ঘটনাটি আমার জীবনেরই হোক আর আমার চারপাশের মানুষের মাঝ থেকে উঠানো হোক আমি নিজেই বিচরন করব শ্বশরীরে ঘটনার সদ্য থেকে অদ্য।কারন আমার কল্পনার ঘর অনেকটা শূন্য।
চারদিকে মোবাইল প্রযুক্তি বাংলাদেশের অলিতে গলিতে ঢুকে গেছে।রমরমা ব্যবসার ফাঁদ পেতেছে অপারেটর গুলো।লোভনীয় সব প্যকেজের অফার।রাত ১২টা - সকাল ৮টা.....পয়সা মিনিট।আর জমে উঠেছে মোবাইল প্রেম, মোবাইল বন্ধু/বান্ধবী আরো কত কি?আমি তখন এইচ.এস.সি পড়ুয়া ছাত্র।আমার বন্ধু বান্ধবরা অবাধে ফোনালাপ করে।শুধু আমি একটা নিরীহ প্রানী বাদে।নিজেকে নিয়ে খুব বিপাকে পড়লাম।
কয়েক দিন পর, আমার এক বন্ধু তার গ্রামের বাড়িতে ঘুড়তে গেছে।আমি তাকে কল করলাম।রিসিভ করল একটা মেয়ে।আমিতো ভরকে গেলাম।কন্ঠস্বরটা অদ্ভুদ সুন্দর।প্রথম কোনো মেয়ের সাথে.......বলে কিনা কে জানে।আমার বন্ধুর সাথে কথা হল।জানলাম মেয়েটা কে?কিসে আরো অনেক কিছু....।আমার বন্ধু মোবাইলটা মেয়েটার কাছে দিয়ে দিল।কথা বললাম ভাল লাগল।অবাক হলাম আরো বেশী কারন সে আমার সম্বন্ধে অনেক কিছু জানে।আমার বন্ধুর মুখে নাকি আমার অনেক কথা শুনেছে।তাই সে ইচ্ছা করে আমার কল রিসিভ করেছে।শুরু হল আমার মোবাইল রোগ।
দিন যায়,মাস যায়,সময়ের বাতাস হু হু করে বয়ে চলছেই।মাঝে মাঝে তার মোবাইল দীর্ঘ ব্যম্ত থাকে।আমার খারাপ লাগে।কখনো বলি কখনো বলিনা কার সাথে কথা বলে।একটা কন্ঠস্বরের সাথে আমি কথা বলি,অমার সব কিছু শেয়ার করি,খুনসুটি করি।আমার কল রিসিভ না করলে আমার বুকের বামপাশটা চিন চিন করে।যে মানুষটাকে আমি কখনো দেখিনি তার জন্য কেন আমার এত খারাপ লাগে ভেবে পাইনা।অবশেষে একদিন সপ্নের দিন.....।আমি আমার বন্ধুর সাথে যাই তার গ্রামের বাড়িতে কিন্তু মেয়েটাকে আগে থেকে কিছু বলিনি যে আমারা যাব।গিয়ে শুনলাম সে তার এক আত্নীয়ের বাড়িতে গেছে কিছু দিনের জন্য।স্বাভাবিকভাবে আমার মন খারাপ হয়ে গেল।তারপরও তাকে জানাইলাম যে আমি তাদের গ্রামে এখন।এটা শুনে সে পরদিন সকালে রওনা দিল পৌছাল বিকালে।
সন্ধ্যায় আমি আমার বন্ধুর সাথে যাই তাদের বাড়িতে।আমার সমস্যা হবেনা কারন আমার বন্ধুর আত্নীয়ের বাড়ি।তখন বিদ্যুৎ ছিলনা।আবছা আলো-ছায়া খেলা করছে চারপাশে।আমার ভেতরে ভয়,শংকা মিশ্রিত একটা অনুভুতি বারবার আমাকে দোলাচ্ছে।গুটি গুটি অন্ধকারে দুজন দুজনের মূর্তিটা দেখলাম।কিন্তু আমি কথা বলতে পারছিনা।সে অবলীলায় কথার এ ডাল থেকে ঐ ডাল চষে বেড়াচ্ছে।কোন জড়তা নেই,নেই কোন শংকা।যেন আমি বহুকালের একজন পরিচিত মানুষ।আর আমি একটা নিন্ম শ্রেনীর রোবটের মত 'হ্যা' বা 'না' বলছি।কিন্তু এই আমিই যে তার সাথে এত কথা বলেছি!!
পাঁচ-ছয় দিন পর আমরা চলে আসি।মোঠুফোনে কথা চলে আগের মতই।এরই মাঝে আমি তার জীবনের অনেক ঘটনা জানতে পারি।কিন্তু সেগুলো নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা ছিলনা।কারন আমি যে তাকে শুধু একজন বন্ধুই ভাবতাম।অবশ্য সে কোনদিন আমার কাছে স্বীকার করেনি এইসব।
এক দের বছর পর,আমি ঢাকার বাইরে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি।সে ঢাকায় ভর্তি কোচিং করছে।তার আবদার আমাকে ঢাকায় যেতে হবে।আমিও ভাবছি ঢাকায় যাব কারন আমার বন্ধুরা অনেক পিরাপিরি করছিল।আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির অপেক্ষায় দিন গুনছি।এর মাঝে তার এইচ.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হল।ও তখন তার বাসায় ছিল।রাতের বেলা কথা বলছিলাম।হঠাৎ করেই সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিল।আমার ভেতরে কিসের যেন একটা আলোড়ন শুরু হল।আমি ভাবার সময় নিই।ভাবি,কল্পনায় সম্পর্কের চাদর গায়ে জড়াই কিন্তু কোন ইতি টানতে পারিনা।কারন তার পূর্ব জীবনের সব কথা আমাকে অদৃশ্য একটা শক্তির বিরুদ্ধে দাড় করায়। আবার ভালবাসতে চাইলেও মন বাধা দেয়না।শেষমেশ ঝাঁপ দিলাম প্রেমের অথই সায়রে।কিছুদিন পর ঢাকায় গেলাম।সন্ধ্যায় আমি আমার বন্ধু আর সে টি.এস.টিতে যাই।সে আমার পাশে বসেছে।আমার হাত-পা কাঁপছে।কথা বলতে বলতে সে আমার আরো কাছে আসে।আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে চলে।এক সময় আলতু করে আমার হাতটা স্পর্শ করে বলে কখনো ছেড়ে যাবেনাতো।কি উত্তর দিব খুজে পাইনা।কারন তার স্পর্শ আমাকে কোন এক অচেনা দেশের এক গহীন অরন্যে নিয়ে গেছে।হঠাৎ বলি ছাড়বনা।কথা বলছি আবেশের ঘোরে।কারন তার স্পর্শটা তখনো চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে আমাকে।
রাত ৯.৩০ মিনিটে আমরা উঠলাম সেখান থেকে।শাহবাগের মোড় থেকে আমি তাকে একটা বেলি ফুলের মালা আর সে আমাকে কিছু গোলাপ,রজনীগন্ধার স্টিক কিনে দিল।রিকসায় দুজন বসে আছি কোন কথা বলছিনা।রাস্তার ক্ষতগুলো দুজনের শরীর স্পর্শ করিয়ে দেয়।সে আমার হাত ধরে।আমি নিজেকে মুক্ত করতে চাই পারিনা।আমার অনুভূতিরা আমাকে অবশ করে ফেলেছে।হঠাৎ সে আমার গালে একটা চুমু দিল যেন বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেল আমার শিরা উপশিরায়।আমিও ছাড়ব কেন?
আমি ঢাকা থেকে চলে আসি একদিন পর।কুড়িয়ে নিয়ে এসেছি আমার আনুভূতির আলোড়ন।সময়ের গাড়িটা কেড়ে নিয়ে যায় আরো কিছু সময়।তার মধ্যে বিন্দু বিন্দু পরিবর্তনের কালো ছায়া দেখি।একটা কষ্ট আমার হৃদয়ে রিন রিন করে বীণা বাজায়।তার মোবাইল ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যস্ত থাকে।আমি থাকি বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন।তাকে জিগ্গাসা করলে তৈরী করা একই উত্তর বন্ধু/বান্ধবদের সাথে কথা বলছিলাম।মাঝে মাঝে সে আমার কল রিসিভ করেনা।আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি এক আশংকার অরণ্যে।তাকে বুঝাই বলি আমার অবস্থা।কোন পরিবর্তন আসেনা তার মধ্যে।আমি নিজেকে দাড় করাই নিজের বিপরীতে।কষ্টগুলোর গন কবর দিই মনের মাটিতে।তবুও বুকের ভেতরটা হু হু করে।যন্ত্রনার কাটা চামচ আচড় কাটে আমার গায়ে।সে আমার কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে খুশিই হয়েছে।নিঃসঙ্গ চোখদুটো এখন আশাহীন শূন্যতায় ধূ ধূ করে।কিন্তু আমার দোষ ছিল কোথায়?আজও জানতে বড় ইচ্ছে হয়।অনেক দিন হয়ে গেল তবুও মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস জানান দিয়ে যায় কোন আশায়,কিসের প্রত্যাশায় জানিনা।দীর্ঘশ্বাস জানে তার পথ কতটা দীর্ঘ।হয়ত নিজের অজান্তেই মনের গোপন ঘরে আজও পুষে রেখেছি তাকে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




