somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চর্যার আত্মা ও সরহপাদের দোহাকোষ: প্রাথমিক পাঠ

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা সাহিত্যের সূত্রপাত চর্যাপদ থেকে। চর্যাপদ একাধারে প্রথম লিখিত সাহিত্য, সাথে সাথে কবিতা ও গানের সম্মিলনী সূচনাও বটে। চর্যার ভাষা যে বাংলা, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো জো নেই। প্রতিটি ভাষাই নিয়ত পরিবর্তনশীল, বাংলাও এ নিয়মের বাইরে নয়। ফলশ্রুতিতে অধিকাংশ লেখাপড়া জানা বাংলাভাষীর পক্ষে আজ চর্যার ভাষা বোঝা অসম্ভব, যদি না তা এই সময়কার বাংলায় ভাষান্তর করে দেওয়া হয়। প্রতিটি চর্যা আধুনিক বাংলায় অনুবাদ করে দিলেও-যে সবার কাছে বোধগম্য হয়ে উঠবে ব্যাপারটা তেমনও না। অজস্র রূপক ও প্রতীকের মধ্য দিয়ে চর্যাপদের কবিরা কবিতাগুলো নির্মাণ করেছেন। সঠিক চাবিকাঠি ছাড়া কবিতার গভীরে প্রবেশ দুঃসাধ্য। হয়তো তাই, চর্যার ভাষা সন্ধ্যাভাষা বলে অভিহিত হয়েছে। সন্ধ্যার আলো-আঁধারের মতো রহস্যঘেরা কবিতাগুলোর অন্তর্লোকে পৌঁছার প্রয়াসও যে একেবারে হচ্ছে না তাও নয়।

চর্যার রচয়িতাদের সিদ্ধাচার্য নামে ডাকা হয়। জীবন-জগত সম্পর্কে সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনই মূলত তাঁদের সিদ্ধিপ্রাপ্তির নামান্তর। আচার্য বা শিক্ষক হিশেবে চর্যাকারদের ধর্ম-দর্শনে যেমন ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য, তেমনই বিশেষ দক্ষতা ছিল সংস্কৃতসহ সেই সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাষায়। আদি বাংলায় চর্যাপদ ছাড়াও সংস্কৃত ও শৌরসেনী ভাষায় তাঁরা অজস্র একক গ্রন্থ রচনা করে নিজেদের মুক্তচিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটিয়ে গেছেন, যার বিস্তার বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাই তাঁরা আজো বোধিসত্ত্ব হিশেবে নেপাল-তিব্বতে পূজিত। জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় তাঁদের উন্নততর অবস্থান নিয়ে সন্দহের কোনও অবকাশ নেই। তবে, প্রচলিত ধর্মকর্ম ও শাস্ত্রচিন্তার প্রতি তাঁরা মোটেও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না, ছিলেন না আস্থাবান, বরং এগুলোকে মুক্তির অন্তরায় হিশেবেই দেখিয়েই মুক্তির কথা বলে গেছেন। তথাকথিত সমাজ-সঙ্ঘ-পরিবার ছুঁড়ে ফেলে অতি সাধারণ জীবন অতিবাহিত করেও তাঁরা নিজেদের উন্নত চিন্তার কর্মধারা অব্যহত রেখেছিলেন। সংস্কৃতের আধিপত্যের যুগে মাতৃভাষায় চর্যা-রচনার মধ্যদিয়ে বাংলা সাহিত্যের শুভ সূচনা নিঃসন্দেহে চর্যাকারদের সাহসী ও দ্রোহী সত্তার পরিচায়ক। গণমানুষের দিকে দৃষ্টি রেখেই তাঁদের সাহিত্য-দর্শনের চর্চা। গণমানুষকে প্রতারিত করে টিকে থাকা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্ম-দর্শনকে তুলোধুনো করতে তিলেক ছাড় দেন নি তাঁরা। তেমনই একটি গ্রন্থ চর্যার অন্যতম কবি সরহপাদের দোহাকোষ। দেখা যাক তিনি তার দোহাকোষে কী বলেছেন:

“ ...ব্রাহ্মণ ব্রহ্মার মুখ হইতে হইয়াছিল; যখন হইয়াছিল, তখন হইয়াছিল, এখন ত অন্যেরও যেরূপে হয়, ব্রাহ্মণও সেইরূপে হয়, তবে আর ব্রাহ্মণত্ব রইল কি করিয়া ? যদি বল, সংস্কারে ব্রাহ্মণ হয়, চণ্ডালকে সংস্কার দাও, সে ব্রাহ্মণ হোক; যদি বল বেদ পড়িলে ব্রাহ্মণ হয়, তারাও পড়ুক। আর তারা পড়েও তা, ব্যাকরণের মধ্যে তো বেদের শব্দ আছে! আর আগুনে ঘি দিলেও যদি মুক্তি হয়, তাহা হইলে অন্য লোকে দিক না। হোম করিলে মুক্তি যত হোক না হোক, ধোঁয়ায় চক্ষের পীড়া হয়, এই মাত্র। তাহারা ব্রহ্মজ্ঞান বলে। প্রথম তাহাদের অথর্ববেদের সত্তাই নেই, আর অন্য তিন বেদের পাঠও সিদ্ধ নহে, সুতরাং বেদেরই প্রামাণ্য নাই। বেদ তো পরামর্শ নয়, বেদ ত আর শূন্য শিক্ষা দেয় না, বেদ কেবল বাজে কথা বলে।

...ঈশ্বরপরায়ণেরা গায়ে ছাই মাখে, মাথায় জটা ধরে, প্রদীপ জ্বালিয়ে ঘরে বসিয়া থাকে, ঘরের ঈশাণ কোণে বসিয়া ঘণ্টা চালে, আসন করিয়া বসে, চক্ষু মিটমিট করে, কানে খুসখুস ও লোককে ধাঁধাঁ দেয়। অনেক ‘রণ্ডী’ ‘মুণ্ডী’ এবং নানাবেশধারী লোক এই গুরুর মতে চলে। কিন্তু যখন কোন পদার্থই নাই, যখন বস্তুই বস্তু নয়, তখন ঈশ্বরও ত বস্তু, তিনি কেমন করিয়া থাকেন। ব্যাপকের অভাবে ব্যাপ্য থাকিতে পারে না। বলিবে, কর্ত্তা বলিয়া ঈশ্বর আছেন, যখন বস্তুই নাই, তখন ঈশ্বর কি করিবেন?

...ক্ষপণকেরা কপট মায়াজাল বিস্তার করিয়া লোক ঠকাইতেছে, তাহারা তত্ত্ব জানে না, মলিন বেশ ধারণ করিয়া থাকে এবং আপনার শরীরকে কষ্ট দেয়। নগ্ন হইয়া থাকে এবং আপনার কেশোৎপাটন করে। যদি নগ্ন হইলে মুক্তি হয়, তাহা হইলে শৃগাল-কুকুরের মুক্তি আগে হইবে। ময়ূরপুচ্ছ গ্রহণ করিলে যদি মুক্তি হয়, তাহা হইলে হাত-ঘোড়াকে ত ময়ূরপুচ্ছ দিয়া সাজায়, তাহা হইলে তাদের আগে মুক্তি হওয়া উচিত। ... ক্ষপণকদের যে মুক্তি, সে আমার কিছুই বলিয়া মনে হয় না। তাহারা তত্ত্ব জানে না, তাহারা জীব বলিয়া যে পদার্থ মানে, সে জীব জীবই হইতে পারে না, সকলেই কারণ থেকে উৎপন্ন হয়, সকলই ভ্রান্তি! তাহারা বলেন, মোক্ষ ছত্রাকারে ছিয়াশি হাজার যোজন ব্যাপিয়া আছে, কিন্তু ব্রহ্মা- ত অনিত্য, তাহার ত নাশ আছে, ব্রহ্মাণ্ড নাশ হইলে ছত্র কোথায় থাকিবে? মোক্ষ লোপ হইয়া যাইবে।

...যে বড় বড় স্থবির আছেন , কাহারও দশ শিষ্য, কাহারও কোটি শিষ্য, সকলেই গেরুয়া কাপড় পরে, সন্ন্যাসী হয় ও লোক ঠকাইয়া খায়। যাহারা হীনযান, তাহাদের যদি শীলভঙ্গ হয়, তাহারা তৎক্ষণাৎ নরকে যায়। যাহারা শীল রক্ষা করে, তাহাদের না হয় স্বর্গই হউক, মোক্ষ হইতে পারে না। যাহারা মহাযান আশ্রয় করে, তাহাদের মোক্ষ হয় না, কারণ, তাহারা কেহ কেহ সুত্র ব্যাখ্যা করে, কিন্তু তাহাদের ব্যাখ্যা অদ্ভুত, সে সকল নূতন ব্যাখ্যায় কেবল নরকই হয়। কেহ পুস্তক লেখে , কিন্তু পুস্তকের অর্থ জানে না, সুতরাং তাহাদের নরকই হয়। সহজ পন্থা ভিন্ন পন্থাই নাই। সহজ পন্থা গুরুর মুখে শুনিতে হয় ।

...সহজ-মতে না আসিলে মুক্তির কোন উপায় নাই। সহজ-ধর্মে বাচ্য নাই, বাচক নাই এবং ইহাদের সম্বন্ধও নাই। যে যে উপায়ে মুক্তির চেষ্টা করুক না কেন, শেষে সকলকে সহজ পথেই আসতে হবে। "১


সহজিয়া আন্দোলনের এ-কণ্ঠস্বর, বাঙালির যুক্তিবাদী মানসের কণ্ঠস্বর। সরোহপাদের এ-চিন্তন শুধু তাঁর একার নয়, এটা মোটামুটি সকল চর্যাকারেরও চিন্তন। আদিবাংলার এই দৃষ্টিভঙ্গির কাছে আজকের দিনের মুক্তকণ্ঠগুলো অনেকটাই জ্ঞাতে ও অজ্ঞাতে ঋণী। যুগে যুগে মানুষের নানান সঙ্কটকে পুঁজি করে নানান তন্ত্র-মন্ত্র-উপাসনা-ব্রত ইত্যদির বোঝা চাপিয়ে দিয়ে ধর্মযাজকরা মুক্তির নাম করে মানুষের জীবনকে আরো অধঃপতিত করে তুলেছে শুধু নিজেদের হীন মঙ্গলচিন্তা চরিতার্থ করতে। নিত্যদিনের সহজ স্বাভাবিক জীবন যে-সমস্ত গুণের দরুণ সুন্দর হয়ে ওঠে সে-সমস্ত গুণ সম্পর্কে তারা কিছু বলে না। মানবিক সঙ্কট মানবিক গুণাবলী দিয়েই যে অতিক্রম করতে হয় এমন সহজ পথটি ওরা দেখিয়ে দেয় না, যেমনটি দেখিয়েছিলেন তথাগত গৌতম।

তথাগতের ‘আত্মদীপ ভব’ ‘নিজেকে দীপ করে জ্বালো’ _এই শিক্ষাটিই চর্যাকারদের পাথেয়।

‘ঘরেঁ আছই বাহিরে পুচ্ছই।
পই দেক্খই পড়িবেসী পুচ্ছই।।

ঘরে যে আছে তাকে বাইরে কি খোঁজ কর? আগে ঘর না দেখেই প্রতিবেশীদের কি জিজ্ঞেস কর?

মন্ত ণ তন্ত ণ ধেঅ ণ ধারণ।
সব্ববি রে বঢ় বিব্ভমকারণ।।

মন্ত্র তন্ত্র ধারণা, সবই বড় বিভ্রমের কারণ। কেননা:

পণ্ডিঅ সঅল সত্য বক্খাণই।
দেহহি বুদ্ধ বসন্ত ণ জানই।।

পণ্ডিতেরা বাইরের থেকেই সত্যের ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। দেহের মধ্যেই যে পরম জ্ঞান বিরাজ করছে, তার খবর জানেন না।’২
আর তাই সাধারণ মানুষও পণ্ডিতদের অনুসরণ করে মুক্তির নামে ধর্মের বা মতবাদের বিশাল খাঁচায় বন্দী হয়ে পড়ে।

‘কিন্তহ দীবেঁ কিন্তহ নিবেজ্জেঁ।
কিন্তহ কিজ্জেই মন্তহ সেব্বেঁ।।
কিন্তহ তিত্থ তপোবন জাই।
মোক্খ কিং লব্ভই পাণী হ্নাই।।

এসো জপহোমে মণ্ডল কম্মে।
অণুদিন অচ্ছসি বাহিউ ধম্মে।।
তো বিণু তরুণি নিরন্তর ণেহেঁ।
বোধি কি লব্ভই প্রণ বিণ দেহেঁ।।

দীপ জ্বালিয়েই তোর কি হবে, আর নৈবেদ্য সাজিয়েই তোর কি হবে? মন্ত্রজপ করে আর তীর্থ-তপোবনে গিয়েই-বা তোর কি লাভ? স্নানাদি করেই কি তুই মুক্তিলাভ করবি ভেবেছিস? ওরে তরুণি, তুই তোর এই-সব জপ হোম ইত্যাদি মঙ্গলকর্ম নিয়ে বাহ্যিক ধর্মেই দিন কাটালি। জানিস নে কি তুই, প্রেম ছাড়া মুক্তি নেই। এই দেহে প্রেম বিনে কি জ্ঞানলাভ ঘটে?’৩
বর্ণ, লিঙ্গ, অর্থবিত্ত প্রভৃতি আত্মপর ভেদ যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ প্রেম-মহাপ্রেমের জন্ম হয় না। কিন্তু মহাপ্রেম যখন জন্ম নেয় তখন মানুষের মধ্যকার বিভেদ সৃষ্টিকারী সকল তথাকথিত উচ্চ-চিন্তাভাবনা অসাড় হয়ে যায়।

‘জাহের বাণচিহ্ন রুব ণ জানি।
সো কইসে আগম বেঁএ বখানা।।

যার বর্ণ, চিহ্ন, রূপ কিছুই জানা নেই , তা কেমন করে আগম-বেদের দ্বারা ব্যাখ্যাত হবে?’ (লুইপাদ, চর্যা-২৯)


চিত্তকে শুদ্ধ রাখাই প্রেমকর্ম। বিশুদ্ধ চিত্ত ছাড়া সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি আসবে কী করে, কী করে লোপ পাবে আত্মপর ভেদ করার প্রবণতা?

‘পর অপ্পাণ ম ভত্তি করু সঅল নিরন্তর বুদ্ধ।
এহুসো নিম্মল পরম পউ চিত্ত সহাবে সুদ্ধ ।।

আপনি ও পর, এ ভ্রান্তি করিও না (দুই এক ); সকলেই নিরন্তর বুদ্ধ, এই সেই নির্ম্মল পরমপদ্মরূপ চিত্ত স্বভাবতই শুদ্ধ।

অদ্বঅ তরুঅর ফরাউ তিহুঅণেঁ বিস্থা(র)
করুণা ফুল্লিঅ ফল ধরই ণামে পর উআর। (পত্রাঙ্ক ১১৯)


অদ্বয়চিত্ততরু ত্রিভূবনে বিস্তৃতি হইয়া স্ফুর্তি পায়, তখন করুণার ফুল ফোটে এবং ফল ধরে, সে ফলের নাম পর-উপকার। '৪


প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই মুক্তি পদ্মের মতো বিরাজমান এবং প্রত্যেকটি মানুষই নিজের মুক্তির জন্য নিজেই যথেষ্ট। এক কথায় প্রতিটি মানুষই সম্ভাবনাময়। সম্ভাবনা কোনো বিশেষ সম্প্রদায়-গোষ্ঠী-ভাষাবাসী-লিঙ্গপরিচয়ধারীর অধিকারভুক্ত সম্পত্তি নয়। এর জন্য শুধু মানুষকে মনের পঙ্ক (কাদা) ছেড়ে সোজা পঙ্কজের (পদ্ম) কাছে যেতে হয়। এর অনুসন্ধানও সোজাপথে,

‘উজুরে উজু ছাড়ি মা লেহু রে বাঙ্ক।
নিঅড়ি বোহি মা জাহু রে লাঙ্ক।।

ওরে সোজা-পথ ছেড়ে বাঁকা পথ নিও না; নিকটে বোধি, ওরে লঙ্কায় যেয়ো না।’(সরহপাদ,চর্যা-৩২)


সোজাপথটি লঙ্কায় যায় নি, গিয়েছে নিজের ভিতর। তাই বেরমণীয় অঞ্চল ছেড়ে পৌঁছে যেতে হবে চিত্তের রমণীয় অঞ্চলে, যাতে কোনো মালিন্য নেই, আছে শুধু আলো আর আলো। সেই অঞ্চলটুকুর নাম শুদ্ধতা বা মানবিকতা, যেখানে রয়েছে ব্যক্তিমানুষের মুক্তি। এখানে এই কথাটি মনে রাখতে হবে যে ‘মানুষের মুক্তি’ মানে ইহজীবনে মানুষের ‘মানুষ’ হয়ে ওঠা। ইহজাগতিকতার চরম বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে কাল্পনিক পরকালের কল্পনায় মত্ত থাকা _মুক্ত নয়, বদ্ধ মানুষের লক্ষণ।

‘আপণে রচি অচি ভব নির্ব্বাণা।
মিছে লোঅ বন্ধাবই আপণা।।
আমহে ন জানহু অচিন্ত জাই।
জাম মরণ ভব কইসন হোই।।
জইসো জাম মরণ বি তইসো।
জীবন্তে মইলে ণাহি বিশেসো।।
জা এথু জাম মরণেরি সঙ্কা
সো করউ রস রসানেরে কংখা।।
জে সচরাচর তিঅস ভমন্তি।
তে অজরামর কিমপি ন হোন্তি।
জামে কাম কি কামে জাম।
সরহ ভণ্নতি অচিন্ত সো ধাম।।


মানুষ নিজের মনে নিজেই জন্মমরণের কথা রচনা করে মিছেমিছি বন্ধনে জড়ায়। অচিন্ত্য বিষয় জানব কী করে? কেমন করে ভবে জন্মমৃত্যু ঘটে, জানি না। শুধু জানি জন্ম-মৃত্যু দুইই এক। জন্ম যেমন করে হয়, মরণও তেমনি করে হয়। বিশেষ প্রভেদ নেই। যার জন্ম-মরণের আশঙ্কা আছে সে-ই করুক রস-রসায়নের আকাঙ্ক্ষা। যারা সচরাচর ত্রিদোষে ভ্রমণ করে, তাঁরা কোনো মতে অজরামর হয় না। জন্ম থেকে কর্ম, না কর্ম থেকে জন্ম ? সরহ বলেন, সেই ধর্ম অচিন্ত্য।’ (সরহপাদ, চর্যা-২২)


ইহজাগতিকতার মধ্যেই মানুষের সুখ-দুঃখের উদয়-বিলয়, সুতরাং প্রজ্ঞা ও করুণার মিলিত শক্তিতে সকল সুন্দরের প্রতি উপাসনা-আরাধনা নিজের দেহ-মন ও ভাবনায় সুন্দরভাবে প্রকাশিত করাই মানুষের ধর্মকর্ম হওয়া কর্তব্য। আর এই চর্চার ফলেই অন্তর্লোকের আলোকসম্পাত দ্বারা মুক্তির সহজমার্গের সন্ধান মিলে, সন্ধান মিলে অবিরাম শান্তিধারার। যুক্তিবুদ্ধির (প্রজ্ঞা) পাশাপাশি কোমল হৃদয়ের (করুণা) অধিকারী সিদ্ধাচার্যদের হাতে জন্ম নেয়া বাংলা কবিতা ও দ্রোহ প্রেমের মিশেল শিখাটি আজো টিকে আছে, ক্ষীণ হয়ে, কবিতা ও সুন্দরে সমর্পিত অনুসন্ধানীর হৃদয়ের চোখে।



তথ্যসুত্র:
১ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা, পৃষ্ঠা-৬ ।
২ শ্রী তপনমোহন চট্টোপাধ্যায়, বাংলা লিরিকের গোড়ার কথা, পৃষ্ঠা-৮ ।
৩ প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-৭।
৪ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা, পৃষ্ঠা-৮।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×