somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রঙধনু

১৫ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একলা চড়ুইঃ
“এই তোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।” বাঁধন বলল।
“তোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলার মানে কি ? আমি কি এখানে পড়ি নাকি ?” রাশেদ বলল।
“না, মানে ...তোর তো দুঃখ বেশি । তাই কথাটা বলে একটু সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলাম আরকি ।না পাওয়ার দুঃখ বলার মাঝে কিছুটা হলেও সুখ দেয়।”

বাঁধনের কথা শুনে সুরভী আর পলাশ হেসে উঠলো। আর রাশেদের কাছে কথাটা পছন্দ হল। আবার একটা ব্যাথাও অনুভব করলো মনে মনে।

রিকশা থেকে নেমে কার্জন হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে চারজন ছেলেমেয়ে যাদের মনে একটাই কষ্ট - এই চমৎকার জায়গায় ভর্তি না হতে পারা।

বাকি তিনজন এখন যেখানে পড়ছে সেখানে মানিয়ে নিয়েছে ভালভাবেই। শুধু পারেনি রাশেদ।

রাশেদের চরিত্র অদ্ভুত ! ওর একূলও নেই , অকূলও নেই। ভার্সিটিতে বন্ধুদের ছোট ছোট গ্রুপ থাকে। ক্লাসের ফাঁকে , ছুটিরদিনে সেই বন্ধুরা একসাথে আড্ডা দেয় , ঘুরতে যায়। রাশেদ এখনও পর্যন্ত কোন ফিক্সড গ্রুপে নেই। ইচ্ছা করলেই যেকোন গ্রুপে ঢুকে যেতে পারত। কেন করেনি সে নিজেও জানেনা। কিন্তু সবাই ওকে চেনে , ও সবাইকে চেনে। কিন্তু তেমনভাবে কারো সাথে মেশা হয়না। ভাসাভাসা ভাবে কোন একদিন একটা গ্রুপের মাঝে গিয়ে পরে। চুপ করে বসে ওদের আড্ডা দেখে । তারপর চুপচাপ কোন এক ফাঁকে উঠে চলে আসে। একদিনের ঘটনা –

চারতলায় উঠছে । দেখে কয়েকজন সাবেক ক্লাসমেট বসে আছে। ওরা সবসময় একসাথে থাকে। চমৎকার ফ্রেন্ড সার্কেল। রাশেদ এগিয়ে এলো হাই হ্যালো করতে। দেখে সবাই হাসাহাসি করছে। ও জানতে চাইলো-
ব্যাপারটা কি ?
হিমেল বলল- আমাদের সবারই লাভার আছে। কিন্তু এই শারমিন আর সুমনের নাই। তাই ওগো একটা গতি করতেসি।
-কি রকম ?
-বসে দেখ না !
শারমিনকে বলা হল ১ থেকে ১০ এর মধ্যে একটা ধরতে। শারমিন ধরল ৪। তার মানে সিঁড়ি দিয়ে ৪ নাম্বার যে ছেলেটা উঠবে , তাকেই শারমিনের লাভার বানানো হবে। বাহ ! রাশেদও মজা পেয়ে গেল।
১, ......... ২ , ৩ .................. এই এই এই ৪ !!!
সবাই চোখ বড় করে দেখল – একজন সিনিয়র ভাইয়া উপরে উঠছে। শারমিন তো খুব খুশি। ছেলে তার পছন্দ হয়েছে। ও এমনিতেই সারাক্ষণ হাসে , আর এখন তো রীতিমত খিলখিল হাসি !

এবার সুমনের পালা। সুমন ধরল ৭। কিন্তু অনেক কষ্টে ৫ জন মেয়ে গেল । আর কেউ সিঁড়ি দিয়ে উঠছে না। সবাই সুমনকে কুফা ডাকতে লাগল ।অনেকক্ষণ পর ৬ নাম্বার মেয়েটাও গেল কিন্তু ৭ নাম্বার মেয়ে আর আসেনা !
২০ মিনিট পার হয়ে গেল।
সুমন রীতিমত হতাশ !
হঠাৎ সিঁড়ির কোনায় ওড়নার আভাস পাওয়া গেল। একটা মেয়ে উঠছে ! সবাই বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটা কেমন হবে সেটা দেখতে। দেখা গেল – যে উঠছে সে ভার্সিটির চতুর্থশ্রেণীর মহিলা কর্মচারী !!!
হাহাহাহাহাহাহাহাহাহা............ একটা হাসির রোল বয়ে গেল। আর সুমন বেচারার চেহারা দর্শনীয় হয়ে উঠলো।

এমন ছোটখাটো মজা করতে করতেই ওদের সময় কেটে যায়। শুধু সময় কাটে না রাশেদের। সে সবার চেনা , সবার প্রিয়মুখ । কিন্তু তবুও সবার থেকে দূরে । সবার আনন্দ দেখতে দেখতে ওর মনে হয়- “আমি এতদিন কি করেছি ? না পারছি পড়ায় মন বসাতে , না পারলাম লাইফটা এঞ্জয় করতে ! আমি কী !!”

আজকাল বাসার সবাই সামান্য কারণে ওর ওপর রাগে ফেটে পড়ে। ওকে একটা আপদ আপদ মনে হয় সবার। কিছু অন্যায় হয়তো রাশেদ করেছে। কিন্তু একবার কোন উল্টাপাল্টা কাজ করলে সব কাজেই তার দোষ ধরা হয়, সন্দেহ করা হয় ; যদিও সে নির্দোষ। একারণে মনটা তিক্ত হয়ে থাকে।
বিকালবেলা গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাশেদ। আকাশ দেখতে ভাল লাগে। অপ্রত্যাশিতভাবে কোন আগাম খবর না দিয়ে বৃষ্টি এল। আশাতীত কিছু পেলে মন হঠাৎই ভাল হয়ে যায়। বৃষ্টির ছাঁট এসে ওর উদোম প্রশস্ত বুক ভিজিয়ে দিতে লাগলো। মনটা প্রচণ্ড ভাল হয়ে গেল। এমন সময় মা আসে।
- ওরে ! দেখসো নি কাণ্ডডা ? !! দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া ভিজতাসে ! ঠাণ্ডা লাগলে পরে বুঝবিনে মজা ! যা ঘরে যা।
বলে হাত ধরে টানতে লাগলো। মায়ের এই সামান্য আদরটুকুর জন্যে রাশেদ মুখিয়ে ছিল। ভাবল – আমি বুড়ো হয়ে গেলেও মনে হয় মা বলবে – ঠাণ্ডা লাগলে পরে মজা বুঝবি !
খেতে বসছিলো রাশেদ আগের রাতে। আয়নার সামনে মা দুই বেণী করছিলো। দুই বেণী করলে মাকে ছোট কিশোরী লাগে আর আগের দিনের কথা মনে পড়ে যায় যখন সে ছোট ছিল। ছোটবেলায় দেখতো মা এভাবে বেণী করে। কি যে সুন্দর লাগে মাকে !! একদিন মা ওকে একলা ছেড়ে দিয়ে লুকোচুরি খেলছিল। সে তখন ২- ৩ বছরের হবে হয়তো। এইঘর ওইঘর ছোট ছোট পা ফেলে চিন্তিত মুখে মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। পায় না ! মা হারায় গেসে ! একটা ধুকপুকানি বুকের ভেতর। এই ২১ বছর বয়সেও স্পষ্ট মনে আছে রাশেদের – সেই মুহূর্তটার কথা ! মা ফ্রিজের আড়ালে দাঁড়িয়েছিল । হঠাৎ চোখে পড়ে মাকে।
মা তখনো বেণী করছিল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে । মুখে দুষ্টুমির হাসি। অর্ধসমাপ্ত বেণী , মুখে অবোধ হাসি – মাকে অবুঝ কিশোরী ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি । এখন ভাবে বসে বসে রাশেদ। ছোটবেলার অনেক স্মৃতি ভুলে গেলেও এটা মনে আছে অদ্ভুতভাবে। মায়ের দুই বেণী করা দেখতে এত ভাল লাগে কেন কে জানে !!

এখন মা আগের মত আদর করেনা। সে চায় মা যেন একটু মাথায় বিলি কেটে আদর করে দেয়, জোর করে খাইয়ে দেয়। মাঝে মাঝে মা রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে- দেখতে পারিনা তোরে !
খুব হাহাকার করে মনটা একটু আদরের জন্য । আজ ভেজা বারান্দায় মায়ের আদরমাখা শাসন পেয়ে বলেই ফেলল- তুমি আগের মত আর আদর করো না । একটু মাথায় হাত বুলায় দিবা মা ?
মাও মনে হয় নিজের আচরণে চমকে যায়। ছেলের মনটা কি চায় মনে হয় বুঝতে পারে মা। কিন্তু কোথাও যেন একটা বাঁধা তৈরি হয়ে গেছে। মা দায়সারা ভঙ্গিতে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। রাশেদ তুষ্ট হয়না। একটা দীর্ঘশ্বাস কি বেরিয়ে এল বুক বেয়ে ?

ছবির অ্যালবাম নিয়ে বসেছিল একটু। আগের ছবি। মা এক বছরের রাশেদকে গোসল করিয়ে দিচ্ছে, বাবার কোলে বড় বড় চোখের গোলগাল রাশেদ , ভাই-বোনের একটা ছবি। অউফ ! কি সুন্দরই ছিলাম তখন ! মনে মনে বলে রাশেদ।
আরেকটা ছবিতে নানী ওর মামাতো ভাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে। নানীর বর্তমান অবস্থা কল্পনা করে চোখে জল এল । নানী ভাল নেই এখন। কেউ দেখে না ওঁকে; মানে নানীর মনকে বুঝতে পারেনা।
সত্যি ! খুব কান্না পাচ্ছে। নানীর কষ্টটা বুঝতে পারছে সে , কারণ সে নিজেও নিঃসঙ্গতার শিকার।
একা ! এই ভিড়ে , লোকেভরা দালানটার মাঝে, এই শহরের চিৎকারে সে একা। তার মনটা একা। চোখ থেকে দু’ফোঁটা জল ঝরে পড়ে অ্যালবামটায়।

নিষুপ্ত নিনাদঃ
“খুব বুদ্ধিমান মানুষের সঙ্গে গল্প করার মধ্যেও একধরনের অস্বস্তি থাকে। নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হয়।” – ( সঙ্গিনী ; মিসির আলী অমনিবাস )
সঠিক কিনা কে জানে! কিন্তু বুদ্ধিদীপ্ত মানুষগুলার মাঝে একধরনের সূক্ষ্ম অহংকারবোধ থাকে; সেটা সম্ভবত তারা নিজেরাও ধরতে পারেনা। নিজের অজান্তে সহজ-সরল লোকগুলোকে দুঃখ দিয়ে ফেলে। সরল লোকগুলোকে সোজা বাংলায় বুদ্ধু বলা হয়। বোকা লোকের সঙ্গ নাকি ভয়ঙ্কর । তাই বেশীরভাগ মানুষ এদের উপেক্ষা করে চলে। আর তার সাথে নিজেরাও একটা বোকামিভরা কাজ করে। সব সরল মানুষগুলোকে একই কাতারে ফেলে দেয়। মানসিক চাপের মুখে বোকা লোকগুলা আরও বোকা হয়ে যায়।

রাশেদের স্কুল পাশ করা অব্দি একটা গুন ছিল- ভাল ছাত্রের খেতাবটা সাথে ছিল। বোর্ড পরীক্ষার কিছুদিন আগে থেকে আশেপাশের ছেলেমেয়েদের খুব বেশি তামাশার শিকার হতো। একটা ভয় হয়তোবা তখন থেকেই মনে গেঁথে গেছে যে- সে আসলেই একটা বোকা।
ধীরে ধীরে একটা বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করে মনে, একটা শ্রদ্ধাবোধ অন্য অনেকের প্রতি। আরও ভাল করে বলতে গেলে নিজের প্রতি হীনমন্যতা । যাদের সাথে পরিচয় আছে, তাদের সবাইকে নিজের থেকে অন্তত কয়েক স্কেল উঁচুদরের পাবলিক মনে হয়। সে অবাক হয় ওদের বুদ্ধিমত্তা , হাস্যরস করার ক্ষমতা , কথা বলার অসাধারণ ভঙ্গি দেখে। নিজেকে ওদের সাথে মিলিয়ে তুচ্ছই মনে হয়। ওদের সাথে কথা বলতে ভয় লাগে আর নিজেকে আরও গুটিয়ে নেয়। একটা অসহায়ত্ব কাজ করে।
নিজের জগতে বন্দী হয়ে যায়। চিন্তাভাবনা গুলো নিজেকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। নিজেকে নিয়ে কল্পনা করতে শুরু করে সে। কল্পনায় নিজেকে বিভিন্ন অবস্থানে চিন্তা করে। নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসাবে ভাবতে থাকে যে ঐ বুদ্ধিমানদের সাথে সমান বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কথা বলছে কোন জড়তা ছাড়া।
নিজেকে নিজের মাঝে বন্দী করে রাখতে রাখতে একসময় এমন অবস্থা হল – আশেপাশের অনেক কিছুই সে ঠিকমত খেয়াল করছেনা, অনেক ঘটনাই ধরতে পারছেনা। রাশেদের সাবকনশাস মাইন্ড সেগুলো পৌছাতে পারছেনা তার কনশাস মাইন্ডের কাছে । কারণ ওর কনশাস মাইন্ড তখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। অন্যকিছু তার খেয়াল নেই।
এটা একধরনের মানসিক ত্রুটি। ছোট ছোট ত্রুটিগুলোই বড় হয়ে ধরা পড়তে পারে। মস্তিষ্কের কোন অংশের কি বিকৃতির লক্ষণ এটা ? রাশেদ কি তবে পাগল হয়ে যাচ্ছে !
একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছিল ছেলেটা। এর থেকেই বোঝা যায় –

“একটু ধাতস্থ হতে পারসি মনে হয় এখন।
সকাল থেকে একটুও মনে হয়নাই যে আজ আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেসে। নিজেকে সুস্থ স্বাভাবিকই মনে হইতেসিল। কিন্তু পাগল কখনও বুঝতে পারেনা যে তার মাথা খারাপ।

ক্যাম্পাস-৫ কে ক্যাম্পাস-৪ ভেবে এক ক্লাসমেটকে হয়রানি করসি। সে ক্যাম্পাস-৪ এর চারতালায় উঠে বসে আছে আমার কথায় আর আমি নিজে বসে ছিলাম ক্যাম্পাস-৫ এর চার তলায় !
তার সাথে দেখা হবার পর সে ভুল শুধরাইয়া দিল আর আমার খেয়াল হইল আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেসে।

আরেক বন্ধুরে জিগাইলাম –কিরে ? তোরা কয় ভাই কয় বোন ? সে কয় – এক ভাই , দুই বোন।
আমি জিগাই – ভাই তোর থেকে বড় না ছোট ? সে কয় – ভাই একজন । আর সেই একভাই আমিই ! :/ :/ :/
আরেকবার প্রমাণিত !

শেষটা তো আরও ভয়ানক ! লাস্ট ক্লাসে গিয়া দেখি একটা ক্লাস টেস্ট আছে আজ আর সেটা আমি বেমালুম ভুলে গেছি ! একটা অক্ষরও পড়া হয়নাই । আমার মনেই নাই যে আজ ক্লাসটেস্ট !
১০ এ ৬ পাইসি আন্দাজে পরীক্ষা দিয়া । :/ :/

বিকালে ক্লাস শেষ হবার পর আবহাওয়া টা মেঘলা ছিল আর বৃষ্টিতে সামান্য ভিজছি বলেই হয়তো একটু ভাল লাগতেসে এর পর থেকে। বৃষ্টির ফোঁটা পাগলামির দাওয়াই হিসাবে কাজ করসে। মন ভাল এখন। আরও ভাল কারণ – আজ একটা ভাইভা হবার কথা ছিল, সেটা হয়নাই সময়ের অভাবে।
অ্যাসাইনমেন্ট , ভাইভা , ক্লাসটেস্ট এর যাঁতাকল থেকে মুক্তি পেয়ে দিনশেষে এখন আমি মোটামুটি সুস্থ বোধ করতেসি । এখন খেয়ে লম্বা ঘুম সকাল ৮টা অব্দি।
কিন্তু আবারো বলতেসি – পাগলামি রোগটা পিছু ছাড়ে নাই। যে কোন সময় হানা দিতে পারে। রিলাক্স করা দরকার। পরীক্ষাটা যাইয়া নেক। আপাতত কাল সকাল পর্যন্ত রিলাক্স হয়ে ঘুম দিব।”

পাগল মানুষদের নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। মনে হচ্ছে ছেলেটি পাগল হয়ে যাচ্ছে। ওর আরও অনেক সমস্যা আছে। বড় সমস্যা বোকামিটা। বোকাদের কেউ সহ্য করতে পারেনা। রাশেদ একধরনের মানসিক অশান্তিতে ভোগে। কথা বলতে চায়, নিজেকে মেলে ধরতে চায়। যখন পাত্তা পায়না , অসম্ভব অন্তর্মুখী হয়ে যায়। কথাগুলো নিজের মাঝে রেখে দেয়। ভেতরে ভেতরে একটা ছটফটে ভাব শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ে। কোন কাজ ঠিকমত হয়না। ক্রমাগত কিছু ভুল হয়ে যায় যা দেখে নিজেই অবাক হয়। তাহলে কি এই মানসিক অসুস্থতার কারণ রাশেদের বোকামি !!
“লেখকেরা কি বোকাদের নিয়ে কোন লেখা লিখতে পারেনা? বোকার মোড়কে মোড়া অন্তর্মুখী ছেলেদের নিয়ে লিখতে পারেনা ?” - রাশেদ ভাবে।

অন্তর্মুখী রাশেদ নিজেকে পাগল ভাবতে শুরু করেছে । হয়তো কিছুদিন পর অন্যসবাইও পাগল ভাবতে শুরু করবে ওকে। একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাবে। মিসির আলী থাকলে উনার কাছেই যেতো সে। বলতো – “আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমাকে ভাল করে দেন প্লিজ।”
মিসির আলির ছেলেমানুষি হাসি দেখেই তার অসুস্থতা অর্ধেক কমে যেতো।
ছেলেটা আস্তে আস্তে পাগল হচ্ছে।

অনেক রাতে একলা ঘরে আধোঘুমে অস্থিরতায় আবোল তাবোল বকতে লাগল। সকালে রাশেদ ঘুম থেকে উঠে না দেখে মা বিছানার ধারে এসে কাঁথাটা সরিয়ে টান মেরে ওঠাতে গিয়ে দেখে – জ্বরে ওর গা পুড়ে যাচ্ছে; অচেতন হয়ে পড়ে আছে।

শেষ করার তাগিদ-
গল্পটা লিখছি সেই কখন থেকেই। নিজের অজান্তে বিশাল হয়ে গেল ! অন্যদিন বেশি চা খেতে চাইলে ধমক খাই। আজ চা আপনাআপনি আসছে। সাথে ঘরে ভাজা নিমকি। চা শেষ হতেই লেখার আগ্রহটা হারিয়ে ফেললাম। এখন শেষ করার তাগিদে আছি। রাশেদের গল্পটা শেষ করছি এভাবে-

তরুণ রঙধনুঃ
“রাশেদ বিকালে বসে আছে ছাদে। ঘাড় নুইয়ে বই পড়ছে। কোনদিকে খেয়াল নেই। পশ্চিম দিকে পিঠ দিয়ে বসেছিল। এই শেষবিকেলে সন্ধ্যার আগে রোদের উত্তাপ অনুভব করে বিরক্ত হল। মুখ তুলে চাইল না । বই পড়তে লাগল।
মাথা নুয়ে থাকতে থাকতে ঘাড় ব্যাথা করায় বই থেকে চোখ সরালো। চোখ গেল ডানদিকের আকাশ বরাবর। মানুষ সারপ্রাইজ পেতে ভালোবাসে। যেটা ঘুণাক্ষরেও সে আশা করেনা সেটা চোখের সামনে দেখে মুখ দিয়ে কথা বের হয়না প্রথমে। রাশেদের সাথে এমনটাই হল। দেখতে পেলো - বহুদূরের সবুজ গাছপালার সাথে আকাশের যেই নীলটুকু সঙ্গম করছে, সেখান থেকে ওদের সন্তানের মত একটা রঙধনুর রেখা জেগে উঠছে ধীরে ধীরে। প্রথমে তো সে হতবাক হয়ে গেল সেটা দেখে। পরে লাফ দিয়ে উঠলো। এত খুশি খুব কমই হয়েছে সে। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে জোরে হেসে উঠলো। প্রাণখোলা হাসি।
দেখতে দেখতে রঙধনুটা বাড়ন্ত শিশুর মত বাড়তে লাগল ...... ওর চোখের সামনে !! আর থাকতে পারল না। ছুটে নিচে নেমে গেল মাকে ডাক দেবার জন্য।
- মা , জলদি আইয়ো , দেরি করলে দেখবা না !
উপরে গিয়ে দেখে রঙধনুটা আরও বড় হয়েছে। ভাল করে তাকাতেই দেখল – চাঁদার মত হয়ে গিয়েছে সেটা। বিশাল জায়গা জুড়ে রঙধনুটা জ্বলজ্বল করছে !

রঙধনুটা রাশেদের মতই তরুণ হয়ে উঠেছে। কে জানে হয়তো ওর জীবনটাও এই অপ্রত্যাশিত রঙধনুর মত নতুনকরে জেগে উঠবে। জীবন তো সবে শুরু। আশা করতে ক্ষতি কি ! ওর একটা স্বপ্ন আছে। লালন করছে মনে মনে , স্বপ্নটাও বড় হচ্ছে ওর সাথে সাথে।
অন্তর্মুখী ছেলেটা আসলে অনেক ভাল , বড়মাপের মানুষ। সেটা সে নিজেও জানেনা।

রাশেদ রঙধনু দেখছে হাসিমুখে , অবাক চোখে। ............”



সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৩১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×