somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুমকেশের ডায়েরী (পর্ব দুই)

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্বের লিন্ক :
বুমকেশের ডায়েরী (পর্ব এক)

পরদিন সকালে প্রাতকর্ম সারিয়া বুমকেশ বাহির হইয়া গেল । তাহাদের বাসা ছিল রায়নগর আবাসিক এলাকায় । মিনিট দশেক হাটিয়া সে একখানা গলির ভেতর অদৃশ্য হইল । গলির ভেতর ঢুকিয়া সে একটা টিলার সামনে দাড়াইল । কিয়ৎক্ষণ পর সে টিলায় উঠিবার রাস্তা দেখিতে পাইল । টিলার উপর ঝোপঝাড় আর আগাছা ভর্তি । দুটো বড় বটগাছ টিলার উচ্চতাকে বাড়াইয়া দুরবর্তি জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর করিয়াছে । টিলার উপর উঠিয়া বুমকেশ একখানা গাছের নিচে বসিয়া পড়িল আর অদূরবর্তী কয়েকটা পুরনো কবরের দিকে চাহিয়া রহিল । সে একখানা বাধা কবরস্থান দেখিতে পাইল । জায়গাটা আমার পরিচিত । বুমকেশের লেখনীতে কবরগুলোর বর্ণনা তেমন স্থান পায় নাই । তাই আমি লিখিয়া দিলাম । ওইখানে মোট সাতখানা কবর ছিল । ইহার মধ্যে তিনখানা প্রায় ৫০ বছরের পুরনো । একখানা শতবর্ষী । বাকিগুলো ইহার মাঝামাঝি সময়কালের । এইগুলো ছিল কলিমুল্লাহ জমাদার এবং তাহার পরিবারের সমাধিক্ষেত্র । এই বংশের তেমন কোন পরিচিতি ছিল না । প্রভাব প্রতিপত্তিও ছিল না তেমন । তবে সম্পত্তির হিসেব করলে তাহার পরিমান কম হইবে না । কি করিয়া তাহারা এমন ধন সম্পত্তির মালিক হইয়াছিল তাহা কেহই জানেনা । ইহা নিয়া অনেক গুজবও রটিয়াছিল একসময় । শোনা যায় তাহাদের গুপ্তসম্পত্তি ছিল । কিন্তু তাহা কোথায় আছে বা ছিল তাহার খোজ মিলেনি । তবে এই বংশের কেউই আজ বাচিয়া নাই । শেষ বংশধরের রহস্যজনক মৃত্যুর সাথে সাথে এই বংশের সমগ্র কিছুই অতীত হইয়া পড়ে ।
বুমকেশ বাধানো কবরটার দিকে তাকিয়া আপনমনে ভাবিতে লাগিল ।
“খুজিয়া লইব তাহারে পরম নিভৃতে, আগন্তুকের চোখ এড়িয়ে, পরম তৃপ্তিতে তাহারে লইয়া করিব বসবাস । খুজো না মোরে বনবাসে, খুজো না জনমানবের ভীড়ে, খুজে নিও মোরে বক্ষপিন্জরে । ”
এমন সময় পুনরায় তাহার অদৃশ্যের সহিত কথোকপকথন শুরু হইল ।
“কি খুজিবে তুমি? মনুষ্যহৃদয় না রতনভাণ্ডার?” বুমকেশ প্রশ্নটি শুনিয়া এদিক ওদিক চাহিল । কাহাকেই দেখিতে পাহিল না । তবে বুমকেশ এইবার ভয় পাহিল না । সে কথোকপকথন চালিয়া যাইতে লাগিল ।
“মনুষ্যহৃদয় কিনা জানিনা । তবে তাহা রতনভাণ্ডার নয় তাহা বেশ জানি ।”
“তার মানে তুমি জানই না কি খুজিতেছ । হাসালে মোরে খুব ।” এই বলিয়া অদৃশ্যাত্না হাস্যরোলে মত্ত হইয়া গেল ।
বুমকেশ একটু সতর্ক হইয়া এদিক ওদিক চাহিল । বলাবাহুল্য কাউকে দেখিল না । হঠাৎ সে চিৎকার করিয়া উঠিল ,
“কে তুমি? কি চাও আমার কাছে?”
“যথাসময়ে তাহার জবাব পাইবে । তবে জানিয়া রাখ আমার কাছ হইতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা তোমার নাই ।”
ইহার পর বুমকেশের কি হইল তা সে বলিতে পারিবে না । সে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছিল । জ্ঞান ফিরিয়া পাইয়া জায়গাটা বেশ ভাল মত নীরিক্ষণ করিতে লাগিল । সে যেন কিছু খুজিতেছিল । কিন্তু কি খুজিতেছিল তাহা সে জানিত না । সে কবরগুলোতে উকি মারিয়া দেখিতেছিল । অস্বাভাবিক কিছুই তাহার চোখে পড়িল না । শুধু সে একটুকরা কাগজ কুড়িয়া পাইল । কাগজখানা নতুন । কাগজে কি লেখা ছিল তা বুমকেশ ডায়েরীতে প্রকাশ করিল না । কিয়ৎকাল পর সে বাড়ি ফিরিয়া চলিল ।
ডায়েরীতে তারিখ লিখা ছিল ১০/১০/১৯৭৫ । এই লেখার পর কয়েক পৃষ্ঠা পর্যন্ত কোন লেখা পাইলাম না । মনে পড়িল এই সময়টায় বুমকেশ অসুখে পড়িয়াছিল । তাহার প্রচণ্ড জ্বর হইয়াছিল । এই সময় সে জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল অনেক কথা নাকি বলিত । হয়ত অদৃশ্যের সাথে কথাবার্তা বলিত । কি বলিত বা আদৌ কোন কথা বলিত কিনা তাহা জানা গেল না ।
আমিও আমার অনুসন্ধান চালাইয়া গেলাম । ওই টিলায় গেলাম । বুমকেশের কাগজখানার খোজ করিতে লাগিলাম । কিন্তু কোথাও তাহা খুজিয়া পাইলাম না ।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×