কি হবে জিডিপি দিয়ে যদি আপনার পকেটে টাকা ন থাকে.......
যিনি ভালো আছেন, তিনি দেখছেন যে দেশ খুব ভালো চলছে।
যিনি ভালো নেই, রোল মডেলে তার পেট ভরে না।
জিডিপি বাড়ছে, সরকারের ভাষ্য মতে বাড়ছে মাথাপিছু আয়।
"আফগানিস্তান- শ্রীলংকা-পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি", "আমরা মালেশিয়া- সিংগাপুর-কানাডা হয়ে যাচ্ছি"- এই আনন্দে আমরা আটখানা!
অর্থশাস্ত্র পড়ার কারণে জিডিপি বিষয়টা আমি কিছুটা বুঝি।
যদি বড় একটি সেতু, তিনটা সেনানিবাস, কয়েকটা মেডিকেল কলেজ বানানো হয়, তাহলে জিডিপি বাড়ে। কিন্তু তাতে মানুষের হাতে টাকা আসে না। অনেকেই স্যোসাল মিডিয়ায় ট্রল করে লেখেন, এত টাকা মাথাপিছু আয়! কই, আমার হাতে তা নেই কেন! জিডিপি বিষয়টা না বোঝার কারণে এমনটা ভাবে মানুষ। আর মাথাপিছু আয়ের ব্যাপারটা তো পুরোপুরি শুভংকরের ফাঁকি। আপনার আয় ১০০ কোটি টাকা, আমার আয় এক হাজার টাকা। দুজনের আয় যোগ করে দুই দিয়ে ভাগ করলেই তা হয়ে যাবে মাথাপিছু আয়। সে ক্ষেত্রে ভিখারিও কোটিপতি।
পিকে হালদার, মাননীয় এমপি পাপলু, শুধাংশু শেখর ভদ্র, এস কে সুর, ওসি প্রদীপ কুমার, শাহেদ, সাবরিনা, এহতেশাম বাবর, এনু-রুপম, সম্রাট, পাপিয়াদের হাজার-হাজার কোটি টাকা হাতানোর রেসে জিডিপির হারের মিল খুঁজলেই বা কী? এই লীলাভূমে কিছু ভাগ্যবান মানুষের জীবন এমনই উচ্ছল-মত্ত প্রবাহে ধাবমান। তাদের ধন-জন-মান, সুখ- সম্ভোগ-আস্ফালন কেবল বাড়ে। বাড়তেই থাকে। এর বিপরীতে অকথ্য কষ্টে থাকা বেশুমার মানুষকে মিলিয়ে বা তুলনা করে জিডিপির হিসাব মেলে না।
চুরি, লুটপাট, হরিলুট যতই হোক- কৃষক, গার্মেন্ট শ্রমিক আর বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা কাজ করবেই। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন পথে নিজের কর্মসংস্থান করবে। করছেও। পথটি বৈধ-অবৈধ যেটাই হোক। মুটে, মজুর, চায়ের দোকানি, সাইকেল-রিকশা-হোন্ডা-গাড়ির মেকানিক, রিকশাওয়ালা, সেলস-কর্মীদের অলস বলার সুযোগ নেই। তাদের কল্যাণে জিডিপি বাড়বেই, তা সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের আয়-উৎপাদন কমলেও। দারিদ্র বাড়লেও। ভোগ্যপণ্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকলেও।
মাথাপিছু জিডিপি দিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বা ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করা হলে একজন কোটিপতি ভোক্তা, বিনিয়োগকারীর কারণে সাধারণ মানুষ সহজেই হিসেবের বাইরে চলে যান। অর্থাৎ, এই গড়ের তুলনা দিয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা কিংবা বিনিয়োগের ক্ষমতার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না কোনোভাবেই। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিকেই উন্নয়ন মনে করা হতো। উন্নয়নের এই ধারণা সত্তরের দশকেই বাতিল করেছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ, প্রবৃদ্ধি যত বাড়ে, আয়বৈষম্য বাড়ে তার চেয়ে বেশি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিয়ে বিতর্ক যাই থাক, সাধারণ মানুষের কাছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নির্ণায়ক হলো তাদের দৈনন্দিনের স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য।
(কিছু তথ্য উপাত্য পত্রিকা পড়ে জানা)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



