বিয়ের উপহারের একাল-সেকাল.........
বাল্যবন্ধু, স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী বন্ধু দেবনাথের(দেবু) কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার বন্ধুদের অনেকেই জানেন। ওদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার বাটাজোড় গ্রামে। দেবুর বাবা আমার মেঝ চাচার ঘনিষ্ট বন্ধু সেই হিসেবে উভয় পরিবারের বন্ধন শতবর্ষী। দেবনাথের বাবা-ভাই যেমন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী তেমনি সামাজিক ভাবেও এলাকায় প্রভাবশালী পরিবার। ওদের বৃহত্তর পরিবারের একটা অংশ স্বাধীনতার আগে থেকেই গ্রীন রোডে থাকলেও পুজা-পার্বনে এবং পরিবারের বেশীরভাগ গ্রামে ছুটে যায় গ্রামে। ১৯৭৫ সনে দেবনাথের বড় ভাইয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম গৌরনদী থানাধীন সেই বাটাজোড় গ্রামে। তারপর দেবুর বড়ো বোন অঞ্জনা দিদির বিয়েতেও গিয়েছিলাম। অঞ্জনা দিদি ছিলেন আমার অকাল প্রায়ত বুবুর ক্লাসমেট।
হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ে মানেই- প্রচুর যৌতুকের ছড়াছড়ি! দেবুর বড়ো ভাই পরমেশ্বর দেবনাথ দাদার বিয়েতেও তার ব্যতিক্রম ছিলনা। যতদূর মনে পরে, সেই বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিদের থেকে শতিনেক পিতলের কলসী ছাড়াও কাসা/পিতলের থালা-বাসন পেয়েছিলো কয়েক ট্রাক!
বন্ধু দেবু ঢাবি'র ইংরেজী সাহিত্যের এবং ওর স্ত্রী দর্শনের ছাত্রী ছিলেন। দেবনাথ এখন একটি বহুজাতিক কোম্পানীর এদেশীয় দ্বিতীয় প্রধান কর্তা। ওরা নিজেদের পছন্দে হলেও পারিবারিক সম্মতিতে গ্রামের বাড়িতে বিরাট অনুষ্ঠান করে ১৯৮৬ সনে বিয়ে করে। সেই বিয়েতেও আমরা স্বপরিবারে গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে- তখনও গ্রামের অনেক আত্মীয়স্বজন উপহার হিসেবে পিতলের কলস দিয়েছিলো। তবে তখন উপহারের বহুমাত্রিকতা ছিলো। উপহার সামগ্রীর মধ্যে টেবিল ল্যাম্প, ইক্ট্রিক আয়রন, প্রাইজবন্ড, স্বর্নের আংটি, কানের দূল এবং প্রচুর পরিমান কাঁচের ক্রোকারিজ ছিলো।
এবার দেবনাথের ছেলের বিয়েঃ ছেলেটা দেশে ইংরেজী মাধ্যমে লেখা পড়া করেছে। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাকোত্তর শেষ করে অস্ট্রেলিয়া থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে ওখানেই থিতু হয়েছে। কণেও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতকত্তর। কণের বাবা জুয়েলারী ব্যবসায়ী।
এবার বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছে চারটা। ঢাকাতে দুই পক্ষের দুই অনুষ্ঠান এবং বর-কণের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে দুই অনুষ্ঠান। ঢাকার দুই অনুষ্ঠানেই আমরা আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানেও ছিল উপহার সামগ্রীর ছড়াছড়ি। তবে কেউ পিতলের কলস নিয়ে আসেননি। দুই একটা পরিবার ছাড়া সবাই খাম কিম্বা বেলভেট কাপড়ে মোড়ানো বক্সে দামী উপহার নিয়ে এসেছেন।
আমি দেবুকে বলি- তোদের বিয়েতে পিতল কাসার তৈজসপত্র উপহারের প্রচলণ কি হারিয়েই গিয়েছে? উত্তরে দেবনাথ বাসায় যেতে বলে। ছুটির দিন ওদের বাসায় যাওয়ার পর ছেলের বিয়েতে উপহার হিসেবে পাওয়া অনেকগুলো বক্স খুলে দেখালো- সেইসব বক্সে ঝাঁ চকচকে সুন্দর সুন্দর পিতল কাঁসার তৈজসপত্র! ব্যতিক্রম হলো- সেগুলো যতনা নিত্য ব্যবহারের জন্য তার চাইতে ঢেড় বেশী ঘড় সাজানোর জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




