somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

সোশ্যাল মিডিয়া এন্ড এটেনশন সিকার......

৩০ শে জুন, ২০২২ সকাল ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"সোশ্যাল মিডিয়া এন্ড এটেনশন সিকার

লন্ডনের আই টিভিতে "সোশ্যাল মিডিয়া এন্ড এটেনশন সিকার" এর উপর কিছু প্রোগ্রাম দেখেছিলাম। সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার প্রবণতা আসলে একটি মানসিক রোগ। প্রোগ্রামে অনেক অনেক তত্ত্বকথা শুনিয়েছিল তারা। তত্ত্বকথা থাক, আমি বরং একটি ঘটনার কথা বলি যা তারা প্রচার করেছিল। ঘটনাটি মর্মান্তিক।

লেসি স্পিয়ারস (জন্ম ১৯৮৮) ছিল একজন সিঙ্গল মাদার। তার ছেলের নাম গার্নেট। লেসির স্বামী ছিল একজন পুলিশ অফিসার, তার নাম ব্লেক। গার্নেট এর জন্মের কিছুদিন পরেই কার অ্যাকসিডেন্টে তার মৃত্যু হয়।
গার্নেটের জন্ম হয় স্কটসভাইল কেন্টাকিতে, ২০০৯ সালে। লেসি গার্নেটকে একাই মানুষ করতে থাকে। সে অত্যন্ত নেট আসক্ত ছিল। শুধু ফেসবুকেই তার তিনটি অ্যাকাউন্ট ছিল। তিনটিতেই সে সমানভাবে অ্যাকটিভ থাকত। বাচ্চাকে মানুষ করার প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি ছবি, ফেসবুক টুইটার মাই স্পেস ও ব্লগে শেয়ার করত।
জন্মের পর থেকেই গার্নেট অসুস্থ থাকত সব সময়। লেসি লাগাতার তার অসুস্থতার ছবি নেটে দিত আর বন্ধুদের সহানুভূতি আদায় করত। ছেলে যখন কাঁদত, মা তখন তাকে কোলে না তুলে মোবাইল তাক করে ফটো তুলে নেটে শেয়ার করত, লিখত, ওহ গড, মাই লিটল অ্যাঞ্জেল, মাই বেবি ইজ ক্রাইং।

লেসি অসুস্থ গার্নেটের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করত। মাঝে মাঝে অসুস্থতা মারাত্মক বেড়ে যেত। তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হত। একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি আসার পর কিছুদিনের মধ্যেই অবস্থা আবারও যে কে সেই।
গার্নেটের অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসার জন্য লেসি ২০১২ সালে তাকে নিয়ে নিউ ইয়র্ক আসে। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারী তাকে নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাত্র ১১ দিন বাদে, ২৩ জানুয়ারী ২০১৪, গার্নেটের মৃত্যু হয়। লেসি গার্নেটের অসুস্থতার প্রতিটি আপডেট দিচ্ছিল ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে। গার্নেটের মৃত্যুর প্রায় সাথে সাথেই সে ফেসবুকে লেখে গার্নেট ইজ নো মোর। তার ফ্রেন্ডরা R I P লিখে ওয়াল ভরিয়ে দেয়।

এই মৃত্যুকে ডাক্তাররা কিন্তু সহজভাবে নেন নি। লেসি যখন বাচ্চার মৃত্যু নিয়ে ইন্টারনেটে বন্ধুদের সহানুভূতি কুড়োচ্ছিল তখন ডাক্তাররা গার্নেটের পোস্ট মর্টেমে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁরা দেখলেন গার্নেটের শরীরে অত্যধিক পরিমাণে সোডিয়াম রয়েছে, সেটাই তার মৃত্যুর কারণ। এত সোডিয়াম কিভাবে আসতে পারে? তাকে তো সোডিয়ামযুক্ত কোন ওষুধ দেওয়া হয় নি। তবে কি কেউ জেনে বুঝে তার শরীরে সোডিয়াম ঢুকিয়েছে? ডাক্তাররা তাদের সন্দেহের কথা পুলিশকে জানালেন। এবং পুলিস ব্যাপারটার ফয়সলা করতে মাঠে নামল।
তাঁরা তদন্ত শুরু করলেন। তাদের সন্দেহ হল, গার্নেটের মৃত্যুর পিছনে লেসির হাত থাকতে পারে। তাঁরা লেসির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলেন, লেসি সর্বদাই বন্ধুবান্ধব ও নিজের পরিবারের লোকজনকে মিথ্যা কথা বলতে ভালবাসে। সে তার নিজের সম্বন্ধে যা যা বলেছে ফেসবুকে ও টুইটারে সবই মিথ্যা। লেসি তার পরিবারের সম্বন্ধেও অনেক কথা বানিয়ে লিখেছিল। তার স্বামীর নাম ব্লেক নয়, ক্রিস হিল, সে কোন অ্যাকসিডেন্টে মারা যায় নি এবং বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে।

গার্নেটের জন্মের অল্পদিন পরেই তাদের ছাড়াছাড়ি হয়। ক্রিস হিল যখন লোকমুখে গার্নেটের অসুস্থতার কথা শোনে, তখন লেসির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। সে নিরুপায় হয়ে লেসিকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও পাঠিয়েছিল। শুধুমাত্র নিজের বাচ্চার খবর জানার জন্য। কিন্তু লেসি অ্যাকসেপ্ট করে নি। তবে ক্রিস হিল কেন ছেড়ে দিল, নিজের বাচ্চার খবর জানার তার অধিকার ছিল, সেই অধিকার প্রয়োগ করল না, সেটা একটা প্রশ্ন।

গোয়েন্দারা প্রমাণ পেয়েছিলেন লেসির মিথ্যা বলার রোগ আছে। কিন্তু এটাই লেসির অপরাধ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
গার্নেটের কেবিনে ই ই জি মেশিনের ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গেল, গভীর রাতে যখন লেসি একা ছিল ছেলের ঘরে তখন সে ফিডিং ব্যাগে প্রচুর পরিমাণ টেবল সল্ট মিশিয়ে দেয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়।

একটা স্বাভাবিক বাচ্চা জন্মের পর থেকেই অসুস্থ থাকবে, কোন জেনেটিক রোগ না থাকা সত্ত্বেও এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। গোয়েন্দারা অনুমান করেন, লেসি বাচ্চার জন্মের পর থেকেই তাকে নুন খাওয়াতে থাকে। যার জন্য সে চির অসুস্থ হয়ে থাকে। কোন চিকিৎসাতেই কাজ হয় না। একদিকে ঠান্ডা মাথায় তিলে তিলে হত্যা করছিল তার সন্তানকে, অপরদিকে ইন্টারনেটে কান্নাকাটি করে বন্ধুদের সহানুভূতি আদায় করছিল।গার্নেট জানত না তার মাই তার হত্যাকারী। আদালত মেনে নিয়েছিল, সে একজন মানসিক রোগী। অ্যাটেনশন সিকার। তবুও তার শাস্তি হয়েছে। ২০৩৫ সালে সে জেল থেকে বেরোবে। তখন তার বয়স হবে ৪৭ বছর।

অ্যাটেনশন সিকার লেসি স্পিয়ারস এর করুণ পরিনতি সত্যিই বেদনাদায়ক। তিনি নিঃসন্দেহে একজন তীব্র মানসিক বৈকল্যে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরে যার ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়েছে তারই সন্তানকে।

নেগেটিভ কাজ করে মনোযোগ আকর্ষণ করার উদাহরণ আমাদের এই বাংলাদেশে ক্রমেই বেড়ে চলেছে; বিষয়টা আজকাল বাঙালির জাতীয় অসুখে পরিনত হয়েছে।

(প্রবাসী ফেসবুক বন্ধু রাজিক হাসানের(Razik Hasan) টাইম লাইন থেকে কপি করেছি। সামুর নিয়মে কপি পোস্ট নিষিদ্ধ তবুও এই পোস্ট থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় থাকায় কপি করেছি- যা পড়ে আমাদের অনেকের বোধদয় হবে। সামু মডারেটর চাইলে এই পোস্ট নির্দিধায় ডিলিট করে দিতে পারেন)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:০২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: রহস্যময় চৌধুরী ভিলা

লিখেছেন গ্রু, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৩৩



পরদিন সকালে আকাশ পরিষ্কার। গতরাতের বৃষ্টির কোনো চিহ্ন নেই, শুধু রাস্তার ধারের গাছগুলো থেকে টুপটাপ জল পড়ছে। অনিরুদ্ধ তার জীর্ণ নীল রঙের পাঞ্জাবিটা পরে তৈরি হয়ে নিল। সে সাধারণত রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

I have a plan

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২২

আসেন নেতা পা বাড়ান সামনে এগিয়ে চলেন
প্ল্যান টা কী বলেন।

সামনে আজাদ পেছনে দিল্লি কোন দিকে যাই বলেন
প্ল্যান টা কী বলেন।

যে দিকেই যাই ৩৬ যাবে? সেইটা ক্লিয়ার করেন
প্ল্যান... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×