somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভরা পাতার ঝরা কাব্য!

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খোলা জানালায় চোখ পাতিয়ে
মেঘ ঢুকে যায় মেঘ ছেদিয়ে


অনেক ছোটবেলা থকেই আমি খুব ছন্দমুখর!মাথার মধ্যে ছন্দের ছটপটানি অনেক সহজেই উগ্রে দিতে পারতাম ছোটবেলার পড়া লেখার ডায়েরীর পাতায়।নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হই,তখনো আমার স্কুল পরিধি আরম্ভ হয়নি,একদিন বিকেলে ধুমাই বৃষ্টি,হঠাৎ মাথার মধ্যে চারটা লাইন এসে কুতকুতি দিতে লাগলো।তখনো কবিতা কি জিনিস ,সেটা হৃদয়ঙ্গম করার বয়স হয়নি!লিখতেও পারি না ঠিকমত।কুতকুতি না মানে সীমাবদ্ধতার গ্লানি!মুখ তো আছে!মাকে ডেকে শুনাই দিলাম চার লাইন।প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে মায়ের মুখের দিকে চোখ আটকাই রাখছি,নিশ্চয়ই মা এখন খুশি হয়ে কিছু একটা বলে উঠবে,আমার মুখখানি তখন আলবাৎ শরদিন্দুনিভাননা!কিন্তু আমার মৌখিক ঔজ্জ্বলতার মুখে কালিমা মাখিয়ে আমার মা তখন এমন শব্দ করে হাসা শুরু করলো,সেটা দেখলে আমি নিশ্চিত সাকা চৌধুরী ও লজ্জা পেয়ে যেত! মার সেই শল্কময় হাসির অপমান ভুলতে না পেরে এই মর্মে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম,আর নয় পদ্য বিনিময়!
এই ঘটনার পর থেকে আমার লেখা যাবতীয় ছন্দাবলী আটকা পড়তো লালচে রঙের রূল টানা একটা ডায়েরীতে,যেখানে আমার স্কুলের পড়া লিখে রাখার বাধ্যকতা ছিল।মানুষ ডায়েরী লিখে জীবনী আটকে রাখার স্বার্থে,আমি কবিতা দিয়ে সময় আটকানো শুরু করলাম।দিনের শেষে একপাতা করে ডায়েরী লিখে মানুষের ব্যাক্তিগত ঘরাণার লেখালেখির হাতে খড়ি হয়,অথচ আমার জীবনে হাত দেয়া প্রথম ডায়েরী ভরে যেতে লাগলো পদ্য আর ছন্দে!প্রায় প্রতি রাতে নিয়ম করে একটা করে কবিতা লেখা হত,কতশত বিষয়,কত নির্নিমেষ ভাবনা!
সামনের বাসার তুলোর দোকানদার থেকে শুরু করে প্রিন্সেস ডায়না,কেউই বাদ যায়নি আমার ছন্দচর্চার বলির হাত থেকে!!
ডায়েরির পাতা ভরতে থাকে আর পাল্লা দিয়ে বাড়ে আমার আশংকা,পাছে কেউ পড়ে ফেলে।আর এই ভয়কে সামাল দিতেই সারাক্ষণ আমার ব্যাগের অনেক বইয়ের ভীড়ে হারিয়ে দিতাম লাল পদ্যের শব্দমালা।
তবুও শেষ রক্ষায় বরাবরের মতই আমি ব্যার্থ (বরাবর বলছি এ কারনে যে এখনো যখনই আমি কারো কাছে কিছু লুকাতে যাই,সাথে সাথে ধরা!) আমাদের বাসায় এক যুবক শ্রেণীর গৃহশিক্ষক ছিলেন।তিনি একদিন আমার সেই ডায়েরী আবিষ্কারকের ভূমিকা পালন করলেন।শুধু এটুক করে শান্ত থাকলেও মান বাচতো,কিন্তু তিনি থামলেন না,তিনি আমার লেখা রগরগে সব কবিতা বিশাল আয়োজন করে আমার সামনেই পড়া শুরু করলেন এবং আমার প্রিন্সেস ডায়েনা নিয়ে লিখা বিশেষ সংবেদনশীল কাব্যখানি জোর গলায় প্রথমে আমার সামনে,অতঃপর অন্তঃপুরে ধাবিত হয়ে আমার ভাই আর মাকে শুনিয়ে আসলেন।অতঃপর আমাদের বাসা আরেকবার শল্কময় গা জ্বালানো হাসিতে কেপে উঠলো,অপমানের ভাপে পুনরায় উষ্ণ হল আমার কর্ণযুগল,শক্ত হল শ্রোণীদেশ!সময় হল পুনঃপ্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হবার।
ছুড়ে ফেললাম সেই লাল ডায়েরী,শপথ নিলাম আর কোনদিন কাব্যচর্চায় হাতে কলম ধরবো না।আমার ছন্দচর্চা আমার হাতেই শ্রথিত হল।

এরপর অনেক অনেক সময় গত হয়েছে জীবনে,অনেক উত্থান-পতন আর বোঝাপোড়ার ফাকে আবিষ্কার করলাম মানুষ হিসেবে আমার একাকীত্ত্ব আর দুর্বলতা।অসহায় সময়গুলোতে আজো তাই কলম তুলে নিতে চেষ্টা করি,হাতকে আদেশ দেই কিছু ছন্দ বোনার....শব্দ-ছন্দ।প্রতিবারই কলম তার না-মর্জির কথা পাষন্ডের মত জানিয়ে দেয়।আমি পদ্য জন্মানোর অক্ষমতায় ভুগি,কবি হতে পারি না,শব্দ নিয়ে খেলতে পারি না।আমি বেচে থাকি কাব্যহীন বাস্তবতায়,ছন্দস্বল্পতার অন্ধকারে।আমি পারিনি একজন কবির জীবন বেছে নিতে....


-----------------------
------------------------------

গতকাল ড্রয়ার পরিষ্কার করতে গিয়ে আশ্চর্যজনকভাবে আমি আমার সেই লাল ডায়েরীটা খুজে পেলাম।অবাক হয়ে আরেকবার উপভোগ করলাম আমার সেই ক্ষীণ-সময়ের কবিকাল!
-------------------

শব্দটীকাঃ

শরদিন্দুনিভাননাঃশরত্কালের চাঁদের মতো (উজ্জ্বল ও সুন্দর) মূখবিশিষ্ট।
শল্কীঃআঁশযুক্ত, শল্কময়।
শ্রথিতঃনিহত; বধ করা হয়েছে এমন।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×