somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমুর মৃত্যু কিংবা পুনর্জন্ম ( স্যারকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবার একটা ছোট্ট প্রয়াস )

২০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খিলগাঁও ফ্লাইওভার নাকি ভেঙে গেছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ। আমি উঠে পড়লাম। আমার ওজন ৫০ কেজি। ফ্লাইওভারটার কাছে আমার ওজন একটা পিঁপড়ার মত। আচ্ছা , এটাকে কি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে? গেলেও পারবনা মনে হয়। সব ভুলে গেছি ।

হলুদ পাঞ্জাবী আমার নাই। সবুজ ডোরাকাটা পাঞ্জাবিটা আছে। আজিজ থেকে কেনা । মাগনা। মাগনা পাওয়ার মত অবস্থা ছিল একসময়। আদর সোহাগ পাওয়ার মত অবস্থা ছিল ; কিন্তু সবটাই বাপের দৌলতে। বাপ নাই তো ট্যাকাও নাই , আদরও নাই। ফাও উপহার পাওয়ার দিনও নাই।

হলুদ স্পঞ্জের স্যান্ডেল আছে। কিন্তু কোন একজায়গা থেকে শিখেছি – আমাদের মত মানুষদের নাকি জুতা পায়ে হাঁটতে মানা। ফ্লাইওভারে ওঠার আগে এক পাগলকে দিয়ে এসেছি। আচ্ছা ! পাগলের অর্থ কি? মাথা নষ্ট যার ? নাকি যে রাস্তায় লুঙ্গি খুলে আনমনে বসে থাকে , উচ্চস্বরে হাসে ? এটা পাগল ? নাকি আমি পাগল? নিজেকে পাগল পরিচয় দিতে আমার খুব ভাল্লাগে। মাথা নষ্ট থাকলে লোকজন আলাদা দৃষ্টি নিয়া তাকায়। মনে হয় খুব ইম্পরট্যান্ট পারসন আমি। নিজেরে ফাইভ স্টার হোটেলের দারোয়ান মনে হয় তখন ।

জোছনা দেখতে আসলাম এখানে। ফ্লাইওভারের চেয়ে উঁচু জায়গা থাকলে সেখানেই যেতাম। আছে অনেক উঁচা উঁচা দালান। কিন্তু এই রাত ২টা বাজে আমার জন্য কে গেট খুলে দিবে ?

রাতের বেলা মেঘের রঙ কালো থাকে। জোছনা মেঘের আস্তরণ ভেদ করে টুপ টুপ করে ঝরে পড়ে। জলের মত পাতলা নয়; মিষ্টির সিরার মত ভারী জোছনা। কেউ একজন এই জোছনা নাকি খুব ভালোবাসতো। তার পা সবসময় মাটিতে থাকতো। মাটির লাগোয়া। সে বৃষ্টি ভালোবাসতো। আচ্ছা , বৃষ্টি আর জোছনাকে একসাথে ভালোবাসা যায় ? যায় না মনে হয়। একটা চাইলে আরেকটা পাওয়া যাবেনা। দুইটা সত্যিকারের প্রেম একসাথে পাওয়া যায়না। আমি পারলে ওকে বৃষ্টি আর জোছনা একসাথে দিতাম। যদি আকাশের অধিপতি হতাম। কিন্তু আমারও আকাশে ওঠা মানা। মাটিতে থাকা আমাদের স্বভাব।

কিছুদূরে একটা ছায়া । এগিয়ে আসছে। একটা মেয়ে। নিয়নের আলো পড়তেই মেয়েটাকে দেখা গেল। মনে হল মিষ্টির সিরার মত জোছনা ঝরে ঝরে মেয়েটা তৈরি হয়েছে এইমাত্র। সস্তা পাতলা হয়ে যাওয়া একটা বাটিকের নীল শাড়ি পড়া। নীল জোছনা’র মেয়ে ? আমার কাছে ঐ প্রফেসরের দেখা দেবীর মত মনে হল। একটা সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়লো। কিন্তু যেই গলা খুলে হাসল , মনে হল দেবী না; শাঁকচুন্নি হাসছে। সুন্দর মানুষের গলা বিচ্ছিরি হয় । আজব হলেও সত্য !
শাড়িতে হাত দিয়ে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করছে। তার কাস্টমার দরকার। এখনও খাওয়া হয়নি মনে হয়। জিজ্ঞাসা করলাম- জোছনা খাবা ?
সে বলল- না মুরগার ঝোল দিয়া ভাত খামু।
- কেন ? মুরগা কেন ? মুরগি দিলে হবেনা ?
- মনডায় লইতাসে আপনের মাথা দিয়া ভাত খাই।
- আমার মাথা অনেক শক্ত। আর এই ফ্লাইওভারে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা নাই। আমার কাছে এখন টাকাও নাই। থাকলে মুরগার ঝোল দিয়া ভাত খাওয়াইতাম । তুমি এখন যাও।
- পাগল ব্যাডা কুনহানের !

মেয়েটা আমাকে পাশ কাটিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হেসে চলতে লাগলো। হাসিটা দারুণ কিন্তু ! দেবীর মত। নাকি তৃষ্ণার মত ? হিমুর তৃষ্ণা ? !!

কাল রাত ১১:২০ মিনিটে ঐ হলুদ পাঞ্জাবীর হিমু নাকি হারিয়ে গেছে। মাটিতে হাঁটতে হাঁটতে মাটিতে মিশে গেছে। আমি জানতাম না। আমি তখন নদীর ধারে ছিলাম। টিভিও দেখিনা, ফেসবুকও চালাইনা। কিন্তু মনে মনে একটা অনুভূতি হয়েছিল; খুবই বাজে , খারাপ অনুভূতি। বাতাসে একটা অন্য গন্ধ । সবাই হাহাকার করছিল নাকি । কিন্ত আমি জানি ওরা জানেনা যে কাকে হারিয়েছি আমি। হিমুর সাথে আজ রাতে আড্ডা দেবার কথা ছিল। একসাথে মিষ্টির রসের জোছনা খাবার কথা ছিল। কিন্তু হিমু কোথায় হারালো কেউ বলতে পারেনা। আমাকেও বলে গেল না! আর কারো উপর অভিমান না করলেও আজ হিমুর উপর অভিমান করেছি।

ফ্লাইওভারের উপর থেকে লাফ দেব। আবার গড়িয়ে গড়িয়ে লুলা হাত-পা নিয়ে উপরে উঠবো। আবার লাফ দেব। আবার উঠবো। নতুন উন্মাদনা পেয়েছি আজ রাত ২টায়।

খেলা শুরু করব এক্ষুনি। পেছন থেকে আমার ঘাড়ে একটা নিঃশ্বাস পড়লো । বিরক্ত হলাম। বললাম- এখন ভাগেন তো এখান থেকে ! হুদাকামে টাইম পাস করার মুডে নাই আমি।
লোকটা হেসে বলল -
- আমার সাথে না আজ রাতে জোছনা দেখার কথা ছিল ? এখন আমারেই তাড়িয়ে দিতেসিস ?
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখালাম সেই হলুদ পাঞ্জাবী , খালি পা , চুল লম্বা , দাঁড়িতে মুখ সয়লাব।
- মাটিতে নাকি মিশে গেছ? সবাই বলতেসে ?
- তো তুই এখানে কি করতে আসছিস ?
- এখানে মাটি নাই। সিমেন্টে মিশে যাবার চেষ্টা করতেসি। তুমি নাই তো আমি থেকে কি করব? এমন তো কথা ছিল না। এক হাজার বছর নাকি বাঁচার কথা বলসিলা ? কই ! সব ভুলে গেলা তো ?
- এক হাজার কেন ? এক লাখ বছর বাঁচবো।
- সম্ভব না , সেটা।
- সম্ভব।
- কিভাবে ?
- তুই কে ?
- আমি হিমু।
- ঐ যে হাঁটছে নিচে একা একা , সে কে ?
- সেও হিমু।
- ঢাকার রাস্তায় সকালে বিকালে রাতে যারা ঘুরে বেড়ায় তারা কে ?
- হিমু।
- তবে? হারালাম কই? আমি মাটিতে মিশে গেছি। যাবার আগে ক্লোন বানায় গেসি । এই ঢাকায় ১ কোটি হিমু আছে। মাটিতে মিশে নাই। এখনও মাটিতে পা লাগিয়ে হাঁটতেসে।
- জোছনা খাবা না ?
- আসলাম তো সে জন্যই ।

তারপর আমি আর হলুদ হিমু জোছনা খেলাম। একঘণ্টা পর বৃষ্টি আসলো। বৃষ্টির ভারী ফোঁটা পাঞ্জাবীতে অদ্ভুত শব্দে পড়তে লাগলো। আমার আর কোন বিষাদই রইল না । হিমু কথা রেখেছে।

হলুদ হিমু বলে – কাল রাতে আবার দেখা হবে। বুঝলি ?
- হুম।
- এখন হাঁটা দে।

আমি দ্বিরুক্তি না করে হাঁটা দিলাম। হলুদ হিমু আমার উল্টোদিকে চলতে চলতে অন্ধকারে মিশে গেলো। হয়তোবা মাটির কাছেই গেছে। সবুজ গাছের পায়ের নিচে যে খয়েরী মাটি থাকে তার কাছে।

আমার অদ্ভুত স্বভাব ! এত বুঝাল তবুও চোখে জল কেন ! চোখের পাঁপড়ি ভিজিয়ে গালে গড়াবার আগেই মুছে ফেললাম।

হাঁটছি । ঢাকার এককোটি হিমুকে নিয়ে তিন কোটি হিমু বানাবো।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১০:২৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×