somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাইদার হোমিওপ্যাথিক , নর এলোপ্যাথিক । ওষুধবিহীন জীবনের খোঁজে ...... !!!

১৯ শে জুন, ২০১২ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্যাগের এক খুপরিতে জমানো ৫০০ টাকা আছে । একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় বেরুতে চাইলেও পারা যাবেনা । আরও কিছু কাজ বাকি আছে যাবার আগে ............ ।।
ডায়েরিটা গ্যাসের চুলায় পুড়িয়ে ছাইগুলো কলের জলে ভাসিয়ে দিয়ে কালো কাভারটা ছুঁড়ে ফেলে দিলো বাইরে।
পিসিতে নিজের সব ছবি মুছে দিলো । বাদবাকি ফোল্ডারও চিতায় গেলো । শুধু রইলো গানগুলা ।
মোবাইল সিমটা খুলে পকেটে পুরলো আর মোবাইলটা ব্যাগে । সিমটা কিসের টানে নিলো কে জানে !!
প্রিয় কালো প্যান্টটা পড়ে নিলো । প্রিয় বলেই সবচেয়ে জীর্ণ । পিঠের নিচ দিকে ফুটো হয়ে যাওয়া একটা টি- শার্ট গায়ে চাপিয়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল পায়ে চড়িয়ে বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে ।
চুপিচুপি নিঃশব্দে গেইট খোলার বিদ্যে ভালই জানা আছে । আজ সেটা কাজে লাগলো ।রাত ১২ টা । হাঁটার উপর নির্ভর করে চলতে লাগলো ।

অভ্যাস নেই । তাই শহরের সীমানা পার না হতেই শ্রান্ত হয়ে বসে পড়লো । ভোরের প্রথম গাড়িতে চড়ে কোথায় রওনা হলো নিজেও জানেনা । জায়গার নাম জিজ্ঞেস করেনি । ভাড়া চুকিয়ে বসে পড়লো ।
নেমে গেলো একটা কাঁচা সড়কের পাশে । একটা গ্রাম মনে হয় ! কাউকে জিজ্ঞেসও করলো না এই জায়াগার নাম কি ।

গাছগাছড়ায় জায়গাটা সয়লাব । রাস্তাটা ছায়ায় ঘেরা । হাঁটতে হাঁটতে একটা মাটির ঘর দেখতে পেলো । নির্দ্বিধায় ঘরে ঢুকে দেখে – একজন বুড়ি রান্না করছে ।
- আমারে একটু জায়গা দিবেন ? আমার কেউ নাই ।
- তুমি কেডা ? কইত্থিকা আইসো ?
- জানিনা । ভুইল্লা গেসি গা ! আমারে একটু থাকতেদিবা দাদি তুমার লগে ?
- কি মুসিবত !! দাঁড়াও! তুমার দাদু ক্ষেতে গেসে ।আগে হেয় আইয়ুক !
- আমি দাদুর লগে ক্ষেতে কাম করমু । ১ বেলা খাইতে দিও ।

কথাবার্তায় আর নিস্পাপ চেহারায় সে ভুলালো বুড়িকে আর বুড়ি মানিয়ে ফেলল বুড়োকে ।

ভোর বেলা দাদুর সাথে কাজে যায় । দুপুরে ভাত , ভর্তা খায় । বিকালে পুকুর পাড়ে বসে থাকে । ডায়েরিটা আনা উচিত ছিল ! ধুর ! এখন যে লিখতে ইচ্ছা করে !
দাদু , দাদি অনেক প্রশ্নই জিজ্ঞাসা করে । ও এমন ভাব দেখালো যেন স্মৃতিভ্রষ্ট । আর কেউ যেন চিনতে না পারেসেজন্য দাঁড়িতে মুখ ভরিয়ে ফেলেছে আগেই । নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি নিশ্চয়ই বেরিয়েছে !

দিনগুলো নির্ঝঞ্ঝাট । এমন জীবনের খোঁজেই বেরিয়েছিল ঘর ছেড়ে । যেখানে একটা অসাধারণ নৈঃশব্দ্য বিরাজ করবে ! জীবন যেখানে নির্মমতা শিখিয়ে দিয়ে আবার আদরে বুকে টেনে নেবে । লাত্থি মারতে ইচ্ছা করে ঐ একঘেয়ে ফেলে আসা দিনগুলো। লাত্থি মেরেই চলে এসেছে ।
রাতে হাতের মুঠোয় জোনাকের আলো নিয়ে কাটিয়ে দেয় অনেকখানি সময় ।তারপর ঘুমুতে যায় ।

একভাবে না একভাবে জীবনটা চালিয়ে নেয়া যাবে । অন্য কোন ভাবনা নেই শুধু একবেলাখাওয়া ছাড়া ।

একদিন সকাল বেলা । ক্ষেতে কাজ করছে । একটা গরু পথ থেকে ক্ষেতে ঢুকেছে । সোজাতার দিকে দৌড়ে আসছে !! গরুর পাগলামি সম্পর্কে সে অবগত নয় । তবুও কিছু না ভেবেই দৌড় লাগালো । ক্ষেত পেরিয়ে দূর্বাভরা মাঠ ......


দৌড় , দৌড় , দৌড় ......... ঘেমে ভিজে জবজবে হয়ে গেছে ।

দৌড়াতে দৌড়াতে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো ! বাঁধনমুক্ত হবার হাসি , জীবনকে অন্তর দিয়ে চেখে দেখে তৃপ্ত হবার হাসি , পাগলামি ভরা হাসি .........!! হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা.........


হাহাহাহাহাহাহাহাহা............

ছেলেটা ঘুম ভেঙ্গে দেখে পাগলের মত হাসছে সে ! আর ঘেমে একাকার !
ওহ ! ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে ! ফ্যান বন্ধ !

বাসায় কেউ নাই ! এই মোক্ষম সুযোগ ! জমানো ৫০০ টাকা ছিল। ডায়েরিটা এবার সঙ্গে নিলো । পিসিতে সব ফোল্ডার মুছে ফেলল । নিজের প্রিয় কালো প্যান্ট আর ছেঁড়া টি-শার্ট টা গায়ে চাপিয়ে ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ! এবার সিমটা খুলে ফেলে রেখে গেলো আর মোবাইলটাও ।


বাদুরঝোলা হয়ে বাসের পেছনে দৌড়াতে নয় ! খোলা মাঠে উদ্দাম তারুণ্য নিয়ে জীবনজয়ের দৌড়ে অংশ নিতে ।
এতদিন জীবনটা রুগ্ন ছিল । হয় হোমিওপ্যাথি নয়তো এলোপ্যাথির ভরসায় চলতো । এবার সুস্থ ওষুধবিহীন জীবনের পথে রওনা হয়ে গেলো......... ।।

ছেলেটার চোখে মুখে দীপ্তি! অবুঝ , অবাধ তারুণ্যের দীপ্তি !

** কিছুকথাঃ হয়তো এমনভাবেনা ভেবে না চিন্তে জীবনকে উপভোগ করার সৌভাগ্য হবেনা ।তবুও মনে মনে রেখেছি । সুযোগ পেলে নিরুদ্দেশ হতে ছাড়বো না ! আমার পাগলামি ভরা কল্পনারাজ্যের ছোট্ট একটা অংশ সবার সাথে ভাগ করে নিলাম ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×