জীবন যাদের নিত্য হাহাকার....
"অমল কান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। পারেনি। কত শত যুগ পেরিয়ে এসেও অমল কান্তিদের আশা পূর্ণ হয় না এখানে। এ শহরে 'দুঃখ' খেলা করে এদিক সেদিক।"
সন্ধ্যার পর হাটতে হাটতে পান্থপথ সিগনাল পেরিয়ে কিছু দূরে এগুতেই- "স্যার, কয়েকটা পেন্সিল কলম নেবেন? বাড়িতে ছোট বাচ্চাদের লাগবে"- থমকে দাঁড়ালাম।
এক হাতে কয়েক প্যাকেট পেন্সিল কলম। কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো ঘামে ভেজা মানুষটার চোখ যেন কথা বলছে। পাকা চুলে, গায়ের ঘামে, পরনের পাঞ্জাবীটাতে রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলো পরে বড় করুণ লাগছে সে মুখ। এক ব্যাথা জাগানিয়া আর্তি রয়েছে সে ডাকে। সন্ধ্যার রঙ যেন দ্রুত কালো হয়ে আসে সে দৃষ্টিতে।
১০/২০ টাকা দামের পেন্সিল কলম রয়েছে তার কাছে। আমার দরকার নাই, তবুও নিলাম দুটো প্যাকেট। জানতে চাইলাম কোথা থেকে এসেছেন?
শুরু করলেন বলা। এক কুর্নিশ যোগ্য জীবন সংগ্রামের কাহিনী। একেতো রোগাপটকা তার উপর একটা হাত, একটা পা পংগু। নাম মোঃ বিল্লাল হোসেন। বাড়ি গাইবান্ধা। থাকেন রাজাবাজার আমতলা বস্তিতে। সকাল সাতটায় বের হন বাড়ি থেকে। ফিরতে রাত এগারোটা। ঢাকা শহরের বাসে কিম্বা রাস্তায় লেখ্য সামগ্রী ফেরি করে বিক্রি করে। এভাবেই চলে। বাড়িতে মা, দুই মেয়ে, বৌ রয়েছেন। দিনে ৩/৪ শত টাকার মত লাভ থাকে। সংসার চালাতে কষ্ট হয়, চলাচলে অসুবিধা হয়, তবে এখন মানিয়ে নিয়েছেন। সেই তিন বছর বয়সে বাম হাত আর একটা পা অকেজো হয়ে যায় পোলিওতে। ব্যাস, জীবন মোড় নেয় অন্যদিকে। ষাটোর্ধ বেল্লাল হোসেন বলছিলেন- "এখন আর পারি না। এক জায়গায় বসে ব্যাবসা করতে পারলে সুবিধা হয়। কিন্তু কে দেবে জায়গা?"
এরই মধ্যে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি শুরু হল। বেল্লাল হোসেন ল্যাংড়া পায়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে গেলো.....
আকাশে কালো মেঘ উঁকি দিচ্ছে। বৃষ্টি হবে হয়তো। মানুষটা যেতে যেতেই ভিজে যাবেন মনে হয়। রাস্তার লাইটের আলোটা কি কমে গেল হটাত করে? কালো পিচ রাস্তাটা যেন একটু বেশিই কালো হয়ে গেল। আমি বোবা হয়ে গেলাম।
কষ্টগুলোকে বেল্লাল হোসেন অজস্র গাড়ির হর্নের শব্দে আর চাকার তলায় চাপা দিয়ে চলে গেলো। বড্ড যন্ত্রনা বুকে, কিন্তু মুখে কিছু বলে না।
ভাল থাকুন মোঃ বেল্লাল হোসেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



