
১৯১০ সালের দিকে কাঠের চাকা ও কাঠের কাঠামোতে নির্মিত হাতে টানা রিকশার প্রথম প্রচলন হয় জাপানে। এর ২০ বছরের মধ্যে চীন, হংকং, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, বার্মা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতে কাঠের চাকার হাতে টানা রিকশা বিস্তৃতি লাভ করে। ১৯১৯ সালে বার্মা (মিয়ানমার) থেকে স্বল্পসংখ্যক রিকশা চট্টগ্রামে আনা হয়েছিল বলে শোনা যায়। তবে এ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।

কলকাতা শহরে হাতে টানা রিকশা চালু হয় ১৯৩০ সালে। ইউরোপীয় পাট ব্যবসায়ীরা ১৯৩৮ সালে নিজেদের ব্যবহারের জন্য অল্প কয়েকটি হাতে টানা রিকশা কলকাতা থেকে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আসেন। সে সময় রিকশা ছিল একটি দর্শনীয় বস্তু। গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে শত শত লোক নারায়ণগঞ্জ আসত শুধু রিকশা দেখার জন্য। সে বছরই ঢাকার কয়েকজন ধনাঢ্য ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের রিকশা দেখে কাঠ মিস্ত্রিদের দিয়ে অনুরূপ রিকশা তৈরি করেন। তখন ঢাকায় যানবাহন বলতে ছিল ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, পালকি ও ডুলি। ঢাকায় বাণিজ্যিকভাবে কখন রিকশা চালু হয় এবং কাঠের চাকার বদলে কখন সাইকেল রিকশার প্রচলন হয়- এর সার্বিক তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাংলাপিডিয়া বলছে, নারায়ণগঞ্জ এবং নেত্রকোনা শহরে বসবাসরত ইউরোপীয় পাট রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য, ১৯৩৮ সালে প্রথম কলকাতা থেকে চেইন লাগানো রিকশা আমদানি করে। এরপর ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার একজন বাঙালি জমিদার এবং ওয়ারীর এক গণ্যমান্য ব্যক্তি রিকশা কিনে ঢাকায় প্রচলন করেন বলে জানা যায়।
প্রথম রিকশার মালিক ছিলেন যদু গোপাল দত্ত। প্রথম রিকশা চালকের নাম নরেশ বলে উল্লেখ আছে।
এরপর যদু গোপাল দত্তের প্রতিবেশী শিশির মিত্র ৪টি রিকশা আমদানি করেন। সেই থেকেই অল্প অল্প করে রিকশা আমদানি শুরু হয়।
তবে পুরনো ঢাকার আদি বাসিন্দাদের মতে দেশে ১৯৩৮ সাল নাগাদ এদেশে বাসকরা ইউরোপীয় এবং পর্তুগীজরা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দুই চাকার সাইকেল নিয়ে আসে। কিছু দিনের মধ্যেই ঢাকার ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের মধ্যে সাইকেল ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যায়। তখন নারিন্দার জনৈক ব্যবসায়ী ইংল্যান্ড থেকে রেলী ব্রাদার্সের দুই চাকার সাইকেল আমদানী শুরু করেন। স্থানীয় কছু মেকানিক/মিস্ত্রী দুই চাকার সাইকেলের চাকা খুলে তিন চাকার প্যাডেল চালিত রিকাশায় রুপান্তর করে। সেই সব তিন চাকার রিকশাগুলো ধনাঢ্য পরিবারের বাহন হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আস্তে আস্তে তিন চাকার প্যাডেল চালিত রিকশা বানিজ্যিক ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের অতীত রেকর্ড থেকে জানা যায়, ১৯৪১ সালে ঢাকা শহরে তালিকাভুক্ত রিকশার সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৭ টি। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগকালে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানীর মর্যাদা লাভের প্রাক্কালে ঢাকা শহরে রিকশার সংখ্যা ১৮১ তে উন্নীত হয়।
তথ্য সূত্রঃ ঢাকার ইতিহাস
লেখকঃ নাজির হোসেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




