somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

প্রসংগঃ সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী.....

১৯ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রসংগঃ সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থী.....

প্রতিবছরই এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর প্রায় সকল পত্রিকায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবীদের পরিচয় তুলেধরা হয়। সেই পরিচিতিতে আমরা এমন অনেক মেধাবীদের মুখ দেখে আপ্লুত হই- যারা আর্থীক জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয়েও স্কুল-কলেজ জীবনের পরীক্ষায় জয়ীহয়ে আবারো উচ্চশিক্ষা জীবনের এক অনিশ্চিত আশংকায় পতিত হয়!

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।সেই দারিদ্রসীমায় বাসকরা প্রত্যেক মা-বাবাও আশা করে তার সন্তান স্কুলে যাক, লেখাপড়া শিখে বড় হোক। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে শিশু বয়সেই তাদেরকে শিশুশ্রমে বাধ্য হতে হয়। তারপরেও অনেক দরিদ্র সন্তান পড়া লেখার অদম্য আকাঙ্ক্ষায় শিক্ষা গ্রহনে সচেস্ট থাকে। স্কুলে শিক্ষকের অপ্রতুলতা এবং অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে শিক্ষকের দ্বারা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিশেষভাবে খোঁজখবর নেয়াও সম্ভব হয় না। অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা কোন কোন বিষয় ঠিকভাবে বুঝতে পারে না বিধায় প্রাইভেট কোচিং/টিউটরের প্রয়োজন বোধ করে, কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে অনেকের পক্ষেই সেই প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয় না। আবার অনেক পিতামাতা নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিতহেতু বাড়িতে সন্তানদের বিষয়ভিত্তিক কোন সমস্যার সমাধান করতে পারেন না। ফলে অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা কোনরকমে না বুঝে, অস্পষ্টতার মধ্যে থেকে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যায়। এসব কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে, স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ফলশ্রুতিতে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ে। তারপরেও অনেকেই শুধু মনের জোড় আর গড গিফটেড মেধার জোড়ে ভালো ফলাফল করে আমাদেরকে চমকে দেয়!

বর্তমান সময়ে অনেক উন্নত দেশেও সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং জাতিসত্ত্বাভেদে শিক্ষাগত বৈষম্য বিদ্যমান। এই বৈষম্য কোটি কোটি গরীব ছেলেমেয়ের সম্ভাবনাময় জীবনকে স্থিমিত করে দিচ্ছে। এটি সমাজে তাদের নাগরিক অংশগ্রহণ ও ভবিষ্যৎ উপার্জনমূলক কর্মকাণ্ডকেও নানাভাবে ব্যাহত করছে। আমার ধারনা-এই শিক্ষাগত বৈষম্যের তিনটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কারণ রয়েছে।

প্রথম কারণ, যেসব ছেলেমেয়েরা স্বল্পআয়ের অবস্থানে বসবাস করে তারা উচ্চআয়ের এলাকায় বসবাসরত ছেলেমেয়েদের তুলনায় অধিক বাঁধার সম্মুখীন হয়। এসব বাঁধার মধ্যে আছে, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসুবিধা, পুষ্টি, গৃহায়ন এবং মানসম্মত প্রাক-বিদ্যালয় ব্যবস্থা।

দ্বিতীয়ত, বিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান অবকাঠামোগত অবস্থা ছাত্রছাত্রীদের অতিরিক্ত ও বিশেষ চাহিদা মেটানোর জন্য অপ্রতুল। বিদ্যালয়গুলোতে পেছনে পড়ে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা কোনো সময় বরাদ্দ নেই। সেই সাথে উপযোগী মানসম্মত শিক্ষকদেরও অভাব রয়েছে। এ ছাড়াও এই সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের দিকে বিশেষ নজর দিলে এরা যে অন্যান্য সুবিধাপ্রাপ্ত ছেলেমেয়েদের মতো ভাল করতে পারে, এমন ধারণাও শিক্ষকদের মধ্যে অনুপস্থিত।

তৃতীয়ত, সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদেরকে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং এতদ সঙ্গে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। তাই দারিদ্র্য, যেটার কারণে ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণীকক্ষে মনোযোগ দিতে পারে না, তা নিরসনের জন্য বিনিয়োগ যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করা হচ্ছে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মাধ্যমিক স্তর একজন শিক্ষার্থীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই স্তরে শিক্ষার্থীর ঝরেপড়ার ঝুকি থাকে সবচেয়ে বেশি এবং এই ঝরেপড়ার অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তিপ্রাপ্ত সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার শতভাগ নিশ্চিত করাসহ সামগ্রিক জীবনমান উন্নয়নে যা করণীয়ঃ

১। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

২। বিদ্যালয়ে আন্তঃপরীক্ষায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ শতভাগ নিশ্চিত করা।

৩। শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে সমাজের শিক্ষিত ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাসেবামুলক কাজে উদ্বুদ্ধ ও সম্পৃক্ত করা।

৪। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা।

৫। শিক্ষার্থীর সহায়তাকারীদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

৬। সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের সুবিধা প্রদানে সকল বিদ্যালয়কে বাধ্য করা।

হাজারো সমস্যাপীড়িত আমাদের এই দেশ। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষা এই অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন মেটাতেই হিমসীম খেতে হয় আমাদের দেশের অধিকাংশ দরিদ্র পরিবারের পিতামাতার। এই সকল সমাস্যায় যখন তারা হাবুডুবু খায় তখন তারা ভাবতেই পারে না সন্তানের শিক্ষার কথা। আর এভাবেই সময় গড়িয়ে যায় এবং হতভাগ্য শিশুটি একইভাবে পূর্ব পুরুষের দারিদ্রকে লালন করে চলে। আমার ধারনা, সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদেরকে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া হলে, তারা এটাকে কাজে লাগিয়ে পরিপূর্ণভাবে উৎকর্ষতা লাভ করতে পারে।

এবার আসা যাক অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিষয়। প্রতি বছরই এইচএসসি রেজাল্টের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যাল এবং চিকিতসা শাস্রে অধ্যয়নের জন্য বেশ কিছু শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও পড়ার সুযোগ অনিশিত শুধুমাত্র আর্থিক কারনে। এই শিক্ষার্থিদের সংখ্যা দেশজুড়ে পঞ্চাশ জনেরও কম। এই অদম্য মেধাবীদের খুব সহজেই দায়িত্ব নিতে পারের দেশের চৌষট্টি জেলার চৌষট্টিজন জেলা প্রশাসক। সকল জেলা প্রশাসকদেরই একটা নিজস্ব তহবিল আছে, যে তহবিলের অর্থ যোগান দেয় সবাজের স্বচ্ছল শ্রেনীর লোকেরা। যেমন কেউ যদি তার ব্যক্তিগত অস্রের লাইসেন্স রিনিউ করতে যান তখন তাকে সরকারি ফিস ছাড়াও একটা বড়ো অংকের টাকা জেলা প্রশাসক ফান্ডে ডোনেশন দিতে হয়। একইভাবে জেলা প্রশাসকের কাছে যেকোনো সেবা নিতে গেলে এই ফান্ডে ডোনেশন প্রথা অনেকটাই আইনের মতো হয়ে গিয়েছে। সেই ফান্ড থেকেই জেলা প্রশাসক অতিথি আপ্যায়ণ, দান খয়রাত দিয়ে থাকেন। দেশ ব্যাপী সকল অদম্য মেধাবীদের মধ্য থেকে এক একজন ডিসি যদি এক একজন মেধাবীর উচ্চ শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাহলে সমাজের সব চাইতে হিতৈশী কাজই করা হবে।

শুধু ডিসি সাহেবেরাই নন, এই সুবিধাবঞ্চিতদের জীবনে হাসি ফোটানোর জন্য আমাদের একটু ক্ষুদ্র সহযোগিতাই যথেষ্ট। আমরা যদি প্রত্যেকে এলাকা ভিত্তিক স্বামর্থানূযায়ী অন্তত একজন মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক মেধাবী শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিই তাহলে তার জীবনটা হতে পারে সম্ভাবনাময়। আমাদের এই সামান্য আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা যেমন সমাজের জন্য একটা বড় কাজ করতে পারি। তেমনি গড়ে তুলতে পারি আত্মত্যাগী কিছু মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:১০
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×