" আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যে সমাবেশের করা হবে তার সফলতা নিয়েও তিনি উদ্বিঘ্ন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




