সুপ্রকাশ ভৌমিক সামু'র একজন ব্লগার, তিনি ''বেঙ্গল মাসুদে''র এক পোষ্টে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন,
২৫ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১১:১১
সুপ্রকাশ ভৌমিক বলেছেন: আপনারা পাইছেন কি ?? দেশে কাজ নাই কাম নাই। বইয়া বইয়া খাওয়া আর ভারতের পেছনে লাগা। এটা ভুলে যান কিভাবে একান্তরে ভারতের সহায়তায় স্বাধীন হয়েছেন । আর এখন অবধি ভারতের দয়াতেই টিকে আছেন। আপনারা যে এতো নিমকহারাম আমার ভাবতেও লজ্জা লাগে। ছি ছি ছি। শেম টু ইউ ম্যান।
ধিক এইসব আত্মপ্রবঞ্চক মানুষকে যারা দেশকে বিলিয়ে দেয় ক্ষুদ্র স্বার্থে। সম্ভবত সুপ্রকাশ ভৌমিকের কাছে দেশের চেয়ে ধর্মীয় আবরনটাই বেশি হয়ে দাড়িয়েছে। আমার মতে তার সাথে রাজাকারদের তুলনাই একমাত্র সার্থক। তিনি বিশ্বাসঘাতক, তাকে ধিক্কার জানাই।
স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশ ভারতকে যে মূল্য দিয়েছে এবং এখনও দিচ্ছে, তা কয়েক গুণ না বলে কয়েক'শ গুণ বলা যেতে পারে। এক দিকে বলা যায় সেই সময় ভারতের সেটা না করে উপায় ছিল না। অন্যদিকে সামরিক-অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই ভারত সুবিধা পেয়েছিল। এ ছাড়া ভারত যে আমাদের ফ্রি ফ্রি সব দিয়েছে তাও নয়, এর পিছনে অনেক অর্থ রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং ব্যক্তির যা দিয়ে ভারত তার সুবিধার বিনিময় নিয়েছে, দেশ স্বাধীন হবার পর পাকিস্তানের রেখে যাওয়া অস্ত্র, কামান, ট্যান্ক, গোলাবারুদ সব প্রকাশ্য দিবালোকে নিয়ে যায়। আর বর্তমানে বৈধ ও অবৈধভাবে বাংলাদেশকে একটা ভারতীয় পণ্যের ডাম্পিং ইয়ার্ডে পরিণত করেছে।
বাংলাদেশের হিন্দু পরিবারে আমার জন্ম। স্বাভাবিক ভাবে ভারতে আমারও কিছু কিছু আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, কেউ কেউ ৪৭-এ আবার কেউ কেউ অনেক পরে ভারতে গিয়েছে। তাদের এই মাইগ্রেশনের কারণটা ছিল শুধুমাত্র ধর্মীয়। দেশের চেয়ে ধর্ম তাদের কাছে অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। পরে অনেকে ফিরেও এসেছে। যাদের কাছে ধর্ম এবং দেশ কো্নটারই শেষ রক্ষা হয়নি।
এইসব কারণে ভরতে যাওয়া আমাদের পারিবারিকভাবে একটা চল ছিল, আমিও কয়েকবার গিয়েছি, তবে তা বৈধভাবেই। তবে বাংলাদেশের হিন্দুদের অনেকেই অর্থ বাঁচাবার জন্য অথবা বিএসএফ বা পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য (অনেকের ধারনা পাসপোর্ট দেখলে পুলিশ ঝামেলা করে বেশি, অল্প ঘুষেও কাজ হয় না) অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশ করে। তাই গল্পটা আমার কাছে নতুন নয়। ভারতের দাম্ভিক মনোভাব খুবই কদর্যপূর্ণ সে অভিজ্ঞতা তো ভোলার নয়।
জীবীকার তাগিদে বাংলাদেশীরা ভারতে যায়, এই যুক্তি শুনে হাসি পায়। হয়তো বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অ-নে-ক পেছনে কিন্তু বাংলাদেশের গড় জীবনযাত্রার মান আর ভারতের গড় জীবনযাত্রার মান এক নয়, এদিক থেকে বাংলাদেশীরা বেশ ভালই আছি। আমাদের সুদের টাকা শোধ না করার জন্য আত্মহত্যা করতে হয় না।
ধরি চোরাচালান বা অন্য কোন প্রয়োজনে দু'দেশের কিছু জনগণ অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়, কিন্তু সেটা কোন পাল্লায় ভারী? ভারতের পাল্লায় শুধু গরুর কথা নয়, ফেন্সিডিলসহ অন্যান্য নেশা দ্রব্য, শাড়ি-কাপড়, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক, কসমেটিক্স, থেকে শুরু করে হেন পণ্য নেই যা ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে না। আর এসব কিছুতে মদদ দেয় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী। তারা ভারত থেকে বাংলাদেশে আনা দ্রব্যের ব্যপারে উদাসিন থাকে, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যদি সমান্য কিছুও যায় তার জন্য রয়েছে গুলি বরাদ্দ।
বিএসএফ-এর তত্তাববধানেই চোরাচালানের জন্য বাংলাদেশের সীমান্তে গড়ে উঠেছে নেশাদ্রব্য তৈরীর কারখানা। ভারতীয় নিম্নমানের বস্ত্রগুলো কমদামে এদেশে পাচার করার একটি বড় চক্র গড়ে উঠেছে সেখানে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে সাদরে নিয়ে যাচ্ছে সোনা, লোহা, জালানি তেল, স্টীল, এলুমনিয়াম, তামা, কাঁসা, চামড়াসহ হরেক রকম মুল্যবান পদার্থ।এই পন্য বিএসএফ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নিয়ে যায়, এতে চোরাচালান হয় না।
অন্যদিকে যদি বাংলাদেশী কসমেটিক্স, কাপড়, ইলেক্ট্রনিক্স পন্য, সিগারেট একমুঠও বিএসএফ দেখতে পায় তবেই ঠুস করে চোরাচালানি মেরে ফেলে। এই হলো অবস্থা।
সীমান্ত সংঘর্শে বিএস এফ কখনোই বিডিআর-এর সাথে পেরে উঠেনি, সেটা রৌমারি অথবা পাদুয়া সীমান্তেই হোক বা অন্য কোথাও। রৌমারি সীমান্তে বিএসএফ যখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে গুলি করে মানুষ মারছিল সে সময় পাল্টা আঘাতে মারা পরে ছিল তারা। পরে ঢাকা থেকে লাশ নিয়ে যেতে হয়েছে, এহেন নগ্ন হামলার জন্য বিশ্বের কাছেও মাথা হেট হতে হয়েছিল ভারতের।
ভারত বাংলাদেশীদের ইচ্ছা করেই গুলি করে মারছে, এই ইচ্ছার পেছনের কারণটা খুঁজতে হবে। তবে কারণটা আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। সেই সাথে সুপ্রকাশ ভৌমিকদের মানসিক রূপটিও প্রকাশমান, তারা দেশকে ধর্মদিয়েই বিচার করছে। একজন ধর্মীয় জঙ্গি যে ভাষায় কথা বলে তা আমাদের কাছে পরিচিত।
এই সুপ্রকাশ ভৌমিকের সাথে গোলাম আযম, নিযামী-সাইদীর মনোভাবের কোন পার্থক্য নেই। এরা বিশ্বাস ঘাতক। এসব সুপ্রকাশদের জন্য দেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা তৈরী এবং সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এদের তীব্র ঘৃণা জানাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৫:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




