somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি যেভাবে ঈশ্বর তত্ত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়েছি

০৪ ঠা জুন, ২০১১ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি পড়ালেখা করেই ঈশ্বর তত্ত্ব সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দর্শন সম্পর্কিত বই ছিল আমাদের পারিবারিক পাঠাগারের সবচেয়ে আকর্শনীয় সংগ্রহ। সেখান থেকে স্কুল জীবনেই আমি নিৎস, স্পিনোজা এবং মার্কসের বইগুলো পড়েছি। এমন কি ইমাম গাজ্জালী এবং মওদুদীর বইও আমি আমাদের বাড়িতেই পড়তে পেরেছি। এক সময় মওদুদীর বইগুলো পড়ে মুগ্ধ হতাম বিশেষ করে তাঁর 'ইসলামী রেনেসার ধারণা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল এক সময়ে। যদিও এর সাথে আমার স্কুলের মৌলভি স্যারের অনুপ্রেরনা অনেকাংশে দায়ী ছিল।

ছোটবেলায় মহাভারত আমাকে ভিষণ আলোড়িত করে, এটা ধর্মীয় অনুভূতির চেয়ে রূপকথার গল্প হিসেবেই আমি বেশি দেখতাম। সেই সাথে কিশোর বয়সে 'এরিক ফন দানিকেন', রাহুল সাংকৃতায়ন আমাকে যে কোন পাঠের জন্য যে নির্মোহ দৃষ্টি তা তৈরী করে দিয়েছিল। হ্যাঁ, আরও একটা বই ছিল আমার খুব প্রিয়, সেটা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ''পৃথিবীর ইতিহাস: প্রাচীন যুগ''।

আমাদের পারিবারিক পাঠাগারটা ছিল আমার দেখা যে কোন পরিবারের তুলনায় বিশাল। দর্শন ও পদার্থ বিদ্যা ছাড়াও হিন্দু-খৃষ্টান-ইসলাম সকল ধর্মের বই সেখানে ছিল। সেটা হয়তো এজন্যে যে আমাদের পরিবারের প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষিত ছিল বলে এবং সেই সাথে পরিবারের আভিজাত্য বাড়ানোর একটা বিশেষ তাড়নাও থাকতে পারে বলে আমার ধারণা।


স্কুলে হিন্দু শিক্ষক ছিলনা বলে ''ইসলাম শিক্ষা'' নিয়ে পড়তে হয়েছে। আমার স্কুলের মৌলভি স্যার এতে সবচেয়ে বেশি উৎসাহী ছিলেন। সম্ভবত তাঁর ধারণা হয়েছিল আমি মুসলমান হয়ে যাবো। এর কারন ছিল, ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় কাহিনীগুলি আমি প্রশ্ন করে করে শুনতে চাইতাম। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। বাসায় নিয়ে গিয়ে এটা ওটা খাওয়াতেন। ঈদের বাজার থেকে আমার জন্য উপহার আনতেন। এ সময়ে কুরআনের বাংলা তর্জমা, শানে নুযুল এবং তাফসীর কিছু কিছু পড়েছি ও শুনেছি।

ছোট বেলায় আমাদের বাড়িতে আসতো এক বৃদ্ধ, কাঁচা পাকা চুল। সবাই তাঁকে খুব সম্মান দিত। তিনি সবাইকে উপনিষদের জ্ঞান দিতো এবং তার ধারণা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন জ্ঞানী নাই। সেই সন্যাসীও একদিন ছোট কাকীর ঘরের আলমারি ভেঙ্গে দশ ভরি সোনার গহনা নিয়ে পালিয়ে গেল। আমি কিন্তু ব্যপারটায় অবাক হইনি, কিন্তু সবাই এতো অবাক হয়েছিল যে, তারা শেষ পর্যন্ত ধারণা করেছিল তিনি আবার ফিরে আসবেন।

আমার একটা প্রশ্ন ছিল সব সময়, সেটা ঈশ্বরের সৃষ্টি সম্পর্কিত। আমি বুঝেছিলাম এই প্রশ্নটিই ফয়সালা করার জন্য যথেষ্ট যে আমি তাঁকে বিশ্বাস করবো কি করবো না। কারণ ঈশ্বর যদি একা একাই সৃষ্টি হয় তবে সে নির্গুণ হতে বাধ্য; আর যদি আমার উপাসনা সে চায় তবে তাকে অসীম বলি কি করে?

ইন্টারমিডিয়েট পড়বার সময় 'আরজ আলী মাতুব্বর' আমাকে পরিণত করে তোলে। এ সময়ে খৃষ্টান মিশনারীদের সাথে চিঠিপত্র এবং তাদের প্রকাশিত বই পুস্তক আমি পড়তে থাকি। তারাও আমাকে অতি উৎসাহের সাথে বিনামূল্যে বই পুস্তক পাঠাতে থাকে। এভাবে প্রায় বছর খানেক চলার পর তারা খান্ত দেয়। সে সময়ে শেয়ার করার জন্য আমি আমার এক বড় ভাইয়ের (এলাকার) নিকট যেতে থাকি এবং বিতর্ক করি। তিনি আমাকে সংশোধন করতে যেয়ে নিজেই অজ্ঞেয়বাদী হয়ে পড়ে।

সবচেয়ে বড় ব্যপার বলে আমার কাছে মনে হয়, কুসংস্কার আর মিথ্যে বিশ্বাসকে প্রশ্ন করার জন্যই নাস্তিক জ্ঞান ধারণ করা একজন আধুনিক মানুষের জন্য প্রয়োজন। আজন্ম লালিত বিশ্বাস ও সামাজিক অটোসাজেশন গুলো আমাদের সমাজের নিস্পেষণের জন্য দায়ী। ব্যপারটা অনেকটা বন্দুকধারী সন্ত্রাসী আর সাধারণ নিরস্ত্র মানুষের মধ্যে পার্থক্য পর্যায়ের। নাস্তিকের যুদ্ধটা তাই মূলত ভ্রান্ত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে, যে বিশ্বাস জীবনকে শুধু মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে শেখায়, জীবনের গল্পই সেখানে অদ্ভুত মনে হয়।

সবাইকে ধন্যবাদ। মুক্তচিন্তার পথ আরও প্রসারিত হোক। এই কামনা করি।
১৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×