somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

একালের গনি মিয়া এবং শ্রাদ্ধ নামের কুসংস্কার......

১৫ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একালের গনি মিয়া এবং শ্রাদ্ধ নামের কুসংস্কার......


"গনি মিয়া একজন কৃষক।
নিজের জমি নাই, অন্যের জমি চাষ করে। তাহাতে ধান হয়, পাট হয়। সে তাহার অর্ধেক ভাগ পায়। ছেলের বিবাহে সে অনেক ধুমধাম করিল। ইহাতে অনেক টাকা কর্জ হইল। সে কর্জ আর শোধ হইলোনা। এখন তাহার দু:খের সীমা নাই"- ছেলে বেলায় এই গল্প আমরা অনেকেই পড়েছি।

হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাবা মারা গেলে শ্রাদ্ধ পালন করতে হয়, তেমনই মুসলমানদের মধ্যে পালন করা হয় জেয়াফৎ(জেয়াফৎ বাধ্যতামূলক নয়)। শ্রাদ্ধ এবং জেয়াফৎ অন্তঃমিল হচ্ছে মৃত ব্যক্তির সন্তানদের চৌদ্দপুরুষ ছাড়াও চেনাজানা অসংখ্য লোকদের দাওয়াত করে ভুরিভোজ করানো! এই শ্রাদ্ধ কিম্বা জেয়াফৎ খাওয়ানো অনেকের জন্যই গোদের উপর বিষফোড়ার চাইতেও বেশী কষ্টদায়ক।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রদের বর্ণাশ্রম অনুযায়ী মৃত্যুর কতদিন পর শ্রাদ্ধের কাজ কর্ম, আত্মাকে পিণ্ডিদান ইত্যাদি হবে, তা ঠিক করা আছে। মৃতের শ্রাদ্ধের কাজ যে করবে (ছেলে থাকলে অবশ্যই ছেলে) তাকে আরও অনেক নিয়ম-কানুন মানতে হয়। অশৌচ চলাকালীন সেলাইহীন এককাপড়ে থাকতে হয়। নিজে হাতে মাটির মালসায় ভাতে-ভাত রান্না করে খেতে হয়, যাকে বলা হয় হবিষ্যান্ন। জুতাে পরা চলবে না। রােদ-বৃষ্টি যাই হােক ছাতা নেওয়া চলবে না। চুল-দাড়ি-গোঁফ ছাঁটা চলবে না। গায়ে মাথায় তেল-দেওয়া বা সাবান দেওয়া অবশ্যই চলবে না। যৌনসঙ্গম নিষিদ্ধ। তারপর তাে রয়েছে আত্মার শ্রাদ্ধ-শান্তির নাম করে পুরােহিতকে মৃতব্যক্তির প্রিয় জিনিসপত্র দান, ব্রাহ্মণ ও আত্মীয়-বন্ধুদের ভূরিভােজে আপ্যায়ন ইত্যাদি।

শ্রাদ্ধের কাজ যিনি করবেন তিনি তেল, সাবানহীন রুক্ষ চুল ও এক মুখ অপরিচ্ছন্ন গোঁফ-দাড়ি নিয়ে, খালি গায়ে একটা নােংরা কাপড় পরে, খালি পায়ে এবং নিজের রান্না নিজে করে খাবে। আত্মার শান্তির নামে এই যে কুসংস্কার ও অর্থহীন খরচ যুগযুগ ধরে চলে আসছে আজও আমাদের সমাজ কিন্তু তার বাইরে বেরিয়ে আসতে পারছে না। পাছে লােকে কিছু বলে এই তাড়নায় এই কুসংস্কারের কাছে মাথা নােয়াচ্ছেন। যাঁরা এই সব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে রুখে দাঁড়ান, তাঁদের বিরুদ্ধে একদল লােক-কুবাক্য প্রয়ােগ করতে পারেন বটে, কিন্তু, একই সঙ্গে আর একদল লােকের চোখে শ্রদ্ধার আসনও পাতা হয়ে যায়। কারণ, কথায় ও কাজে যাঁরা এক, তাদের শ্রদ্ধা জানাবার মতাে লােক আজও আছেন।

এবার আসি আসল প্রসঙ্গে।
আমাদের গ্রাম প্রতিবেশী একটা হিন্দু পরিবার শীল সম্প্রদায়। পেশা চুল কাটা। অত্যন্ত দরিদ্র। ৮/১০ জন সদস্য পরিবারে অভাব নিত্যকার। চুল কেটে যা উপার্জন তাতে ওদের সংসার চলেনা। চুল কাটার বাইরে অন্যের জমিতে চাষাবাদ, পশুপালন করে। নিজেদের বসতবাড়ি ছাড়া অল্পকিছু কৃষি জমির মালিক হলেও সারা বছর কষ্টেশিষ্টে দিনাতিপাত করে।
বছর দশ আগে এই পরিবারের বড়ো ছেলে সঞ্জয়কে আমি ঢাকায় এনে একটা নামীদামি সেলুনে কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছিলাম। ওর আর এক ভাই সুবলকেও দুই বছর আগে একটা প্রাইভেট অফিসের অফিস সহকারী হিসেবে লাগিয়ে দিয়েছি। দুই ভাই কষ্ট করে ঢাকায় থেকেখেয়ে বাকী টাকা বাড়িতে মা-বাবা, ভাই-বোনদের জন্য পাঠিয়ে দেয়। পরিবার প্রাণ অত্যন্ত দ্বায়িত্ববান ছেলে। আমি ওদের খুব স্নেহ করি এবং ওরা আমাদের পরিবারের সদস্যের মতো।

কিছুদিন আগে সঞ্জয়রে বাবা মারা গেছে। সঞ্জয়-সুবোধ ওদের ধর্মীয় বিধিবিধান পালনে সচেতন হলেও আর্থিক কারণে কুলিয়ে উঠতে পারছেনা। কিন্তু গ্রামের পুরোহিত/ব্রাহ্মণ্যরা সঞ্জয় পরিবারের উপর প্রেশার দিচ্ছে- বাবার শ্রাদ্ধ কার্য সম্পন্ন করতে। হিন্দু প্রধান এলাকায় আত্মীয় স্বজন ছাড়াও পাঁচ শতাধিক লোককে খাওয়াতে হবে.... শ্রাদ্ধকর্ম না করলে একঘরে হতে হবে!
অবশেষে "বাবার আত্মার শান্তির জন্য" সঞ্জয়-সুবোধ দুই ভাই বিভিন্ন জনের থেকে ধারকর্জ করে পঞ্চাশ হাজার টাকা যোগাড় করেছে। বসতবাড়ী ছাড়া কৃষি জমিটুকু এবং একটি গাভী গরু ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাবার শ্রাদ্ধ কার্য সম্পন্ন করে এখন 'পূতপবিত্র হয়েছে'!

ছেলে বেলায় তৃতীয় শ্রেণির বইতে গনি মিয়ার গল্প যত বারই পড়েছি ততবারই হেসেছি। কিন্তু জীবন যুদ্ধে আমরা শেষ পর্যন্ত গনি মিয়া হয়ে যাই!
গনি মিয়ার সাথে নিজেকেও মিলিয়ে ফেলি।
নিজেকেও গনি মিয়া'ই মনে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৩
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেগম খালেদা জিয়াঃ এক দৃঢ়চেতা, সাহসী অধ্যায়ের সমাপ্তি

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৭



প্রিয় ব্লগার,
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়া আর আমাদের মাঝে নেই, ইন্না লিল্লাহি ওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

×