somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ প্রেমের বছর পেড়িয়ে পর্ব ১

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গেল বছর এই দিনে এক পশলা বৃষ্টির পর জেরিনকে প্রথম দেখে জনি। মসজিদের কার্নিশের নিচে দাড়িয়ে জনি, জেরিন জনির থেকে ২০০ ফুট দূরে দাড়িয়ে ডিঊটি করছে। জেরিনকে প্রথম দেখে জনি ভ্রুক্ষেপ করে নাই, তবে কিছুক্ষন পরেই দ্বিতীয় বার দেখা হয়। কাজের কথা দিয়ে আলাপ শুরু হয় ,
জেরিনঃ কাকে চান?
জনিঃ এস আই জহির আছেন?
জেরিনঃ জী আছে। এখানে একটু দাঁড়ান, আমি আসছি (বলেই জনিকে সিঁড়িতেই দাড় করিয়ে রেখে ভেতরে চলে গেল, ১ মিনিট পর ফিরে এল)
ততক্ষণে জনি এস আই জহিরকে ফোন দিয়ে কথা বলছে, জনিকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
জেরিনঃ ওখানে গিয়ে বসেন, স্যার আসতে একটু দেড়ি হবে।
জনিঃ আমি স্যারের সাথে মোবাইলে কথা বলছি, তিনি আসতেছেন।

গেল কদিন ধরেই জনির কাজ নেই, মাসখানেক হলো সে সদর হাসপাতালে ইন্টারনিং শেষ করেছে। সদ্য পাশ করা ডাক্তার, চাচর আদেশে সে থানায় এসেছে। উনি ব্যাবসায়ী মানুষ , খুব ব্যাস্ত সবসময় তবে গত কদিন হাসপাতালে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত। এই হাসপাতালেই জনি ১ বছর ইন্টারনিং করেছে। সেদিন চাচার গাড়িটা এক্সিডেন্ট করার পর থেকে জনি আবার হাসপাতালে। হাসপাতালে তার বিরক্ত লাগে, বাবার সপ্ন পূরণ করতে সে মেডিকেল এ পড়েছে, চাকরি করার ইচ্ছা নেই তার। আত্নীয় স্বজন , চেনা-জানা মানুষের উপকার করেই সে তৃপ্তি পায়। ইদানিং সে বিরক্ত, মানুষ উপকার পেলে কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুলে যায়। ভুলে যায় অসময়ের উপকারি মানুষটাকে। আপনজনদের ঝামেলা জনি ফেলে দিতে পারে না। তাই ৩ দিন না খেয়ে না ঘুমিয়ে হাসপাতালে কাটিয়ে এখন সে থানায়। জনি যে সদর হাসপাতালে ইন্টারনিং করেছে গাড়িটা তার পাশেই এক্সিডেন্ট করেছে। গাড়ি এখন থানায়, থানা থেকে গাড়ি ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব জনিকেই দেওয়া হয়েছে।

জেরিনঃ গাড়িটা আপনার? কদিন ধরে এক্সিডেন্ট বেশ বেড়েছে, কি যে অবস্থা !
জনিঃ আমার না আমাদের, এই গাড়িটা আমার চাচার। ভাগ্য খারাপ হলে যা হয়, এক্সিডেন্ট তো আর বলে কয়ে হয় না । আপনি এখানে নতুন?
জেরিনঃ কেন? আগেও এসেছেন এখানে এসেছেন? আমি ৫-৬ মাস ধরে এখানে।
জেরিন সদ্য ট্রেইনিং শেষ করে ৫-৬ মাস হলো চাকরি করছে , হাইওয়ে পুলিশে জয়েন করার আগে সে ছিল ভিতু প্রকৃতির সহজ সরল গ্রামের মেয়ে। রংপুরের মেয়ে জেরিন, রংপুরেই তার বেড়ে ওঠা । তার বাবাও বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করতো , বাবাকে দেখে দেখেই সে নিজেও পুলিশে চাকরি করার সপ্ন দেখত । তার সপ্ন আজ সত্যি, তবে চোখে মুখে শূন্যতা। জেরিন তাকিয়ে আছে জনির দিকে , জনি জেরিনের চোখে তাকিয়ে ডুবে গেল ভাবনার গহিন সাগরে।
হঠাৎ জনির মোবাইল বেজে ওঠে , এস আই জহিরের ফোন। আমার আসতে আরও দেড়ি হবে, আপনি টাকা-পয়সা নিয়ে আসেছেন ? আপনার চাচার সাথে কথা বলেছি, রোগীদের অবস্থা নাকি ভালো? আপনার চাচা তো যে পরিমান টাকার কথা বল্লো তাতে রেকার বিল ও হয় না। আমরা যে ৫-৬ জন মানুষ আমাদের গাড়িতে করে ১০-১২ জন আহত মানুষ হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, আমাদের তো কিছু খরচ দিতে হবে নাকি ? জনি, যথাযথ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জহিরকে নিজের সাংবাদিক পরিচয় দিলেন, সামনা সামনি বসে আলোচনা করতে এসেছেন বলে জানালেন। জহির জানালেন, আজ তো সন্ধ্যা হয়েই গেলো। আগামিকাল সকাল ১০ টার দিকে আসেন।
জেরিনঃ আপনি সাংবাদিক?
জনিঃ হুম
জেরিনঃ কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল, কিসের? টিভি/ পেপার?
জনি তার সাংবাদিক পরিচয়পত্র বের করে জেরিনের হাতে দিল। জেরিন একটু নেড়েচেড়ে দেখেই আইডি কার্ড জনিকে ফেরত দিল। জনি খানিকক্ষণ আলাপ সেরে জেরিনের মোবাইল নম্বর ও ফেসবুক আইডি চাইলেন, জেরিন নাম্বার দিয়ে বললেন এই নাম্বারেই আমার ফেসবুক খোলা ফেসবুকে নাম " ফেরদৌস জেরিন"।
পরদিন সকালে থানায় যাবার সময় জেরিনকে কল করে নাম্বার বন্ধ পেল, বেশ কয়েকবার ট্রাই করে বুঝে ফেললেন ভুল নাম্বার দিয়েছে।
জনি ফেসবুকে খুজতে শুরু করলো জেরিনকে, কিন্তু না হাজার হাজার ফেবু আইডির ভীরে জেরিনকে খুজে পেল না জনি।
থানায় গিয়ে দেখলো, জেরিনের ডিউটি এর জায়গায় অন্য একজন মেয়ে পুলিশ ডিউটি করছে।
এস আই জহির এর সাথে আলাপ আলোচনা করে ১৭০০০ টাকায় ঝামেলা মিটিয়ে জনি চলে গেল।
সবাই নিজ নিজ জীবনে ব্যাস্ত, বাস্তময় হয়ে চলে গেল ৪-৫ মাস! এই চার মাসে জনি নানান সময় নানান ভাবে ভেবেছে জেরিনকে নিয়ে।

কদিন পরেই জনি বিদেশ যাচ্ছে, জেরিনের ভাবনা তার মনে ইদানিং অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে। কিবুঝে সে জেরিনকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখে ফেলল, চিঠির সাথে জনির ডাইরির ভেতর থাকা শুকনো গোলাপটা খামে ভরে। বেনামি চিঠি, প্রেরকের নাম নেই। শুধু প্রাপকের নাম ঠিকানা লেখা খামটি কুরিয়ারে করে জেরিনের নামে থানার ঠিকানায় চিঠি দিয়ে জনি জেরিনকে মন থেকে মুছে ফেলে। কি লেখা ছিল চিঠিতে? চিঠি কি পৌছাবে ?।
২ মাস হয়ে গেলো জনি বিদেশে। তার মনের কোনে বেঁচে আছে জেরিন। মাঝে মধ্যে জনিকে জানান দেয় জেরিন, ভাবনাগুলো গভীর হয় , জেরিনের চেহারা ঝাপসা হয়ে ভেসে ওঠে জনির মনে । প্রবাস জীবনে একাকীত্বই একমাত্র সঙ্গী । জেরিনের ভাবনা তাকে দেশে দেশে যাবার হাতছানি দেয়। (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×