somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়েকটুকরো স্বপ্ন , প্রকৃতির হাতছানি এবং একটি ছেলের কথা

১৬ ই জুন, ২০১২ সকাল ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল দশটায় বাসা থেকে বের হয়ে ক্লাস শেষ করে ঢাকার রাস্তার টর্চার সহ্য করে রাত দশটায় অবশেষে বাসায় এল তুর্য । সীমাহীন ক্লান্তি নিয়ে কোনোমতে রাতের খাবার শেষ করে একাউন্টিং বই আর খাতাটা নিয়ে টেবিলে বসলো ।

►►►“মা , তাড়াতাড়ি চলো , পরীক্ষা আরম্ভ হয়ে যাবে তো ...... মা , মা ...... ।” – শহরের কিন্ডার কেয়ার স্কুলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত থাকার মজা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এখন তুর্য। এই স্কুলে বৃত্তি পরীক্ষা দেবার সুযোগ নেই। তাই নিজেদের গ্রামের একটা প্রাইমারী স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষা দেবার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুবিধা হল ক্লাস করতে হবেনা , শুধু বার্ষিক পরীক্ষাটা দিলেই হবে। পরীক্ষা দিতেই এক সপ্তাহের জন্য ওর গ্রামে আগমন।

-তোমার নাম কি ?
-রাজু । তুমার ?
-তুর্য। সব পারো ?
-না , দেইক্ষা দেইক্ষা লেখমু আমার বন্ধুর থিকা।
-দেখে লিখতে দেবে স্যাররা ? বকবে না !!!
-হেরা তো প্রশ্ন দিয়াই ফুড়ুৎ । হিহিহিহিহি...
-তোমার শার্টের সিল তো এখনও লাগানো আছে , ছিঁড়ো না কেন ?
-ছিঁড়লে মাইনষে বুঝবো ক্যামনে যে এইডা নতুন ...
তুর্য অবাক হয় । চিল্লাচিল্লিতে পরীক্ষার হল মাথায় উঠেছে। ভীষণ গরমে দরদর ঘামছে। টপটপ ঘাম পড়ছে উত্তরপত্রে...... ও লিখে যেতে লাগলো......

পায়ে হেঁটে মেঠোপথ দিয়ে বাড়িতে ফিরছে। পথের ধারের গাছগুলো ধরে ধরে দেখছে। মন যেন দোয়েল পাখির মত হাওয়ায় ভাসছে । একটা বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে যেতে দেখল, ছেলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র না পড়ে মা সোজাসুজি সেটা মাটির চুলায় ঢুকিয়ে দিল জ্বালানী হিসেবে। তুর্য অবাক হল আবার দুঃখও পেল। বেচারি লেখাপড়া জানেনা তাই এর মর্মও বোঝেনা। ...... সর্দার বাড়ির পুকুরের লাগোয়া বট গাছটার কাছাকাছি আসতেই ভয়ে কুঁকড়ে গেলো, কাকাতো বোন কাল বলেছিল ওতে ভুত আছে। একবার একজনকে ধরেওছিল !!! কি ভয়াবহ কথা !!! গায়ে কাঁটা দেয় তুর্যর। মায়ের গা ঘেঁষে কোনোমতে গাছটা পার হয়। হাফ ছেড়ে বাঁচে ......
পরদিন শুক্রবার থাকায় তুর্য, মা , ওর দিদি সবাই গেলো পুকুরে স্নান করতে। সাঁতার না জানলেও পুকুরে নামতে আগ্রহের কমতি নেই ওর। ঘাঁটের সিঁড়ির শেষ ধাপে বসেই দাপাদাপি আরম্ভ! দিদির ভরসায় আর একটু নিচে নামল। আরও অনেক ছেলেমেয়ে ছিল। সবাই হাত ধরে একসাথে ডুব দিল আর ভেসে উঠলো ...... ওহ ! কি মজার খেলা !! পুকুর থেকে উঠানো দায় হল ওকে......... ভেজা শরীরে খালি পায়ে পুকুর পার হতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। কি নাচ তুর্যর !!! বৃষ্টিস্নাত ময়ূরের মত নেচে নেচে বাড়ি ফিরল ।

বাড়ি ফিরে ঝড়ের মাঝে আম কুড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হল। ওকে ওর মা যেতে দিলনা ঠাণ্ডা লাগার ভয়ে । ............
- “ ফাজিল পোলাপানগুলা সব আম নিয়া গেলো রে !! দাঁড়া আইতাসি !” এই বলে লাঠি নিয়ে অর্ধেক যেতে না যেতেই পিছল মাটিতে ধপ করে পড়লো শিউলিদি। বাড়িসুদ্ধ সবার হাসি থামায় কে !!



►►►ঈদের ছুটিতে মামার বাড়িতে গেলো তুর্য। ভার্সিটি বন্ধ। গ্রামে আসলে তুর্যর মনে হয় যেন নীড়ে ফিরল ও। শীতের শুরুতে গ্রামের ভোর দেখার লোভ সামলানো দায়। বেরিয়ে পড়লো । মায়ের কাকার বাড়ি মানে তার মামার বাড়ি হলেও সে এখানে এই প্রথম এল। কিছুই চেনেনা । তবুও হাঁটা শুরু করল। সরু পথের একটু পরপরই ছোট ছোট পুকুর। পুকুরপাড়ে অজস্র লতাপাতা , ছোট গাছ। ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। মনের সব জড়তা, ক্লান্তি যেন মুহূর্তে উবে যায়। সূর্যটা উদয় হতে দেখল চোখের সামনে !!! হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে গেলো পথের বাঁকে ...............
বিকেলে চরের কালীবাড়ির মাঠে গেলো। নদী শুকিয়ে বিশাল চর জেগেছে...... কবে জেগেছে কেউ বলতে পারেনা। চরের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো ও। মনে হচ্ছে অসীম মহাকাশের মাঝে যেন ছোট্ট একটা নক্ষত্র জেগে আছে। একটাই গান মনে এল ...... “ কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা” ...... তবে আর মনে মনে নয়। সত্যি সত্যি......!!!
রাতে ভাপা পীঠে আর সিদ্ধ পুলি উৎসব !!!......গনগনে মাটির চুলা থেকে যেন শিল্প রচনা হচ্ছে ...... কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেলো পিঠা নিয়ে......



►►►পুকুরটা , ভুতুড়ে বটগাছটা , স্কুলটা , নতুন জামা গায়ে দেয়া রাজু ,আমতলা , চরের মাঠ , সদ্য উঠা সূর্যটা ......... সব যেন আস্তে আস্তে ঝাপসা হতে লাগলো ...... কেমন যেন দূরে সরে যেতে লাগলো............ আর স্পষ্ট , নিকটতর হল ইট-সিমেন্টের দালান , তিন নম্বর-ছয় নম্বর বাস, আর প্রাইভেট কারগুলো ......... আস্তে আস্তে গ্রামটা মুছে গেলো তুর্যর চোখের সামনে থেকে............... চোখদুটো বেয়ে কান্না নেমে এল ■ ■ ■
........................................------------........................................



“কিরে ? পড়ার টেবিলে ঘুমাচ্ছিস কেন? বই বন্ধ করে বিছানায় যা ...... আরে ওঠ......... ঘুমের মধ্যে কাঁদছিস কেন ? কি হয়েছে?” – মায়ের গলা শুনে ঘুমটা ভেঙে গেলো তুর্যর।
মা চলে গেলে চোখের জল বাঁধ মানলনা ওর। কতোগুলো মানুষ আছে যারা অন্তরের আবেদন অগ্রাহ্য করতে পারেনা। কতোগুলো মানুষ জন্মায় সবুজের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ নিয়ে। তুর্য তাদের একজন। শহরের ইট কাঠের ভিড়ে শুধুই গ্রামের কথা মনে পড়ে...... এখানে যেন মরে আছে। গৎবাঁধা রুটিন আর নির্জীব জীবন আরও বেশী মনে করিয়ে দেয় গ্রামের কথা। প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানো দিনগুলোই ওকে আবার হাতছানি দেয়......... নীড়ের ডাক শুনতে পায় তুর্য।

চোখ মুছে শক্ত হয়ে বসে । ওর মন যেন ওকে বলছে , “ প্রকৃতি আর তোর নাড়ীর সম্পর্ক কেউ ছিঁড়তে পারবেনা। একদিন তোর ঠিকই প্রকৃতির মাঝে ফেরা হবে, ঠিক হবে...... দেখে নিস তুই.........”
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১২ দুপুর ১২:০৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×