ওরে মানুষ তুই বুঝলি নাকো কোথায় আছে মন- আজ এখানে, কাল ওখানে- ঘুরলি ত্রিভুবন.....
আমার মনে বিষাদ ভরা অদ্ভুত একটা সুখ আছে।
আমি আমার জীবনের, মানুষের জীবনের গল্প লিখতে পারি না কখনোই। জীবনের গতিপথ এতো জটিল, ভাঙাচোরা, এতো পরিবর্তনশীল, যে আমাকে নির্বাক করে দেয়।
পান্থপথে সেই অন্ধ বাউল(যাকে নিয়ে ১০/১২ বছরে ব্লগ,ফেসবুকে বেশ কয়েক বার লিখেছি) শিল্পীকে পেলাম যথারীতি তাঁর স্ত্রীর কাঁধে ভর করে হেটে যাচ্ছে। এই বাউল দম্পতি আমার অনেক দিনের চেনা। কারোর আমন্ত্রণে বাড়িতে কিম্বা রাস্তার পাশে, দোকানের সামনে ছোট জটলায় গান শুনিয়ে দর্শক শ্রোতাদের কাছ থেকে যা পায় তাতেই ওদের জীবন চলে যায়। ২১ ফেব্রুয়ারী টিএসসি এলাকায় গান গেয়ে ফিরেছেন।
আমি জিজ্ঞেস করি, "মাসী নতুন কোনো গান বেধেছেন?"
হ্যা বোধক উত্তর শুনে পান্থপথ সিগলানে পরিচিত টং দোকানে বসি.... অন্ধ বাউল দোতরা বাজিয়ে গান ধরে, স্ত্রী বাউলনী খুঞ্জুরার তালে তালে গানের স্যাংগাত ধরে। বৃদ্ধ বাউলের জীবনমুখী গান আমার মন বিষাদে ঢেকে দিয়েছে- "ওরে মানুষ তুই বুঝলি নাকো কোথায় আছে মন- আজ এখানে, কাল ওখানে- ঘুরলি ত্রিভুবন"। (এই গান শিল্পী নিজেই লিখে সুর দিয়েছেন)।
দ্বিতীয় গানঃ "যারে ঘর দিলা সংসার দিলারে-তারে বৈরাগী মন কেনো দিলারে……"।
তৃতীয় গানঃ-
“দয়াল নানা রংগের মানুষ বানাইয়া কাউরে দিলা ধন-মান, কারো জীবনের সব কাইরা নিয়া করিলা গোলাম……
দয়াল তুমি দেখো নারী পুরুষ, আমি দেখি শুধুই মানুষ- দয়াল সবই তোমার অবদান……” (এই গানটাও শিল্পী নিজেই লিখে সুর দিয়েছেন)।
অন্ধ বাউল ১০ বছর বয়সে গুটি বসন্ত রোগে চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন। শিল্পী লেখা পড়া শেখেননি। কয়েক দিন মাত্র স্কুলে গিয়েছিলেন-কিন্তু "ছারে মারে"- তাই আর স্কুলে যাওয়া হয়নাই। তবে তিনি অশিক্ষিত নন-জীবন বোধে স্বশিক্ষিত, সুশিক্ষিত একজন মানুষ। লোভ লালসা নাই, পাওয়া নাপাওয়ার বেদনা নাই! কী সুন্দর সাদামাটা জীবন! মুখের স্মীত হাসিটা কখনো ভুলবোনা......
আরও ভুলবোনা- "দয়াল তুমি দেখো নারী পুরুষ, আমি দেখি শুধুই মানুষ"-এই উপলব্ধি!!!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



