"সোশ্যাল মিডিয়া এন্ড এটেনশন সিকার
লন্ডনের আই টিভিতে "সোশ্যাল মিডিয়া এন্ড এটেনশন সিকার" এর উপর কিছু প্রোগ্রাম দেখেছিলাম। সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার প্রবণতা আসলে একটি মানসিক রোগ। প্রোগ্রামে অনেক অনেক তত্ত্বকথা শুনিয়েছিল তারা। তত্ত্বকথা থাক, আমি বরং একটি ঘটনার কথা বলি যা তারা প্রচার করেছিল। ঘটনাটি মর্মান্তিক।
লেসি স্পিয়ারস (জন্ম ১৯৮৮) ছিল একজন সিঙ্গল মাদার। তার ছেলের নাম গার্নেট। লেসির স্বামী ছিল একজন পুলিশ অফিসার, তার নাম ব্লেক। গার্নেট এর জন্মের কিছুদিন পরেই কার অ্যাকসিডেন্টে তার মৃত্যু হয়।
গার্নেটের জন্ম হয় স্কটসভাইল কেন্টাকিতে, ২০০৯ সালে। লেসি গার্নেটকে একাই মানুষ করতে থাকে। সে অত্যন্ত নেট আসক্ত ছিল। শুধু ফেসবুকেই তার তিনটি অ্যাকাউন্ট ছিল। তিনটিতেই সে সমানভাবে অ্যাকটিভ থাকত। বাচ্চাকে মানুষ করার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি ছবি, ফেসবুক টুইটার মাই স্পেস ও ব্লগে শেয়ার করত।
জন্মের পর থেকেই গার্নেট অসুস্থ থাকত সব সময়। লেসি লাগাতার তার অসুস্থতার ছবি নেটে দিত আর বন্ধুদের সহানুভূতি আদায় করত। ছেলে যখন কাঁদত, মা তখন তাকে কোলে না তুলে মোবাইল তাক করে ফটো তুলে নেটে শেয়ার করত, লিখত, ওহ গড, মাই লিটল অ্যাঞ্জেল, মাই বেবি ইজ ক্রাইং।
লেসি অসুস্থ গার্নেটের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করত। মাঝে মাঝে অসুস্থতা মারাত্মক বেড়ে যেত। তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হত। একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি আসার পর কিছুদিনের মধ্যেই অবস্থা আবারও যে কে সেই।
গার্নেটের অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসার জন্য লেসি ২০১২ সালে তাকে নিয়ে নিউ ইয়র্ক আসে। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারী তাকে নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাত্র ১১ দিন বাদে, ২৩ জানুয়ারী ২০১৪, গার্নেটের মৃত্যু হয়। লেসি গার্নেটের অসুস্থতার প্রতিটি আপডেট দিচ্ছিল ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে। গার্নেটের মৃত্যুর প্রায় সাথে সাথেই সে ফেসবুকে লেখে গার্নেট ইজ নো মোর। তার ফ্রেন্ডরা R I P লিখে ওয়াল ভরিয়ে দেয়।
এই মৃত্যুকে ডাক্তাররা কিন্তু সহজভাবে নেন নি। লেসি যখন বাচ্চার মৃত্যু নিয়ে ইন্টারনেটে বন্ধুদের সহানুভূতি কুড়োচ্ছিল তখন ডাক্তাররা গার্নেটের পোস্ট মর্টেমে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁরা দেখলেন গার্নেটের শরীরে অত্যধিক পরিমাণে সোডিয়াম রয়েছে, সেটাই তার মৃত্যুর কারণ। এত সোডিয়াম কিভাবে আসতে পারে? তাকে তো সোডিয়ামযুক্ত কোন ওষুধ দেওয়া হয় নি। তবে কি কেউ জেনে বুঝে তার শরীরে সোডিয়াম ঢুকিয়েছে? ডাক্তাররা তাদের সন্দেহের কথা পুলিশকে জানালেন। এবং পুলিস ব্যাপারটার ফয়সলা করতে মাঠে নামল।
তাঁরা তদন্ত শুরু করলেন। তাদের সন্দেহ হল, গার্নেটের মৃত্যুর পিছনে লেসির হাত থাকতে পারে। তাঁরা লেসির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলেন, লেসি সর্বদাই বন্ধুবান্ধব ও নিজের পরিবারের লোকজনকে মিথ্যা কথা বলতে ভালবাসে। সে তার নিজের সম্বন্ধে যা যা বলেছে ফেসবুকে ও টুইটারে সবই মিথ্যা। লেসি তার পরিবারের সম্বন্ধেও অনেক কথা বানিয়ে লিখেছিল। তার স্বামীর নাম ব্লেক নয়, ক্রিস হিল, সে কোন অ্যাকসিডেন্টে মারা যায় নি এবং বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে।
গার্নেটের জন্মের অল্পদিন পরেই তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। ক্রিস হিল যখন লোকমুখে গার্নেটের অসুস্থতার কথা শোনে, তখন লেসির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সে নিরুপায় হয়ে লেসিকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও পাঠিয়েছিল। শুধুমাত্র নিজের বাচ্চার খবর জানার জন্য। কিন্তু লেসি অ্যাকসেপ্ট করে নি। তবে ক্রিস হিল কেন ছেড়ে দিল, নিজের বাচ্চার খবর জানার তার অধিকার ছিল, সেই অধিকার প্রয়োগ করল না, সেটা একটা প্রশ্ন।
গোয়েন্দারা প্রমাণ পেয়েছিলেন লেসির মিথ্যা বলার রোগ আছে। কিন্তু এটাই লেসির অপরাধ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
গার্নেটের কেবিনে ই ই জি মেশিনের ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গেল, গভীর রাতে যখন লেসি একা ছিল ছেলের ঘরে তখন সে ফিডিং ব্যাগে প্রচুর পরিমাণ টেবল সল্ট মিশিয়ে দেয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
একটা স্বাভাবিক বাচ্চা জন্মের পর থেকেই অসুস্থ থাকবে, কোন জেনেটিক রোগ না থাকা সত্ত্বেও এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। গোয়েন্দারা অনুমান করেন, লেসি বাচ্চার জন্মের পর থেকেই তাকে নুন খাওয়াতে থাকে। যার জন্য সে চির অসুস্থ হয়ে থাকে। কোন চিকিৎসাতেই কাজ হয় না। একদিকে ঠান্ডা মাথায় তিলে তিলে হত্যা করছিল তার সন্তানকে, অপরদিকে ইন্টারনেটে কান্নাকাটি করে বন্ধুদের সহানুভূতি আদায় করছিল।গার্নেট জানত না তার মাই তার হত্যাকারী। আদালত মেনে নিয়েছিল, সে একজন মানসিক রোগী। অ্যাটেনশন সিকার। তবুও তার শাস্তি হয়েছে। ২০৩৫ সালে সে জেল থেকে বেরোবে। তখন তার বয়স হবে ৪৭ বছর।
অ্যাটেনশন সিকার লেসি স্পিয়ারস এর করুণ পরিনতি সত্যিই বেদনাদায়ক। তিনি নিঃসন্দেহে একজন তীব্র মানসিক বৈকল্যে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরে যার ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়েছে তারই সন্তানকে।
নেগেটিভ কাজ করে মনোযোগ আকর্ষণ করার উদাহরণ আমাদের এই বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে; বিষয়টা আজকাল বাঙালির জাতীয় অসুখে পরিনত হয়েছে।
(প্রবাসী ফেসবুক বন্ধু রাজিক হাসানের(Razik Hasan) টাইম লাইন থেকে কপি করেছি। সামুর নিয়মে কপি পোস্ট নিষিদ্ধ তবুও এই পোস্ট থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় থাকায় কপি করেছি- যা পড়ে আমাদের অনেকের বোধদয় হবে। সামু মডারেটর চাইলে এই পোস্ট নির্দিধায় ডিলিট করে দিতে পারেন)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:০২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


