হেঁটে চলছি রাস্তা ধরে । উদ্দেশ্যহীন একা । রাস্তাটি আমার অতি পরিচিত । এই রাস্তার একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাস্তায় লোক চলাচল কম । মাঝে মাঝে দু একজন লোক আর দু একটা গাড়ি দেখা যায় । রাস্তার দুপাশটা ফাঁকা । এই রাস্তাটা আমার খুব পছন্দের । কারণ আমার জীবনের স্মরণীয় কিছু ঘটনা ঘটেছে এই রাস্তাকে ঘিরে । কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হাঁটছি । হঠাত থেমে পরলাম । কোন এক ধনকুবেরের গাড়ির গ্লাসে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমার চোখে এসে পড়ল । গাড়িটা আমার সামনে এসেই থেমে পড়লো । ভাবলাম , কি ঝামেলায় পড়া গেল । এখন নিশ্চয় কোন জায়গার ডিরেকশান দিতে হবে । গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম । গ্লাস নামছে । ভাবছি কোন এক অপরূপ পরি টাইপ মেয়ের মুখ দেখব । এটা ছিল কামাল নামক জনৈক বাক্তির গল্পের শুরু । আমরা এখন ৩০ মিনিট অতিতে ফিরে যাব ।
ভার্সিটির ২য় বর্ষের ছাত্রী মিমি । বাবা মার আদরের একমাত্র সন্তান । চঞ্চল একটা মেয়ে । ওর শখের কাজগুলোর একটা হচ্ছে বাবা মা যা করতে নিষেধ করেন সেগুলো করা । মিমি চেইন স্মকার । মাঝে মাঝে গাজাও খায় । মদেও তার আপত্তি নেই । তার কিছু ছেলে বন্ধু আছে । ওদের সাথে মিশে শুধু এগুলো খাওয়ার জন্য । এত কিছু করার পরও মেয়েটার জীবনে প্রেম আসেনি । তো যাই হোক , আজ ওর একটা বিশেষ প্ল্যান আছে । আজ মিমি অপরিচিত একজনকে লিফট দিবে ।
মিমিকে পছন্দ করে ক্যাম্পাস এর ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মুরাদ । মিমি কে সে প্রপোজ করেছিল । কিন্তু মিমি রাজি হয়নি । মুরাদ মিমিকে পাবার জন্য মিমির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আনিকার সাথে বন্ধুত্ব করে । মিমি আবার সব কথাই আনিকাকে বলে । আনিকা মিমিকে যতই বলে এসব ছেড়ে দিতে তাতে কোন লাভ হয় না । আনিকা মিমির প্ল্যান শুনে তা মুরাদকে বলে । মুরাদ ওর এক বন্ধুকে আনিকার বলা রাস্তায় দাঁড় করায় ।
এবার আমরা বর্তমানে ফিরে আসি । মেয়েটা পরির মত না হলেও একেবারে খারাপ না ।
' জইঙ্কাকান্দির রাস্তাটা কোথায় ?' , মেয়েটা বলল ।
' এই তো, ওদিকে ।'
' আপনি কোথায় যাবেন ?'
' কোথাও না । এমনি হাঁটছি ।'
' আমার সাথে যাবেন ?'
' কোথায় ?'
মেয়েটা একটু হাসল । তারপর বলল , ' জইঙ্কাকান্দি ।'
আমি কিছুক্ষণ ইতস্তত করে হ্যাঁ বলে দিলাম ।
শুরু হল আমাদের যাত্রা । মেয়েটা ড্রাইভ করছে আর আমি বসে আছি । মুরাদের কথা শুনে মেয়েটা সম্পর্কে খারাপ ধারণা করলেও এখন মেয়েটাকে ভালই মনে হচ্ছে । মুরাদের প্ল্যান ছিল আমি গাড়িতে উঠা মাত্র ওকে আমরা কোথায় যাচ্ছি তা জানিয়ে মেসেজ দিব । তারপর সে কোথায় থাকবে তা জানাবে আর আমি সেখানে গিয়ে গাড়ি থামাতে বলব । আর তখন মুরাদ এসে ওকে কিডন্যাপ করবে । আমি ভেবেছিলাম মুরাদের কথা মত মেয়েটাকে একটু সাইজ করে ছেড়ে দিব । কিন্তু ভাবলাম মুরাদ মেয়েটাকে এত সহজে ছাড়বে না । কারণ এই মেয়েটা ওকে ক্যাম্পাসে অপমান করেছিল । আমি মুরাদকে অন্য একটা ঠিকানা দিলাম । তারপর ও মেসেজ দেবার পর মোবাইল বন্ধ করে দিলাম ।
এর মাঝেই আমরা গল্প করে চলেছি ।
' আপনি একা একা হাটছিলেন কেন ?'
বলতে ইচ্ছে করছিল যে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম । কিন্তু বললাম না ।
' মন খারাপ ছিল, তাই ।'
মেয়েটা একটা সিগারেট ধরাল ।
' আপনি সিগারেট খান কেন ?', আমার প্রশ্ন ।
' কেন আপনি খান না ?'
' না ।'
আমার উত্তর শুনে মেয়েটা সিগারেট জানালা দিয়ে ফেলে দিল ।
' প্রব্লেম ছিল না ।'
' নন-স্মকারদের সামনে সিগারেট খেতে আমার অস্বস্তি লাগে ।'
' ঠিক আছে । এবার বামে ।'
' ও ; আপনার নামটাই তো জানা হল না ।'
' আকাশ ।' আসল নামটা বললাম না ।
' আমি পারু ।'
বুঝলাম না মেয়েটা আসল নাম কেন বলল না । ওর নাম তো মিমি । ভাবলাম কিছু টের পেয়ে গেল নাতো ।
' আপনি কার কাছে যাবেন ?'
' কারও কাছে না ।'
' তাহলে কেন এসেছেন?'
' এমনি ঘুরতে ।'
' ও আচ্ছা । সামনে আর রাস্তা নেই । এবার হেঁটে যেতে হবে ।'
' চলুন হাঁটি । আপনার কোন সমস্যা আছে ?'
' চলুন । '
এভাবেই শুরু হল আমাদের দুজনের পথচলা । আমি চালচুলোহীন এক ছেলে । যার বলতে গেলে কিছুই নেই । টাকার অভাবে খারাপ পথে পা বাড়িয়েছিলাম । সে পথেও যেতে পারিনি । এই মেয়ের মায়ায় পা দিলাম । যা সত্যিই আমাকে একটা পথ দেখিয়েছিল ।
( ১ম পর্ব শেষ )