somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিলেট অঞ্চলে গোপন জরিপ সম্পন্ন : ৩ টি স্থান থেকে হাজার একর জমি ভারতকে দেয়ার আয়োজন চূড়ান্ত

১৬ ই আগস্ট, ২০১১ ভোর ৬:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহীদুল ইসলাম : সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তের ২৭৪ একর জমির মালিকানা অঘোষিতভাবে ইতোমধ্যে ভারতকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশী শ্রমিকদের পাথর বা বালু তুলতে অথবা অন্য কোন কৃষি কাজের জন্য যেতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি সীমান্ত এলাকার পিলার থাকা সত্ত্বেও ঐ এলাকায় বিজিবিকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। শুধু জৈন্তাপুরই নয় স্থলবন্দর তামাবিল এবং মহামূল্যবান খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ ডিবির হাওড় এলাকায়ও গোপন জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে হাজার একর জমি এখন শুধু বুঝিয়ে দেয়ার অপেক্ষা। ১৯৪৭ সাল থেকেই যেসব এলাকা মীমাংসিত বিষয় হিসেবে স্থায়ী পিলার রয়েছে সেখানে নতুন করে ভূমি জরিপের নামে বাংলাদেশের সার্বভৌম এলাকার জমি ভারতকে দান করার বিষয় নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে গত ডিসেম্বর মাসে দু'দেশের যৌথ জরিপের কাজ শুরু হয়। তখন ভারতের মনঃপুত না হওয়ায় বার বার জরিপ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশী জরিপকারীরা উঠে আসতেও বাধ্য হয়। এরূপ ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে যার খবর পত্র পত্রিকায় এসেছে। বেশ কিছুদিন এ নিয়ে তেমন কোন তৎপরতা দেখা দেয়নি। তবে গত জুন থেকে বিষয়টি প্রকাশ পেতে শুরু করে যখন ঐ এলাকায় বাংলাদেশের কৃষকরা ফসল কাটতে চাষাবাদ করতে গেলে বাধা দেয়। সেই সাথে শ্রমিকরা পাথর ও বালু তুলতে গেলেও বাধা দেয়া হয়। একজন বাংলাদেশী পাথর শ্রমিককে বিএসএফ এবং আরেকজনকে ভারতীয় নাগরিকরা পাথর নিক্ষেপ করে নির্মমভাবে হত্যা করে। দুইদিন আগেও ২ জন বাংলাদেশী শ্রমিককে ভারতীয় খাসিয়ারা গুলী করে হত্যা করে। তাদের একজন কামাল মিয়া অন্যজন হলো কামাল উদ্দিন। এসব ঘটনা ঘটেছে এ কারণেই যে বিএসএফ এবং ভারতীয় নাগরিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে ঐ ২৭৪ একর জমির মালিকানা ভারত পেয়ে গেছে, আর মালিকানা পাওয়ার সুবাদেই ঐ এলাকার মধ্যে বিজিবি বা কোন বাংলাদেশী নাগরিককে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এই জায়গাগুলো হলো জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার মধ্যবর্তী পদুয়া সীমান্তের ১২৭০ থেকে ১২৭১ নম্বর পিলার এলাকায় ২২০ একর, লিংকহাট এলাকার ১২৬৩-১২৬৭ নম্বর পিলার পর্যন্ত ৮ একর, নলজুরী সীমান্তের ১২৭৭-১২৭৯ নম্বর পিলার পর্যন্ত ৩৩ একর এবং কুসুমছড়া এলাকায় ১২৬৪ থেকে ১২৬৫ নম্বর পিলার পর্যন্ত ১৩ একর সব মিলিয়ে মোট ২৭৪ একর জমি। এই সব জমিই ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যে ভারতকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ৭/৮ মাস আগে যে জরিপ নিয়ে দু'দেশের ভূমি কর্মকর্তাদের মাঝে বিরোধ ছিল বিগত কয়েক মাস তা নীরব থাকার পর এখন স্পষ্ট হয়েছে বাংলাদেশীদের ঐসব এলাকায় ঢুকতে না দেয়ার মধ্য দিয়ে। এতে বোঝা যায়, গোপনেই জরিপের সমঝোতা সেরে ফেলা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের মতে এখন ম্যাপ তৈরির কাজ চলছে। ম্যাপ তৈরি সম্পন্ন হলেই হয়তো ভারত ঐসব এলাকায় ৬০ বছর আগে মীমাংসিত ও স্থাপিত পিলার উঠিয়ে নতুন পিলার বসাবে এবং কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে দখলদারিত্ব পাকাপোক্ত করে নেবে। কোন কোন মাধ্যম থেকে ২৭৪ একরের স্থলে ২৬১ একর জমির কথা শোনা যাচ্ছে।

সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও পদুয়া অঞ্চলের এসব এলাকার সাধারণ মানুষ যারা এতদিন এসব ভূমির মালিক হিসেবে ভূমি ব্যবহার, চাষাবাদ, বালু ও পাথর উত্তোলন করতো তাদেরকে এখন সিলেটের প্রশাসনও নিরুৎসাহিত করছে। ঐসব এলাকায় যেতে দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে যারা মিছিল, মিটিং করে প্রতিবাদ করেছিল তাদেরকে মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। ভারতকে কেন ভূমি দেয়া হচ্ছে এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য হলো সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। ভারতকে নিজেদের জমি দিলে সীমান্তে শান্তি আসবে এমন এক নতুন তত্ত্ব সিলেটেই প্রথম শোনা গেল। ভূমির মালিকরা যাতে আবার নতুন করে সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য পুলিশী নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ৪টি এলাকার ২৭৪ একর ভূমি মালিকানা ভারত পেয়ে গেছে। এখন বিএসএফের চৌকি বসানো বাকি আছে। শুধু ম্যাপের জন্যই অপেক্ষা করা হচ্ছে।

ওদিকে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট পদুয়া এলাকার জমির মালিকানা পাওয়ার পর ভারত এখন দৃষ্টি দিয়েছে তামাবিল স্থলবন্দর এবং ডিবির হাওড় এলাকার দিকে। ঐ এলাকায় মাটির নিচে কি খনিজ সম্পদ আছে তা নিয়ে বাংলাদেশের জরিপ বা ভূ-তত্ত্ববিদদের কতটা গবেষণা আছে তা জানা না গেলেও ভারতীয় পত্র পত্রিকার খবর অনুসারে চুনাপাথর, গ্যাস এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের পাশাপাশি সেখানে নাকি ইউরেনিয়ামের মত মহা মূল্যবান জিনিসও আছে। সেজন্যই ভারতের লোলুপ দৃষ্টি এখন সিলেটের ঐ অঞ্চলের ভূমি দখল করার দিকে। জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট পদুয়া এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যাপক গণবিক্ষোভ হওয়ার কারণে তামাবিল আর ডিবির হাওড় এলাকার জন্য কাজ হয়েছে অতিগোপনে। ভারত যা চায় তাই গোপনে দিয়ে দিতে হবে জনগণ যাতে বুঝতেও না পারে এমনভাবে কাজ করছে ভারতের আশির্বাদপুষ্ট বর্তমান সরকার।

১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু'টি রাষ্ট্র হয়। তখন রেডক্লিপ যেভাবে লাইন টেনেছেন সেভাবেই সীমানা নির্ধারিত হয়েছে অাঁকাবাঁকা করে যেভাবে ভারত চেয়েছে। তারপরেও কিছু বিরোধ ছিল। তবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের এই অঞ্চলের সমস্যাগুলো নিয়ে তেমন কোন মাথাব্যথা ছিল না। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি বেঙ্গল বাউন্ডারি কমিশন ঐ এলাকার জরিপ কাজ সম্পন্ন করে সিলেট মেঘালয়, আসাম সীমান্তের মীমাংসা করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সার্বভৌম সমস্ত এলাকারই সার্বভৌম মালিকানা লাভ করে। সেই হিসেবেই স্থায়ী পিলার রয়েছে এসব এলাকায়। এতদিন এসব এলাকায় কোন সীমানা বিরোধও নেই। কিছু কিছু এলাকায় অপদখলীয় সম্পত্তি যা দু'দেশেই রয়েছে সেসব এলাকা এবং অচিহ্নিত কিছু এলাকা রয়েছে যার মীমাংসা জরুরি। সেদিকে কোন জরিপে হাত না দিয়ে ৬০ বছর ধরে যেসব এলাকা মীমাংসিত সেইসব এলাকায় জরিপের নামে বাংলাদেশের ভূমি দখল করে ভারত। বর্তমান ভারতের প্রতি দয়াবান সরকার দেদারসে তা দিয়েও দিচ্ছে। বিনিময়ে বাংলাদেশ কি পাবে তা কেউই বলছে না। সম্ভবত বাংলাদেশ কিছুই পাবে না। এজন্যই গোপনে জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×