চাদর গায়ে ছেলেটা হাঁটছে বিশাল হাওড়টার পাশে। অল্প রাতেই গ্রামগুলা নীরব হয়। এটাও তেমনই। হাওড়ের জলে চাঁদটা রঙের মত গুলে যাচ্ছে। শুধু জলের আছড়ে পরার শব্দ। আর নিস্তব্ধতারও একটা নীরব শব্দ আছে। সেটা শোনা যাচ্ছে। ছেলেটা একা। তাই সুখী আবার দুঃখী মাঝে মাঝে।
আঁধার জমাট বেঁধে একটা অবয়ব বানালো। চাঁদের আলোয় সেই অবয়ব অন্ধকারমুক্ত হলো। অবয়বটার খোলাচুল উড়ছে। চাঁদের আলো দিয়ে বানানো পাতলা শাড়ি ছাড়া এই শীতে আর কিছুই গায়ে নেই তার। অবয়বটা বসে আছে হাওড়ের ধারে একটা গাছের গুঁড়িতে।
অবয়বটার কাছে গেলো ছেলেটা। চাঁদের আলো দিয়ে বানানো শাড়িতে তাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। নদীর স্রোতের মত মুখটা। সেই মুখের সৌন্দর্যের কোন স্থিরতা নেই। ঢেউ যেমন একজায়গায় থেমে থাকেনা, তেমনি ঐ সৌন্দর্যও থেমে নেই। সেই নির্জন, শীতল পরিবেশে দীপাবলির আলো সেই রূপ! ছেলেটা কতক্ষণ চেয়েই থাকল। তারপর নিজের চাদরটা ওর গায়ে দিয়ে বলল-
তোমার শীত করছেনা?
অবয়ব তাকালো।
- করছে। কিন্তু ভাল লাগছে এই হিম বাতাস।
- তারপর? এখানে কি করছ এত রাতে?
- রাত আমার ভাল লাগে। তাই রাতে বের হই। তুমি ঘুরতে এসেছ এখানে। না?
- হুম। তোমার বাড়ি কোথায়?
অবয়ব নিশ্চুপ। তার খোলা চুল উড়ছে। কিছুক্ষণ পর ছেলেটাকে বলল-
তুমি তো একা। আর আমিও। সম্পর্কটা এগিয়ে নেবে?
- দেখো, যার কাছেই গিয়েছি। অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু সে কয়েকদিনের জন্য। সর্বস্ব, সারাজীবন যার জন্য সঞ্চয় করবো বলে ভেবেছি, সে কয়েকদিন পর আসল রূপ দেখিয়ে দেয়। সত্যিকারের ভালোবাসা হয়তো আছে। তবুও খুব কাছাকাছি গেলেই আশাহত হয়েছি। তাই, আর না। যাকে ভাল লাগবে তার থেকে দূরে থাকব। দূরে দূরে সম্পর্ক মধুর হলে সেটাই সই। কাছে গিয়ে আশাভঙ্গ হতে হবেনা। আমরা এসো দূরের বন্ধু হই। ভালবাসবো দূর থেকে.........
ছেলেটা মাটির দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। কথা শেষ করে সামনে তাকাল সে। তখনও জলে চাঁদের আলো মিশে যাচ্ছে। জলের শব্দ, নিস্তব্ধতার শব্দ, ঝি ঝির শব্দ। সব আছে।
শুধু অবয়বটা নেই। এত কম সময়ে কোথায় গেল। সব দিকে বিশাল প্রান্তর আর সামনে হাওড়। চলে যেতে থাকলে দেখতে পাওয়ার কথা। নেই। কেউ নেই।
ছেলেটা এতক্ষণে খেয়াল করলো, তার চাদরটাও নেই কোথাও। বালুময় তীরে কিছু ছাদের আলো চকচক করছে যেখানে অবয়বটা বসেছিল।
ছেলেটা মৃদু নিঃশ্বাস ফেলে আবার হাঁটতে লাগলো। ভালোবাসার খাতায় আরেকটা নতুন নাম যোগ হলো। - চাঁদের মেয়ে।
ভালবাসা হতে এত কম সময় লাগে! কিন্তু সেটা ভোলা যায়না। সারাজীবনের জন্য গচ্ছিত থাকে। হোক সেটা অবাস্তব কিংবা কল্পনার ভালোবাসা কিংবা কোন অমীমাংসিত অবয়বের ভালোবাসা।