somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

পথে প্রান্তরে-৬ সাউথ আফ্রিকায় কয়েকদিন-১

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পথে প্রান্তরে-৬
সাউথ আফ্রিকায় কয়েকদিন-১

ব্যাবসায়ীক কাজে নভেম্বর মাসে গিয়েছিলাম দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গ ও কেপটাউন শহর। ব্যাবসায়ীক কাজ কিম্বা যেকোনো ধরনের বিদেশ ভ্রমনে আমি স্থানীয় বাংলাদেশী বাঙ্গালীদের সাথে মেলামেশার সুযোগ কাজে লাগাতে চেস্টা করি। জোহানেসবার্গ ও কেপ্টাউনে গিয়েও সেই সুযোগ আমি যতসামাণ্য কাজে লাগাই। সে সুবাদে প্রবাসী বাঙালিদের সাথে মেশার সুযোগ হয় এবং তাদের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা উপলব্ধি করার অভিজ্ঞতা লাভ করি। প্রবাসী বাঙালিগণ আমাদের কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে জানা-অজানা তথ্যাদি শেয়ার করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে।

সাউথ আফ্রিকাতে প্রচুর ভারতীয়দের বসবাস-বলা যায় সাউথ আফ্রিকাতে ছোট্ট একটি ইন্ডিয়া! কিন্তু ওদের ভাবসাব শংকরীয় বৃটিশ! সেই সুবাদে ওরা বৃটিশদের থেকেও একধাপ এগিয়ে! অনেক দেশের মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলে প্রথমেই যে প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেন- "‘আর ইউ ইন্ডিয়ান"?’-সাউথ আফ্রিকাতেও তার ব্যাতিক্রম নেই। আমি বহুবার এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। কখনও বিব্রতবোধ করিনি।বরং মাথা উঁচিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলেছি,অব কোর্স নট। বাংলাদেশ ইজ নট ইন্ডিয়া। বাংলাদেশ ইজ ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যান্ড ইন্ডিভিজুয়াল কান্ট্রি।এবার উল্টো প্রশ্ন কারীর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছি। দিস ইজ সাউথ আফ্রিকা। দিস ইজ নট ফ্রান্স অর জার্মানি। সো বাংলাদেশ ইজ বাংলাদেশ।

১ম ছবিটি আফ্রিকান অপেক্ষাকৃত গরীব কালো মানুষের জন্য সরকারী আবাসন প্রকল্পঃ আর ২য় ছবিটি আফ্রিকান অপেক্ষাকৃত ধনী কালো মানুষের জন্য সরকারী আবাসন প্রকল্পঃ


উপরের ঘটনাটা ঘটেছিল একটি তূলা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ইন্ডিয়ান এজেন্টের অফিসে। সমগ্র ইউওরোপ-আমেরিকা জুড়েই বাংলাদেশীদের পরিচালনায় জনপ্রিয় রেস্তোরা ব্যাবসা। বাংলাদেশী বাংগালীদের মালিকানায়,ব্যাপস্থাপনায় পরিচালিত হলেও-রেস্টুরেন্টগুলো পরিচিতি পাচ্ছে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট হিসেবে। কেন আমাদের এ হীনমন্যতা! একইভাবে বিদেশে গিয়ে প্রায়শই অনেকেরমত আমাকেও একটা বিষয় পীড়াদেয়। আমরা অনেকেই ইন্ডিয়া পাকিস্তানীদের সাথে মুখ বেকিয়ে হিন্দি উর্দূতে কথা বলি। আমরা যখন ইউরোপ-আমেরিকা যাই তখন ইংরেজীতে কথা বলা মেনে নেই। কারন ইংরেজী আন্তর্জাতিক ভাষা। কিন্তু কেন আমাকে ইন্ডিয়ানদের সাথে হিন্দীতে,পাকিস্তানীদের সাথে উর্দূতে কথা বলতে হবে!

জোহানেসবার্গের শ্বেতাংগ মালিকানাধীন Raw Cotton Export Trading House’র এক্সপোর্ট ডাইরেক্টর এই ইন্ডিয়ান ভদ্রলোক আমাকে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন,আমি হিন্দি জানি কি না। উত্তরে মাথা নেড়ে জানালাম-জানি না। এবার তিনি অনেকটা বিস্মিত কণ্ঠে বললেন,কেন জানি না? তার কথার ধরনে মনে হলো,হিন্দি ভাষা না জানাটা আমার বিরাট অপরাধ হয়ে গেছে। ভদ্রলোক সরাসরিই বললেন-ভারতীয় উপমহাদেশে থাকেন অথচ হিন্দী জানেননা! আমিও দ্বীগুণ উষ্মা দেখিয়ে বলি-হিন্দী আমার মাতৃ ভাষা নয়,আন্তর্জাতিক ভাষাও নয়। সুতরাং হিন্দী জানাটা আমার জন্য মোটেই জরুরী নয়। আমি পালটা প্রশ্ন করি-“আপনি কি বাংলা জানেন? যদি নাজানেন সেটা আপনার অযোগ্যতা-কারন বাংলা ভাষা ইন্ডিয়ার অন্যতম রাস্ট্রীয় ভাষার মধ্যে একটি”। মিঃ গুরু প্রাসাদ সিংজী হাসলেন না রাগলেন বুঝতে পারিনি-কারন উনার মুখমন্ডল ভর্তি দাড়ি আর মাথার পাগড়ীটা কানবধি ঢাকা! আমি প্রসংগ এড়াতে বললাম-বাদ দেন ওসব, আগে তূলা বেচেন।
্দঃক্ষিন আফ্রিকার একটি তুলা চাষ প্রকল্প-


ইন্ডিয়ান-পাকিস্তানিরা আমাদের সঙ্গে তাদের মাতৃভাষায় কথা বলে। আমরা কেন আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলি না। কেন নিজের ভাষা রেখে আমাকে অন্যের ভাষায় কথা বলতে হবে? মাতৃভাষার জন্য পৃথিবীতে আর কোনো জাতি সংগ্রাম করেনি। ঢেলে দেয়নি বুকের তাজা রক্ত। আজ বাংলাদেশকে,বাংলা ভাষাকে সারা বিশ্বে অগণিত মানুষ গভীর আগ্রহ নিয়ে জানার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন,বাংলা ভাষাকে যেন জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। একটা জাতির জন্য এটা অনেক বড় অর্জন। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এ আমার অহঙ্কার।

দঃ আফ্রিকায় শ্বেতাংগদের রাজনৈতিক শাসন ও শোশনের অবসান হলেও এখনও ৮০ ভাগ ব্যাবসা বানিজ্য নিয়ন্ত্রন শ্বেতাংগদের হাতে। এবং শ্বেতাংগদের মালিকানাধীন বেশীরভাগ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে ইন্ডিয়ানরা আসীন। কোথাও বাংলাদেশীরা উচ্চপদে নেই। প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রথমেই জানান-দক্ষিণ আফ্রিকায় তারা জীবন-যাপন ও ভাল উপার্জন করতে পেরে সুখী। জানতে পারি তাঁদের বিভিন্ন সমস্যাবলি। আমাদেরকে কাছে পেয়ে দেশী ভাইয়েরা অনেক সমস্যার কথা জানান-যদিও আমাদের কিছুই করণীয় নেই। কারন,আমরা যারা অল্প সময়ের জন্য বিদেশে যাই-তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রবাসী ভাইদের থেকে আরো নাজুক অবস্থায় থাকি।তারপরেও আমরা তাদের সুবিধা-অসুবিধা শোনার পাশাপাশি পাহাড়বেষ্টিত শহর দুটি ঘুরে ঘুরে দেখেছি। তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ,বহু স্তরবিশিষ্ট ফ্লাইওভার,পাহাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহর দুটি রাতের বেলা আরও মোহনীয় হয়ে ওঠে। বহু স্তরবিশিষ্ট ফ্লাইওভার ও নানা কৌশলের কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন,জানজটমুক্ত চমত্কার শহর। দুটো শহরের মধ্যে আমার বেশী ভালো লেগেছে কেপটাউন। দক্ষিণ আফ্রিকায় শীতকালেও বাংলাদেশ থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা গেল। শীতকালে বাংলাদেশে বৃষ্টি বিরল হলেও জোহানেসবার্গ কেপটাউনে তা স্বাভাবিক।

আলাপ প্রসংগেই একজন বাংলাদেশী জানালেন-মাত্র কয়েকদিন আগেই তাঁর দোকান লুট হয়েছে স্থানীয় কালোদের দ্বারা। যা প্রায়শই ঘটে থাকলেও প্রশাসন যথেস্ট নিরাপত্তা দিতে সচেস্ট। বিদেশীদের দোকান/ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে মাঝে মাঝে ডাকাতি এবং হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রবাসীরা চিন্তামুক্ত জীবন-যাপন করে।দঃ আফ্রিকা অনেক ধনী দেশ হলেও ওদেশে কর্মবিমুখ(কর্মহীন নয়) জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক! ওরা কর্ম বিমূখ বলেই আমাদের দেশীয়রা ওদেশে গিয়ে কর্মক্ষম হবার সুযোগ পাচ্ছেন।

তবে দঃ আফ্রিকায় নাগরিক প্রকারভেদ ভিন্ন রকমের। অরিজিনাল কালো আফ্রিকানরা ছাড়াও আছে দখলদার সাদা আফ্রিকান,আরো আছে লক্ষ লক্ষ ইন্ডিয়ান। সংখ্যায় ইন্ডিয়ান আফ্রিকান ২য় স্থানে। অন্যদিকে অরিজিনাল কালো আফ্রিকানদের মধ্যে আছে বৈসম্য মূলক দুই প্রকার কালো। এক কালোরা অত্যন্ত দরিদ্র-যারা সংখ্যা গরিষ্ঠ-যেনো আলোর নিচে অন্ধকার প্রবাদের বাস্তব উদাহরণ। অন্য মুস্টিমেয় কালোরা উচ্চ বিত্ত এবং ক্ষমতার নিয়ন্তক। আসলে দূনিয়া জুড়েই বৈসম্য-যা সৃস্টি কর্তার সৃস্টি বলেই আমার বিশ্বাস।

একটি বেসরকারী অফিস ভবন-


(আগামী পর্বে বাকীটুকু)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:১৫
৮৯টি মন্তব্য ৯১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×