somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাল ভাষার চর্চা!

০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলে দেখবেন যে আমরা অনেকেই হিন্দিতে পারদর্শি! এমনকি হিন্দিতে লেখতে না পারলেও ঠিকই কথা চালিয়ে যেতে পারছি। এর কারণটা কি? আমার মনে হয় বেশি পরিমানে হিন্দি মুভি বা তাদের চ্যানেলের আদিপত্য। তবে যে কোন ভাষা রপ্ত করতে পারাটা কিন্তু খারাপ নয় যদিও হিন্দি ভাষার লিখিতরুপ আমাদের কারও জানা নেই। তাহলে এই ব্যাপার থেকে সহজেই বোঝতে পারছি যে শুধু দেখে ও শোনেও যে কোন ভাষা রপ্ত করা সম্ভব। তবে এইখানে আর কিছু বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন হিন্দি ছবিতে কয়েকটি গানও ব্যবহার করা হয়। সঙ্গত কারনেই হিন্দি সবার বোধগম্য হওয়ায় আমাদের রাস্তার মার্কেট বাজারেও সে সব গান দিনরাত অবিরত বাজতে থাকে। তাই অনেকে হিন্দি ছবি না দেখলেও অবচেতণভাবে তার কানে শব্দ ঢুকে যাওয়ায় সেটাকে সে অনুধাবন করে রাখছে। যে কারও মোবাইলে হাত দিলে আপনি হলফ করে হলেও হিন্দি গান পাবেন। এসব কিছুতে আর কিছু হোক আর না হোক আমরা হিন্দি ভাষাতে কথা বলতে সক্ষম হচ্ছি এবং সেটাও কোন ধরনের শিক্ষা বা ট্রেনিং ছাড়াই! ব্যাপারটা আমাকে সত্যিই অভিভূত করে। একটি দেশের শিল্প-সংস্কৃতি কতটা উৎকর্ষে থাকলে সেদেশের ভাষা অন্য দেশের মানুষ সহজেই নিজের করে নিতে পারেন? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে হিন্দির প্রতি আমাদের দূর্বলতা। আমাদের নিজের মাতৃভাষার প্রতিও হয়ত এতটা টান নেই যতটা হিন্দিতে আমরা রপ্ত হয়েছি। যে কোন কঠিন বিষয়ই ধৈহ্য ও নীয়মমত চর্চা করে গেলে একটা সময় সেটাও অনেক সহজ হয়ে পড়ে। বাংলাও আমার কাছে তেমনি একটি বিষয় বটে। আমার বাংলার লিখিতরুপ অত্যন্ত হতাশাজনক, ইংরেজিতেও আমার এতটা ভুল হচ্ছে না যেটা বাংলাতে প্রতিনীয়ত সম্মখিন হচ্ছি। যে কোন ভাষার ক্ষেত্রে ধৈহ্য, সময় ও অপেক্ষা নিয়ে কাজ করতে হয়। তবে হিন্দির ব্যাপারে এইখানেও একটা গাপলা আছে আমার। এই ভাষাটা যেন অটো সাজেসনের মতন আমাদের মধ্যে ঢুকে গেছে।

হিন্দি ভাষাতে আমরা লিখতে পারছি না কিন্তু কথা বলতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না কারন আমরা শুধু শ্রবণ করছি। আর এটা শোনতে শোনতে ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে সেট হয়ে আছে। আমাদের সময়ে নতুন হিন্দি ছবি বের হবার আগে আমরা সেটার নাম জানতাম। সিডির দোকানে ছবগুলার নাম পড়তে পড়তে এক সময় মাথাতে সেট হয়ে যায়। আর ছোটবেলা থেকেই বড়দের জন্য আমরা হিন্দি দেখতে বাধ্য হচ্ছি যার ফলে আজকে হিন্দিতে সবাই এত পটু। চিন্তা করে বড়রা যদি সেই সময় স্পেনিস বা ইংরেজিতে যদি ছবি দেখতেন তাহলে হয়ত আমরা অন্য ভাষাতেও অভিজ্ঞ হতাম। ছোটবেলা থেকেই আমার ইংরেজির প্রতি দূর্বলতা থাকায় ঘড়ে সময় পেলে ইংরেজি চ্যানেলে ঘুড়তে চাইতাম কিন্তু বড় ভাই ভিলেনের মতন হিন্দি চ্যানেলে টিভি টিউন করে নিতেন। সে সময় বাসাতেও মাত্র একটি টিভি ছিল। মেঝ ভাই এসব ব্যাপারে আমাকে আবার ইংরেজি চ্যানেল দেখতে প্রায়ই উৎসাহ দিতেন। তাই আমার মনে হয় আমাদেরকেও ছোটদেরকে হিন্দি চ্যানেল থেকে ইংরেজি ও আমাদের দেশিয় চ্যানেলগুলার প্রতি আগ্রহি করে তুলতে হবে। আপনার ছেলেকেও যদি ইংরেজিতে দক্ষ্য হিসেবে গড়ে তুলতে চান তাহলে বড় কোন ইংলিস মিডিয়াম স্কুলে না পড়িয়ে বাংলাতেই শিক্ষা দিন আর ব্যহারিক জীবনের প্রতি একটু খেয়াল রাখেন। ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে কেউ ইংলিসে সাহিত্যে মেডেল নিয়ে আসছেন এমন কিন্তু নয়। তার কাঁচা কানে শুধু সময়মত শব্দটা পেীছিয়েই দেখেন না কি হয়।

ইংরেজি একটি উন্নত ও প্রগতিসীল ভাষা। এটা অনেক লেখা হয়েছে এবং এখনও অনেক কাজ চলছে। সে ভাষা কে বাদ দিয়েও হিন্দির সাথে তুলনা করলে আমাদের বাংলা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছে। আমার কথাই বলি, আমি সবসময় ইংরেজিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি সেদিক দিয়ে বাংলাতে লেখা বলতে গেলে হয়ই নি। এইবার ব্লগে এসে বাংলাতে লেখতে আগ্রহ পাচ্ছি। আসলে আমাদের সবারই উচিৎ এই ভাষাটিকে চর্চা করা। আমি ড্রাঙ্ক হয়ে ইংরেজিতে লেখলেও ভুল আসছে না কিন্তু বাংলাতে এত ভুল কেন? এর একটাই কারণ ইংরেজি সহজে অটোকারেক্ট করতে পারছি!
বাংলাভাষার একমাত্র লে-আউট যেটা বিজয় দিয়ে আমরা ব্যবহার করছি সেটাও কিন্তু মোস্তফা জব্বার আমাদের কাছে বিক্রি করছেন, গুগল ডিকসনারিতেও বাংলা ভাষার শব্দের অপ্রতুলতা আমাদের বাংলা ভাষাভাষির লোকদের জন্য চরম লজ্জার বটে। ছোটরা অনুকরন করতে পছন্দ করে তারা ছোটবেলা থেকেই সেটা মাইন্ডে সেট করে নেয়। তার প্রিয় মানুষটা যদি তার বাবা বা চাচা হোন তাহলে সে উনার পছন্দের তালিকাকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করতে চায়। এখন যদি তিনি সবসময় মোবাইলে ইংরেজি গান শোনেন সেও সে ব্যাপারে উৎসাহি হয়ে ওঠে। আমরা যদি একটি ভাষা মাত্র শোনেই আয়ত্ব করতে পারি তাহলে বাংলা ও ইংরেজি লেখা বা পড়ার ক্ষমতা থাকার পরেও কেন আমরা সেটাতে পারদর্শি হচ্ছি না?

ইংরেজিতে পারদর্শি হবার প্রথম শর্ত কি? ভুল হলেও চালিয়ে যাওয়া। সেটাই, বাংলাতেও ভুল করলে সেটা চালিয়ে যেতে হবে তবে সৎর্কতার সাথে অতীতকে মূল্যায়ন করে ,ভুল থেকে শিক্ষ্যা গ্রহণ করতে হবে। আমার লেখাতে সাধারণত ইংরেজির টান চলে আসে। এই ব্যাপারেও একটি মজার বিষয় আছে। আমার প্রথমে ইংরেজিতে বাক্য গঠন করতে সেটা বাংলাতে ভেবে তারপর ইংরেজিতে রুপান্তর করতে হচ্ছে। যেমন- আমি এখন থেকে বাংলাতে লেখব- From Now i Will Write in Bangla. হিন্দির বেলা এতটা চিন্তা করতে হচ্ছে না। কারণ হিন্দি শোনতে শোনতে আমাদের কাছে এতটাই সহজ হয়ে গেছে অনেকটাই মাতৃভাষার মতনই অটোসাজেসন দিচ্ছে। তাই ছোটবেলা থেকেইি ইংরেজি কার্ট্রন, গান ছবি ও সাথে সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে সম্পর্ক রাখাটা জরুরি। আর ভাষার প্রতি এই সংকির্নতা শুধু ইংরেজি ও বাংলাতে না রেখে উর্দূথেও সম্প্রসারণ করাটা অত্যাবশ্যক। গ্রামারকে সহজবোধ্য করতে অনুশীলনের বিকল্প নেই। তাই সে লক্ষে কয়েকটি সহজ বাংলা গ্রামার টিপস শেয়ার করছি আশা করি সবার কাজে লাগবে আর আমাদেরকে বাংলাতে আরেকটু এগিয়ে নেবে।



১. দূরত্ব বোঝায় না এরুপ শব্দে উ-কার যোগে ‘দুর‘ (‘দুর উপসর্গ) বা ‘দু+রেফ‘ হবে। যেমন- দুরবস্থা, দুরন্ত, দুরাকাঙ্ক্ষা, দুরুহ, দুর্গা, দুর্গতি, দুর্গ, দুর্দান্ত, দুর্নীতি, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, দুর্নাম, দুর্ভোগ, দুর্দিন, দুর্বল, দুর্জয় ইত্যাদি।

২. দূরত্ব বোঝায় এমন শব্দে ঊ-কার যোগে ‘দূর‘ হবে। যেমন- দূর, দূরবর্তী, দূর-দূরান্ত, দূরীকরণ, অদূর, দূরত্ব, দূরবীক্ষণ ইত্যাদি।

৩.পদের শেষে ‘-জীবী‘ ঈ-কার হবে। যেমন- চাকরিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, আইনজীবী ইত্যাদি।

৪. পদের শেষে ‘-বলি‘ (আবলি) ই-কার হবে। যেমন- কার্যাবলি, শর্তাবলি, ব্যাখ্যাবলি, নিয়মাবলি, তথ্যাবলি ইত্যাদি।

৫. ‘স্ট‘ এবং ‘ষ্ট‘ ব্যবহার: বিদেশি শব্দে ‘স্ট‘ ব্যবহার হবে। বিশেষ করে ইংরেজি st যোগে শব্দগুলোতে ‘স্ট‘ ব্যবহার হবে। যেমন- পোস্ট, স্টার, স্টাফ, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, স্ট্যাটাস, মাস্টার, ডাস্টার, পোস্টার, স্টুডিও, ফাস্ট, লাস্ট, বেস্ট ইত্যাদি। ষত্ব-বিধান অনুযায়ী বাংলা বানানে ট-বর্গীয় বর্ণে ‘ষ্ট‘ ব্যবহার হবে।। যেমন- বৃষ্টি, কৃষ্টি, সৃষ্টি, দৃষ্টি, মিষ্টি, নষ্ট, কষ্ট, তুষ্ট, সন্তষ্ট ইত্যাদি।

৬.‘পূর্ণ‘ এবং ‘পুন‘ (পুনঃ/পুন+রেফ/পুনরায়) ব্যবহার : ‘পূর্ণ‘ (ইংরেজিতে Full/Complete অর্থে) শব্দটিতে ঊ-কার এবং র্ণ যোগে ব্যবহার হবে। যেমন- পূর্ণরুপ, পূর্ণমান, সম্পূর্ণ, পরিপূর্ণ ইত্যাদি। ‘পুন‘ (পুনঃ/পুন+রেফ/পুনরায়- ইংরেজিতে Re- অর্থে) শব্দটিতে উ-কার হবে এবং অন্য শব্দটির সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহার হবে। যেমন- পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা, পুনঃপুন, পুনর্জীবিত, পুনর্নিয়োগ, পুনর্মিলন, পুনর্লাভ, পুনর্মুদ্রিত, পুনরুদ্ধার, পুনর্বিচার, পুনর্বিবেচনা, পুনর্গঠন, পুনর্বাসন ইত্যাদি।

৭. পদের শেষে,- গ্রস্থ‘ নয় ‘-গ্রস্ত‘ হবে। যেমন- বাধাগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত ইত্যাদি।

৮. অন্জলি দ্বারা গঠিত সকল শব্দে ই-কার হবে। যেমন- অন্জলি, গীতান্জলি, শ্রদ্ধান্জলি ইত্যাদি।

৯. ‘কে‘ এবং ‘-কে‘ ব্যবহার: প্রশ্নবোধক অর্থে ‘কে‘ (ইংরেজিতে Who অর্থে) আলাদা ব্যবহার হয়। যেমন- হৃদয় কে? প্রশ্ন করা বোঝায় না এমন শব্দে ‘-কে‘ এক সাথে ব্যবহার হবে। যেমন- হৃদয়কে আসতে বলো।

১০. বিদেশি শব্দে ণ, ছ, ষ ব্যবহার হবে না। যেমন- হর্ন, কর্নার, সমিল (করাতকল), স্টার, আস্সালামু আলাইকুম, ইনসান, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি।

১১. অ্যা, এ ব্যবহার: বিদেশি বাঁকা শব্দের উচ্চারণে ‘অ্যা‘ ব্যবহার হয়। যেমন- অ্যান্ড (And), অ্যাড (Ad/Add), অ্যাকাউন্ট (Account), অ্যাম্বুলেন্স (Ambulance), অ্যাসিস্ট্যান্ট (Assistant), অ্যাডভোকেট (Advocate) অ্যাকাডেমিক (Academic), অ্যাডভোকেসি (Advocacy) ইত্যাদি। অবিকৃত বা সরলভাবে উচ্চারণে ‘এ‘ হয়। যেমন- এন্টার (Enter), এন্ড (End), এডিট (Edit) ইত্যাদি।

১২. ইংরেজি বর্ণ S-এর বাংলা প্রতিবর্ণ হবে ‘স‘ এবং sh, -sion, -tion শব্দগুচ্ছে ‘শ‘ হবে। যেমন- সিট (Seat/Sit), শিট (Sheet), রেজিস্ট্রেশন (Registration), মিশন (Mission) ইত্যাদি।

১৩. আরবি বর্ণ ش(শিন)-এর বাংলা বর্ণ রুপ হবে ‘শ‘ এবং ث(সা), س(সিন) ও ص(সোয়াদ)-এর বাংলা বর্ণ রুপ হবে ‘স‘। ث(সা), س(সিন) ও ص(সোয়াদ)-এর উচ্চারিত রুপ মূল শব্দের মতো হবে এবং বাংলা বানানের ক্ষেত্রে ‘স‘ ব্যবহার হবে। যেমন- সালাম, শাহাদত, শামস্, ইনসান ইত্যাদি। আরবি, ফারসি, ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষা থেকে আগত শব্দসমূহে ছ, ণ, ও ষ ব্যবহার হবে না।

১৪. শ ষ স :
তৎসম শব্দে ষ ব্যবহার হবে। খাঁটি বাংলা ও বিদেশি শব্দে ষ ব্যবহার হবে না। বাংলা বানানে ‘ষ‘ ব্যবহারের জন্য অবশ্যই ষত্ব-বিধান, উপসর্গ, সন্ধি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। বাংলায় অধিকাংশ শব্দের উচ্চারণে ‘শ‘ বিদ্যমান। এমনকি ‘স‘ দিয়ে গঠিত শব্দেও ‘শ‘ উচ্চারণ হয়। ‘স‘-এর স্বতন্ত্র উচ্চারণ বাংলায় খুবই কম। ‘স‘-এর স্বতন্ত্র উচ্চারণ হচ্ছে- সমীর, সাফ, সাফাই। যুক্ত বর্ণ, ঋ-কার ও র-ফলা যোগে যুক্তধ্বনিতে ‘স‘-এর উচ্চারণ পাওয়া যায়। যেমন- সৃষ্টি, স্মৃতি, স্পর্শ, স্রোত, শ্রী, আশ্রম ইত্যাদি।

১৫. সমাসবদ্ধ পদ ও বহুবচন রুপী শব্দগুলোর মাঝে ফাঁক রাখা যাবে না। যেমন- চিঠিপত্র, আবেদনপত্র, ছাড়পত্র (পত্র), বিদগ্রস্ত, হতাশাগ্রস্ত (গ্রস্ত), গ্রামগুলি/ গ্রামগুলো (গুলি/গুলো), রচনামূলক (মূলক), সেবাসমূহ (সমূহ), যত্নসহ, পরিমাপসহ (সহ), ক্রটিজনিত (জনিত), আশঙ্কাজনক, বিপজ্জনক, অনুগ্রহপূর্বক, উল্লেখপূর্বক (পূর্বক), প্রতিষ্ঠানভুক্ত, এমপিওভুক্ত, এমপিওভুক্তি (ভুক্ত/ভুক্তি), গ্রামভিত্তিক, এলাকাভিত্তিক, রোলভিত্তিক (ভিত্তিক), অন্তর্ভুক্তকারণ, এমপিওভুক্তকরণ, প্রতিবর্ণীকরণ (করণ), আমদানিকারক, রফতানিকারক (কারক), কষ্ঠদায়ক, আরামদায়ক (দায়ক), স্ত্রীবাচক (বাচক), দেশবাসী, গ্রামবাসী, এলাকাবাসী (বাসী), সুন্দরভাবে, ভালোভাবে (ভাবে), চাকরিজীবী, শ্রমজীবী (জীবী), সদস্যগণ (গণ), সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী (কারী), সন্ধ্যাকালীন, শীতকালীন (কালীন), জ্ঞানহীন (হীন), দিনব্যাপী, মাসব্যাপী, বছরব্যাপী (ব্যাপী) ইত্যাদি। এ ছাড়া যথাবিহিত, যথাসময়, যথাযথ, যথাক্রমে, পুনঃপুন, পুনঃপ্রকাশ, পুনঃপরীক্ষা, পুনঃপ্রবেশ, পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বহিঃপ্রকাশ শব্দগুলো একত্রে ব্যবহার করা হয়।

১৬. বিদেশি শব্দে ই-কার ব্যবহার হবে। যেমন- আইসক্রিম, স্টিমার, জানুয়ারি,ফেব্রয়ারি, ডিগ্রি, চিফ, শিট, শিপ, নমিনি, কিডনি, ফ্রি, ফি, ফিস, স্কিন, স্কলারশিপ, পার্টনারশিপ, ফ্রেন্ডশিপ, স্টেশনারি, নোটারি, লটারি, সেক্রেটারি, টেরিটরি, ক্যাটাগরি, ট্রেজারি, ব্রিজ, প্রাইমারি, মার্কশিট, গ্রেডশিট ইত্যাদি।

১৭. উঁয়ো (ঙ) ব্যবহার যোগে কিছু শব্দ। এক্ষেত্রে অনুস্বার (ং) ব্যবহার করা যাবে না। যেমন- অঙ্ক, অঙ্কন, অঙ্কিত, অঙ্কুর, অঙ্গ, অঙ্গন, আকাঙ্ক্ষা, আঙ্গুল/ আঙুল, আশঙ্কা, ইঙ্গিত, উলঙ্গ, কঙ্কর, কঙ্কাল, গঙ্গা, চোঙ্গা/চোঙা, টাঙ্গা, ঠোঙ্গা/ঠোঙা, দাঙ্গা, পঙক্তি, পঙ্কজ, পতঙ্গ, প্রাঙ্গণ, প্রসঙ্গ, বঙ্গ, বাঙালি/বাঙ্গালি, ভঙ্গ, ভঙ্গুর, ভাঙ্গা/ভাঙা, মঙ্গল, রঙ্গিন/রঙিন, লঙ্কা, লঙ্গরখানা, লঙ্গন, লিঙ্গ, শঙ্কা, শঙ্ক, শঙ্খ, শশাঙ্ক, শৃঙ্খল, শৃঙ্গ, সঙ্গ, সঙ্গী, সঙ্গাত, সঙ্গে, হাঙ্গামা, হুঙ্কার।

১৮. অনুস্বার (ং) ব্যবহার যোগে কিছু শব্দ। এক্ষেত্রে উঁয়ো (ঙ) ব্যবহার করা যাবে না। যেমন- কিংবদন্তী, সংজ্ঞা, সংক্রামণ, সংক্রান্ত, সংক্ষিপ্ত, সংখ্যা, সংগঠন, সংগ্রাম, সংগ্রহ, সংগৃহীত।
দ্রষ্টব্য: বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দ দুটি অনুস্বার (ং) দিয়ে লিখতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে তাই করা হয়েছে।

১৯. ‘কোণ, কোন ও কোনো‘-এর ব্যবহার:
কোণ: ইংরেজিতে Angle/Corner অর্থে।
কোন: উচ্চারণ হবে কোন্। বিশেষত প্রশ্নবোধক অর্থে ব্যবহার করা হয়। যেমন- তুমি কোন দিকে যাবে?
কোনো: ও-কার যোগে উচ্চারণ হবে। যেমন- যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও।

২০. বাংলা ভাষায় চন্দ্রবিন্দু একটি গুরুত্বপূর্ণ বর্ণ। চন্দ্রবিন্দু যোগে শব্দগুলোতে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করতে হবে; না করলে ভুল হবে। অনেক ক্ষেত্রে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার না করলে শব্দে অর্থের পরিবর্তন ঘটে। এ ছাড়া চন্দ্রবিন্দু সম্মানসূচক বর্ণ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। যেমন- তাহাকে>তাঁহাকে, তাকে>তাঁকে ইত্যাদি।

২১. ও-কার: অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়া পদ এবং বিশেষণ ও অব্যয় পদ বা অন্য শব্দ যার শেষে ও-কার যুক্ত না করলে অর্থ অনুধাবনে ভ্রান্তি বা বিলম্ভ সৃষ্টি হতে পারে এমন শব্দে ও-কার ব্যবহার হবে। যেমন- মতো, হতো, হলো, কেনো, ভালো, কালো, আলো ইত্যাদি। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া ও-কার ব্যবহার করা যাবে না। যেমন, ছিল, করল, যেন, কেন (কী জন্য), আছ, হইল, রইল, গেল, শত, যত, তত, কত, এত ইত্যাদি।

২২.বিশেষবাচক আলি প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই-কার হবে। যেমন- সোনালি, রুপালি, বর্ণালি, হেঁয়ালি, খেয়ালি, মিতালি ইত্যাদি।

২৩. জীব, -জীবী, জীবিত, জীবিকা ব্যবহার। যেমন- সজীব, রাজীব, নির্জীব, চাকরিজীবী, পেশজীবী, জীবিত, জীবিকা।

২৪. অদ্ভুত, ভুতুড়ে বানানে উ-কার হবে। এ ছাড়া সকল ভূতে ঊ-কার হবে। যেমন- ভূত, ভস্মীভূত, বহির্ভূত, ভূতপূর্ব ইত্যাদি।

২৫. হীরা ও নীল অর্থে সকল বানানে ঈ-কার হবে। যেমন- হীরা, হীরক, নীল, সুনীল, নীলক, নীলিমা ইত্যাদি।

২৬. নঞর্থক পদগুলো (নাই, নেই, না, নি) আলাদা করে লিখতে হবে। যেমন- বলে নাই, বলে নি, আমার ভয় নাই, আমার ভয় নেই, হবে না, যাবে না।

২৭. অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দে ই-কার ব্যবহার হবে। যেমন- সরকারি, তরকারি, গাড়ি, বাড়ি, দাড়ি, শাড়ি, চুরি, চাকরি, মাস্টারি, মালি, পাগলামি, পাগলি, বোমাবাজি, দাবি, হাতি, বেশি, খুশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, ফরাসি, ইংরেজি, জাপানি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, সিন্ধি, ফিরিঙ্গি, সিঙ্গি, ছুরি, টুপি, দিঘি, কেরামতি, রেশমি, পশমি, পাখি, ফরিয়াদি, আসামি, বেআইনি, কুমির, নানি, দাদি, বিবি, চাচি, মাসি, পিসি, দিদি, বুড়ি, নিচু।

২৮. ত্ব, তা, নী, ণী, সভা, পরিষদ, জগৎ, বিদ্যা, তত্ত্ব শব্দের শেষে যোগ হলে ই-কার হবে। যেমন- দায়িত্ব (দায়ী), প্রতিদ্বন্দ্বিতা (প্রতিদ্বন্দ্বী), প্রার্থিতা (প্রার্থী), দু:খিনী (দুঃখী), অধিকারিণী (অধিকারী), সহযোগিতা (সহযোগী), মন্ত্রিত্ব, মন্ত্রিসভা, মন্ত্রিপরিষদ (মন্ত্রী) প্রাণিবিদ্যা, প্রাণিতত্ত্ব, প্রাণিজগৎ, প্রাণিসম্পদ (প্রাণী) ইত্যাদি।

২৯. ঈ, ঈয়, অনীয়, প্রত্যয় যোগ ঈ-কার হবে। যেমন- জাতীয় (জাতি), দেশীয় (দেশি), পানীয় (পানি), জলীয়, স্থানীয়, স্মরণীয়, বরণীয়, গোপনীয়, ভারতীয়, মাননীয়, বায়বীয়, প্রয়োজনীয়, পালনীয়, তুলনীয়, শোচনীয়, রাজকীয়, লক্ষণীয়, করণীয়।

৩০. রেফের পর ব্যন্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন- অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কর্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য।

৩১. ভাষা ও জাতিতে ই-কার হবে। যেমন- আঙালি/বাঙ্গালি, জাপানি, ইংরেজি, জার্মানি, ইরানি, হিন্দি, আরবি, ফারসি ইত্যাদি।

৩২. ব্যক্তির ‘-কারী‘-তে (আরী) ঈ-কার হবে। যেমন- সহকারী, আবেদনকারী, ছিনতাইকারী, পথচারী, কর্মচারী ইত্যাদি। ব্যক্তির ‘-কারী‘ নয়, এমন শব্দে ই-কার হবে। যেমন- সরকারি, দরকারি ইত্যাদি।

৩৩. প্রমিত বানানে শব্দের শেষে ঈ-কার থাকলে -গণ যোগে ই-কার হয়। যেমন- সহকারী>সহকারিগণ, কর্মচারী>কর্মচারিগণ, কর্মী>কর্মিগণ, আবেদনকারী>আবেদনকারিগণ ইত্যাদি।

৩৪. ‘বেশি‘ এবং ‘-বেশী‘ ব্যবহার: ‘বহু‘, ‘অনেক‘ অর্থে ব্যবহার হবে ‘বেশি‘। শব্দের শেষে যেমন- ছদ্নবেশী, প্রতিবেশী অর্থে ‘-বেশী‘ ব্যবহার হবে।

৩৫.‘ৎ‘-এর সাথে স্বরচিহ্ন যোগ হলে ‘ত‘ হবে। যেমন- জগৎ>জগতে/জাগতিক, বিদ্যুৎ>বিদ্যুতে/বৈদ্যুতিক, ভবিষ্যৎ>ভবিষ্যতে, আত্নসাৎ>আত্নসাতে, সাক্ষাৎ>সাক্ষাতে ইত্যাদি।

৩৬. ইক প্রত্যয় যুক্ত হলে যদি শব্দের প্রথমে অ-কার থাকে তা পরিবর্তন হয়ে আ-কার হবে। যেমন- অঙ্গ>আঙ্গিক, বর্ষ>বার্ষিক,পরস্পর>পারস্পরিক, সংস্কৃত>সাংস্কৃতিক, অর্থ>আর্থিক, পরলোক>পারলৌকিক, প্রকৃত>প্রাকৃতিক, প্রসঙ্গ>প্রাসঙ্গিক, সংসার>সাংসারিক, সপ্তাহ>সাপ্তাহিক, সময়>সাময়িক, সংবাদ>সাংবাদিক, প্রদেশ>প্রাদেশিক, সম্প্রদায়>সাম্প্রদায়িক ইত্যাদি।

৩৭. সাধু থেকে চলিত রুপের শব্দসমূহ যথাক্রমে দেখানো হলো: আঙ্গিনা>আঙিনা, আঙ্গুল>আঙুল, ভাঙ্গা>ভাঙা, রাঙ্গা>রাঙা, রঙ্গিন>রঙিন, বাঙ্গালি>বাঙালি, লাঙ্গল>লাঙল, হইক>হোক, যাউক>যাক, থাউক>থাক, লিখ>লেখ, গুলি>গুলো, শুন>শোন, শুকনা>শুকনো, ভিজা>ভেজা, ভিতরে>ভেতর, দিয়া>দিয়ে, গিয়া>গিয়ে, হইল>হলো, হইত>হতো, খাইয়া>খেয়ে, থাকিয়া>থেকে, উল্টা>উল্টো, বুঝা>বোঝা, পূজা>পুজো, বুড়া>বুড়ো, সুতা>সুতো, তুলা>তুলো, নাই>নেই, নহে>নয়, নিয়া>নিয়ে, ইচ্ছা>ইচ্ছে ইত্যাদি।

৩৮. হয়তো, নয়তো বাদে সকল তো আলাদা হবে। যেমন- আমি তো যাই নি, সে তো আসে নি ইত্যাদি।
দ্রষ্টব্য: মূল শব্দের শেষে আলাদা তো ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে।

৩৯. ঙ,ঞ, ণ, ন, ং বর্ণের পূর্বে ঁ হবে না। যেমন- খান (খাঁ), চান, চন্দ (চাঁদ), পণ্ঞ, পন্ঞাশ (পাঁচ) ইত্যাদি।

৪০. -এর, -এ ব্যবহার:
=> চিহ্নিত শব্দ/বাক্য বা উক্তির সাথে সমাসবদ্ধ রুপ। যেমন- গুলিস্তান ‘ভাসানী হকি ষ্টেডিয়াম‘-এর সাইনবোর্ডে স্টেডিয়াম বানানটি ভুল।
=> শব্দের পরে যেকোনো প্রতীকের সাথে সমাসবদ্ধ রুপ। যেমন- বিসর্গ (ঃ)-এর সঙ্গে স্বরধ্বনি কিংবা ব্যন্জনধ্বনির যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গসন্ধি বলে।
=> বিদেশি শব্দ অর্থাৎ বাংলায় প্রতিবর্ণীকরণ নয় এমন শব্দের সাথে সমাসবদ্ধ রুপ। যেমন- SMS-এর মাধ্যমে টাকা পাটাতে হবে।
=>গাণিতিক শব্দের সাথে সমাসবদ্ধ রুপ। যেমন- ৫ এর চেয়ে ২ কম।
=> সংক্ষিপ্ত শব্দের সাথে সমাসবদ্ধ রুপ। যেমন- অ্যাগ্রো কোম্পানি লি.-এর সাথে চুক্তি।

এ ছাড়া পৃথক রুপে ব্যবহার করা যাবে না। যেমন- বাংলাদেশ-এর না লিখে বাংলাদেশের, কোম্পানি-এর না লিখে কোম্পানির, শিক্ষক-এর না লিখে শিক্ষকের, স্টেডিয়াম-এ না লিখে স্টেডিয়ামে, অফিস-এ না লিখে অফিসে লিখতে হবে।



ম-ফলা ও ব-ফলার উচ্চারণ:

ম-ফলার উচ্চারণ:
ক. পদের প্রথমে ম-ফলা থাকলে সে বর্ণের উচ্চারণে কিছুটা ঝোঁক পড়ে এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়।
যেমন- শ্নশান শঁশান্), স্মরণ (শঁরোন্)
কখনো কখনো ‘ম‘ অনুচ্চারিত থাকতে ও পারে। যেমন- স্মৃতি (সৃতি বা সৃঁতি)।
খ. পদের মধ্যে বা শেষে ম-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারণে সে বর্ণের দ্বিত্ব হয় এবং সামান্য নাসিক্যস্বর হয়। যেমন- আত্নীয় (আততিঁয়), পদ্ম (পদদো), বিস্ময় বিশ্শঁয়), ভস্মস্তূপ (ভশ্শোঁসতুপ্), ভস্ম (ভশশোঁ), রশ্মি (রোশ্শিঁ)।
গ. গ, ঙ, ট, ণ, ন, বা ল বর্ণের সঙ্গে ম-ফলা যুক্ত হলে, ম-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যুক্ত ব্যন্জনের প্রথম বর্ণের স্বর লুপ্ত হয়। যেমন- বাগ্মী (বাগিমি), যুগ্ম (যুগমো), মৃন্ময় (মৃনময়), জন্ম (জনমো), গুল্ম (গুলমো)।

ব-ফলার উচ্চারণ:
ক. শব্দের প্রথমে ব-ফলা যুক্ত হলে উচ্চারনে শুধু সে বর্ণের উপর অতিরিক্ত ঝোঁক পড়ে। যেমন- ক্বচিৎ (কোচিৎ), দ্বিত্ব (দিততো), শ্বাস (শাশ), স্বজন (শজোন), দ্বন্দ্ব (দনদো)।
খ. শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা যুক্ত হলে যুক্ত ব্যন্জনটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন- বিশ্বাস (বিশশাশ), পক্ব (পককো), অশ্ব (অশশো)।
গ. সন্ধিজাত শব্দে যুক্ত ব-ফলায় ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন- দিগ্বিজয় (দিগবিজয়), দিগ্বলয় (দিগবলয়)।
ঘ. শব্দের মধ্যে বা শেষে ‘ব‘ বা ‘ম‘-এর সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন- তিব্বত (তিববত), লম্ব (লমবো)।
ঙ. উৎ উপসর্গের সঙ্গে ব-ফলা যুক্ত হলে ব-এর উচ্চারণ বহাল থাকে। যেমন- উদ্বাস্ত (উদবাসতু), উদ্বেল (উদবেল)।



এই সবগুলো যে মুখস্ত করতে হবে এমন না, আসলে কিভাবে বাক্যের মধ্যে পরিবর্তন আসছে আর সেটাকে আরো নিখুত করতে আমাদের এইসব ব্যাপার মাথায় নিয়ে নিয়মিত অনুশীলন করে যেতে হবে। বিশেষত বানানের ক্ষেত্রে যে কোন একটি বা বাংলা একাডেমির অভিধানটি অনুসরণ করলে ভাল হয়। কারণ আমরা অনেকেই এখন পর্যন্ত অশূদ্ধ শব্দটাকেই শুদ্ধ মনে করে আসিছি। যেমন- মনপূত ভুল হবে, শূদ্ধ মনঃপুত, মাঝেমধ্যে ভুল হবে এখানে হতে হবে মাঝে মধ্যে!!! তাই আমিই ভাল জানি ভেবে অন্যকে নিরুতসাহিত করলে চলবে না বরং অনেকাংশে নিজেকেও শুধরিয়ে নিতে হয়। এটাই স্বাভাবিক। উপরের লেখার ব্যাকরণ অংশটি একটি ইবুক থেকে টাইপ করেছি, সেখানে তত্ত্বসূত্র উল্লেখ করা হয়েছে নেটের বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত। বইটির নাম ইংরেজিতে Easy Bangla Banan Technique. সেখানে ভলা আছে কোনো লেখা বা রচনার বিষয় যতো আকর্ষণীয় বা তাৎপর্যপূর্ণই হোক না কেন, তাতে ব্যবহৃত শব্দের বানান যদি ভুল কিংবা বাক্যের গঠন যদি ক্রটিপূর্ণ হয়, তবে সে লেখা পাঠককে কখনোই আকর্ষণ করতে পারে না; বরং বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। এতে লেখকের দুর্বলতাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোনো কিছু ভুলের ঊর্ধ্বে না হলেও সেই ভুলের অবশ্যই একটা মাত্রা থাকা উচিত। তাই কোন কিছু লেখার পূর্বে তার শুদ্ধতা সম্পর্কে লেখককে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। শব্দের নির্ভুল বানান ও রচনারীতির জন্যিএকজন শিক্ষার্থীকে এ সংক্রান্ত ব্যাকরণেন নিয়মগুলো যথাযথভাবে জানতে হবে। আর এটা জানতে পারলেই নির্ভুল শব্দ ও বাক্যের সমন্বয়ে মানসম্পন্ন লেখা তৈরি করা সম্ভব হবে। শূদ্ধ লেখার সুবিধার্থে আরো কিছু নিয়ম তুলে ধরা হল:

বানান ভুলের কারণ:
নিম্নোক্ত কারণগুলোর জন্যেই সাধারণত এ ভুলগুলো হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকলে ভাষার লিখিতরূপে অনেকাংশেই শুদ্ধতা বজায় রাখা সম্ভব।
১। একই ধ্বনির জন্য একাধিক বর্ণ থাকার কারণেই (যেমন: ই/ঈ, উ/ঊ, ন/ণ, জ/য, ত/ৎ, শ/স/ষ, ঙ/ং) বাংলা শব্দের বানানে বেশি ভুল হয়।
২। ণ-ত্ব এবং ষ-ত্ব বিধান না জানার কারণেও অনেক বানান ভুল হয়।
৩। উপসর্গ, সমাস, সন্ধি ও প্রত্যয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবেও অনেক বানান ভুল হয়।
৪। একই ধরনের একাধিক ব্যন্জনবর্ণের (যেমন: জ/ঝ, দ/ধ, ব/ভ, র/ড়/ঢ়, স/ষ/শ) প্রয়োগ রীতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণেও কিছু বানান ভুল হয়।
৫। সমোচ্চারিত শব্দের অর্থগত বিভ্রন্তির কারণেও কিছু বানান ভুল হয়।
৬। সাধু ও চলতি ভাষারীতির মিশ্রণের কারণেও বাক্য শুদ্ধ হয় না।
৭। আন্ঞলিক উচ্চারণের প্রভাব এবং শব্দের শুদ্ধ উচ্চারণ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেও বাক্য ভুল হয়ে থাকে।
৮। শব্দের যথাযথ অর্থ সম্পর্কে ধারণা না থাকলে অনেক সময় বাক্যে শব্দের অপপ্রয়োগ ঘটে। বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ চিহ্নিত করতে না পারায় সাধারণত এ ধরণের ভুল হয়।
৯। প্রবাদ প্রবচনের বিকৃতিজনিত কারণেও অনেক সময় বাক্য ভুল হয়।

শব্দের বানান ও বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে এ ভুলগুলোই আমাদের অশুদ্ধির মূল কারণ। তবে এক্ষেত্রে বানানজনিত ভুলগুলোই বেশি হয়। তাই এ বিষয়টি মনে রেখে ১৯৩৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমী বানান সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এদের দ্বারা প্রণীত নিয়ম থেকে কিছু নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো:

১। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস . ‍ৃত শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে।
২। যেসব তৎসম শব্দে ই, ঈ বা উ, ঊ উভয় শুদ্ধ সেসব শব্দে কেবল ‘ই‘ বা ‘উ‘ এবং তার কার-চিহ্ন হিসেবে ‘‘‘ ও ‘ু‘ ব্যবহৃত হবে। যেমন: পাখি, বাড়ি, চুন, পুব ইত্যাদি।
৩। রেফ (র্) এর পর ব্যন্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন: অর্চনা, কার্যালয়, চর্চা, জর্দা ইত্যাদি।
৪। ক, খ, গ, ঘ পরে থাকলে পদের অন্তস্তিত ম্ স্থানে অনুস্বার (ং) লিখতে হবে। যেমন: অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, সংঘটন ইত্যাদি। তবে বিকল্পে ঙ লেখা যাবে। এছাড়া ‘ক্ষ‘-এর পূর্বে সর্বত্র ঙ হবে। যেমন: আকাঙ্ক্ষা।
৫। সকল অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি এবং মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ এবং এদের কার চিহ্ন হিসেবে ‘ি‘ এবং ‘ু‘ ব্যবহৃত হবে। স্ত্রীবাচক ও জাতীবাচক শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। যেমন: শাড়ি, গাড়ি, হিন্দি, আরবি, ফারসি, জাপানি, ইংরেজি ইত্যাদি।
৬।‘আলি‘ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে সব ক্ষেত্রেই ই-কার হবে। যেমন: বর্ণালি, স্বর্ণালি, মিতালি, গীতালি, সোনালি, রূপালি, খেয়ালি ইত্যাদি।
৭। সর্বনাম পদরূপে এবং বিশেষণ বা ক্রিয়া বিশেষণ পদরূপে ‘কী‘ শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লিখতে হবে। যেমন: কী করছ? কী খাচ্ছ? কী আনন্দ! কী দুরাশা!, কী শোভা! কী ছায়া!, কী বড় ইত্যাদি।
৮। অব্যয় পদরূপে ‘কি‘ শব্দটি ই-কার দিয়ে লিখতে হবে। যেমন: ভাত খেয়েছো কি? তুমি কি গান গাইতে পার? আপনি যাবেন কি?
৯। শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন: কার্যত, প্রধানত, মূলত ইত্যাদি।
১০। হস্-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। যেমন: মদ, কাত, ফটফট, কলকল ইত্যাদি।
১১। ঊর্ধ্ব-কমা যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। যেমন: বলে, চারশ, দুজন ইত্যাদি।
১২। সমাসবদ্ধ পদগুলো একসঙ্গে লিখতে হবে, মাঝখানে ফাঁক রাখা চলবে না। যেমন: সংবাদপত্র, সাপলুডু, সমস্যাপূর্ণ, নেশাগ্রস্ত ইত্যাদি।

গতকাল ঠিক ১২ টা বাজতে পাঁচ মিনিট থাকতেই কম্পিউটার আমাকে নোটিফাই করে যে আজকে বিশ্ব মা দিবস! আসলে এইসব বিশেষ দিনগুলার প্রতি আমার সবসময়ই উদাসিনতা। আজকেও তার ব্যতিক্রম নয় শুধু এই লেখাটা লিখেছি আজকের দিন উপলক্ষ্যে সব নারীর তরে মায়ের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। তাই পোস্ট আর দীর্ঘ না করে চলেন ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধানটি একটু দেখে নেই:

ণ-ত্ব বিধান:
তৎসম শব্দের বানানে ‘ণ‘ ব্যবহারের সঠিক নিয়মকেই ণ-ত্ব বিধান বলে। এ বিধান অনুযায়ী ‘ণ‘ ব্যহারের ক্ষেত্রগুলো নিচে চিহ্নিত করা হল-
১. তৎসম শব্দের বানানে ঋ ও ঋ-কারের পর সাধারণত মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন: ঋণ, তৃণ, মৃণাল, ঘৃণা ইত্যাদি।
২. তৎসম শব্দের বানানে র, রেফ ও র-ফলার পর সাধারণত মূর্দন্য-ণ হয়। যেমন: কারণ, ধারণ, মরণ, কর্ণ, চূর্ণ, দীর্ণ, পর্ণ, ঘ্রাণ, প্রণয়, ব্রণ ইত্যাদি।
৩. তৎসম শব্দের বানানে ষ-এর পর সাধারণত মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন: ঘর্ষণ, বর্ষণ, দূষণ, ভীষণ, ইত্যাদি।
৪. তৎসম শব্দের বানানে ক্ষ-এর পর সাধারণত মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন: ক্ষণ, ক্ষণিক, ক্ষীণ, ক্ষুণ্ণ ইত্যাদি।
৫. তৎসম শব্দের বানানে ট-বর্গীয় বর্ণের সাথে যুক্তব্যন্জন হিসেবে সবসময় ‘ণ‘ বসে। যেমন: কণ্টক, ঘণ্টা, কণ্ঠ, লুণ্ঠন ইত্যাদি।
৬. তৎসম শব্দের বানানে উত্তর, পর, পার, রবীন্দ্র, চন্দ্র এবং নার-শব্দগুলোর পরে ‘অয়ন‘ যুক্ত হলে সাধিত শব্দে ‘দমত্ম্য-ন‘ ‘মূর্ধন্য-ণ‘তে রূপান্তর হয়। যেমন: উত্তর+অয়ন=উত্তরায়ণ, নার+অয়ন=নারায়ণ, পর+অয়ন=পরায়ণ ইত্যাদি।
৭. ঋ-কার, র-ফলা, র, ষ, বা ক্ষ-এর পর যদি য, য়, হ অথবা ক-বর্গীয় (ক খ গ ঘ ঙ), প-বর্গীয় (প ফ ব ভ ম) বা অন্য কোনো স্বরধ্বনি থাকে তবে তার পরে সাধারণত ‘মূর্ধন্য-ণ‘ হয়। যেমন: কৃপণ, গৃহিণী, রোপণ, পরায়ণ, অগ্রহায়ণ ইত্যাদি।
ব্যতিক্রম: গরীয়ান, বর্ষীয়ান, শ্রীমান।

✎ এমন কিছু শব্দ আছে যেখানে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ বসে। এগুলো কোন নিয়ম অনুসরণ করে না। এ জাতীয় শব্দগুলো মনে রাখার জন্য একটি চমৎকার ছড়া রয়েছে-

চাণক্য মাণিক্য গণ বাণিজ্য লবণ মণ
বেণু বীণা কঙ্কণ কণিকা
কল্যাণ শোণিত মণি স্থাণু গুণ পুণ্য বেণী
ফণী অণু বিপণি গণিকা।
আপণ লাবণ্য বাণী নিপুণ ভণিতা পাণি
গে.ণ কোণ ভাণ পণ শাণ চিক্কণ নিক্কণ
তূণ কফোণি বণিক গুণ
গণনা পিণাক পণ্য বাণ।


✎ [‘ক্ষ‘ মূলত বাংলা বর্ণ নয়। এটি ক এবং ষ এর যুক্ত রূপ। তাই এর অভ্যন্তরে ‘ষ‘ থাকার কারণেই এর পরে ত্ম মূর্ধন্য-ণ ব্যবহৃত হয়]
✎ নিচের ছড়াটি থেকে ণ-ত্ব বিধানের একটি নিয়ম মনে রাখা সহজ হয়: ঋকার রকার ষকার পর নকার যদি থাকে;

খ্যাঁচ করে তার কাটব মাথা
কোন্ বাপ তারে রাখে।


[নকার (ন)-এর মাথা কাটা মানে মাত্রা না-দেওয়া, আর তার অর্থই হল মূর্ধন্য-ণ]

বিশেষ জ্ঞাতব্য:
১. প্র, পরি, নির উপসর্গগুলোর পরে সাধারণত ‘ণ‘ ব্যবহৃত হয়। যেমন: প্রণাম, প্রণয়, পরিণয়, পরিণতি, নির্ণয় ইত্যাদি। (অতিরিক্ত)
২. যুক্তব্যন্জনের ক্ষেত্রে ত, থ, দ, ধ-এই চারটি বর্ণের সঙ্গে সবসময় ‘ন‘ ব্যবহৃত হয়। যেমন: অমত্ম, কামত্ম, প্রামত্ম, পমা, অন্দর, খন্দ, গ্রম, ক্রন্দন ইত্যাদি।
৩. বিদেমি শব্দ, ক্রিয়াপদ বা নামের বানানের ক্ষেত্রে কখনো ‘ণ‘ হয় না। অর্থাৎ এসকল ক্ষেত্রে ‘মূর্ধন্য-ণ‘ না হয়ে ‘দমত্ম-ন‘ ব্যবহৃত হয়। যেমন: গভর্নর, নিচ্ছেন, নিরেশ ইত্যাদি।
৪, সমাসবদ্ধ পদে সাধারণত ‘মূর্ধন্য-ণ‘ না হয়ে ‘দমত্ম-ন‘ হয়। যেমন: ত্রিনয়ন, সর্বনাম, দুর্নীতি, দুর্নাম ইত্যাদি।
৫. অ-তৎসম শব্দে (অর্থাৎ তদবভ শব্দে) সর্বদা ‘দমত্ম-ন‘ হয়। যেমন: ঝরনা, পুরান (পুরাতন), ধরন ইত্যাদি।


ষ-ত্ব বিধান:
তৎসম শব্দের বানানে ‘ষ‘ ব্যবহারের সঠিক নিয়মকে ষ-ত্ব বিধান বলে। বাংলা ভাষায় শ, ষ, স থাকার কারণে বানানের ক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়। ষ-ত্ব বিধানের নিয়মগুলো মনে রাখলে এসব সমস্যা থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়।
✎ নিয়মাবলি:
১. তৎসম শব্দের বানানে অ, আ ছাড়া অন্য সব স্বরবর্ণের পর সাধারণত ‘মূর্ধন্য-ষ‘ হয়। যেমন: ইষু, ঈষৎ, উষ্ঞ,ঊষা, ঊষর, এষা, এষণ,ঐষিক, ওষ্ঠ, ঔষধ ইত্যাদি।
২. তৎসম শব্দের বানানে আ-কার ছাড়া অন্য সব কারের র সাধারণত ‘মূর্ধন্য-ষ‘ হয়। যেমন: জিগীষা, ভীষণ, সুষম, ভূষণ, তুষার, দ্বেষ, বৈষ্ঞব, পেষ ইত্যাদি।
৩. তৎসম শব্দের বানানে রেফ (), র-ফলা (্র), অথবা র-এর পর সাধারণত ‘মূর্ধন্য-ষ‘ হয়। যেমন: বর্ষণ, কর্ষণ, মহাকর্ষ, ভ্রষ্ট, ভ্রষ্টা, শ্রেষ্ঠ, স্রষ্টা, বরিষণ ইত্যাদি।
৪. তৎসম শব্দের বানানে ঋ বা ঋ-কার (ৃ)-এর পর সাধারণত ‘মূর্দন্য-ষ‘ হয়। যেমন: ঋষি, ঋষভ, তৃষ্ঞা, দৃষ্টান্ত, ধৃষ্টতা ইত্যাদি।
৫. তৎসম শব্দের বানানে ট-বর্গীয় বর্ণ বিশেষ করে ট ওঠ বর্ণ দুটির সাথে যুক্ত অবস্থায় সবসময় ‘মূর্ধন্য-ষ‘ হয়। যেমন: বৃষ্টি, সৃষ্টি, মিষ্টি, শিষ্ট, অনিষ্ট, বিশিষ্ট, অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
৬. তৎসম শব্দে ই-কারামত্ম (অধি, অভি, প্রতি, পরি ইত্যাদি) এবং উ-কারামত্ম (অনু, সু ইত্যাদি) উপসর্গের পর সাধারণত ‘মূর্ধন্য-ষ‘ হয়। যেমন: অধিষ্ঠান, অভিষেক, প্রতিষ্ঠান, পরিষদ, অনুষদ, অনুষঙ্গ ইত্যাদি।
৭. সম্ভাষণসূচক শব্দের শেষে ‘আসু‘ ধ্বনির ক্ষেত্রে ‘স‘ হলেও ‘এষু‘ ধ্বনির ক্ষেত্রে সাধারণত মূর্ধন্য-‘ষ‘ হয়। যেমন: প্রিয়বরেষু, সুজনেষু, প্রীতিভাজনেষু, শ্রীচরণেষু ইত্যাদি।

✎ বিশেষ জ্ঞাতব্য:

১. বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে St উচ্চারণ হলে ‘স্ট‘ লিখতে হবে। যেমন: স্টোর, স্টেশন, স্টল, স্টিল।
২.অতৎসম শব্দের বানানে কখনো ‘ষ‘ ব্যবহৃত হয় না। যেমন: স্টেশন, স্টুডিও, স্টার্ট ইত্যাদি।
৩.আরবি, ফারসি, ইংরেজি ইত্যাদি বিদেশি শব্দে কখনো মূর্ধন্য ‘ষ‘ হবে না। এসব শব্দের মূল উচ্চারণ অনুযায়ী ‘দমত্ম-স‘ অথবা ‘তালব্য-শ‘ হবে। যেমন:
আরবি: নকশা, মজলিস, ফসল।
ইংরেজি: কমিশন, মেশিন ও সিলেবাস।
ফার্সি: খুশি, খোশ, চশমা, রসিদ ও খানসামা।


সবাইকে বিশ্ব মা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি। বছরে একদিন নয় বরং এই বিশেষ দিনকে ক্ষেন্দ্র করে প্রতিদিন যেন মায়ের জন্য ভালোবাসা বরাদ্দ রাখি, এই কামনা রইল সবার প্রতি। বাংলা বানান রীতি নিয়ে আরো কিছু বই আছে চাইলে ইন্টারনেট থেকে ইবুক ডাউনলোড করতে পারেন। আমার সংগ্রহ থেকে কয়েকটি নাম দিচ্ছি:
১. প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম (বাংলা একাডেমি)।
২. বাংলা উচ্চারণ-কোষ ।। ধীরানন্দ ঠাকুর সংকলিত
৩. বাংলা একাডেমী বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।
৪. সাহিত্য সাংসদ বাংলা ইংলিশ ডিকশনারি।
এছাড়াও আরেকটি বই চাইলে পড়ে নিতে পারেন- রবীন্দ্রনাথের ভাষাচিন্তা লিখেছেন ড. সিরাজউদ্দিন আহমেদ।
(সবাই সুস্থ্য থাকেন আর অনেক বেশি ভাল থাকেন, এই কামনা রইল)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৪৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×