১ম পর্বের লিন্ক :
বুমকেশের ডায়েরী (পর্ব এক)
পরদিন সকালে প্রাতকর্ম সারিয়া বুমকেশ বাহির হইয়া গেল । তাহাদের বাসা ছিল রায়নগর আবাসিক এলাকায় । মিনিট দশেক হাটিয়া সে একখানা গলির ভেতর অদৃশ্য হইল । গলির ভেতর ঢুকিয়া সে একটা টিলার সামনে দাড়াইল । কিয়ৎক্ষণ পর সে টিলায় উঠিবার রাস্তা দেখিতে পাইল । টিলার উপর ঝোপঝাড় আর আগাছা ভর্তি । দুটো বড় বটগাছ টিলার উচ্চতাকে বাড়াইয়া দুরবর্তি জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর করিয়াছে । টিলার উপর উঠিয়া বুমকেশ একখানা গাছের নিচে বসিয়া পড়িল আর অদূরবর্তী কয়েকটা পুরনো কবরের দিকে চাহিয়া রহিল । সে একখানা বাধা কবরস্থান দেখিতে পাইল । জায়গাটা আমার পরিচিত । বুমকেশের লেখনীতে কবরগুলোর বর্ণনা তেমন স্থান পায় নাই । তাই আমি লিখিয়া দিলাম । ওইখানে মোট সাতখানা কবর ছিল । ইহার মধ্যে তিনখানা প্রায় ৫০ বছরের পুরনো । একখানা শতবর্ষী । বাকিগুলো ইহার মাঝামাঝি সময়কালের । এইগুলো ছিল কলিমুল্লাহ জমাদার এবং তাহার পরিবারের সমাধিক্ষেত্র । এই বংশের তেমন কোন পরিচিতি ছিল না । প্রভাব প্রতিপত্তিও ছিল না তেমন । তবে সম্পত্তির হিসেব করলে তাহার পরিমান কম হইবে না । কি করিয়া তাহারা এমন ধন সম্পত্তির মালিক হইয়াছিল তাহা কেহই জানেনা । ইহা নিয়া অনেক গুজবও রটিয়াছিল একসময় । শোনা যায় তাহাদের গুপ্তসম্পত্তি ছিল । কিন্তু তাহা কোথায় আছে বা ছিল তাহার খোজ মিলেনি । তবে এই বংশের কেউই আজ বাচিয়া নাই । শেষ বংশধরের রহস্যজনক মৃত্যুর সাথে সাথে এই বংশের সমগ্র কিছুই অতীত হইয়া পড়ে ।
বুমকেশ বাধানো কবরটার দিকে তাকিয়া আপনমনে ভাবিতে লাগিল ।
“খুজিয়া লইব তাহারে পরম নিভৃতে, আগন্তুকের চোখ এড়িয়ে, পরম তৃপ্তিতে তাহারে লইয়া করিব বসবাস । খুজো না মোরে বনবাসে, খুজো না জনমানবের ভীড়ে, খুজে নিও মোরে বক্ষপিন্জরে । ”
এমন সময় পুনরায় তাহার অদৃশ্যের সহিত কথোকপকথন শুরু হইল ।
“কি খুজিবে তুমি? মনুষ্যহৃদয় না রতনভাণ্ডার?” বুমকেশ প্রশ্নটি শুনিয়া এদিক ওদিক চাহিল । কাহাকেই দেখিতে পাহিল না । তবে বুমকেশ এইবার ভয় পাহিল না । সে কথোকপকথন চালিয়া যাইতে লাগিল ।
“মনুষ্যহৃদয় কিনা জানিনা । তবে তাহা রতনভাণ্ডার নয় তাহা বেশ জানি ।”
“তার মানে তুমি জানই না কি খুজিতেছ । হাসালে মোরে খুব ।” এই বলিয়া অদৃশ্যাত্না হাস্যরোলে মত্ত হইয়া গেল ।
বুমকেশ একটু সতর্ক হইয়া এদিক ওদিক চাহিল । বলাবাহুল্য কাউকে দেখিল না । হঠাৎ সে চিৎকার করিয়া উঠিল ,
“কে তুমি? কি চাও আমার কাছে?”
“যথাসময়ে তাহার জবাব পাইবে । তবে জানিয়া রাখ আমার কাছ হইতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা তোমার নাই ।”
ইহার পর বুমকেশের কি হইল তা সে বলিতে পারিবে না । সে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছিল । জ্ঞান ফিরিয়া পাইয়া জায়গাটা বেশ ভাল মত নীরিক্ষণ করিতে লাগিল । সে যেন কিছু খুজিতেছিল । কিন্তু কি খুজিতেছিল তাহা সে জানিত না । সে কবরগুলোতে উকি মারিয়া দেখিতেছিল । অস্বাভাবিক কিছুই তাহার চোখে পড়িল না । শুধু সে একটুকরা কাগজ কুড়িয়া পাইল । কাগজখানা নতুন । কাগজে কি লেখা ছিল তা বুমকেশ ডায়েরীতে প্রকাশ করিল না । কিয়ৎকাল পর সে বাড়ি ফিরিয়া চলিল ।
ডায়েরীতে তারিখ লিখা ছিল ১০/১০/১৯৭৫ । এই লেখার পর কয়েক পৃষ্ঠা পর্যন্ত কোন লেখা পাইলাম না । মনে পড়িল এই সময়টায় বুমকেশ অসুখে পড়িয়াছিল । তাহার প্রচণ্ড জ্বর হইয়াছিল । এই সময় সে জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল অনেক কথা নাকি বলিত । হয়ত অদৃশ্যের সাথে কথাবার্তা বলিত । কি বলিত বা আদৌ কোন কথা বলিত কিনা তাহা জানা গেল না ।
আমিও আমার অনুসন্ধান চালাইয়া গেলাম । ওই টিলায় গেলাম । বুমকেশের কাগজখানার খোজ করিতে লাগিলাম । কিন্তু কোথাও তাহা খুজিয়া পাইলাম না ।