ভয়াবহ অভিজ্ঞতা....
....ইফতারের আধাঘন্টা আগে ফার্মগেট থেকে কিছু ফ্রুটস কিনেছি। ফার্মগেট-গ্রীন রোডে তেমন জ্যাম না থাকলেও পর্যাপ্ত রিকশাও নাই। তাই ফুটপাতে পথচারীদের ভীড় এড়িয়ে হেটে বাড়ির দিকে যাচ্ছি....আনন্দ-ছন্দ সিনেমা হলের করিডোর হয়ে হাটছি...হঠাৎই ১৮/২০ বছরের এক তরুণ আমার বিপরীত দিক থেকে দ্রুত হেটে আমাকে অহেতুক ধাক্কা দেয় এবং ওই যুবকের হাত থেকে একটা মোবাইল ফোন পরে গিয়ে অনেক গুলো টুকরা হয়ে এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ে!
যুবকটি ভাংগা ফোনের কয়েকটা টুকরো তুলে মূহুর্তের মধ্যে আমার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছে- "আপ্নে ধাক্কা মাইরা আমার ২৪ হাজার টাকা দামের নতুন ফোন ভাইংগা ফালাইছেন। চারদিন আগে ফোনটা কিনছি....আমার ফোনের দাম দিয়ে যাইতে হইবে....."!
ইতোমধ্যে ৪/৫ জন যুবক এসে আমাকে ঘিরে ধরেছে...ভাংগা ফোনের টুকরো গুলো হাতে নিয়ে সবাই আপসোস করছে! ওদের কেউ কেউ আমাকে ফোনের দাম মিটিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে, কেউ উগ্রতা প্রকাশ করছে...আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ়!
প্রথমত ধাক্কা লাগায় আমার বিন্দুমাত্র দায় নেই। কারণ আমি পদচারিদের ভীড় এড়িয়ে ফাঁকা জায়গা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। অপর দিক থেকে আসা এই যুবক অন্যমনস্ক ভাবে ফোনে কথা বলতে বলতে আমাকেই ধাক্কা দিয়েছে.....যেহেতু আমি সতর্ক ছিলাম তাই পরে যাইনি।
যার ফোন ভেংগেছে সেই তরুণ ভাংগা ফোনের টুকরো গুলো হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমি ইনভার্সিটিতে পড়ি, টিউশনি করে পড়ার খরচ চাইলাই। আমার বাবা নেই। মা গ্রামে থাকে। অনেক কষ্টে ধারকর্জ করে ২৪ হাজার টাকায় ফোনটা কিনছি..... আংকেল আপ্নে আমার ফোনের দাম দিয়ে দেন...."।
আমি বুঝতে পারি- এই ঘটনা প্রতারক চক্রের পুরোটাই সাজানো......আমি ইতস্তত করছি- কি ভাবে এই সমস্যার সমাধান করবো.....
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে তরুণকে বলি, 'তোমার এতো সুন্দর দামী ফোনটা ভেংগে গেলো! তুমি শান্ত হও। তোমার নাম কি? কোথায় থাকো?'
তরুণের নাম মোহাম্মদ রুহুল আমিন সুমন। যে এলাকার মেসে থেকে পড়ে বলেছে সেই এলাকা প্রায় আমার বাড়ি সংলগ্ন।
'ঠিক আছে, তুমি শান্ত হও, কেঁদো না। আমার সাথে অল্প কিছু টাকা আছে...ইফতারের সময় বেশী বাকী নাই, আমার বাড়ি এখানেই, আমার সাথে বাসায় চলো....'- বলার সাথে সাথেই মোহাম্মদ রুহুল আমিন সুমন বলে- "আমি এই যায়গা দিয়া এক পাও যামুনা, এইখানে খাড়া খাড়া গুইন্না গুইন্না ২৪ হাজার টাকা দিতে হইবে। আমি একটা ডাকদিলে এক হাজার মানুষ আইস্যা আপ্নের ঘিররা ধর্বে!"
আমাকে ঘিরে থাকা অন্য ৩/৪ জন তরুণ যুবক মারমুখী হয়ে "মুরব্বি এইখানেই টাকা দিয়া যাইতে হইবে"- বলে আমাকে প্রায় ঠেলে পার্শ্ববর্তী গলির দিকে নিয়ে যেতে উদ্ধত হয়। একজন আমার প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগ কেড়ে নিতে হাত দেয়....এবার আমি রুখে দাঁড়াই- কুত্তার বাচ্চা, শরীরে হাত লাগাবিতো জানে মাইরা ফেলবো বলেই সরাসরি মুখের উপর এক থাপ্পর বসিয়ে দেই। মোহাম্মদ রুহুল আমিন সুমন এর একটা হাত শক্ত করে ধরে বলি- 'এই ছেলে যে মেসে থাকে সেই মেসের কাছেই আমার বাড়ি....আমি আপনাদের সহ ওকে নিয়ে আমার বাড়ি যেয়ে ওর ফোনের দাম দিয়ে দেবো। অথবা আমি আমার ছেলেদের ফোন করছি - ওরা টাকা নিয়ে আসবে- কেউ আমাকে টাচ করবেনা।'
ওদেরই একজন আমাকে আস্তে করে বলে, "আংকেল, অয় ছাত্র মানুষ ফোন্ডা ভাইংগা ফালাইছেন। অরে আপনে ইনসাফ মতো দিয়ে দেন- ঝামেলা কইররেন্না, বেশী মানুষ জড়ো করলে আপনেরই ইজ্জত নষ্ট হইবে, বোঝেনইতো এরা ভালো লোক না"।
ইতোমধ্যে ২৫/৩০ জন পথচারীদের ভীড় জমে গিয়েছে। উপস্থিত দর্শক প্রায় সবাই ফোন ভাংগা তরুণের পক্ষে! আমি ফোনে ৯৯৯ কল করতে চেষ্টা করছি .... একটু দূরে পুলিশের একটা পিকআপ দাড়িয়ে আছে। কয়েক জন পুলিশ ফুটপাতে হাটছে....আমি চিৎকার করে পুলিশ ডাকছি....হঠাৎই ভীড় ঠেলে দুই তরুণ এসে মোহাম্মদ রুহুল আমিন সুমনকে জাপটে ধরে বলে- "ধরছি ধরছি, এই লোক দুই দিন আগে আমাকে খামারবাড়ির মোড়ে ধাক্কা মেরে নিজের ফোন ভেংগে আমার কাছে থাকা ছয় হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে....এরা প্রতারক"।
সাথে সাথে মোহাম্মদ রুহুল আমিন সুমন এবং তার সংগীরা বলে- "ঠিক আছে কালাম ভাইরে ডাইক্কা আনি...."- বলে ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়....কিন্তু দুই তরুণ মোহাম্মদ রুহুল আমিন সুমনকে ছাড়ছেনা বরং কিল ঘুষি মেরে শোয়ায়ে ফেলেছে।
টহল পুলিশ এসে বিস্তারিত শুনে মোহাম্মদ রুহুল আমিন সুমনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ভাংগা ফোন চেক করে দেখে ওটা ফোনের নতুন কভারের মধ্যে একটা পুরনো ফোনের যন্ত্রাংশ ঢুকিয়ে ফোন ভাংগার নাটক করেছে....ওর পিঠে থাকা ব্যাকপ্যাক চেক করে একটা অচল ল্যাপটপ এবং আরও দুটো পুরনো অচল ফোন সেট পায়। পকেটে ১৬১০ টাকা নগদ পেয়েছে।
পুলিশ আমাকে থানায় যেতে বলে। আমি বলি- 'আমি ক্ষতিগ্রস্ত নই, আমি থানায় যাবোনা। এই দুই তরুণের অভিযোগ, ওদের থেকে দুই দিন আগেই প্রতারণা করে ছয় হাজার টাকা নিয়েছে - সম্ভব হলে ওদের হেল্প করবেন'- বলে আমি বাসায় ফিরে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




