somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

একজন আবদুল মোনেম স্যার....

০১ লা জুন, ২০২২ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন আবদুল মোনেম স্যার....

দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি শ্রদ্ধেয় আবদুল মোনেম স্যার ৩১ ম ২০২০ সনে সিএমএইচ, ঢাকা সেনানিবাস এ মৃত্যু বরন করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্যারের সাথে আমার অল্পবিস্তর সুখস্মৃতি আছে যা গভীর শ্রদ্ধা এবং শোকের সাথে স্মরণ করছি।
প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষে পেশা হিসেবে ব্যাবসাতেই নিয়োজিত হবো তেমন পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ছাত্র জীবন থেকেই আমার ছিলো। যেহেতু সেনা পরিবারের সন্তান সেহেতু সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায় মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তও ছিলো। ১৯৮৪ সনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মতো DGDP তে স্পেশাল ক্যাটাগরিতে তালিকা ভুক্ত সাপ্লায়ার এবং MES এর নির্মাণ ঠিকাদারিকে পেশা হিসেবে নেই।


DGDP তে সাপ্লায়ার হিসেবেই বেশী জোর দেই। প্রথমে ঢাকা সেনানিবাসে ছোট ছোট কিছু নির্মাণ কাজ শেষ করি। কিছু দিনের মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় এক কিলোমিটার রিটার্নিং ওয়াল, পাঁচটা কালভার্ট নির্মাণের কাজ পাই চিরিংগা- আলীকদম প্রজেক্টে। ওখানকার নির্মাণ কাজের তদারকি করে ১৪ ইঞ্জিনিয়ার্স ব্যাটালিয়ন। কার্যাদেশ নিয়ে ব্যাটালিয়ন সিও লেঃ কর্ণেল মফিজ স্যারের সাথে ফাসিয়াখালি সেনা ক্যাম্পে দেখা করি। সিও সাহেব নিয়মানুযায়ী আমার কোম্পানির যান্ত্রিক সক্ষমতা প্রমাণ করতে বলেন। পাহাড়ি এলাকায় কাজের জন্য বুলডোজার, কাটারপিলার, ট্রাক্টর ইত্যাদি না থাকলে কাজ করতে দিবেন না- সেটা সরাসরি বলে দেন। আমি হতাশ হয়ে গেলাম।

আমার বন্ধুর বড়ো ভাই ইঞ্জিনিয়ার আফতাব উদ্দিন রেজা। আফতাব ভাই হলেন মোনেম স্যারের মেয়ে জামাই যিনি রেজা কনস্ট্রাকশনের মালিক এবং আমার এক চাচা(ইঞ্জিয়ার্সের সেনা কর্মকর্তা)র বুয়েটে ক্লাস মেট। সেই হিসেবে আফতাব ভাইর সাথে কিছুটা পরিচয় আছে। আবদুল মোনেম লিমিটেড, রেজা কনস্ট্রাকশন এবং মান্না এন্ড কোং পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল রোড ব্রিজ কালভার্টের কাজ করে। আমি আফতাব ভাইর সাথে দেখা করলে তিনি মোনেম স্যারের সাথে দেখা করে সাহায্য সহযোগিতা চাওয়ার জন্য বলেন। আমি ঢাকা ফিরে কলাবাগানে মোনেম কোম্পানির অফিসে স্যারের সাথে দেখা করে সব বললাম। তিনি আমার পরিচয় এবং লেখা পড়ার বিষয় বিস্তারিত জেনে আস্বস্ত করে বললেন -"তুমি ওয়ার্ক অর্ডার, ওয়ার্ক ডিজাইন,প্লান ডকুমেন্টস নিয়ে লামা সাইট অফিসে যেয়ে আমাদের প্রজেক্ট ইঞ্জিয়ারের সাথে দেখা করো, তাকে আমি বলে দেবো"।

আমি আমার সাইট সুপারভাইজার, ম্যানেজার, লেবার সুপারভাইজার, ব্যাক্তিগত ট্রান্সপোর্ট নিয়ে লামা চলে যাই।
আলহামদুলিল্লাহ।
আমাদের চারজনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন লামাস্থ্য মোনেম কোম্পানির সাইট অফিসে, যেখানে রেজা কনস্ট্রাকশন এবং মান্না এন্ড কোং এর মালিকগণও মাঝেমধ্যে থাকেন তাদের সাথে (ওই সময়ও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বাহিনীর উৎপাত থাকায় এমইএস ঠিকাদারদের নিরাপত্তা দিতো সেনাবাহিনী এবং ওই এলাকায় কাজ করা সব ঠিকাদারদের একই শেড/কাছাকাছি শেডে থাকতে উৎসাহিত করা হতো)! মোনেম স্যারের নির্দেশে মোনেম কোম্পানির মেশিনারিজ, ম্যান পাওয়ার দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের তিন মাস আগেই গোটা কাজ সম্পন্ন করে দিলেন। প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার কাজে আমার যতসামান্য মেন্যুয়াল লেবার বিল দেওয়া ছাড়া কোনো ইনভেস্টমেন্ট লাগেনি। আমি সব কাজের বিল এমইএস থেকে পেয়ে মোনেম কোম্পানির ৪৫ লক্ষ টাকা(স্টান্ডার্ড লেবার বিল) পরিশোধ করি! এমন কি তিন মাস তাদের ক্যাম্পে থেকেছি এবং বিলাসী খাবার ফ্রি খেয়েছি কোনো বিল দিতে দেয়নি। আমার ব্যবসায়ীক জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো আবদুল মোনেম স্যারের এই দাক্ষিন্নতা।
এই হলেন আবদুল মোনেম স্যার।

তিন মাস বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন আবদুল মোনেম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিভৃত এক গ্রামে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে বড় হয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগে মাত্র ৭০ টাকা পকেটে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন।৭০ টাকা নিয়ে এসে সরকারের সার্ভেয়ার পদে পরীক্ষা দেন আবদুল মোনেম। পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। চাকরি নেন। কিন্তু চাকরিতে তাঁর মন টেকেনি। স্বপ্ন ছিল আরও বড়। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল ব্যবসা করা। ৭০ টাকা পুঁজি করে কীভাবে ব্যবসা করতে হয়, সেটা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। দক্ষতা ও সততা দিয়ে গড়ে তুলেছেন সুবিশাল সাম্রাজ্য। আবদুল মোনেম বিশ্বাস করতেন, সবচেয়ে ভালো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক নম্বর হওয়া সম্ভব। নির্মাণ আর অবকাঠামো দিয়ে ব্যবসা শুরু করে আবদুল মোনেম গ্রুপ। সেখান থেকে বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠান হয়। কাজের সুযোগ হয় ১৫ হাজারের বেশি মানুষের।

দেশের সকল হাইওয়ে, ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক, কর্ণফুলী টানেল, যমুনা সংযোগ সড়ক অথবা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানা দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোর বড় একটা অংশকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন আবদুল মোনেম। এসব কাজে এই গ্রুপ নিজস্ব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছে। পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ করেছে আবদুল মোনেম গ্রুপ। বাংলাদেশে বেশীরভাগ ব্যবসায়ীই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যবসায়িক সুবিধা আদায় করে থাকেন। কিন্তু আবদুল মোনেম তার সততা দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন যে তিনি কোনো রাজনৈতিক চাপে প্রভাবিত হবেন না। এবং কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুরবৃত্তি করেননি। যেই রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় থাকুক, আবদুল মোনেমের নৈতিক দৃঢ়তা ও ব্যবসায়িক সততার জন্য প্রত্যেকটা সরকার তাকে সম্মান দিয়েছে। তিনিও প্রতিটি সরকারের সময়েই ব্যবসা করে গেছেন।

মোনেম গ্রুপের কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইগলু আইসক্রিম, ম্যাঙ্গো পাল্প প্রসেসিং, ইগলু ফুডস, ড্যানিস–বাংলা ইমালসন, ইগলু ডেইরি প্রোডাক্টস, সুগার রিফাইনারি, এএম এনার্জি লিমিটেড, নোভাস ফার্মাসিউটিক্যালস, এএম আসফল্ট অ্যান্ড রেডিমিক্স লিমিটেড, এএম অটো ব্রিকস, এএম ব্র্যান অয়েল কোম্পানি, সিকিউরিটিজ ও ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এবং এএম বেভারেজ।

সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন আবদুল মোনেম। বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন। পরিবার ও ব্যবসা তিনি সফলভাবে সামলেছেন। রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার এসেছে আবদুল মোনেমের হাতে।

খেলাধুলায় দারুণ আগ্রহী ছিলেন আবদুল মোনেম। বাংলাদেশে ফুটবলের জোয়ারের সময় ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম পর্যন্ত ঢাকার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ছিলেন মোনেম। তাঁর সময়ে ফুটবল লিগে ১৯৮৬, ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। বিভিন্ন কারনে আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন তিনি। আমি একজন এক্স ক্যাডেট......আমি যখন ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লিখি তখন তাঁর বড়ো ছেলেও ক্যাডেট কলেজের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। আমি খেলাধূলায় আগ্রহী ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু ছিলাম, মোহামেডান ক্লাবের সমর্থক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হকি দলের খেলোয়াড় ছিলেম- যা তিনি অত্যন্ত পছন্দ করতেন। তিনি আমাকে মোহামেডান ক্লাবের লাইফ মেম্বার করে নিয়েছিলেন।

আবদুল মোনেম ছিলেন ধর্মপ্রাণ একজন মানুষ। সততাকে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন।
আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন মোনেম স্যারকে বেহেশত নসীব করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল মাদ্রাসার দেয়াল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯



ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তেল আর জল কখনো এক হয় না......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৫



জুলাই ছিলো সাধারণ মানুষের আন্দোলন, কোন লিডার আমারে ডাইকা ২৪'এর আন্দোলনে নেয় নাই। কোন নেতার ডাকে আমি রাস্তায় যাই নাই। অথচ আন্দোলনের পর শুনি আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড নাকি মাহফুজ। জুলাই বিপ্লবের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্ল্যাং রেভলিউশন: ১৮+ সতর্কবার্তা ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩০


সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকে একটা ভাইরাল ভিডিও চোখে পড়লো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্য সালাউদ্দিন আম্মার গণজাগরণ মঞ্চ ৩.০ তে উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন: দেখতে পাইলে বাকশাল, শা*উয়া মা*উয়া ছিড়া ফেল/... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×