জনাব রহমান অফিস হতে ফিরে তার ছয় বছরের কন্যাটির মুখে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। সাথে উপরি পাওয়া হিসেবে ''দূর হ চোখের সামনে থেকে" বলে ছোট্ট মেয়ে টাকে শাসিয়ে দিল। বোঝাই যাচ্ছে আজকে তার মেজাজ বেজায় চড়া। মেজাজ চড়া হওয়ার পিছনে কিছুটা যুক্তিও আছে। আজ অফিসে ছোট্ট একটা ভুলের জন্য বস তাকে হেব্বি বকাঝকা করেছে। সাথে চাকুরীর পদাবনতি করার হুমকিও দিল। বলা যায়, 'লঘু দোষে গুরু দন্ড'৷
বসের উপর অনেক রাগ উঠেছে তার৷ কিন্তু বেচারা তা প্রকাশ করতে পারলেন না৷ শুধু ''স্যরি স্যার'', ''জ্বি স্যার'' বলেই গেলেন। বাসায় এসে সেই রাগ তিনি তার ফুটফুটে ছোট্ট কন্যা সন্তানটির উপর ঝাড়লেন।
এখন কিছুটা হালকা লাগছে তার৷ আবার বেজায় মনও খারাপ হয়েছে। ভাবছেন, ''ইশ, বাচ্চাটার সাথে এমন ব্যবহার ঠিক হয়নি। ওর কি দোষ? শুধু শুধু ওর উপর রাগ দেখালাম৷'' এসব ভাবতে ভাবতে তিনি ডাইনিং রুমে সুন্দর করে বসানো সোফায় ধপাস করে বসে পড়লেন। আর ভাবছেন আমাদের রাগ হয় কেন? একজনের রাগ আরেক জনের উপর চাপাই বা কেন? আসলে কি আমাদের রাগ হয় নাকি রাগ করি?
তিনি নিজে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে চিন্তা করা শুরু করে দিলেন। তিনি সমীকরণ মিলাচ্ছেন৷ আসলে তো আমাদের রাগ হয় না, আমরা রাগ করি। মূলত যাদের উপর আমরা প্রভাব বিস্তার করতে পারি তাদের উপর রাগ করি। যারা আমাদের চেয়ে সবল তাদের উপর ক্ষোভ থাকলেও আমরা তা প্রকাশ করিনা৷ কারণ, এতে আমাদের কোন না কোন ক্ষতির কারণ থাকে। আমরা তো চাইলেই রাগ করার স্বভাবটা বন্ধ করতে পারি বা অনেকটা কমিয়ে আনতে পারি। মূলত রাগ এর দরুণ আমাদের ক্ষতি বৈ লাভ তো কিছু হয় না৷ তবুও আমরা রাগ করি৷ কারণ, রাগের মধ্যেও মনে হয় মজা আছে। সে মজাটা প্রভাব বিস্তার করার মজা। আমরা মজাটাকে বেশি প্রধান্য দেই বলে নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না৷ জনাব রহমান এইসব দার্শনিক চিন্তা ভাবনা করতে করতে প্রতিজ্ঞা করে বসল, "আমি আজ হতে রাগ করা কমিয়ে আনব৷ পারলে রাগকে বিদায় জানাব। এতে লাভ বৈ ক্ষতি হবেই না৷ আহা! মেয়েটার রাগটা ভাঙ্গাতে হবে, যাই আইসক্রিম নিয়ে আসি৷" এই বলে ঘর হতে অফিসের ড্রেস পাড়া অবস্থায়ই প্রস্থান করলেন।