বনফুলের শেষ গল্প.....
'একদিন সকালবেলা একান্তে নিজের ঘরে বসে লিখছি, হঠাৎ আমার একজন সহপাঠী বন্ধু ঘরে এসে ঢুকলাে। তার চেহারা দেখে চমকে উঠলাম। উস্কোখুস্কো চুল, জীর্ণ বসন, চোখ দুটো জবা ফুলের মতাে লাল। ঘরে ঢুকেই ও বললে, “এ কি রে, তাের এ রকম দৈন্য দশা কেন? ভাঙা টেবিল চেয়ারে বসে লিখছিস! তাের জানালার পর্দা ছেড়া, বিছানার চাদর নােংরা। দাঁড়া তােকে কিছু টাকা দিই”- বলে খস্ খস্ করে একটা পঞ্চাশ লক্ষ টাকার চেক লিখে দিল।
‘বুঝলাম ওর মাথা খারাপ হয়েছে। তবুও জিজ্ঞেস করলাম, “তুই এত টাকা পেলি কোথায়?”
‘ও হেসে বলল, “আরে বাহঃ, তুই জানিস না, আমি সারা ভারতবর্ষের একছত্রাধিপতি সম্রাট।” |
‘বুঝলাম, একেবারে উন্মাদ হয়ে গেছে। বড়াে কষ্ট হল। আমরা একসঙ্গে পড়তাম। ভালাে ছাত্র ছিল। বিরাট সম্ভাবনাও হয়তাে ছিল। আমার এক ডাক্তার বন্ধুকে ডেকে ওর চিকিৎসার দায়িত্ব তার ওপরে দিলাম।
‘মাস দুয়েক পর হঠাৎ সে আবার এলাে। সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কেঁদে ফেলে বলল, “তুই আমার এ সর্বনাশ কেন করলি? আমি তাে উন্মাদ হয়ে সব কিছু ভুলে মহা আনন্দে ছিলাম। তুই আমার চেতনা ফিরিয়ে দিয়ে আবার আশা নিরাশা হতাশা সুখ দুঃখ হাসি কান্না দারিদ্র্য সম্বন্ধে সচেতন করে দিলি-কেন? কী দরকার ছিল?”
(এই গল্পের কোন নাম ছিলো না। গল্পটা লেখার মাসখানেক পর বনফুল মৃত্যু বরন করেন। বনফুল এর আসল নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। তিনি পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। উনার লেখা 'হাটে-বাজারে' বই পড়ে আমি অভিভূত হয়েছিলাম)।
বনফুলঃ জন্ম: ১৯ জুলাই ১৮৯৯ - মৃত্যু: ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:১৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



